মামা বাড়িতে কাটানো দ্বিতীয় দিনের গল্প ।
একেতো নতুন জায়গা এত তার উপর ছিলো মারাত্মক রকমের গরম যার কারণে রাতে একদমই ভালো ঘুম হয় নাই। যদিও শুনেছিলাম যে রাতে শীত শীত করে। হয়তো কথাটা সত্যিই কিন্তু সেটা টিনের ঘরে ,বিল্ডিঙে না।
তবে ভোরের দিকে গরম কমে গিয়েছিলো অনেকটাই যার কারনে ঘুমও এসেছিলো তখনি। কিন্তু সেই ঘুম দীর্ঘস্থায়ী হয় নাই ছেলের কলের কারণে। গতকাল সবার অনুরোধে মামা বাড়িতে থেকে গেলেও ওদের কথা দিয়েছিলাম যে যতটা সম্ভব সকালেই চলে যাবো ,প্রয়োজনে নাস্তাও করবো রাস্তাতে।
ফোন রিসিভ করে ছেলেকে বললাম চলে আসতে। ওরা আমার আরেক মামার বাড়িতে ছিলো রাতে। মিনিট পাঁচেকের মাঝেই ছেলেরা চলে আসলো। ওদেরকে বললাম যে ,ঢাকা যাওয়ার আগে বাড়ির পেছনে একটু যেতে চাই। মামা বাড়ির পেছন দিকটার প্রতি একটা দারুন আকর্ষনা কাজ করে আমার মাঝে সবসময়ই। এখানে আমি ছোটবেলা অনেক সময় কাটিয়েছি।
আমার মামাবাড়ির গ্রামটা আসলে ধলেশ্বরী নদীতে জেগে উঠা একটা চর ছিলো। তখন এই চর কেনার মতো কোনো মানুষ পাওয়া যাচ্ছিলো না। ওই সময় আমার মায়ের দাদা ছিলেন একজন পাটের ব্যাবসায়ী। কোলকাতাতে তার পাটের গোডাউন ছিলো। তার নাম ছিলো নিধন মল্লিক।তার নামের মতোই তার জীবন ছিলো। দরিদ্র অবস্থা থেকে একসময় প্রচুর টাকার মালিক হন আবার পরবর্তী সময়ে দরিদ্র হয়ে যান।
চর জেগে উঠার পরে আশেপাশে এত বড় চর কেনার মতো তেমন কেউ ছিলো না ।ওই সময়কার ব্রিটিশ সরকারের লোকজন তার সাথে যোগাযোগ করেন। তার বাড়ি তখন আশেপাশেই কোন এক গ্রামে ছিলো । পুরো চর ৫টাকা বিঘা করে কিনে নেন। নিজের বাড়ির জন্য ৩০ বিঘার একটা প্লট রাখেন আর চরের বাকি অংশ লোকজনের মাঝে বিলিয়ে দেন।আমার মামা বাড়ি কিছুটা লম্বাটে জায়গা ।বাড়ির একদম পেছনের সীমানা থেকে সামনের সীমানা পর্যন্ত হাটলে মোটামুটি হাফ মাইলের মতো হাটতে হয় । অবশ্য বাড়ির প্লট ছাড়াও তার আরো বড়ো বড়ো অনেক প্লটই ছিলো।
মায়ের মুখে একটা গল্প শুনেছি অনেকবার আর সেটা হলো ,তার দাদা যখন জমি বিলিয়ে দিয়েছিলেন তখন মোমিজউদ্দিন নামের এক অতি দরিদ্র ও কিছুটা বোকা ধরণের একজনকেও একবিঘা জায়গা দিয়েছিলেন।
জায়গা পাওয়ার পরে তার মা গলায় কাপড় জড়িয়ে নিধন মল্লিকের পায়ের উপর এসে পড়েছিলেন এই বলে যে ,আপনার জায়গা আপনি ফেরত নিন। আমার মোমিজ বছরে একটাকা খাজনা দিতে পারবে না। এই গল্প শুনলে বোঝা যায় ,তখনকার সময়ে খাজনা নামটা কতটা ভয়াবহ ছিলো।।
এখন অবশ্য দেখে বোঝার কখনো উপায়ই নেই যে এটি কোনোএকসময় একসময় চর ছিলো।
আমার ছোটবেলায় দেখতাম বাড়ির পেছনে কিছুটা জায়গাজুড়ে বাঁশবাগান ছিলো আর তারপরে একদম ফাঁকা ছিলো। মাইল খানেক দূরে ধলেশ্বরী নদী ছিলো আবার নদীর অপর পাড়েও এমনি ফাঁকা ছিলো। সেই ফাঁকা জায়গার পরে ছিলো কলমাইদ গ্রাম। আমার মা বলতো ,কলমাইদ গ্রাম আর আমাদের বাড়ির মাঝখানে আর কিছু নেই তাই ঝড় আসলে ঝড়ের প্রথম ধাক্কা লাগে আমাদের বাড়িতে।
এই গ্রামে আগে তেমন একটি ফসল এর চাষাবাদ হতো না। কারণ অনেক বছর আগে একবার বন্যার সময় বন্যার পানির সাথে সাথে বালুও এসেছিলো। যার কারণে মিষ্টি আলু ,বাদাম এর মতো ফসল ছাড়া তেমন কোনো ফসলই জন্মাতো না।
তবে ১৯৮৮ সালের বন্যা এই অঞ্চলের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছিলো। সেই বন্যার সময় পলি পরে পুরো গ্রামে। সেই সাথে উন্নত প্রযুক্তির ব্যাবহারে এখন সেই মরুভূমির মতো গ্রামে এখন দেখা যায় সবুজ ফসলের সমারোহ।
একসময় আমার ছোট মামা বাড়ির পেছনে বাশ , মেহগনি ,সেগুন ,জলপাই লিচু প্রভৃতি গাছ লাগান। এরপরে তার দেখাদেখি অনেককেই এধরণের বাগান করে।আমি আমার ছেলেকে বললাম আমি বাগানে একবার যেতে চাই ঢাকা যাওয়ার আগে। ওরা কিছুটা বিরক্ত হলেও আমার কথায় রাজি হলো।
তার পরে কি হলো সেটা পরের পর্বে লিখবো।




একটা জায়গায় আসলে আমরা যতই চেষ্টা করি না কেন ওখান থেকে বের হতে পারি না আপনারা যেহেতু অনেক দিন পর আপনার মামার বাড়িতে গিয়েছেন সকাল সকাল ওখান থেকে বের হওয়ার চিন্তাভাবনা থাকলেও বের হতে আপনাদের অনেকটা সময় লেগে যায় বাঁশঝাড় এখন খুব কম দেখা যায় আমাদের বাড়িতে দু একটা রয়েছে তাও অনেক পুরনো অসংখ্য ধন্যবাদ মামার বাড়িতে থাকার অভিজ্ঞতার দ্বিতীয় পর্ব আমাদের সাথে তুলে ধরার জন্য ভালো থাকবেন।