নামখানায় নিরুদ্দেশ - পর্ব ২ (১০% shy-fox ও ৫% abb-school এর জন্য বরাদ্দ)

হোটেলে নিজের ঘরে ঢুকে হাঁফ ছাড়ল রূপ। দেড়শো কিমি ট্রেন যাত্রার পরে অবশেষে একটু গড়িয়ে নিতে পারবে। শীতের সকালে ভোর চারটেয় উঠে বেরোতে কার-ই বা ভাল লাগে? আর যার-ই লাগুক, তার কোনোদিনই লাগে না। পুলিশে চাকরি করতে গিয়ে অ্যাসাইনমেন্টের চাপে পড়ে পাগল হবার দশা। তবু এই অ্যাসাইনমেন্টটা তার জন্য শাপে বর হয়েছে। এর জন্য এতটা ঘোরা হয়ে গেল তার। কলকাতার লোক শীতে টিকিট কেটে দার্জ‌িলিঙ বা সিকিমে বেড়াতে যায়। আরও টাকা থাকলে কুলু-মানালিতেও যায়। রূপ সেখানে ব্যতিক্রম। কলকাতার বা শহরতলির শীতেই তার অস্থির লাগে। চাকরি থেকে ছুটি বের ক‌রতে পারলে সে একক ভ্রমণে দক্ষিণ ভারতে যায়। উত্তরের চেয়ে দক্ষিণই তাকে বেশি টানে।

এটা যদিও নিখাদ ছুটি নয়, তবু লোকাল ট্রেনে এতটা যাত্রা মন্দ কী!

image.png

image source

পরিষেবায় কল করে ব্রেকফাস্টের অর্ডার দিল রূপ। দিয়ে ব্যাগ থেকে চলভাষ বের করে তাতে কেসের ফাইলটা পড়তে শুরু করল। এতে নিখোঁজ মেয়েদের সম্পর্কে বিবরণ দেওয়া আছে।

১। মৌসুমী কর্মকার, বয়স সাতাশ। স্বামী কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন। বাড়িতে শুধু তিনি ও শ্বশুর থাকতেন। নিখোঁজ হবার আগেরদিন স্বামীর সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা হয়। পরেরদিন দুপুরের খাবার পরে শ্বশুরমশাই একটু গড়িয়ে নিচ্ছিলেন। বিকেলের চা না পেয়ে বৌমাকে ডাকাডাকি করতে থাকেন। অনেকক্ষণ ডেকেও সাড়া না পেয়ে রেগেমেগে বৌমার ঘরে গিয়ে প্রথমে দরজার বাইরে থেকে ডাকেন, পরে দরজা ধাক্কা দিয়ে দেখেন ভিতর থেকে বন্ধ। আরও কিছুক্ষণ ডাকাডাকি, শেষে প্রতিবেশীদের খবর দেওয়া হয়। তারা এসে দরজা ভেঙে দেখে কেউই ঘরে নেই। এতক্ষণ শ্বশুরমশাই মনে করছিলেন যে বৌমা ঘরের ভিতর ঘুমিয়ে আছেন, কী বড়জোর, যা বেশি সম্ভাব্যও বটে, আত্মহত্যা করেছেন। আপাতভাবে কোনো কারণ না থাকলেও তো আত্মহত্যা করে মানুষে। কিন্তু দরজা খুলে দেখা গেল, সেসব কিছু না। বৌমা নিজেই ঘরে নেই। প্রতিবেশীদের সামনে লজ্জায় অধোবদন হয়ে গেলেন শ্বশুর নটবর কর্মকার। শেষে কিনা তাঁর বাড়ির বৌ পালালো!!

ঘরের দরজা বাদে ছিল দুটো জানলা। জানলা দুটোও ভিতর থেকে বন্ধ ছিল। তবে পরে অনুসন্ধানে জানা যায় যে জানলার গ্রিল কেটে বেরিয়েছেন মহিলা।

পড়তে পড়তেই কেমন অদ্ভুত লাগল রূপের। তৃতীয় শ্রেণীর গোয়েন্দা উপন্যাসেও এরকম প্লট দেখা যায় না। তবু, বাস্তব কল্পনার চেয়ে কত বেশি চমক দেয়! যাই হোক, সে আবারও ফাইলটা পড়তে শুরু করল।

image.png

image source

মৌসুমীদেবীর বাড়ির মূল দরজায় কোনো গ্রীল বা এরকম কিছু নেই। যে কেউ যখন ইচ্ছে ঢুকতে বেরোতে পারে। আর এই পাড়াগাঁয়ের বাড়িতে তো সিসিটিভির কথা ভাবাই যায় না। বড় দোকানে কেউ কেউ সিসিটিভি লাগালেও বাড়িতে লাগানোর কথা ভাবতেই পারেন না। তাই সেদিক দিয়ে কোনো সুবিধা হয়নি। আরও কয়েক ঘণ্টা খোঁজাখুঁজি, চারপাশের আত্মীয়দের বাড়িতে খোঁজ কোরে সাত দিন পরে শ্বশুর নটবর ও তাঁর ছেলে ঘনশ্যাম নামখানা থানায় গেছিলেন অভিযোগপত্র দায়ের করতে। ঘনশ্যাম কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন। শুনে থানার বড়বাবু খিঁচিয়ে ওঠেন, এত দিন পরে এলেন কেন? আর না এলেই পারতেন!

