শুভ বিবাহ (দ্বিতীয় পর্ব )

in Incredible India9 months ago
IMG_20250306_203242.jpg

Hello,

Everyone,

আশাকরি সকলে ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন। গত পোস্টে আমি বিবাহ অনুষ্ঠানের প্রথম পর্ব আপনাদের সাথে শেয়ার করেছিলাম ।আজকে তার দ্বিতীয় পর্ব নিয়ে আবার হাজির হলাম । হিন্দুর রীতি মতে শুভ বিবাহের পর্ব অনেকদিন ধরে চলতে থাকে এবং অনেক নিয়ম মানতে হয়।

অনেকে বিশ্বাস করেন যে, আমাদের রীতিটা অনেক কঠিন তাই আমাদের বিবাহ বন্ধন অনেক মজবুত হয়। অনেকদিন আগে অনলাইন মাধ্যমে পড়েছিলাম ,বিদেশী সম্ভবত ২২ দম্পতি হিন্দু রীতি মেনে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। তারা মনে করেন , আমাদের রীতিনীতি অনেক কঠিন তাই আমাদের সম্পর্কটা অনেক মজবুত ।

|IMG_20250306_125952.jpg|

আগের দিনে যেভাবে সম্পর্কটা মজবুত ছিল এখন কিন্তু আর সে রকম দেখা যাচ্ছে না ।এখন বিবাহ বন্ধনের থেকে বিবাহ বিচ্ছেদ বেশি হচ্ছে। হিন্দু বলুন, মুসলিম বলুন বা অন্য কোন ধর্মে বলুন বিবাহ বিচ্ছেদ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে । এর অনেক কারণ রয়েছে সেগুলো আজ নাইবা বললাম।

প্রথম পর্বে আমি বউ সাজানো পর্যন্ত ছিলাম ।ওদের বিবাহের শুভ লগ্ন ছিল ভোররাত পাচটায় । এভাবে এতটা সময় কনেকে সেজেগুজে বসে থাকা আসলেই অনেক কষ্টের বিষয়। আসলে এই সময়টা মেয়েদের জীবনে একবারই আসে তাইতো এতটা কষ্ট স্বীকার করেও সবকিছু মেনে নিতে হয়। এই বিবাহের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য অনেক অনেক ছবি ও ভিডিও করা হবে তাই তাকে বাধ্য হয়ে সেজেগুজে বসে থাকতেই হবে।

IMG_20250306_204448.jpgIMG_20250306_214838.jpg

এরি মাঝে প্রতিবেশীরা চলে আসলেন তাই বউকে তার নির্দিষ্ট আসনে বসিয়ে দিলাম ।আমরা সেজেগুজে নিলাম এবং বিয়ের প্রয়োজনীয় সব কিছু গুছিয়ে নিলাম ।বরকে বরণ করার পরে গেটে যে ফিতা ধরা হবে সেই ফিতাটা খুঁজে পাচ্ছিল না । কি করব? গাছে গাঁদা ফুল ছিল চট করে সেই ফুল তুলে মালা বানিয়ে লম্বা একটি ফিতা তৈরি করে নিলাম ।

রাত নয়টার সময় বরপক্ষ চলে আসলেন ।বর এতটাই ভীতু সে একটি মেয়েকে বিয়ে করতে ১৬০ জন বরযাত্রী নিয়ে আসলেন। পরের দিন কনে কিন্তু একাই বরের বাড়িতে যাবে। তাহলে বলুন, মেয়েরা কত সাহসী। বরকে গাড়ি থেকে নামিয়ে মন্দিরে নেয়া হলো ।সেখানে প্রণাম করিয়ে বাড়ির গেটে নিয়ে এলো।আমরা অপেক্ষায় ছিলাম কখন বর নিয়ে আসবে। যেহেতু আমি শাশুড়ি তাই আমাকে বরকে বরণ করতে হবে। শালিদের মিষ্টি মিষ্টি কথা এবং প্রতি উত্তরে বর পক্ষ থেকেও ভেষে আশা কথা সত্যি এই মুহূর্তটা অনেক সুন্দর।

গেট ধরার সময় টাকা নিয়ে অনেক সময় কথা কাটাকাটি হয় ,অনেক মান অভিমান হয়, এমনকি অনেক সময় যুদ্ধ লেগে যায় কিন্তু আমরা সেই কোন ঝামেলা করিনি ।কারণ এখানে কোন টাকা-পয়সার ঝামেলায় ছিল না ।সবকিছুই শুরুতে মিটমাট করে নেয়া হয়েছিল । শালিরা চিন্তা করেছিল যেহেতু গেটে কোন টাকায় দিবেনা তাই দুলাভাইয়ের জুতা চুরি করতে হবে। যেই চিন্তা সেই কাজ।

IMG_20250306_220902.jpg

বরকে তার নির্দিষ্ট আসনে বসানো হলো। শালিরা সবসময় চেষ্টায় থাকে কখন জুতা চুরি করবে। বরের বন্ধুগুলো অনেক চালু তারা কোন সুযোগ দিচ্ছিল না ।এরপর আসলো শাশুড়ি পরিচয় পালা ।এখানে বলে রাখা ভালো , কনে আমার থেকে ১৩ বছরের ছোট আর আমি এত তাড়াতাড়ি শাশুড়ি হয়ে গেলাম । নিজেকে খুব বড় বড় মনে হচ্ছে।

বরযাত্রী এবং এলাকাবাসী সকলের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে ।বর যাত্রী এবং এলাকাবাসী নিয়ে মোট ৭৫০ লোকের আয়োজন করা হয়েছিল ।সবকিছু খুব সুন্দর ভাবে হয়েছিল ।কোন কথা কাটাকাটি হয়নি বা কেউ কোন ভুল ধরতে পারেনি। আমরা সর্বদা চেষ্টা করেছি সবাইকে সুন্দর ভাবে আপ্যায়ন করার ।

