মা আধাঘন্টার মজুরি পায় মাত্র তিন টাকা || 10% Beneficiaries

বাংলাদেশে কাজের মূল্যায়ন কবে দিবে মানুষ। একই কাজ বাংলাদেশে যদি পায় ৫০০ সেটা বিদেশে পাওয়া যায় ২৫০০। এই দেশের উন্নয়ন কিভাবে হবে একজন ভালো ছাত্র জীবনের শুরুতেই প্লানিং করে বিদেশ চলে যাবে। কারন সে জানে এই দেশে তার মূল্যায়ন হবে না। আসলেই হবে না। সব দিক থেকেই প্রমানিত। আমাদের দেশের অবস্থা এমন হয়ে যাচ্ছে যার টাকা আছে তার আছেই যার নেই সে গরিব হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। বাংলাদেশের মোট টাকা হিসেব করলে দেখা যাবে বেশির ভাগ টাকাই কিছু মানুষ এর হাতে।

আমি হুট করে মাকে জিজ্ঞেস করলাম মা এই যে কাজ করছো কত টাকা পাও? মা বলল ৩ টাকা। আমি অবাক হয়ে গেলাম আর মাকে বললাম মা এই যে কাজ করছো এখানে তোমার কতটুকু সময় লাগে, মা বলল সবটুকু করতে প্রায় আধা ঘণ্টা সময় লেগে যায়। আমি রীতিমত অবাক হয়ে গেলাম আধা ঘন্টা কাজ করে তার পারিশ্রমিক পাচ্ছেন মাত্র তিন টাকা কি আর বলবো। অথচ মার্কেটে গেলে দেখা যায় এই কারচুপি কাজ গুলির যে থি-পিছ থাকে সেগুলির মূল্য কিন্তু কম না, অনেক বেশি থাকে। সেখানে যাদের দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে তাদের পারিশ্রমিক এত কম কিভাবে হয়।

আমার মা বুটিকস এর কাজ করতো আগে। আমি দেখতাম বাংলাদেশের খুব সুনাম ধন্য একটি কোম্পানি যার নাম হচ্ছে আড়ং সেই আড়ং এর পাঞ্জাবি মা কন্টাক্ট করে সেলাই করতো। প্রতি পিস পাঞ্জাবির মজুরি দিতো মাত্র 40 টাকা। অথচ যেখানে একটি পাঞ্জাবি কত দাম দিয়ে বিক্রি করে সেটা আমরা সবাই জানি কিছু বলার নেই আর। এই রোজার মধ্যে দেখা যাবে এক একটি টেইলার্সের দোকানে চার থেকে পাঁচশত টাকা করে এক একটি থ্রি পিস এর মজুরি নিবে। কিন্তু সেখানে যারা সেলাই করবে তাদেরকে দিবে মাত্র 80 থেকে 90 টাকা।

বাংলাদেশ কিছুদিন আগে একজন মানুষ এর একটি ভিডিও দেখলাম ইউটিউবে। সে নিজে নিজে কোন পড়াশোনা ছাড়াই পুরাতন মডেলের গাড়ি গুলো দিয়ে নতুন নতুন ডিজাইনের গাড়ি তৈরি করে থাকে। সেগুলি একেকটা বড় বড় নামিদামি কোম্পানির গাড়ির ডিজাইন এর থেকে কোন অংশে কম না। কিন্তু সে বাংলাদেশে থাকে না সে থাকে জাপান। আসলে থাকারই কথা কারন সে নিজেও জানে তার যে প্রতিভা, তার যে কতটুকু মূল্য রয়েছে সেটা এ বাংলাদেশের মানুষ দিবে না।সে দেশের বাহিরে চলে গেল আর সেখানে গিয়ে সে ঠিকই অনেক নাম কামাল। বাংলাদেশে যারা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াশোনা করে তারা জানে বাংলাদেশের বুয়েট এর কতটা মূল্য রয়েছে। আসলে সত্যিকার অর্থে দেখা যায় যারা বুয়েট এর ছাত্র তারা পড়াশোনা করা অবস্থায় চিন্তা করে পড়াশোনা শেষ করেই দেশের বাহিরে চলে যাবে। কারণ তারা নিজেরাও জানে এত বড় ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার কি লাভ যদি এদেশে সেটার মূল্যায়ন না করা হয়। আসলে সবার ক্ষেত্রে বিষয়টা একই নয় কিন্তু দিন শেষে দেখা যায় সব মানুষের মূল্যায়ন করা হয় না। তাই বেশিরভাগ মানুষই বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাড়ি জমায়।

আমি মানুষের কথা কি বলবো আমার নিজের সাথেই এমনটা হয়েছে। আমি যখন একটি কোম্পানিতে জব করতাম তখন লকডাউন দিয়ে দিল বাংলাদেশে। সবাই অফিসে আসা বন্ধ করে দিল কিন্তু সেই সময় আমি আমার বেস্ট দিয়ে চেষ্টা করলাম। নিজে রিস্ক নিয়ে বাইক দিয়ে আমি কাজ করা শুরু করলাম। আমার অফিসে আমার প্রমোশন হয় আমার চেয়ার উপরের দিকে উঠে কিন্তু আমার স্যালারি আগের জায়গায় পড়ে আছে। আমি যখন স্যালারির কথা বললাম তখন স্যার বলল অফিসের অবস্থা খুব খারাপ কিন্তু দিনশেষে আমি তো আমার পরিশ্রম যতোটুকু দেয়ার তার চাইতে দ্বিগুণ দিচ্ছিলাম তাহলে আমার কাজের মূল্যায়ন কোথায়। সাথে সাথে চাকরি ছেড়ে দিলাম। আসলে দিন শেষে কিছু বলার নাই।