ঘনশ্যাম রাগ করেন না। একে তিনি বাইরে থাকেন, কারখানায় বললেই ছুটি পাওয়া যায় না, তবু অনেক ধরেকরে তবে ছুটি পেয়ে কোনোরকমে বাড়িতে ফিরেছেন তিনি। বাবা প্রিয় বৌমাকে হারিয়ে একদম ভেঙে পড়েছেন। আর এখানে আশেপাশে তাঁদের আত্মীয়রাও তেমন নেই। তো তিনি না ফিরলে কী করে থানায় আসবেন? এই কথা বারবার বলতে বড়বাবু আপাত শান্ত হন। তিনি বাবা-ছেলেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রয়োজনীয় তথ্য লিপিবদ্ধ করতে আদেশ করেন দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিককে। নিখোঁজ হবার সময়ে মৌসুমীর স্বামী কাছে ছিলেন না, তাই তিনি তেমন কোনো তথ্য দিতে অপারক হন। শ্বশুরই মূলতঃ প্রশ্নের উত্তর দেন।

২। রঞ্জনা প্রামাণিক, বয়স তেত্রিশ। গত ১৫ই নভেম্বর নিখোঁজ হন। বাড়িতে শ্বশুর, শাশুড়ি, স্বামী ও দুই ছেলে। সেদিন সকাল থেকেই তাঁকে পাওয়া যাচ্ছিল না। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করার পরে সেদিন রাতে থানায় অভিযোগ করা হয়। এই ঘটনাও অনেক রহস্যের।

image.png

image source

৩। সাধনা পাল, বয়স চল্লিশ। গত ৩০শে নভেম্বর নিখোঁজ হন। নিখোঁজদের মধ্যে একমাত্র এঁর সঙ্গেই চলভাষ ছিল। মোবাইল নেটওয়ার্ক ঘেঁটে যা তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তার ভিত্তিতে বলা যায় যে তাঁর নেটওয়ার্ক শেষ পাওয়া গেছে বকখালিতে। তিনি ভাইয়ের বিয়েতে বরযাত্রী এসে নিখোঁজ হন। আগের দিন ভাইয়ের বিয়ে ছিল। বিয়ে মিটতে অনেক রাত হয়। তারপরে খাওয়াদাওয়া করে সবাই একটু গড়িয়ে নিচ্ছিলেন। পরের দিন সকাল থেকে সবাই নানান কাজে ব্যস্ত ছিল। বরযাত্রীরা বৌ নিয়ে ফেরার কথা। এর মধ্যে সারাদিনে বারবার সাধনাদেবীর খোঁজ হয়েছে। অমুক মনে করেছে, তমুকের ওখানে আছেন। এইভাবে কাটার পরে বিকেলবেলা যখন বরবৌকে গাড়িতে তোলা হচ্ছে, তখনও খুঁজে না পেয়ে বরযাত্রীরা একদল বরবৌকে নিয়ে চলে যায়। আরেকদল ওঁকে খুঁজতে থাকে। অনেকক্ষণ খুঁজে না পেয়েও অবশেষে পরেরদিন তাঁর স্বামী এসে থানায় অভিযোগ ‌করেন।

image.png

image source

তিনটে ঘটনায় সেদিন থেকে প্রায় একমাস কেটে গেলেও এখনও পর্যন্ত কোনো মুক্তিপণ চেয়ে কল আসেনি। এমন কোনো অজ্ঞাতপরিচয় মৃতদেহও আবিষ্কৃত হয়নি, যা ঐ মহিলাদের হতে পারে। এই ঘটনাই আরক্ষাবিভাগকে সবচেয়ে ভাবিয়ে তুলেছে।

ঘটনাগুলোর মধ্যে সদৃশতা আবিষ্কারের চেষ্টা করল রূপ। তার মধ্যে বেয়ারা ব্রেকফাস্ট নিয়ে উপস্থিত হলো।

(ক্রমশঃ)

Sort:  
 2 years ago 

পরের পর্বের অপেক্ষা করছি