স্বপ্ন যাবে বাড়ি আমার || 10% for shy-fox and 5% for abb-school.
সুমন এম বি এ কমপ্লিট করেছে, কিন্তু কোন ভাল চাকুরী পাচ্ছে না, না পাওয়ার ও যথেষ্ট কারণ আছে তার যে মামা খালু টাকা পয়সা কোনটাই নাই।তাই সে ড্রাইভারী পেশা বেচে নিয়েছে, ঢাকায় এক বাসার প্রাইভেট ড্রাইভার। অল্প টাকার বেতনের চাকরী তবুও যেন সুখের কমতি নেই সুমনের পরিবারে। ছোট ভাই বোন মা বাবাকে নিয়েঅনেক সুখেই দিন কাঠছে সুমনের। সুমন আবার ভালবাসে পাশের বাড়ির একটি মেয়েকে নাম তার সুমি। সুমি সুমনের ভালবাসার বয়স সাত বছরের মত। দুই পরিবারই তাদের বিষয়টা জানে, তাদেরও ইচ্ছা সুমি সুমনের বিয়ে দিয়ে তারা আত্মীয়তা করবে,এক সময় দুই পরিবারের মতামতে তাদের বিয়ের দিন ঠিক করা হয়। সুমন ঢাকা থেকে মাত্র তিন দিনের ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসে বিয়ে করার জন্য। কারণ তিন দিনের বেশি এই মূহুর্তে তার মালিক ছুটি দিচ্ছে না সামনে ঈদ তাই।
সুমন তিন দিনের ছুটি নিয়ে সাত বছরের ভালবাসার মানুষটাকে তার ঘরে চির দিনের জন্য আনতে বাড়িতে পৌছাল।আজ তার বিয়ে, বিয়ে করে সুমিকে নিয়ে তার নতুন জীবন শুরু করে। এদিকে তিন দিন শেষ, সুমন কে যে আজই ঢাকায় ফিরতে হবে, তা নাহলে যে চাকরিটাই তার থাকবেনা। আর চাকরি না থাকলে সুমির স্বপ্ন কি ভাবে বাস্তবায়ন করবে। তাই সে ঢাকার উদ্দেশ্যে এ দিকে সুমির অনেক কষ্ট হচ্ছে সাত বছরের ভালবাসার স্বাদ কি আর একদিনে শেষ হয়। সুমন ঢাকায় চাকরি করছে একটু সময় ফেলেই সুমির সাথে মোবাইলে আলাপ শুরু করে। কবে যে ঈদ আসবে আর কবে দশ দিন ছুটি পাব। এই অপেক্ষা, ঈদের আর দশ দিন বাকি মালিক বোনাস ও দিচ্ছে না বেতন ও দিচ্ছে না। তবুও সুমন প্রতিদিন একবার করে শপিংমল ঘুরে আসে আর দেখে আসে সুমির জন্য কোন শাড়িটা নিবে মার জন্য কোন শাড়ি নিবে বাবার জন্য কোন পাঞ্জাবি টা ছোট ভাই বোনদের জন্য কোন জামা কিনবে, এই স্বপ্নেই প্রতিদিন এক বার করে শপিংমল ঘুরে আসে সুমন, আসলেই আমাদের মত মদ্ধবিত্তরা বুঝি এমনই।
এক সময় ঈদের আর দুই দিন বাকি সুমন তার মালিককে টাকার কথা বলে,মালিক তাকে বেতনের অর্ধেক টাকা দেয়। আর এই টাকা নিয়েই সুমন শপিংমলে যায়, গিয়ে স্বাদ্ধের মধ্যেই সুমির জন্য লাল টুকটুকে একটা শাড়ি কিনে মার জন্য শাড়ি বাবার জন্য পাঞ্জাবি আর ছোট ভাই বোনদের জন্য জামা কিনে বাসায় ফিরে, অপেক্ষা শুধু বাড়ি ফেরা কবে ছুটি পাব। আজ সুমনের ছুটি সুমন তাড়াহুড়ো করে বাসায় যায়, বাসায় গিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে বাড়ির পথে, রেল স্টেশন পৌঁছাতেই হাজার হাজার মানুষ ট্রেনের অপেক্ষায়, সুমনের তো টিকিট নাই তাহলে সুমন কিভাবে যাবে সুমন মনে মনে ভাবতে লাগলো আমাকে যে ভাবেই হোক এই ট্রেনে বাড়ি যেতে হবে তা না হলে যে আবার দুই ঘন্টা পরে যেতে হবে, দুই ঘন্টা আগে বাড়ি পৌছালে তো অনেক কিছু এই বলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাঁদে উঠে গেল,ট্রেন তার নিজস্ব গতিতে ছুটে চলেছে আর ঐ দিকে অধির আগ্রহে অপেক্ষায় ভালবাসার মানুষ গুলো। হঠাৎ কি যেন হয়ে গেল সুমির জীবনে নেমে এল এক কালো অধ্যায়।
