বাঙালি বিয়ের দুই গুরুত্বপূর্ণ রীতি (বৃদ্ধি ও গায়ে হলুদ)
নমস্কার বন্ধুরা। আশা করছি সকলেই ভাল আছেন। আজকে চলে এসেছি বাঙালি বিয়ের দুটি গুরুত্বপূর্ণ রীতি, যথা-- বৃদ্ধি ও গায়ে হলুদের কিছু গল্প নিয়ে। আশা করছি আপনাদের সকলের ভালো লাগবে।
আমরা জানি বিয়ে মানেই হরেক রকম আচার-রীতি। বিয়ে পাকা হওয়া থেকে শুরু করে বিয়ের পরবর্তী সময় পর্যন্ত বেশ কিছু রীতিনীতি মেনেই বাঙালি বিয়ে সম্পন্ন হয়। তাই বিয়ে মানেই প্রায় সাত দিন ধরে চলতে থাকে নানা রকম আচার অনুষ্ঠান। থাকে আইবুড়ো ভাতের রকমারি আয়োজন, বিয়ের পাকা কথা হওয়ার পর দুই বাড়ির তরফ থেকেই চলে পঞ্জিকা দেখে বিয়ের দিন ঠিক করার পালা। বিয়ের আগের দিন বর ও কনে উভয়ের বাড়িতেই আইবুড়ো ভাতের আয়োজন করা হয়। বিয়ের দিন সকালবেলায় কাক ভোরে দধিমঙ্গল দিয়ে শুরু হয় বিয়ের আয়োজন। এরপরে একে একে থাকে জল ভরতে যাওয়া, গঙ্গা নিমন্ত্রণ, বৃদ্ধি ইত্যাদি নানারকম রীতি। এরপর শুরু হয় গায়ে হলুদের তোড়জোড়। তারপর রাতে এক দীর্ঘ সময় ধরে চলে বিয়ের নানারকম আচার অনুষ্ঠান। এভাবেই বাঙালি ছেলে -মেয়েরা সামাজিক বিয়েতে সমস্ত নিয়মকানুন মেনে দাম্পত্য জীবনে প্রবেশ করে।
আমার গতকালের পোস্টে আমি আপনাদের জানিয়েছিলাম আমরা আমাদের এক কাছের বান্ধবীর আইবুড়ো ভাতের আয়োজন করেছিলাম। গত ৬ই ফেব্রুয়ারি ওর বিয়ে হয়েছিল। যদিও সেইসব গল্প আপনাদের সাথে শেয়ার করে ওঠা হয়নি। তাই আজকে ওর বৃদ্ধি ও গায়ে হলুদের কিছু ছবি শেয়ার করে এই দুই রীতি কিভাবে পালন করা হয় তা আপনাদের সামনে তুলে ধরবো।
বৃদ্ধি:
বিয়ের দিন সকালবেলায় বর ও কনে উভয়ের বাড়িতেই আলাদা আলাদা ভাবে পুরোহিত দ্বারা এই রীতিটি পালন করা হয়। এই রীতিতে উভয় পরিবারের পূর্ব পুরুষদের উদ্দেশ্যে জল দেওয়া হয় এবং তাদের কাছে নতুন বর ও কনের দাম্পত্য জীবন যাতে সুখের হয় তার জন্য আশীর্বাদ চাওয়া হয়। পুরোহিতের উপস্থিতিতে বর বা কনের বাবা, কাকা কিংবা দাদা বা ভাই এই জলদান করে। আর যাদের পিতৃকুলের তেমন কেউ থাকেনা তাদের মামারাও এই রীতিটি পালন করতে পারেন।
আমরা আমাদের বান্ধবীর বিয়ের দিন সকালে ওদের বাড়ি হাজির হয়েছিলাম। তারপর বৃদ্ধির বেশ কিছু নিয়মকানুন বসে বসে দেখছিলাম। যেহেতু ওর গোধূলি লগ্নে বিয়ে ছিল তাই সকাল সকালেই এই রীতিটির আয়োজন করা হয়েছিল। আর খুব সকাল সকালই ওর মেকাপ আর্টিস্ট এসে ওকে সাজিয়ে দিয়েছিল। ওকে দেখতে খুব মিষ্টি লাগছিল। একটু সুযোগ পেয়েই আমরা ওর সাথে দুটো ছবি তুলে নিয়েছিলাম।
বিয়ের দিন সকালে বান্ধবীর বৃদ্ধির অনুষ্ঠানে আমরা |
|---|
গায়ে হলুদ:
বাঙালি বিয়েতে গায়ে হলুদ একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রচলিত রীতি , যা বহু কাল ধরে চলে আসছে। এই গায়ে হলুদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে উপকরণটি ব্যবহার করা হয় তাহলে কাঁচা হলুদ। আগেকার দিনে তো সেই রকম ভাবে কোন কৃত্রিম প্রোডাক্ট দিয়ে ফেসিয়ালের প্রচলন ছিল না তাই এটা ছিল তাদের একটা টোটকা। বিয়ের দিন যাতে ছেলে ও মেয়েকে দেখতে ফর্সা লাগে তাই এই কাঁচা হলুদ মাখানোর রীতির প্রচলন হয়।
