আমার প্রথম বার রক্ত দান করার অভিজ্ঞতা।

in Incredible India2 years ago (edited)

IMG_20230429_104326.jpg

হ্যালো বন্ধুর,

আসসালামুয়ালাইকুম ওরাহমাতুল্লাহ,
হিন্দু ধর্মালম্বী ভাই ও বোনদের জন্য আদাব,
এবং অন্যান্য ধর্মালম্বী ভাই ও বোনদের জন্য শুভকামনা রইল।

আশা করি সকলেই ভাল আছেন।মহান সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে এবং আপনাদের দোয়ায় আমিও অনেক ভালো আছি।
বরাবরের এর মতো আজকেও আপনাদের মাঝে এসেছি নতুন একটি ব্লগ পোস্ট নিয়ে। আজকে আমি আপনাদের সকলের সাথে শেয়ার করতে যাচ্ছি আমার জিবনে প্রথম বারের মতো রক্তো দানের অভিজ্ঞতা।

রক্ত দান করা একটি মহৎ কাজ। আপনার আমার রক্ত ই পারে একটি অসহায় মানুষের জীবন বাচাতে একজন সুস্থ মানুশ তিন মাস পর পর এক ব্যাগ করে রক্ত দিতে তাতে তার কোন রকমের সমস্যা হয় না। আর এর বিনিময়ে বেছে যায় একটা নিরিহ মানুষের জীবন হাসি ফুটে তার পরিবারের মুখে হাসি ফুটে তার কাছের মানুষ গুলোর মুখে।

এমন ই এক ঘটনা ঘটেছে আজকে আমার সাথে। সন্ধা ঘনিয়ে এসেছে এমন সময় ঘরে শুয়ে শুয়ে ফোন গান শুনতে ছিলাম। হুট করে মেসেঞ্জার মেসেজের এর শব্দে গান থেকে মনোনিবেস সরে গেলো। ফোন হাতে নিয়ে মেসেঞ্জাএ ডুকতেই দেখতে পারলাম সম্পা নামে আমার এক কলেজ জিবনের বান্দবির মেসেজ।

বলতেছে তুই এখন কোথায় আমি বললাম বারিতেই, তারপর বলল তোর রক্তের গ্রুপ কি জানি,। আমি বলি আমার রক্তের গ্রুপ তো

A -(negetive)
অম্নি বলে উঠলো নেগেটিভ রক্ত খুবি রেয়ার গ্রুপ তোকে আজকে এক ব্যাগ রক্ত দিতেই হবে রোগির অবস্থা খুবি খারাপ আর নেগেটিভ রক্ত ৩ দিন থেকে খুজতেছি পাওয়া যাচ্ছে না।
আমি তো আগে কখনো রক্ত দেই নি তাই মনে মনে ভয় হচ্ছিলো। এখন এমন একজন বলল না ও করতে পারতেছি না।

পরে বললাম দোস্ত আমি আগে কনোদিন রক্ত দেই নি আমার ভয় লাগে। পরে ও আমার নাম্বারে কল দিলো দিয়ে হাসতে হাসতে বলল তুই কি বলিস এইসব ছেলে মানুষ হয়ে। আমি বললাম এখানে ছেলে মনুষ এর কিছু নাই রক্তের ব্যপার। পরে বলে দেখ রোগিটা খুবি অসুস্থ আমার এলাকার ই খুচুনি উঠে গেছে তোকে রক্ত দিতেই হবে আর কিচ্ছু হবে না তোর।

আমি বললাম আচ্ছা আমি গিয়ে যদি দেখি খুব সিরিয়াস তাহলে দিবো নাহলে চলে আসবো।
পরে বললাম ঠিকানা দে কোন হসপিটালএ জাইতে হবে।

তারপর সে ঠিকানা আর রোগীর লোকের নাম্বার দিয়ে বলল যা তাহলে আমি আসতে পারতেছি না রে আমি নানি বারিতে তো।
বললাম আচ্ছা আমি গিয়ে দেখতেছি কি করা যায়।

