যাত্রা পথের বিরম্বনা । ১০% লাজুক শিয়ালের জন্য।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)
আসসালামু-আলাইকুম।
আশা করি সবাই ভাল আছেন। আজ ভোর ছয়টায় রংপুর এসে পৌছালাম ।আপনারা হয়তো জানেন গতকাল রাত 9 টায় ছিল আমার গাড়ি । আটটা বাজতেই বাস টার্মিনালে পৌঁছে যাই কিন্তু আমার বাস আসতে প্রায় এক ঘন্টা দেরি হয় অর্থাৎ নয়টার বাস ছাড়ে প্রায় রাত দশটায় । যাইহোক রাতে ভ্রমণ করা আমার জন্য নতুন কিছু না। আমি সচরাচর রাতেই ভ্রমণ করে থাকি। আর আমার কাছে মনে হয় দিনের তুলনায় রাতে জার্নি অনেক বেশি আরামদায়ক। কারণ তখন বাতাসে ধুলোবালির পরিমাণ থাকে কম, রাস্তায় জ্যাম থাকে কম, এমনকি গরম ও থাকে না। সবকিছু মিলিয়ে ভ্রমণের জন্য দারুন একটা পরিবেশ। তবে গতকালকে ভ্রমণ আমার জন্য মোটেই সুখের ছিল না। ঘটনাটা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করি ।

20230222_143130.jpg

আমরা নামে ডিজিটাল বাংলাদেশ হলেও কাজের ক্ষেত্রে এখনো অনেক পিছিয়ে আছি অনলাইনে বাসের টিকেট কাটতে গিয়ে আবারো তা নতুন করে উপলব্ধি করলাম। ঘরে বসে নিজেই যখন অনলাইনে বাসের টিকিট কেটে বাস টার্মিনালের নির্দিষ্ট বাসের খোঁজে কাউন্টারে গেলাম কাউন্টারে থাকা কর্তব্যরত ব্যক্তি আমাকে আমার বাস সম্পর্কে কোন তথ্য দিতে পারলেন না। অনলাইনে দেয়া কোচ নাম্বার নাকি আজ কোথাও যাবেই না। পরবর্তীতে খোঁজখবর নিয়ে তারা জানালেন কোচ নম্বর পরিবর্তিত হয়েছে ।অনলাইনে দেয়া বাস না গিয়ে অন্য বাস যাত্রী পরিবহন করবে। যাই হোক এ তো গেল এক ঝামেলা । বাস ছাড়ার পর শুরু হল আরেক ঝামেলা। নাইট কোচ হওয়ায় স্বভাবতই বাসের সব বাতি নেভানো ছিল। হঠাৎ অনুভব করলাম কোথা থেকে যেন ঠান্ডা বাতাস আসতে শুরু করেছে। প্রচন্ড ঠান্ডায় আমার হাত-পা রীতিমতন বরফ হয়ে যাওয়ার জোগাড়। পাশে তাকাতেই দেখি আমার ঠিক বিপরীত দিকের বয়স্ক ভদ্রমহিলা আর তার মেয়ে তাদের পাশের জানালা খুলে বসে আছে আর সেই জানালা দিয়ে তুমুল বেগে ঠান্ডা বাতাস প্রবেশ করছে। যার প্রায় ৮০ ভাগই আমার গায়ে এসে লাগছিল। উঠে গিয়ে আমার অসুবিধার কথা জানাতেই পেছন থেকে ভদ্রমহিলার স্বামী আমাকে বললেন উনি অসুস্থ কিছুক্ষণ জানালা খোলা রাখলে সুস্থ হয়ে যাবেন ।সুতরাং মুখ বুজে রইলাম কিছুক্ষণ। প্রায় পাঁচ মিনিট পর ভদ্রমহিলা জানালা বন্ধ করে দিলেন কিন্তু এখানেই ঘটনার শেষ নয় ।যাত্রা পথের প্রায় সারাটা সময় উনি কিছুক্ষণ পরপরই জানালা খুলছিলেন আর তা বন্ধ করার কোন লক্ষণই দেখাচ্ছিলেন না। এদিকে শীত কমে যাওয়ায় সঙ্গে তেমন কোন শীতের জামাকাপড় ছিল না।

