জীবনের সবচেয়ে বড়ো ভয়
নমস্কার বন্ধুরা। সকলে কেমন আছেন? আশা করছি সকলেই ভালো আছেন। আজ আপনাদের সাথে আমার জীবনের একটি বড়ো ভাবনা বা ভয় এর ব্যাপারে শেয়ার করবো। আপনারা অবশ্যই এই ব্যাপারে আপনাদের মন্তব্য জানাবেন।
ছোটো থেকে বড়ো হওয়া পর্যন্ত আমাদের জীবনে নানা রকম ভয় ঘিরে থাকে। ছোটবেলায় আমরা পুরোপুরি আমাদের বাবা-মা কিংবা গুরুজনদের উপরেই ভরসা করে থাকি। তখন আমরা না জানি কত কি কাল্পনিক বস্তুকেও ভয় পাই। হনুমান , বাঘ, সিংহ, হাতি ইত্যাদি কত কিছুর ভয় দেখিয়ে মা-বাবা অনেক বায়না থেকে বাঁচেন। আর আমরা খুব সহজেই সেই জিনিসগুলোতে ভয় পেয়ে যাই। এরপর একটু বড় হলে অচেনা মানুষের ভয়, একা কোথাও যাওয়ার ভয়, কুকুরের ভয় ইত্যাদি নানা কিছু আমাদেরকে ঘিরে থাকে।
তারপর আমরা বড় হই, বিদ্যালয়ের গণ্ডিতে পা রাখি। সেই সময় ভয়ের গতি প্রকৃতি কিছুটা পরিবর্তন হয়, যেমন ধরুন---- মাস্টারমশাই এর ভয়, রেজাল্টের ভয়, পরীক্ষার ভয়, হোমওয়ার্ক করে না নিয়ে যাওয়ার ভয় ইত্যাদি। এইভাবেই যত বড় হতে থাকি ভয়ের প্রকৃতি পরিবর্তন হলেও ভয় বস্তুটি কিন্তু পিছু ছাড়ে না। এই সমস্ত ভয় অতিক্রম করার পরেও এখনও পর্যন্ত বেশ কিছু ভয় সর্বক্ষণ আমাকে ঘিরে থাকে।
প্রিয় মানুষদের হারানোর ভয় :
ছোট থেকেই আমার কাছে প্রিয় মানুষ বলতে মা, বাবা, দাদা---এই গোটা কয়েক মানুষ। এই মানুষগুলোকে নিয়ে আমার ছোট্ট জগত। যদিও এই জগত থেকে একটি মানুষের বিচ্ছেদ ঘটেছে অনেক বছর হল। ২০১০ সালে বাবা মারা যান। যদিও সেই সময় আমি অনেকটাই ছোট ছিলাম তাই বাবা মারা যাওয়ার কষ্টটা সেই ভাবে অনুভব করতে পারিনি। আর তাছাড়া বাবার থেকে মায়ের সাথে আমার এটাচমেন্ট বেশি থাকার ফলে বাবার অনুপস্থিতিটা খুব গভীর ভাবে অনুভব করেছি এমন টাও নয়। হ্যাঁ, বাবা নামক মানুষটা যে আমার জীবনে নেই সে দুঃখ অবশ্যই আছে। তবে সেই বয়সে এতকিছু ভাবনা চিন্তা আমাকে স্পর্শ করতে পারিনি।
সদ্য আমি এক নতুন পরিবারের সদস্য হয়ে উঠলেও তাদের সাথেও আমার সেইভাবে এখনও অ্যাটাচমেন্ট তৈরি হয়নি। তাই আজকের লেখায় আমি তাদেরকে বাদ ই রাখছি। তবে কয়েক বছর পরে হয়তো আমার আজকের এই ভয়টি তাদের জন্যেও প্রযোজ্য হবে।
ফ্যামিলিতে সবচেয়ে বেশি যার সাথে আমার অ্যাটাচমেন্ট আছে সে হলো আমার মা। আমি জানি মা - রা সব সন্তানের কাছেই প্রিয়। তবে বাবা মারা যাওয়ার ফলে আমি মায়ের ওপরেই মেন্টালি অনেকটা নির্ভরশীল। জীবনে যে কোন বিপদই আসুক না কেন মা যদি একবার বলে যে, " সব ঠিক হয়ে যাবে, এত চিন্তা করতে হবে না" এক নিমিষে যেন সব চিন্তা কোথায় উধাও হয়ে যায়। জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ হল আমার মা। মায়ের মতো করে কেউ যেমন ভালো বাসতে পারবে না ঠিক তেমনই মায়ের মত শুভাকাঙ্ক্ষীও আর কেউ হতে পারে না। আর সেই সাথে আমার মায়ের সাথে আমার বন্ডিং খুবই ভালো। মজার কথা হোক কিংবা দুশ্চিন্তার কথা মায়ের সাথে শেয়ার না করা পর্যন্ত যেন শান্তিই হয় না।
তাই জীবনের এইরকম একজন সাপোর্টিভ মানুষকে আমি কোন ভাবেই হারাতে চায় না। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই ভয়টাও মাঝে মাঝে মনের মধ্যে বাসা বাঁধে। কালের নিয়মে সবাইকেই একসময় বিদায় নিতে হবে। সবই বুঝি, তবে এ কঠিন সত্য মনকে বোঝানো কঠিন। পৃথিবীর সকল মা যেন সন্তানের মাথার ওপর আজীবন ছাতার মতো থাকতে পারে। এই কামনায় করি।
