হাইকু কী?
this image edited by mstnusrat
হাইকু হলো এক ধরনের জাপানিজ কবিতা। এটি মূলত একটি সংক্ষিপ্ত কবিতা। সাধারণত তিন লাইনে লেখা হয়ে থাকে এবং এর শ্বাসাঘাত থাকে মোট ১৭ টি। জাপানি হাইকু তে শ্বাসঘাত ১৭ টি হলেও ইংরেজি এবং বাংলার শ্বাসঘাত ১৭-২৫ পর্যন্ত হতে পারে।কেননা বিভিন্ন দেশের ভাষা বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। এই তিনটি লাইনে একটি চিত্রকল্প ফুটিয়ে তোলার নামই হলো হাইকু। অর্থাৎ হাইকু আপনার মাঝে একটি চিত্রকল্প ফুটিয়ে তুলবে।
হাইকু বুঝতে হলে প্রথমেই আমাদের বুঝতে হবে শ্বাসঘাত বা অক্ষর কী?
শ্বাসঘাত হলো কবিতার মাঝে বিশেষ কিছু অক্ষরে জোর দেওয়া।
যেমন,
- আয় ছেলেরা আয় মেয়েরা
ফুল তুলিতে যাই।
ফুলের মালা গলায় দিয়ে
মামার বাড়ি যাই।
কবিতাটিতে আমরা 'অায়' শব্দটাতে যেমন জোর দিয়েছি 'ছেলেরা' শব্দটিতে তেমন জোড় দেই না। এটাই হচ্ছে শ্বাস দিয়ে আঘাত করা বা জোড় দিয়ে বলা। ফুল, গলায়, মামার শব্দগুলোতে আমরা জোর দিয়ে পড়ি।
এবার আসুন অক্ষর কাকে বলে?
অক্ষর হলো নিশ্বাসের স্বল্পতম প্রয়াসে উচ্চারিত ধ্বনি বা ধ্বনিগুচ্ছ। অর্থাৎ ইংরেজিতে সিলেবল যাকে বলি তাকে বাংলায় অক্ষর বলা হয়। অনেকে আমরা অক্ষর এবই বর্ণ একই মনে করি। কিন্তু আসলে দুইটা ভিন্ন জিনিস। বর্ণ হলো ক, খ, অ, আ ইত্যাদি। আর অক্ষর হলো নিঃশ্বাসের স্বল্প প্রয়াসে উচ্চারিত ধ্বনি বা ধ্বনির সমষ্টি।
যেমন, আম, জাম, লাল, নীল এক অক্ষর বিশিষ্ট শব্দ।
আমি,তুমি, পরশু, মামা দুই অক্ষর বিশিষ্ট শব্দ।
কলম, বেগুনি, আকাশি তিন অক্ষর বিশিষ্ট শব্দ।
এভাবে বিভিন্ন অক্ষর বিশিষ্ট শব্দ হতে পারে।
হাইকু তে এমন ১৭-২৫ টি অক্ষর থাকবে।
যেমন আমরা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি হাইকুর উদাহরণ দিতে পারি।
- পুরনো পুকুর
ব্যাঙ্গের লাফ
জলের শব্দ।
this image edited by mstnusrat
হাইকুর আরেকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এতে খুব অল্প ভাষায় একটি সুন্দর চিত্রকল্প থাকবে। তাহলে চলুন জেনে নিই,
চিত্রকল্প কী?
চিত্রকল্প হলো কোনো কথার দ্বারা আমাদের কল্পনায় একটি ছবি বা চিত্র ফুটে তোলা। আমরা যেমন বিভিন্ন উপন্যাস পড়লে মনের ভিতর উপন্যাসের নায়ক নায়িকা তাদের ঘরবাড়ির ছবি কল্পনা করে নিই এটাও তেমনি একটি বিষয়। কিন্তু কথা হচ্ছে মাত্র তিনটি লাইনে একটি চিত্রকল্প ফুটিয়ে তুলতে হয় এখানে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাইকু টা পড়ে কি আমাদের মনে একটি চিত্রের আবির্ভাব হয়নি? একটা ছোট ডোবা পুকুর। একবি ব্যাঙ হঠাৎ ঝাপিয়ে পড়লো। টুপ করে জলের শব্দ হলো এমন একটা সুন্দর চিত্র মনে তৈরি হয়ে গেছে।
এবার চলুন আরেকটি চিত্রকল্প তৈরি করি। এটি আমর লেখা হাইকু।
- গহীন ঘন বন
পাতার পতন
হরিণের উদাস চাহনি।
this image edited by mstnusrat
মনে কি একটা বনের চিত্র ফুটে উঠেছে। সেখানে একটি বিশাল গাছের নিচে হরিণ দাড়িয়ে আছে। একটি পাতা পড়লো হরিণটি উপরের দিকে তাকিয়ে রইলো।
এবারে আসুন জানা যাক হাইকু কী কী বিষয়ের উপর লেখা যেতে পারে?
