আমার ছোট বেলার সেই দিনগুলো আজো মনে পড়ে

ঈদ মোবারক। সবাইকে আযহার শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আমার এই ছোট্ট লেখার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টাকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার অভিপ্রায় নিয়ে আজকের এই লেখা শুরু করছি।

আশা করি সবাই ভালো আছেন এবং ভালো ভাবেই আপনাদের ঈদ কাটাতে পেরেছেন আলহামদুলিল্লাহ! আমিও ভালো আছি। অনেক আনন্দর মধ্যে ঈদটা কাটালাম সপরিবারের সাথে। আমার ছোট বেলার কিছু স্মৃতি এবং সেই দিনগুলো কেমন ছিল তা আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। আশা করি আপনাদের সবার ভালো লাগবে।

rain-g0d3322714_1920.jpg
Copyright Free Image Source:Pixabay

শিশুকাল অতিক্রম করে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ হওয়ার পথ পরিক্রমায়, একজন মানুষ কখনো শৈশব ও কৈশোরকর উপেক্ষা করতে পারে না। শৈশবের স্কুল পালানো এবং কৈশোরে সবজি ও ডাল-ভাত ছেড়ে মাংশাসী প্রাণীর অন্তর্ভুক্ত হওয়া - এ সকল টুকরো স্মৃতি শৈশব ও কৈশোরের দুষ্টমির উৎকৃষ্ট উদাহরণ। নিজেকে দুষ্টদের সেরা সাব্যস্ত করার স্বার্থে সকল চেষ্টা যে শুধু অব্যাহত রেখেছি তাই নয়, কাছের বন্ধুদেরও বলতে বাধ্য করেছি, "দোস্ত তোকে দিয়ে হবে"।

কার না মনে পড়ে সেই ছেলে বেলার কথা। দিনগুলি এখন শুধুই স্মৃতি হয়ে আছে। ছেলে বেলার সেই বন্ধুদের সাথে জড়িয়ে থাকা স্মৃতি। আজো কাঁদায় ফেলে আসা সেই দিনগুলো। আধুনিক শহরের ইট পাথরের তৈরি বড় বড় অট্টালিকার কারণে মানুষ হাঁপিয়ে উঠেছে।

এখনো যদি সময় পাওয়া যায় তখন বন্ধুদের সাথে চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে অনেক সময় বেরিয়ে আসে সেই পুরাতন দিনগুলোর স্মৃতি মাখা দৃশ্য তথা পূর্বের স্মৃতিগুলো। চোখের সামনে চলে আসে পূর্বের স্মৃতি গুলো। মনে পড়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে শিক্ষকদের বকুনি, আবার অনেকে বলেন সব চেয়ে রাগী শিক্ষকের পিটুনির কথাও।সবাই যেন কোথায় হারিয়ে যাই।

একদিন সকাল নয়টার দিকে পাশের বাড়ির ময়লা পানির পুকুরে কয়েকজন বন্ধু মিলে গোসল করছিলাম। ওদিকে আবার স্কুল খোলা। মা খুঁজতে খুঁজতে সেই পাশের বাড়ির পুকুরে লাঠি হাতে চলে এসেছে। কি আর করা। তাড়াতাড়ি গোসল বন্ধ করে বাড়ি আসলাম। গোসল করলে শরীর পরিষ্কার হয়, আর আমাদের গোসলে শরীরে ময়লার স্তর জমে গেছে। কোন রকমে পরিষ্কার হয়ে স্কুলে দৌড়। স্কুল আবার বাড়ির পাশেই ছিল। শিক্ষক তো তৈরি। একে তো দেরিতে পৌঁছলাম তার উপর শরীরে ময়লা। যাই হোক স্যারের দুটো বেত্রাঘাত খেয়ে ক্লাসে ঢোকার অনুমতি পেলাম।

happiness-gb91931af2_1920.jpg
Copyright Free Image Source:Pixabay

আমাদের বিদ্যালয়ের নাম ছিল শাহীরেজি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সকল শিক্ষকই খুব ঠাণ্ডা মেজাজের। শুধু আলী আজম নামে স্যার ছিল খুব কড়া। এমন কোন শিক্ষার্থী নাই স্যারের হাতে শাস্তি না পেয়েছে। আজও স্যারের কথা মনে পড়ে। হয়তোবা স্যারের সেই কড়া শাসনের কারণেই আজ এতো দূর এসেছি। আজ স্যার নেই। শুনেছি মৃত্যুর পূর্বে নাকি স্যারের মাথায় সমস্যা হয়েছিলো। পাগল হয়ে গেছিলো। তার সেই কড়া শাসনের কথা ঠিক মনে পড়ে।

সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার। অর্ধদিন স্কুল। খুব মজা। মাত্র তিনটি ক্লাস করতে হবে। তাই ছুটি। বারোটা বাজার সাথে সাথেই ছুটির ঘণ্টা বেজে গেল। বই নিয়ে আর বাড়ি যাব না। কয়েকজন বন্ধু মিলে নদীতে চলে গেলাম গোসলে। নদীর পানিতে টুই টুম্বর, ইঞ্জিন চালিত নৌকা চলে নদীতে মাঝে মধ্যে দু'একটা অনেক বড় নৌকাও দেখা যায়। নদীতে গোসল করতাম আবার অনেক সময় মাছও ধরতাম।
স্কুল ছুটির পর দেরিতে বাড়ি আসার কারনে মায়ের কাছে অনেক বকা শুনেছি।

