বুক রিভিউ : পথের পাঁচালী

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago
পথের পাঁচালী


  • বইয়ের নাম : পথের পাচাঁলী
  • লেখক : বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
  • প্রকাশকাল : ১৯২৯
  • খন্ড সংখ্যা : তিন
  • পৃষ্ঠা সংখ্যা : ১৮২
  • বইয়ের ধরন: উপন্যাস

IMG_20220427_082019.jpg

বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী উপন্যাস 'পথের পাঁচালী'। এই উপন্যাসের দ্বিতীয় খন্ড ধরা হয় অপরাজিত উপন্যাস কে৷ বিভূতিভূষণের অসাধারণ কীর্তি এই উপন্যাস খানি। বাংলা সাহিত্য কে সমৃদ্ধ করার জন্য যে বইগুলো অগ্রণী ভুমিকা পালন করেছে তার মাঝে এটি অন্যতম। জীবনের শুরু থেকে প্রকৃতির সাথে মিলে মিশে বড় হওয়ার এক অসাধারণ গ্রামীণ বর্ণনা আপনাকে মুগ্ধ করবে। উপন্যাসের প্রধান চরিত্র অপু হলেও, অপুর জীবনকে ঘিরে দুর্গার জীবনের দিনলিপিও এই উপন্যাসের প্রাণ। বলা হয়ে থাকে,

অপু উপন্যাসের প্রধান চরিত্র হলেও দুর্গা উপন্যাসের প্রাণ। দুর্গাকে ছাড়া অপুকে কল্পনা করা অসম্ভব।

IMG_20220427_082245.jpg

পথের পাঁচালি উপন্যাস পড়লে আপনি জানতে পারবেন গ্রামের খুব সহজ সাধারণ ঘরের দুই শিশুর চিরায়ত শৈশবের কাহিনি। আহা! মন একেবারে ভরে যাব। এই উপন্যাস আপনাকে নিয়ে যাবে সেই ছোট বেলায়। যখন আপনি পানিতে নেমে পানিফল খেতেন, ভাইবোনের সঙ্গে ছোট কিছু আমের গুটি নিয়ে ঝগড়াঝাটি করতেন, ঝড় হলেই বেড়িয়ে যেতেন বম কুড়ুতে, জঙ্গলে ছোট্ট জায়গা পরিষ্কার করে চড়ুইভাতি করতেন কতো না আনন্দের সমারোহ ছিলো সে জীবনে। আমরা যারা শৈশব গ্রামে কাটিয়েছি তাদের অতীত ইতিহাস মনে পড়ে যাবে। কখন আনন্দে চোখে জল এসে যাবে বুঝতেই পারবেন না।

উপন্যাসের অপু এবং দুর্গা হলো নিশ্চিন্দিপুর গ্রামের দুই ভাই বোন। বাবা হরিহর এব মা সেই সাথে দূর সম্পর্কের এক পিসিকে নিয়ে তাদের সংসারে। সংসারে অভাব ছিলো নিত্য সাথী।

উপন্যাসের প্রথম খন্ড 'বল্লালী বালাই' এই অংশে দুর্গার ছোট ভাই অপু জন্ম গ্রহণ করে।এবং পিসি ইন্দির ঠাকরুনের মৃত্যু হয়।

দ্বিতীয় খন্ডের নাম ' আম আঁটিট ভেঁপু ' এখানে অপু এবং দুর্গার শৈশব জীবন সুন্দর ভাবে চিত্রায়িত হয়েছে। দুর্গা যেন প্রকৃতির সন্তান রূপে এখানে প্রতিফলিত হয়েছে। সে প্রকৃতির সাথেই মিশে থাকে সব সময়। প্রকৃতি থেকে আম,জাম, নোনাফল, পানিফল ইত্যাদি তার খাওয়ার উপকরণ। কলমি ফুল দিয়ে সে সাঁজে, কাচপোকা দিয়ে টিপ পড়ে। আবার কষ্টের দিনে মা কে প্রকৃতি থেকেই শাক, মাশরুম, বন আলু ইত্যাদি এনে দেয়। এরপর যখন দুর্গার বিয়ের কথা ওঠে তখন সে ভয় পেয়ে যায়। ভাবে এভাবে এই মাঠে, বনে সে আর ঘুরতে পারবে না, অপুকে দেখতে পারবে না। তার এই বিবাহ ভীতি যেন প্রকৃতি দূর করে দিল নিজের কাছে টেনে নিয়ে। দুর্গার মৃত্যুতে অপু একদিনেই বড় হয়ে উঠলো।

