আমার ছেলেবেলার গল্প : কুল চুরি (পর্ব - ১) (১০% @shy-fox এর জন্য বরাদ্দ।)
আমি অনেক রকম লেখা পোস্ট করেছি। তবে ছোটোবেলার স্মৃতি নিয়ে বা আমার ছেলেবেলা নিয়ে কিছু লিখিনি। আজ থেকে পর্ব ভিত্তিক আমার ছেলেবেলার গল্প লিখব। আজ আমি ছেলে বেলার একটা ঘটনার কথা লিখব। কুল চুরি করে খাওয়ার গল্প।
কুল এমন একটা ফল যেটা প্রায় সবাই ভালোবাসে। আর আমাদের মতো যারা গ্রামে বেড়ে উঠেছে তারা এর ওর গাছের কুল খেয়ে, বলা ভালো কুল চুরি করে খেয়ে বড়ো হয়েছে।
আমাদের বাড়ির আশেপাশে বেশ কয়েকটা কুল গাছ ছিল। একটা বাড়িতে ছিল টক-মিষ্টিকুল, আর একটা ছিল গোল মিষ্টি কুল। আর একটা সবুজ মিষ্টি কুল, যেটা পাকলেও সবুজ থাকতো। আর ছিল একটা দেশি নারকেলি কুল। যাদের বাড়িতে গোল মিষ্টি কুলটা ছিল তাদের কুল পেরে খেতে কখনো কোনো অসুবিধা হতো না। সেই বাড়ির জেঠু-জেঠিমা, দাদা, দিদিরা আমাকে খুব ভালোবাসতো। তাদের বাড়ির সাথে আমাদের বাড়ির একটা আত্মিক যোগাযোগ ছিল, যদিও তারা আমার নিজের আত্মীয় নয়। কাজেই খুব মজার সাথে সেই মিষ্টি কুল খেতাম, যেগুলো পাকলে হলুদ হয়ে যেত। গাছে উঠে কুল পারতাম। কুল পারতে গিয়ে কাটার খোঁচাও খেয়েছি অনেকবার। তবে এখন আর এমন দেশি মিষ্টি কুল আর দেখিনা।
ছোটবেলার কুল চুরির পার্টনার ছিল আমার বন্ধু - বান্ধবীরা। যার বাড়িতে ছিল সেই টক-মিষ্টি কুল গাছ তারা কখনো কুল চাইলেও দিত না। তাই অগত্যা চুরি করতে হতো। আমি আর আমার বন্ধু সাহেব দূর থেকে ঢিল ছুড়তাম কুল গাছে। তার কিছুক্ষণ পরে গিয়ে আমরা কুল কুড়িয়ে আনতাম। কোনো কোনো বার আমি যেতাম না, আমার বান্ধবীরা যেত। এই বাড়িতে একটা মেয়ে ছিল যার গলা পেলে সবাই পালিয়ে যেত। শুধু একবার বলতো, কে রে! অমনি আমরা পগার পাড়। এই কুল গাছের পাশে একটা গোয়ালঘর ছিল। আর রাস্তার দিকে ছিল গাছের ডাল গুলো। একদিন গাছে ঢিল মেরে তারপর কুল কুড়োতে গেছি, একটু পরেই গোয়াল ঘরের ওপার থেকে মানে বাড়ির ভিতর থেকে উড়ে এলো একটা আধলা ইঁট। সেটা এসো পরলো আমার পায়ের কাছে। আর একটু হলেই আমার মাথা থেথলে যেত। সে যাত্রায় খুব বাচা বেঁচে গেছি।
বেশি কুল পারলে আমরা কুল মাখা করতাম। কখনো কখনো শুকনো লংকা পুড়িয়ে লবণ দিয়ে বেটে সেটা দিয়ে কুল খেতাম মাঠে বসে। আমি তখন একটু বড়ো, ক্লাস এইটে না নাইনে পড়ি, আমি আর অচিন্ত্য দা তখন কুল, আম চুরি করে খেতাম। অচিন্ত্য দা ছিল আমার বান্ধবী চুমকি দাদা, আমার বন্ধুও বটে।
যাদের বাড়িতে গোল মিষ্টি কুলটা ছিল তাদের বাড়ির উল্টোদিকে একটা বাড়ি ছিল। সেই বাড়িটা পরিত্যক্তই বলা চলে। এই বাড়িতে একটা বড়ো কুল গাছ ছিল তবে খুব একটা কেউ সেই কুল খেতে আসতো না। কেন আসতো না তখন জানতাম না, পরে অবশ্য জেনেছি। সেই বাড়ির ছাদ এবং উঠোন সব সময় পরিষ্কার থাকতো পাশের বাড়ির এক জেঠিমার সৌজন্যে। তিনি তার বাড়ির নানা রকম ফসল ধান, গম, সর্ষে আর পাট পর্যায়ক্রমে ছাদে ও উঠোনে মেলতেন। ফলে তা জন্য পরিষ্কার থাকতো। এই বাড়িতে আমি আর অচিন্ত্য দা কুল পারতে গেছি, কটা কুলও পেরেছি। এরপর যেই মুখে দিয়ে কয়েকবার চাবিয়েছি মুখটা কষ আর ফেনায় ভরে গেছে। লোভ বসত কুলটা ফেলতেও পারছি না, আর গিলতেও পারছি না। আমাদের দুজনেরই এক অবস্থা। সে এক বিষম অবস্থা। শেষে কোনোক্রমে ফেনা আর কষ ফেলে কুল খাই। ঐ কুল পরে যাকে দিয়েছি তারই এক অবস্থা হয়েছে। এরপর আমরা আর ঐ কুল কাছের ত্রিসীমানায় যাইনি।