যদিও বর্তমানে এই কাঁচা হলুদ মাখানোর রীতি প্রায় উঠেই গেছে। এখন যেহেতু বিয়ের আগে প্রায় সব মেয়েরাই ফেসিয়াল করে তাই তারা বিয়ের দিন মুখে হলুদ মাখতে চায় না, কারণ হলুদের দাগ উঠতে চাইবে না। ফলে মেকআপ করতে অসুবিধা হবে। তার বিকল্প হিসেবে এখন প্রায়ই সামান্য পরিমাণ হলুদ, বেসন ও দই দিয়ে প্যাক বানিয়ে নেয়। তবুও নিয়ম রক্ষার্থে সামান্য পরিমাণ কাঁচা হলুদ ব্যবহার করা হয়। বরের গায়ে হলুদ ছোঁয়ানোর পর সেই হলুদ প্যাক করে পাঠানো হয় কনের বাড়িতে। বরের বাড়ি থেকে হলুদ না আসা পর্যন্ত মেয়ের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হয় না। এইভাবেই গায়ে হলুদের দিনে উভয় বাড়ির সদস্যরাই আনন্দে মেতে ওঠে।
বান্ধবীর গায়ে হলুদের আমরা |
|---|
তবে এই গায়ে হলুদের রীতির বেশ কিছু বৈজ্ঞানিক কারণ কিন্তু রয়েছে। যেমন---
১. কাঁচা হলুদ খুব ভালো জীবাণু নাশক হিসাবে কাজ করে। তাই বিয়ের দিন বর ও কনের যাতে কোনরকম ইনফেকশন না হয় তাই এই কাঁচা হলুদ মাখানো রীতি চালু হয়।
২. হলুদ মাখলে কিছুটা ফর্সা দেখায়। তাই বিয়ের দিন যাতে বর ও কনেকে সুন্দর দেখতে লাগে তাই এই গায়ে হলুদের রীতির প্রচলন হয়।
তাছাড়া হলুদকে শুভ ভাবা হয়। তাইতো বিয়ের কার্ডের উপরে ও হলুদের ফোঁটা দেওয়া হয়। তাছাড়া আশীর্বাদ করার সময়ও কপালে হলুদের ফোঁটা দেয়। এতে বর ও কনের নজর লাগে না ।
আমরা আমাদের বান্ধবীর গায়ে হলুদে গিয়ে খুব মজা করেছিলাম। আমরা সবাই হলুদ রঙের শাড়ি পড়েছিলাম। তবে সেই দিন প্রচন্ড রোদ থাকায় আমরা জল ভরতে যেতে পারিনি। সেই সময়টুকু আমরা অনেক ফটো তুলেছিলাম।
আর তাহলে এখানেই শেষ করলাম। আগামীকাল আবার অন্য কোন লেখা নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হব। সকলে ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।




একদমই তাই বাঙালির বিয়ে মানে হাজার রকমের আচার অনুষ্ঠান। একের পর এক নিয়ম কারণ পালতে পালতেই একসময় নিজেদেরই বিরক্তি প্রকাশ করতে হয়। তবে এখনকার দিনে কেউ আর বেশি হলুদ একদমই মাখতে চায় না। মুখে বেশি হলুদ মাখলে নাকি মেকআপ ঠিকঠাক বসে না। এটা আমার বিয়ের আগেও আমার যে মেকআপ আর্টিস্ট ছিল সে বলে দিয়েছিল। তাই কোন রকমে কপালে একটা মাত্র হলুদের ফোঁটা দিয়েছিল। বান্ধবীর বিয়ের কিছু মুহূর্ত শেয়ার করার জন্য তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আপনি ঠিকই বলেছেন বাঙালির বিয়ে মানেই বিভিন্ন ধরনের রীতিনীতি অনুষ্ঠিত হয় তবে আপনাদের যে পরিমাণে নিয়ম মানা হয় এটা দেখে মাঝে মাঝে আমার মাথা নষ্ট হয়ে যায় চিন্তা করি আপনারা কিভাবে পালন করেন আপনার বান্ধবীর বৃদ্ধির অনুষ্ঠানে আপনারা যোগদান করেছেন সেই সাথে গায়ে হলুদের সবাই মিলে অনেক বেশি আনন্দ করেছেন যেটা দেখে অনেক বেশি ভালো লাগলো ধন্যবাদ ভাল থাকবেন।
আসলে এটা ঠিক আপনাদের অনেক ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে তবে আপনি বৃদ্ধি এবং হলুদের অনুষ্ঠানটা কেন করা হয়ে থাকে এবং কিভাবে করা হয়ে থাকে বিষয়টা আপনি আমাদের সাথে খুব সুন্দর ভাবে শেয়ার করেছেন যেটা দেখে আমার কাছে অনেক বেশি ভালো লাগলো আপনাদের হলুদের অনুষ্ঠান এবং বৃদ্ধির অনুষ্ঠানে আপনারা আপনাদের পূর্ব প্রজন্মের সবার জন্য পানি ঢেলে থাকেন এই বিষয়টা আমার কাছে একটু অন্যরকম লাগলো অসংখ্য ধন্যবাদ ভাল থাকবেন।