20230222_143058.jpg

আপনারা হয়তো জানেন বাংলাদেশের উত্তর অঞ্চলে শীত মধ্যাঞ্চলের তুলনায় কিছুটা বেশি ।কাজেই আমার বাস যত উত্তরের দিকে যাচ্ছিল শীতের তীব্রতা ততই বাড়ছিল। একেতো বয়স্ক মহিলা তার ওপর আবার অসুস্থ, বেশ কয়েকবার আমার অসুবিধার কথা জানানো সত্ত্বেও কোন পরিবর্তন না হওয়ায় এই কষ্টটুকু সহ্য করার সিদ্ধান্ত নিলাম । এরপর একসময় গন্তব্যে পৌঁছে গেলাম। সারাদিন রংপুরের আরডিআরএস ট্রেনিং সেন্টারে ব্যস্ততার মধ্যে দিয়ে কেটে গেল। দিনশেষে এই পোস্ট যখন লিখছি তখন গত রাতের ঠান্ডা সহ্য করার পরিণাম একটু একটু করে আমার শরীরে জানান দিচ্ছে। অর্থাৎ রীতিমতো জ্বর-জ্বর বোধ করছি আর নাক দিয়ে ক্রমাগত পানি ঝরছে। মনে হচ্ছে সর্দি লাগতে আর বাকি নেই । কি আর করা মাঝে মাঝে এমন পরিস্থিতির শিকার হতে হয় যখন কিছুই করার থাকে না । অপরের ভালো করতে গিয়ে নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়।

20230222_143015.jpg

আজকের মত এ পর্যন্তই। আবার কথা হবে অন্য কোন বিষয় নিয়ে। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এই কামনায় আজকের মতো এখানেই শেষ করছি।
Photographer@ferdous3486
DeviceSamsung M21
LocationRDRS, Rangpur
Sort:  
 2 years ago 

যাক শেষ মেষ কষ্ট করেই আসতে হলো আপনাকে ৷ ভদ্র মহিলা কি শীতের পোশাখ পড়েছিল ৷ ভাই এই উত্তরবঙ্গ সর্বশেষ যেখানে এখনো শীত আছে ৷ আর আমিও একজন উত্তর বঙ্গের মানুষ ৷ তাই বুঝি শীত কত টা ৷
আর এটা ও ঠিক আমরা নামে মাত্র ডিজিটাল ৷ এখনো অনেক কিছুতে পিছিয়ে আছি ৷ তবে যার্নি টা যে কষ্ট হয়েছে ৷ তা ভালোই বুঝলাম ৷

 2 years ago 

জি ভাই ভদ্রমহিলা এবং তার কন্যা দুজনেই শীতের পোশাক পড়েছিলেন তাই আমার অবস্থাটা তারা বুঝতে পারেননি। কৃতজ্ঞতা জানাই আমার পোস্টে আপনার মন্তব্য করায়।

অনেকটাই ভোগান্তি হয়েছে দেখছি আপনার। প্রথমে তো টিকিট নিয়ে ঝামেলা তারপর আবার বয়স্ক ভদ্রমহিলা একটা অকওয়ার্ড পরিবেশ তৈরি করেছিল। আসলে এরকম সমস্যা মাঝে মধ্যে সকলেই হয়, তবে সেটাকে ঠান্ডা মাথায় সলিউশন করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। আর আমি এমনিতেও বাসে খুব বেশি একটা যাতায়াত করি না তাই এই সমস্যাগুলো আমার কাছে অনেকটাই নতুন।

 2 years ago 

ইতিপূর্বে বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় পড়লেও এরকম সমস্যা আমার জন্যেও সম্পূর্ণ নতুন ছিল। হয়তো আমি একটু কঠোর হলেই তিনি জানালা বন্ধ করতেন তবে একে তো বয়স্ক মহিলা তার ওপর অসুস্থ তাই মেনে নিয়েছিলাম কষ্টটুকু।