তারপর আমি এক বন্ধু কে সাথে নিয়ে সেই ঠিকানায় গিয়ে তাদের কল দেই।
তারা কিছুখন পর রোগী নিয়ে আসে। আসলেই দেখতে পাই ৩ জন মেয়ে মানুষ তাদের সাথে কোনো পুরুষ মনুষ নেই।রোগিকে ধরে নিয়ে বেডে শুয়িয়ে দিলাম। দেখতে পারলাম খুবি সিরিয়াস অবস্থা রক্ত না দিলে মারাও জাইতে পারে।

পরে রক্ত দিবো বলে মনকে স্থির করলাম এবং তখন যে মেয়েটা অসুস্থ তার মা আমার হাত ধরে কান্নাই করে ফেলল বলল বাবা আমার মেয়ে তাকে বাচাও দুইটা ছোট ছোট বাচ্চা আছে ওর। তখন আমি বললাম আচ্ছা আন্টি আপনি চিন্তা করবেন না আমি রক্ত দেবো সমস্যা নেই।

JIT_20230428_195837_lmc_8.4.jpg

তারপর আমি প্যাথলজি রুমে যাই আমার নিজের রক্তের গ্রুপ নিশ্চিতকরণের জন্য এবং রোগীর সাথে ক্রস টেস্ট করানোর জন্য।
এই সময় রোগীর গেছে আমার হাতে এক বোতল মিনারেল ওয়াটার ও স্যালাইন দিয়ে বলে এটা খেয়ে নাও। আমি স্যালাইন না পানির বোতল দিয়ে পানিটুকু খেতে থাকি। এমন সময় প্যাথলজি এসে আমার ডান হাতের রগ থেকে এক সিরিঞ্জ রক্ত বের করে এবং টেস্টের জন্য পাঠায়।

রিপোর্ট আসা পর্যন্ত সেখানে বসে অপেক্ষা করতে থাকি। সমস্ত রিপোর্ট আসার পর আমাকে বলা হল আপনার রিপোর্ট খুবই ভালো একজন সুস্থ মানুষ 10 পয়েন্ট রক্ত থাকলেই দিতে পারে আপনার শরীরে 14 পয়েন্ট রক্ত আছে তাই কোন সমস্যা নেই চলেন। প

JIT_20230428_200458_lmc_8.4.jpg

JIT_20230428_200451_lmc_8.4.jpg

তারপর একটা রুমে গিয়ে আমার বাম হাত থেকে এক ব্যাগ রক্ত নামানো হলো রক্ত নামানোর সুইটি ছিল অনেক মোটা একটু ভয় ভয় লাগতেছিলো কিন্তু কিছু বললাম না।

JIT_20230428_200550_lmc_8.4 (1).jpg

JIT_20230428_200542_lmc_8.4.jpg

এর পর প্রায় 3/4মিনিট সময় লাগলো রক্ত নামতে। রক্তদান আমার সময় হাত ব্যথা করতেছিল এবং মাথাটা একটু ঝিমঝিম করতেছে কিন্তু ভালো লাগতেছিল আমার রক্তে বেঁচে যাচ্ছে একটি প্রাণ এটা ভেবে। তারপর রক্ত নামানোর কাজ শেষ হোল।আর আমাকে একটি প্রাণ ফ্রুটো করে দিয়ে বলল এটা খেয়ে নাও। আমি বললাম না আন্টি আমাকে শখাইতে হবে না আপনার খায়েন। তারপরও জোর করে আমার হাতে দিয়ে বলল যেন এটা তোমাকে খেতেই হবে তুমি এটা খেলে আমাদের ভালো লাগবে। তারপর আর কি সেটা নিয়ে খেলা।

এবং কিছুক্ষণ রেস্ট করে উঠে রোগীর কাছে গিয়ে দেখলাম রোগীকে এবং তাদেরকে বলে চলে আসব এমন সময়। রোগীটার মা আমার ফোন নাম্বার নিল এবং বলল অবশ্যই একদিন আমাদের বাসায় আসবা। আমি বললাম আচ্ছা আন্টি সময় পেলে আসব। তখন উনি বলে সময় পেলেনা তোমাকে আসতেই হবে। এই বলে আমার হাতে কিছু টাকা দিয়ে বলল এটা দিয়ে তুমি কিছু কিনে খেয়ে নিও। তখন আমি বললাম কী করতেছেন আন্টি টাকা লাগবে না আমার আপনি একটু দোয়া করে দেন। বলে টাকাটা ওনার হাতে দিয়ে সেখান থেকে বিদায় নিলাম।