বেকারত্বের ভয় :
জীবনের আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ ভয় হল বেকারত্বের ভয়। নান রকম উত্থান পতনের মধ্য দিয়ে বুঝেছি জীবনে টাকার গুরুত্ব অপরিসীম। টাকা ছাড়া আত্মীয় স্বজনরাও অপরিচিত। কোন এক জায়গায় পড়েছিলাম----
"টাকা ছাড়া জীবন ভয়ংকর অসুন্দর। টাকার কাছেই হেরে যায় সকালের রাজকীয় ঘুম, বিকেলের মাঠে খেলা, প্রিয় মানুষের বিয়ে, বন্ধুত্বের আদর, বাবার চিকিৎসা, মায়ের ছেঁড়া শাড়ি, নিজের শখ আহ্লাদ, ভালো থাকার স্বপ্ন। টাকা সব নয়। তবে টাকা ছাড়া একটা জীবন ভয়ঙ্কর অসুন্দর, অপ্রাপ্তির, অসহায়ত্বের , দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বেঁচে থাকার।"
কি অসাধারণ লেখাটা তাই না। তাই নিজের ছোট ছোট ইচ্ছে গুলো পূরণ করার জন্য অনেক কম বয়স থেকেই টিউশনি শুরু করি। সেই সাথে নিজের পড়াশোনাটাও চালিয়ে যাই। একজন শিক্ষিকা হওয়ার স্বপ্ন আজও মনে পোষন করি। আর সেই স্বপ্ন পূরণ করার জন্য যা যা করতে হয় সবই করি। তবে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষক নিয়োগ এর ব্যাপারে এত দুর্নীতি এবং এত অনীহা দেখতে পাই যে জানিনা সে স্বপ্ন আদেও পূরণ হবে কিনা বা হলেও কত বছর অপেক্ষা করতে হবে।
যদিও আমার কাছে আমি আজও বেকার নই। সকালবেলায় পছন্দের ঘুম ছেড়ে পড়াতে যাওয়া থেকে শুরু করে রাতে দেরি করে পড়িয়ে বাড়ি ফেরা পর্যন্ত যথেষ্ট পরিশ্রম হয়। তবুও বেকারত্বের ভয় দূর করতে এটুকু আমাকে করতেই হয়। তাও মাঝে মাঝে ভাবি এই প্রফেশনে কতদিন টিকে থাকতে পারবো! একটা সময় পর তো আর বাড়িতে গিয়ে পড়ানো সম্ভব হবে না। আর তাছাড়া আমার শ্বশুর বাড়ি শহর এলাকায়। সেখানে নামকরা অনেক বড় বড় টিচাররা রয়েছেন। আমি কি সেখানে গিয়ে নতুন করে আবার সবটা শুরু করতে পারব!
এই বেকারত্বের ভয় আমাকে মাঝে মাঝেই দংশন করে। এত বছরের স্বপ্নটা যদি পূরণ না করতে পারি তাহলে আমার মায়ের এত স্যাক্রিফাইজ, এত কষ্ট সবই বৃথা যাবে। এত প্রতিকূলতার মধ্যে পড়াশোনা করে প্রতিষ্ঠিত হতে না পারলে কত মানুষ আমার দিকে আঙুল তুলবে।
তবুও ভগবানের উপর অগাধ আস্থা রাখি। ভয় কি দূরে রেখে প্রতিটা দিন ভালো কিছুর আশা রাখি। এভাবেই দিন কাটছে। আজ তাহলে এখানেই শেষ করলাম। আগামীকাল আবার অন্য কোন লেখা নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হব। সকলে ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।




Thank you so much @radjasalman for upcoming my post.
একেবারেই ঠিক বলেছেন ছোটবেলা থেকে বড় হওয়া পর্যন্ত আমাদের মধ্যে অন্যরকম একটা ভয় কাজ করে কখনো কখনো দেখা যায় প্রিয় মানুষকে হারানোর ভয়ে আমরা এতটাই ভেঙ্গে পড়ি যে দ্বিতীয়বার কোন কাজ করা থেকে আমরা বিরত থাকি আরেকটা হচ্ছে বেকারত্বের ভয় বেকার মানুষের আসলে কেউ পছন্দ করেনা আর কেউ পছন্দ করতেও চায় না বেকার মানুষ জানে তার জীবনটা কতটা কষ্টের অসংখ্য ধন্যবাদ জীবনের ভয় সম্পর্কে আমাদের সাথে আলোচনা করার জন্য ভালো থাকবেন।