মাঠের ধারে পুকুর পাড়ে কুল গাছ।
আশা করি আমার ছোটবেলার গল্প সবার ভালো লাগবে। সকলে ভালো থাকবেন আর সবাইকে ভালো রাখবেন।
যে বাড়িতে লোভনীয় ফলের গাছ থাকতো সেই বাড়িতে এমন কেউ থাকতো যার গলা শুনলেই সবাই দৌড় দিতে। সত্যি ভাইয়া আপনার লেখাগুলো পড়ে আমার ছোটবেলার স্মৃতি মনে পড়ে গেল। ছোটবেলায় সত্যিই আমরা অনেক দুষ্ট ছিলাম। সবাই মিলে অন্যের গাছের ফল চুরি করে পেরে খেতাম। যদিও নিজের গাছের ফল ছিল। কিন্তু সবার সাথে মিলে অন্যের গাছের ফল চুরি করতে কেন জানি ভালো লাগতো।
ছোটবেলার এমন সব স্মৃতি কখনোই ভুলবার নয়। আমার বাড়িতে কুল গাছ ছিলনা বলেই চুরি করার মজা দ্বিগুণ ছিল। ধন্যবাদ আপু সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
আপনার কুল চুরির ঘটনা পড়ে বেশ ভালো লাগলো। তবে আপনি যে সবুজ ফুলের কথা বললেন ওটার নাম আমি আজকে প্রথম শুনলাম। আর হ্যাঁ, এটা যদি আপনার মাথায় পড়তো তাহলে আপনার অবস্থা খারাপ হয়ে যেত। অনেক বড় বাঁচা বেঁচে গেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে আমাদের মাঝে আপনার এই ছোটবেলার কুল চুরির ঘটনা শেয়ার করার জন্য।
ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
বরই গাছ থাকলে ঢিল খেতে হয়। যাইহোক গাছ থেকে কুল পেড়ে খাওয়ার মজাই অন্যরকম। তবে আমি কখনো কুল মাখা খাইনি। তবে ওদিন যদি ইট এটা আপনার মাথায় পড়তো তাহলে আপনার খবর ছিল,বেঁচে গেছেন। তবে আমি কখনো এভাবে ঢিল মেরে কুল পড়িনি। আসলে বন্ধুবান্ধব নিয়ে এভাবে কাটানোর ছেলেবেলাটাই অন্যরকম।
সত্যি ওটা আমার মাথায় পড়লে আমার খবর ছিল। বড়ো বাঁচা বেঁচে গেছি। ধন্যবাদ আপু।
বড়ই গাছ থেকে ঢিল মেরে বড়ই খাওয়ার মজাটাই অন্যরকম । আসলে এই ব্যাপারগুলো আমরা যারা শহরে থাকি তারা শুধু অনুভব করি। এগুলো আমাদের ভাগ্যে জোটে নি। আপনার কুল চুরির ঘটনাটি পড়ে আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। কিন্তু ঐদিন আপনি অনেক বড় বাঁচা বেঁচে গেছেন। আপনার কুলছুরির গল্পটি পড়ে আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
গ্রামীণ জীবন আর শহুরে জীবন একদম আলাদা। শহরের লোক গ্রামে মানিয়ে নিতে পারেনা। আবার এটাও হয় যে গ্রামের লোকের শহরে মন টেকেনা। এসব স্মৃতি শহরে থাকলে সম্ভব নয়। ধন্যবাদ আপু সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
আমাদের বাড়ি থেকে গ্রামের দূরত্ব প্রায় ১ কিমির মত। ছোটবেলায় পাড়ার খেলার সাথী সব দাদা দিদির সাথে এই ভাবেই কুল, করমচা চুরি করতে যেতাম। তোর অচিন্ত্য দার মতই আমার এক দিদি ছিলো মৌদি। সেই মৌ দিই ছিলো আমাদের গুরু। ওর সাইকেলের পেছনে চেপে কত না চুরি করেছি। ধরা পরে বকাও খেয়েছি। আসলে ছোটবেলার স্মৃতিতে এসব ঘটনা কম বেশি সবার আছে।
একটা মজার ব্যাপার হল অচিন্ত্য দার ডাক নাম হল গারু। আমরা ওকে ঐ নামেই ডাকি। আর ওর হাতের নিশানা ছিল একদম নিখুঁত। ঢিল মেরে নারকেল পর্যন্ত পেরে ফেলত।
ছোটোবেলার স্মৃতি সত্যিই খুব নস্টালজিক! কত সুন্দর সময় কাটিয়েছি তখন।
ছোটোবেলার স্মৃতি কখনো ভোলার নয়। আজীবন স্মৃতিপটে অমলিন থাকবে। ধন্যবাদ।