শাশুড়ি হয়ে বরকে বরণ করে নিলাম। আঁচল দিয়ে বরের মুখ মুছিয়ে দিলাম যেন আমার মেয়েকে সে খুব ভালোবাসে ।মিষ্টি খায়িয়ে দিলাম যেন আমার মেয়ের সাথে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে ।পান দিয়ে বরের গাল মুছিয়ে দিলাম যেন আমার মেয়েকে সে লক্ষ্মীর মত রাখে ।আমাদের এই রীতিনীতি খুবই সুন্দর ।বরযাত্রীর অনেকেই খাবারের শেষে রাততে বাড়ি চলে যায়। বরের সঙ্গে অল্প কিছুজন ছিলেন। এলাকাবাসীও রাতে খাবারের পরে অনেকেই চলে যায় যেহেতু রাত ৫ঃ০০ টার সময় বিয়ের লগ্ন ছিল।

IMG_20250307_052112.jpgIMG_20250307_060010.jpg

অনেকেই ততটা রাত জেগে থাকতে পারবেনা। কণেকে সোনা কাপড় করার আয়োজন শুরু হলো। নেকলেস দিয়ে কনেকে আশীর্বাদ করা হলো এবং তার সাথে অনেক কিছুই উপহার দেওয়া হল ।রাত তখন বারোটা বাজে ।অনেক ক্লান্ত লাগছিল তাই সকলে বলল যে, এবার একটু ঘুমিয়ে নাও ভোর রাতে ডেকে দিব। আমিও একটু ঘুমিয়ে নিলাম। বর মশাই অনেক ক্লান্ত তাই সে ঘুমালো কিন্তু কনের সাজ নিয়ে সে আর ঘুমাতে পারলো না তাই তাকে বসে বসে অপেক্ষা করতে হলো কখন রাত ৫ টা বাজবে।

আসলে মেয়েদের সেক্রিফাইস এখান থেকেই শুরু । শুভক্ষণে আমরা সবাই জেগে পড়লাম বরকে ছাদনা তলায় নেওয়া হলো। মজার বিষয় হল, বর যখন ঘুমাতে গেল এই সুযোগে তার শালিরা তার জুতা চুরি করল । বর খালি পায়ে ছাদনা তলায় যেতে রাজি হচ্ছে না। কি করা ! কনের দুলাভাই বরকে কোলে করে নিয়ে ছাদনা তলায় গেল । ছাদনা তলার নিয়ম গুলো পালন করা হলো।

শুভদৃষ্টি হল, মালাবদল হল । বর তখনো শালীদের টাকা দেয়নি, তাই শালিরা তাকে জুতা ফেরত দেয়নি। বেচারা কনের দুলাভাই আবার বরকে কোলে করে বিয়ের আসরে নিয়ে আসলো। এক এক করে সমস্ত পর্ব শেষ হলো ।এরপরে সিঁদুর দান হলো আর এই সমস্ত কিছু মেয়ের মাকে দেখতে নেই তাই আমিও দেখিনি।

সিঁদুর দানের কোন ছবিও আমি তুলতে পারিনি ।বিয়ে শেষ হতে হতে পরেরদিন সকাল ৭ টা বেজে গেল ।বর-কনেকে বরণ করে ঘরে তোলা হলো এবং মা হিসেবে আমি আমার সমস্ত রীতি পালন করলাম। মেয়ে জামাইকে বরণ করে নিলাম ।এভাবে কেটে গেল আমাদের বিবাহের দিনটি ।আশা করি আপনাদের খুবই ভালো লেগেছে তবে আজ এখানেই বিদায় নিচ্ছি ।নতুন কোন পোস্ট নিয়ে আবার আসবো সে পর্যন্ত সকলে ভালো থাকুন এবং সুস্থ থাকুন ।

Thank You So Much For Reading My Blog📖

3YjRMKgsieLsXiWgm2BURfogkWe5CerTXVyUc6H4gicdRPmPayXPfM22kXaj3xKw37oQ9tua3JfrnuMRWWqGHfhuyA1UYheY5qjiFbP3BW...JWNUaLb1UAxtVkvpEzFvrbCpiTVHr2qys8cnVHpyrfv38wVPMc1Luya71X8AzcNNuKjF1rHwqMTUWN8r39rGXHzGTLWtLUbqpNh6DHaWG6eK2zUkgnx8ShFKdg.png

|

Sort:  

Team Steem Peacocks 🦚

Congratulations! Your post has been upvoted through steemcurator07.



Curated by : @afzalqamar

 9 months ago 

Thank you, Sir,@afzalqamar

 9 months ago 

এটা আমিও বিশ্বাস করি আপনাদের রীতিনীতি অনেক কঠিন এই যে একটা বিয়ে সম্পূর্ণ হতেই সারারাত কেটে গেল এটা আমাদের ক্ষেত্রে হয় না আমাদের ক্ষেত্রে বিয়ে সম্পূর্ণ হতে যদি বেশিরভাগ সময় লাগে তাহলে তিন চার ঘন্টা কিন্তু আপনাদের সারারাত কেটে গেল একজন মা হিসেবে আপনি সমস্ত দায়িত্ব পালন করেছেন মেয়ে জামাইকে বরণ করে নিয়েছেন এভাবেই আপনারা সবাই অনেক বেশি আনন্দ করেছেন ধন্যবাদ আপনার দেবরের মেয়ের বিয়ের দ্বিতীয় পর্ব আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য ভালো থাকবেন।

Loading...