ফ্রি ভিসায় যাওয়া সৌদি আরব প্রবাসীর কষ্টের জীবন গল্প (২য় পর্ব )।

in Incredible India2 years ago (edited)

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

পরম করুণাময়! অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি

হ্যালো আমার প্রিয় বন্ধুরা,
আপনারা সবাই কেমন আছেন আশা করি সবাই ভাল আছেন এবং সুস্থ আছেন। আজকে আমি যে গল্পটি শুরু করছিলাম সেই গল্পটি শেষ করার চেষ্টা করব। সকাল থেকে গল্পটি অল্প অল্প করে লিখতে শুরু করছি। তো যাই হোক আমরা মূল গল্পই ফিরে আসি ‌।
প্রথম পর্বের লিংক 🔗

IMG_20231020_221822.pngক্যানভা দ্বারা সম্পাদিত

কালকে আমি শেষ করছিলাম তুহিনকে তার চাচাতো ভাই সৌদি আরব নিয়ে যাবে( এখানে)। যারা আমার লেখাটি পড়েছেন তারা অনেকে এই বিষয়টি জানেন। তুহিনের কাগজপত্র সবকিছু রেডি করে চাচাতো ভাইয়ের কাছে পাসপোর্ট এর এক কপি ছবি পাঠিয়ে দেন। দুই মাসের মধ্যেই তার আকামা বেরিয়ে আসে।

২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ৩ তারিখ শুক্রবার 6:30 মিনিটে বাংলাদেশের শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইট হয় তুহিনের খুব ভালো ভাবেই সেখানে পৌঁছে যাই, নতুন জায়গা মানিয়ে নিতে কয়েকদিন সময় লাগলেও তুহিন সবকিছুই সামনে নিয়ে কাজের জন্য প্রস্তুত।

pexels-pixabay-358220.jpgsource

কোম্পানি প্রথমে তিন মাসের আকামা দিয়ে থাকে যারা সৌদি আরব গিয়েছেন তারা হয়তো বা বিষয় কি জানেন। তিন মাসের আকামাই তুহিন যে কোম্পানিতে গিয়েছে ওই কোম্পানিতে কাজ করতে শুরু করল। বেশ মোটামুটি ভালই কাজ চলছে বাড়িতে প্রথম দুই মাসের বেতন পাঠিয়েছে আর এক মাসের বেতন তার আকামার জন্য রেখে দিয়েছে।

pexels-kateryna-babaieva-2965258.jpgsource

তুহিন নতুন আকামা হাতে পওয়ার পর কোম্পানি থেকে বলে দেওয়া হয় , তুহিনের আর কোন কাজ নাই কাল থেকে যেন কাজে না আসে মাসে ১৫ তারিখে বেতন বুঝে দিয়ে কাজ থেকে বাদ দেওয়া হয় তার চাচাতো ভাই অন্য আরেকটি জায়গায় কাজের জন্য গিয়েছে পরবর্তীতে তুহিন তার চাচাতো ভাইকে ফোন করে বলল যে আমার কাজ নাই আমার একটি কাজ ঠিক করে দে আমি তো সৌদি আরব কাউকে চিনি না একমাত্র তুই আমার পরিচিত। তুহিনের চাচাতো ভাই বলল আমি রাতে ফোন করে তোকে জানাচ্ছি এই বলে ফোন রেখে দিল।

রাতে আবারো ফোন করলো তুহিন কিন্তু ফোন রিসিভ করল না তার চাচাতো ভাই । তখন অনেকটাই দুশ্চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না দুইদিন পর আবারো ফোন করলো তার ভাইয়ের কাছে আজকে তুহিনের ফোন রিসিভ করে বলল যে কাজের জন্য কয়েকটি জায়গায় আমি খবর লাগিয়েছি কিন্তু সেখানে ঢুকতে হলে দুই হাজার রিয়েল ঘুষ দিয়ে ঢুকতে হবে। তখন তুহিন বলল আমি এত টাকা কোথায় পাবো সবেমাত্র এসেছি তুই তো সবই জানিস যেকোন একটা ব্যবস্থা কর আমার জন্য। তখন তার চাচাতো ভাই সান্ত্বনা দিয়ে বলল যে আচ্ছা ঠিক আছে আমি দেখছি।

pexels-inzmam-khan-1134204.jpgsource

বন্ধুরা আপনারা হয়তো মনে করছেন তুহিনের চাচাতো ভাই তার জন্য খুব কষ্ট করছে কাজ খুঁজে বেড়াচ্ছে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটা নয়, সে কাজ ঠিক করে ঠিক কিন্তু টাকার জন্য। তুহিনের চাচাতো ভাই মূলত সৌদি আরবের কাজের দালাল সে মানুষের কাছ থেকে বিভিন্ন কাজের অজুহাতে টাকা নিয়ে থাকে এবং দেশ থেকে ফ্রি ভিসার লোক নিয়ে আসে দুই থেকে তিন মাস কাজ দিয়ে পরবর্তীতে কাজ থেকে বাহির করে দেয় এটা অনেক বড় একটি চক্র যারা এই চক্র না পড়ছে তারা বুঝবে পারবে না। তুহিনের বয়স্ক কম তাই এখনো পর্যন্ত বুঝতে পারি নাই যে তার চাচাতো ভাই তার সাথে অভিনয় করছে।