একটি কথা না বললেই নয়। নদী পার হয়ে ওপারে গিয়ে কড়চা খাওয়ার কথা আজও ভীষণ মনে পড়ে। খুব মিষ্টি, তবে মুখ ছরে যেতো। তাও ভালো। কার আগে কে কত বেশি ভেঙে নিতে পারে। তবে নদী পারি দিয়ে ওপার যেতে ভরা নদীতে অনেক সময় ভয়ও পেতাম। সেই সাঁতার কাটা, বিকেলে সকলে মিলে ফুটবল খেলা। প্রথমে আমাদেরকে সিনিয়রদের সাথে খেলায় নিতে চাইতো না। আমরা বল মাঠের বাইরে চলে গেলে সেটা এনে দিতাম। তবে কয়েকজন বন্ধু মিলে মাঠের বাইরে আমরা বল খেলতাম। তবে আসল বল নয়, গাছের জাম্বুরা দিয়ে বল খেলতাম। সকল বন্ধুরা চাঁদা তুলে বল কিনতাম। তার যে কত আনন্দ তা বলে বুঝাতে পারবো না।

kid-ge36e15af7_1920.jpg
Copyright Free Image Source:Pixabay

বছরে দুটি বড় ছুটির আশায় থাকতাম। কখন গ্রীষ্মকালীন ছুটির সময় আসবে। অনেকদিন স্কুলের বারান্দায় পা রাখতে হবে না। আর ঈদের সময়ে তখন শুধু খেলাধুলা নিয়ে বেশি ব্যস্ত সময় পার করতাম। পড়াশোনা শিকায় তুলা থাকতো। কিন্তু ছুটির পর যেদিন স্কুল খোলা হতো পূর্বে পড়া কিছুই মনে থাকতো না। কি পড়া বাড়িতে দেয়া ছিল। খেতে হতো শিক্ষকের কানমলা। আলী আজম স্যার কানমলা দিতে দিতে লাল হয়ে যেত। কানের ময়লা একটু থাকতো না।

তবে গ্রীষ্মকালে স্কুলের সামনে বড় একটি জাম গাছ ছিল। তার নিচে হতো ক্লাস। সুযোগ পেলেই গাছে উঠা, জাম পেরে খাওয়া আর ধরা পড়লেই শিক্ষকের পিটুনি। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময়ে সহপাঠীর সঙ্গে তুমুল ঝগড়া। একপর্যায়ে ঝগড়া করতে গিয়ে স্কুলের কাঠের ব্লাকবোর্ড ভেঙে ফেললাম। আবার বিচার শিক্ষকের কাঠগড়ায়। বিচারে আমার ৩০টি বেতের আঘাত আর যার সাথে ঝগড়া তাকে ২০টি। এবার সাজা আর কমানো সম্ভব হলো না। সেই স্মৃতি আজও মনে পড়ে। কখনো ভুলার নয়। শৈশব স্মৃতি আজও নিজেকে তাড়িয়ে বেড়ায়।

একদিন স্কুল ছুটির পর বিকেলে স্কুলের পাশে কাঁঠাল গাছে পাখির বাসা ছিল। গাছে উঠে পাখির বাসা থেকে ডিম পেরে এনেছিলাম, সেখান থেকে দুটি ডিম ভেঙে যায়। বাকি একটি ডিম আবার পাখির বাসায় রেখে আসি। সে দিন ছিল বুধবার। পরদিন স্কুলে আসার সাথে সাথেই প্রধান শিক্ষক জনাব আব্দুল মান্নান স্যারের কাছে আমার সম্পর্কে বিচার। স্যার তো রেখে আগুন। পাখির ডিম ভেঙেছি। মনে হয় অনেক দিনের ঝাল ঢালবে। কি আর করা স্যার বিচার শুরু করলো শেষে বিচারের রায় হলো আমাকে ২০টি বেতের বাড়ি আর ৪০ বার কান ধরে উঠবস করতে হবে। পরে শাস্তি কমিয়ে ১০ টি বেত্রাঘাত আর ২০ বার কান ধরে উঠবস করতে হবে।

সেদিন মনে হয়েছিল আর এই স্কুলে পড়বো না। স্যার শুধু অকারণে পেটায় কিন্তু তা নয়, স্যার সেদিন ঠিক ছিল, ঠিক ছিলাম না আমি বা আমরা। আজও সেই স্মৃতি মাখা শৈশবের দিনগুলো মনে পড়ে, আর কখনো কি ফিরে আসবে তা আর সম্ভব নয়। শুধুই স্মৃতি।

IMG20201210183449.jpg

আমি তৌহিদুল ইসলাম জীবন। আমার ব্যবহারকারীর নাম @towhidulislam। আমার জন্মস্থান নারায়ণগঞ্জে এবং বর্তমানে আমি নারায়ণগঞ্জ জেলায় থাকি। আমি বাংলাদেশী হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। নিজের মত প্রকাশের এবং অন্যের মতামতকে মূল্যায়নের চেষ্টা করি। আমি বই পড়া, কন্টেন্ট রাইটিং, ব্লগিং সহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখতে, পড়তে এবং জানতে পছন্দ করি।
আমি এখন ঢাকার শ্যামপুরে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে মার্কেটি সেলস ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছি। পাশাপাশি স্টিমিটে লেখা লেখি করছি।

ধন্যবাদ সবাইকে _ আসসালামু আলাইকুম

Sort:  
 2 years ago 

আপনার কনটেন্ট এ ২০%+ লেখা প্লাগিরাইজ। ওই লেখাটুকু রিমুভ করুন।

ভুল ধরিয়ে দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া। আচ্ছা ২০% লেখা রিমুভ করে দিবো।

ভাইয়া লেখাটুকু রিমুভ করে দিছি।