হাইকু সকল বিষয় নিয়ে লেখা যেতে পারে। যেমন প্রিয় মানুষ, পৃথিবী, পরিবার, হাট, বাজার, দুঃখ কষ্ট, মাঠ, খেত সকল বিষয়ের উপরেই লেখা যাবে। শুধু শর্ত হলো অক্ষর ঠিক রাখতে হবে এবং চিত্রকল্প অবশ্যই ফুটিয়ে তুলতে হবে।
যেমন আমার লেখা একটি পরিবার নিয়ে লেখা হাইকু:
- সকালের মিষ্টি সূর্য
চায়ের কাপে আড্ডা
পারিবারিক শান্তি।
এছাড়াও আরও একটি হাইকু,
- গোধূলী আলোয়
প্রিয়ার মুখের হাসি
মৃদুমন্দ হাওয়া।
এখন আরেকটি প্রশ্ন জাগতে পারে,
হাইকু কি বাচ্চারা চাইলে লিখতে বা পারবে?
উত্তর হলো হ্যাঁ অবশ্যই পারবে। যেহেতু হাইকুর বিষয়ের কোনো বাধ্য- বাধকতা নেই সেহেতু তারা ছোটদের বিষয় নিয়ে হাইকু পড়তে ও লিখতে পারবে।
চারটি জিনিস খেয়াল করে যেকেউ অনায়াসে সুন্দর সুন্দর হাইকু লিখে তাদের মনের চিত্র সবার সামনে তুলে ধরতে পারবেন। আমারবাংলাব্লগে অনেকে আছেন অনেক সুন্দর কবিতা লেখেন।তাদের প্রতি আমার আহ্বান হাইকু লিখুন। আমাদের সাহিত্যেও এর একটি ভান্ডার তৈরি করুন আপনার সুন্দর সাহিত্যকর্ম দিয়ে। বিশেষ করে @blacks দাদা আপনার কবিতাগুলোর চিত্রকল্প আমার কাছে অসাধারণ লাগে। আপনার এক ভক্তের অনুরোধ থাকবে। আমাদের মাঝে কিছু হাইকু উপহার দেবেন। আপনার সুন্দর সুন্দর চিত্রকল্পগুলো দেখতে চাই।
সবাই ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ।
আমার পরিচয়
আমি @mstnusrat একজন ছাত্রী। আমি বাংলাদেশি। বাংলা ভাষাকে ভালোবাসি এবং শ্রদ্ধা করি। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়াশোনা করছি। স্টিমিট জার্নি আমার অল্প কয়েকদিনের। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন। যেন আমি অনেক ভালো কাজ করতে পারি। সকলকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আপনার পোস্ট অত্যন্ত উন্নত মানের। আপনার পোস্ট পড়ে আমি মুগ্ধ হলাম ।আমি এমন কিছু বিষয় আছে যা জানতাম না কিন্তু আপনার পোষ্টের মধ্য দিয়ে তা জানতে পারলাম ।বিশেষ করে হাইকুর বিষয়টা আমি জানতাম না কিন্তু আপনি খুব সুন্দরভাবে তা আমাদের মাঝে ব্যাখ্যা করেছেন। আপনার ইডিটিং এর কাজ অনেক সুন্দর। এছাড়াও আপনি চিত্রকল্প সম্পর্কে দারুন তথ্য দিয়েছেন। আপনি সঠিক বলেছেন আমরা যখন কোন উপন্যাস পড়ি সেখানে নায়ক নায়িকাও তাদের ঘরবাড়ি বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের কল্পনায় এমনভাবে স্থাপন করি যেন সত্যিই আমাদের চোখের সামনে বিষয় গুলো ঘটে যাচ্ছে। এত সুন্দর কোয়ালিটি সম্পন্ন শিক্ষানীয় পোস্ট আমাদের মাঝে উপস্থাপন করার জন্য আপনাকে অন্তরের অন্তস্থল থেকে জানাই ধন্যবাদ। শুভকামনা রইল
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপু। সুন্দর মতামতের জন্য।