আর বেশি কিছু লিখছি না আবারও আপনাদের সাথে দেখা হবে নতুন কোন ব্লগ পোস্ট নিয়ে।

আজকের মতো এখানেই বিদায় নিচ্ছি আর বেশি কিছু লিখছি না।সকলের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি

সকলকে ধন্যবাদ।

Sort:  

Congratulations 🥳


Your quality content follows the Team 4 curation guidelines.

BRINGING MUSIC TO YOUR EARS.gif

Curated by : @anasuleidy

 2 years ago 

আমার আসলে কখনো সম্ভব হয়ে ওঠেনি রক্তদান করার এই প্রসেসটি করার কিন্তু আমি যতটুকু জানি একজন মানুষের শরীর থেকে যে যতটুকু পরিমাণে রক্ত বের করা হয় শুনেছি নাকি অল্প কয়েক ঘন্টার ভেতরে সেই রক্ত আবার পূরণ হয়ে যায় যদি আমার শরীরে কোন রোগ ব্যাধি না থাকে তাহলে রক্তদান করা একটা মহৎ কাজ যেটা আমাদের সমাজে খুবই প্রয়োজন

 2 years ago 

আমিও একবার রক্ত দিয়েছি ৷ আসলে রক্ত দেওয়া একটি মহৎ কাজ আর আপনি সেই কাজ টি আজকে করেছেন দেখে খুবই ভালো লাগলো ৷ আপনার রক্ত দেওয়াতে হয় তো কারো জীবন বেচে যেতে পারে ৷

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই মানবতার একটি মহৎ কাজ করেছেন ৷ আপনার জন্য শুভকামনা রইলো ৷ ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন ৷

Loading...
 2 years ago 

রক্তদান করা যে কতটুকু একটি মানুষের জন্য ভালো,,,তা যদি একটি মামুষ জানতো প্রত্যেকে রক্ত দিত,,, আপনি মহত একটি কাজ করেছেন আশা করি আপনি এই ভাবে মানুষের পাশে সবসময় দারাবেন,,,,,

ধন্যবাদ আপনাকে মহত একটি কাজের জন্য।

 2 years ago 

নিঃসন্দেহে রক্তদান একটি মহৎ কাজ। যেটা আপনি প্রথমবার করলেন। এছাড়া আরো জানতে পারলাম যে আপনার রক্তের গ্রুপ এ নেগেটিভ। এই রক্তের গ্রুপ এবং আরো একটি গ্রুপ রয়েছে যেটা খুবই দুর্লভ পাওয়া।

তাছাড়া একটা মানুষের জন্য রক্ত দেওয়া খুবই ভালো তার শরীরের জন্য। আর এই রক্ত সম্ভবত দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে আবারো পূর্বের অবস্থাতে ফিরে আসে এবং রক্তদাতা পুনরায় আবারও রক্ত দিতে পারেন।

আপনার এই মহৎ কাজের জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ভাই। এভাবেই মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করবেন সবসময়।

 2 years ago 

এক ব্যাগ লাল ভালোবাসা দিয়ে আপনি একজন মানুষকে বাঁচিয়ে দিলেন। এই ভালোবাসাটার মূল্য যে কতখানি। সেটা হয়তোবা সে মানুষটাই বুঝতে পারে। যাকে আপনি এই ভালোবাসাটা দান করেছেন।

জীবনে প্রথমবার রক্ত দেয়ার অভিজ্ঞতাটা আপনি আজকে আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন। যদিও আপনি প্রথমে ভয় পেয়েছিলেন। আসলে এই আপনার যে নেগেটিভের রক্ত রয়েছে,, সেটা পাওয়াটা খুবই কঠিন।

আপনার রক্ত দেয়ার অভিজ্ঞতাটা পড়ে বেশ ভালো লাগলো। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল। সৃষ্টিকর্তা আপনাকে সবসময় ভালো রাখুক সুস্থ রাখুক, ভালো থাকবেন।