সুমন ট্রেনের ছাদের উপর থেকে পরে এ পৃথিবীর সকল মায়া ত্যাগ করে সুমিকে লাল শাড়ির পরিবর্তে সাদা শাড়ি উপহার দিয়ে তাদের ভালবাসার সমাপ্তি টেনে চলে গেল যেখানে গেলে শত ভালবাসার টানই থাকোক না কেন আর আসা যায় না সেই না ফেরার দেশে। লাল শাড়ির ব্যাগটা মার শাড়ি বাবার পাঞ্জাবি ছোট ভাই বোনের জামা, সুমির জন্য কানের দুল হাতের চুড়ি এসবের ব্যাগ গুলো সুমনের নিতর দেহের পাশে পরে আছে। সুমনের প্যান্টের পকেটে যেন মোবাইল বেজেই যাচ্ছে কিন্তু রিসিভ করার মত যে সুমন আর নেই। এক পথচারী মোবাইল টা হাতে নিতেই দেখে সুমি নামের একজন তাকে ফোন দিয়েছে, লোকটি ফোনটা রিসিভ করতেই ঐ পাশ থেকেই কে যেন বলে উঠলো ওগো ফোন রিসিভ করছনা কেন কোথায় আছ আর কত সময় লাগবে। লোকটি তাকে বলে সে আর কখনো আসবেনা, সে যে চলে গেছে না ফেরার দেশে। একথা শুনতেই সুমি চিৎকার মেরে পরে যায়।
পরিশেষে এটাই বলতে চাই, কোন দিন না ফেরার চেয়ে, দেরিতে পৌছানোই ভাল, তাই আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কোন রকম ভ্রমন করবনা। আমরা প্রয়োজনে একদিন পরে বাড়ি যাব তবুও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি যাবনা, আর আমরা যারা বাড়িতে আছি আমরা কখনো তাদের উপরে চাপ সৃষ্টি করবনা যে ঈদের আগের দিনই বাড়িতে আস। প্রয়োজনে ঈদের দিন না হয় পরের দিন যাব তবুও একবারে না যাওয়ার চেয়ে তো ভাল । এই ঈদে সবার যাত্রারই শুভ হোক।
সুমনের স্বপ্নটা আর বাড়ি গেলোনা মাঝপথে থেমে গেলো। এ এক অনিশ্চিত জীবন মানুষের। কত স্বপ্ন কত কিছু এক মুহুর্তেই শেষ হয়ে যায়। তবুও দোয়া করি সবার স্বপ্ন যেনো বাড়ি যায়
হ্যা দাদা , এটাই কামনা।
আপনার গল্পটি পড়ে আমার খুবই ভাল লাগল। আসলেই মানুষের জীবন বিভিন্ন ঘটনাবহুল হয়ে থাকে, তবে নতুন একটি ঘটনা সম্পর্কে জানতে পেরে কিছুটা খারাপ লাগলেও ভালো লাগলো। যাহোক সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করি আরও কিছু বিষয় আমাদের মাঝে এভাবে উপস্থাপন করবেন।
ধন্যবাদ ভাইয়া।
এভাবে হাজারো সুমনের স্বপ্ন থেমে যায় রাস্তার মাঝ পথে। আসলে কার না মন চায় পরিবারের সবার সাথে ঈদের আনন্দটা একটু ভাগাভাগি করে নিতে। কিন্তু আমাদের উচিত পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজেকে মানিয়ে নেওয়া। হোক দুই দিন পরেই নাই সবার সাথে দেখা করলাম। কিন্তু সেই দেখাটা যেনো শেষ দেখা না হয়।