এরপর তৃতীয় খন্ড 'অক্রুর সংবাদ '। গ্রামের দুঃখ কষ্ট দূর করার আশায় হরিহর, অপু আর ওর মা সবাই মিলে কাশীতে চলে গেল। কিছু দিন ভালো কাটলেও হরিহরের মৃত্যুর পর অপুরা আবার দুঃখে পড়লো।শেষ পর্যন্ত তার মা এক বড় বাড়ির দাসী হলো।

পথের পাঁচালী উপন্যাসের কাহিনির চেয়ে কাহিনির বর্ণনা আপনাদের আকর্ষণ করবে অনেক বেশি। এতো সুন্দর সাবলীল ভাষায় জীবনের রূপ উঠে এসেছে এই উপন্যাসে তা আসলেই অসাধারণ।

IMG_20220427_082236.jpg

এই উপন্যাসটি আমার পছন্দের উপন্যাস গুলোর মাঝে প্রথম সারিতে আছে। ১০ এ ৯/১০ দেপয়ার মতো উপন্যাস একটি পথের পাঁচালী৷ যতোবারই পড়বেন ততোবারই নতুন কিছু আবিষ্কার করবেন।নতুন লাগবে।কখনোই পুরাতন হবে না। আমি নিজে এ পর্যন্ত ৮ বার পড়েছি।তবুও আবার পড়তে বসলে শেষ না করে উঠতে পারবো না। অসাধারণ এক আকর্ষণ ক্ষমতা আছে এই উপন্যাসের। তার চেয়েও ভালো লাগবে এই উপন্যাসের অপু চরিত্র কে। সে এতো মোলায়েম, সুন্দর মনের মতো একটি শিশু আপনি মনের অজান্তে বলে উঠবেন এ আমার চেনা, খুব পরিচিত একজন। কবি সে। কবির দৃষ্টি অপুর। কখনো কোনো কিছু নিয়ে অনুযোগ নেই। কারো সাথে দূর্ব্যবহার নেই। খুব স্বাভাবিক জিনিস দেখেও আশ্চর্য প্রশ্ন করতে পারে অবাক হতে পারে। এমন দৃষ্টি যেন অচেনা। সবার মাঝে থাকে না।

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা এটি একটি আত্মজৈবনিক উপন্যাস। আত্মজৈবনিক উপন্যাস বলা হয় সেগুলোকে যেগুলোতে লেখকের নিজের জীবন কাহিনি নয় বরং নিজের জীবনের ছায়া পাওয়া যায়। উপন্যাসের অপু চরিত্রের মাঝে লেখকের ছায়া খুঁজে পাওয়া যায়। দুর্গার মতো লেখকেরও এক বোন খুব অল্প বয়সে মারা যায়।

এক কথায় এই উপন্যাস আপনাকে অনেক আনন্দ দেবে। সময় হলে পড়ে দেখতেই পারেন। শুধু উপন্যাসের একটি লাইন বলতে চাই,

খানিক পরে দুর্গা পুকুরের জলে নামিয়া বলিল _ কতো নাল ফুল রয়েছে অপু! দাড়া তুলচি।

ছবিতে :mstnusrat
ডিভাইস: Huawei
মডেল:y7pro

Sort:  
 3 years ago 

জীবনে খুব অল্প সংখন উপন্যাস এর বই পড়েছি তার মধ্যে পথের পাঁচালী অন্যতম।সে ছিল বইটি,যখন পড়া শুরু করি মনে সব কাজ বাদ দিয়ে শুধু ওই বইটাই পড়ি।আর আপনার রিভিউ টা খুব ভালো ছিল।

 3 years ago 

ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর মতামতের জন্য।