এভাবে মাসের পাশ মাস গড়িয়ে যাই তুহিনের কাছে খাওয়ার টাকা পর্যন্ত নাই, তাই মাঝে মাঝে সে বাহিরে বোতল কুড়িয়ে বিক্রি করে পাঁচ থেকে ছয় রিয়েল পাই তা দিয়ে কোনরকম একবেলা খেয়ে না খেয়েই দিন পার করে। সে সৌদি আরবে নতুন কোন রাস্তাঘাট ঠিকমতো চিনে না কারো সাথে পরিচয় নাই কোথায় গেলে কাজ মিলবে সেটাও জানে না এদিকে বাড়িতে ঋণের বোঝা দিনে দিনে বেড়েই চলছে। যখন দুই মাস পেরিয়ে যায় তখন বুঝতে পারলো তার চাচাতো ভাই একজন প্রতারক দালাল।

pexels-diogo-brandao-4430393.jpgsource

তুহিন না পারছে সেখানে থাকতে না পারছে বাড়ি আসতে। সব মিলিয়ে খুব করুন অবস্থা। বাড়ি থেকে তার চাচাতো ভাইয়ের কাছে ফোন দিলে সে ফোন রিসিভ করে না।।। তুহিনের মত এমন হাজারো পরবাসী সৌদি আরবে ফ্রি ভিসায় কাজ না পেয়ে দিন রাত চোখের পানি ফেলাচ্ছে। তুহিনের শেষ পরিণতি কি হবে বলতে পারছি না তবে এখনো পর্যন্ত সে চেষ্টা করে যাচ্ছে কাজ মিল করার উদ্দেশ্যে। দোয়া করি সে যেন দ্রুত কাজ মিল করতে পারে। আর আমি বলে রাখছি তুহিন কাজ পেলে পরবর্তীতে আপডেট আমি আপনাদেরকে জানাবো তুহিনের অবস্থা সম্পর্কে।

আপন মানুষ নিয়ে দুই লাইন আমার প্রিয় গান,

(১)আপন মানুষ চেনা বড়ই দাইরে, আপন মানুষ বোঝা বড়ই দায়।(২) আপন মানুষ শুধু আপন কে কাদায়, আপন মানুষ চেনা বড়ই দায়।

গানের লিংক

এই দুনিয়ায় কাকে বিশ্বাস করবেন সবাই যেন নিজের স্বার্থের জন্য আপন মানুষকে ও আঘাত দিতে পিছপা হচ্ছে না। তো বন্ধুরা আজকের মত এখানেই শেষ করছি সবাই ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন এই প্রত্যাশাই করি আল্লাহ সবার মঙ্গল করুন।

Sort:  
Loading...
 2 years ago 

সত্যি তুহিনের খুব খারাপ সময় যাচ্ছে। তবে আমার মনে হয় ও খুব তাড়াতাড়ি নতুন কাজ পেয়ে যাবে।

 2 years ago 

মিডলইস্টের দেশগুলোতে আমাদের দেশের অনেক প্রবাসীদের জীবনই খুব কস্টে কাটতেছে।এমবাসি থেকেও ঠিকমতো কোন সাহায্য পায় না অনেক সময়ই।অথচ তাদের কস্টার্জিত টাকায়ই আমাদের দেশের জিডিপি বৃদ্ধি পায়।
আপনি খুব সুন্দর একটা বিষয় নিয়ে লিখেছেন এজন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
ভালো থাকবেন সবসময় এই শুভকামনা রইলো আপনার জন্য

Posted using SteemPro Mobile

 2 years ago 

আপন মানুষ গুলোই আপন মানুষের ক্ষতি করে থাকে। বর্তমানে আমি সেটা বেশ ভালোভাবেই উপলব্ধি করতে পারছি। কেননা আমার সাথেই এমন একটা ঘটনা ঘটেছে। যেটা আমি কল্পনাও করতে পারিনি।

তুহিন চাকরি খুঁজে বেড়াচ্ছে, আমি ঠিক জানিনা সে চাকরি পাবে কিনা। তবে আমার মনে হয় না অচেনা জায়গায় সে নিজের ঠিকানা খুঁজে পাবে। অসংখ্য ধন্যবাদ, এই গল্পের দ্বিতীয় পর্ব আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল। ভালো থাকবেন।

 2 years ago 

আপনার এই পোস্টের প্রথম পর্বটি আমি পড়েছিলাম। এবং দ্বিতীয় পর্ব পরম অপেক্ষায় ছিলাম আজ আপনি দ্বিতীয় পর্বটা দিয়েছে।। আসলে আপন মানুষ যে এতটা নিষ্ঠুর হতে পারে সেটা তুহিন এর গল্প না পড়লে জানতে পারতাম না।।

দোয়া করি সেই ভাইটার জন্য সৃষ্টিকর্তা যেন তার কোন একটা ব্যবস্থা করে দেয়।।