ঢাকার ফার্মগেটের মর্মান্তিক দুর্ঘটনার দায় কার...
বাংলা ভাষার কমিউনিটি
হ্যালো বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভালো এবং সুস্থ আছেন।
ঢাকার ব্যস্ততম ফার্মগেট এলাকায় আজ ২৬ অক্টোবর ২০২৫ সকালে ঘটে যায় এক ভয়াবহ দুর্ঘটনা। মেট্রোরেলের তথা MRT Line-6 এর একটি বিয়ারিং প্যাড ভেঙে নিচে পড়ে, আর তাতেই প্রাণ হারান ৩৫ বছর বয়সী আবুল কালাম নামের একজন। এই বিয়ারিং প্যাডের ওজন প্রায় ১৪০–১৫০ কেজি। এমন একটি ভারী বস্তু যখন নিচে পড়ে, তখন মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচা প্রায় অসম্ভব।
আবুল কালাম শরীয়তপুর জেলার ছেলে। তিনি ঢাকায় একটি দোকানে কাজ করতেন। মৃত্যুর সময় তিনি রাস্তার পাশে হেঁটে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ আকাশ থেকে ভারী প্যাডটি পড়ে তার মাথায় আঘাত হানে, ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। সবচেয়ে হৃদয়বিদারক বিষয় হলো—তার রেখে যাওয়া দুই সন্তান, যাদের বয়স মাত্র ৩ ও ৪ বছর। এই দুটি শিশুর ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। পরিবার হারিয়েছে একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটিকে, অথচ জীবনের এই কঠিন বাস্তবতায় তাদের সামনে কেবল অন্ধকার।
মেট্রোরেলের এই অংশে বিয়ারিং প্যাড নামের যন্ত্রাংশটি পিলার ও রেললাইন সংযোগের মাঝে স্থিতিশীলতা ও কম্পন নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হয়। এটি মূলত রাবার ও স্টিলের সমন্বয়ে তৈরি। কিন্তু ফার্মগেট এলাকায় যে প্যাডটি নিচে পড়ে যায়, সেটি নাকি ঠিকভাবে স্থাপন করা ছিল না বা সময়মতো পরিদর্শন করা হয়নি, এমন অভিযোগ তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা।
এর আগেও ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে একই এলাকায় আরেকটি বিয়ারিং প্যাড পড়ে গিয়েছিল, তখন বড় কোনো ক্ষতি হয়নি। কিন্তু এবার সেই একই স্থানে প্রাণহানির ঘটনা ঘটায় জনগণের ক্ষোভ চরমে পৌঁছেছে।
এমন দুর্ঘটনায় দায় স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা জরুরি। মেট্রোরেল প্রকল্পটি পরিচালনা করছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড তথা DMTCL। তারা ইতিমধ্যে একটি পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এমন ঘটনা আগেও ঘটেছে, তারপরও কেন যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হলো না?
বিশেষজ্ঞদের মতে, রক্ষণাবেক্ষণের ঘাটতি, তদারকির অভাব এবং নকশাগত ত্রুটি মিলিয়েই এমন দুর্ঘটনা ঘটে। এ কারণে শুধু একটি কমিটি নয়, পুরো প্রকল্পের নিরাপত্তা ব্যবস্থার পুনর্মূল্যায়ন জরুরি।
সরকার প্রাথমিকভাবে নিহতের পরিবারকে ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু একজন পরিবারের উপার্জনক্ষম মানুষের মৃত্যু মানে পুরো পরিবারের জীবনের ভিত্তি নড়ে যাওয়া। দুটি ছোট সন্তানের লালন-পালন, শিক্ষার ব্যয়, মায়ের মানসিক ও আর্থিক কষ্ট এই সব কিছু বিবেচনায় ৫ লাখ টাকা কেবল একবারের সান্ত্বনা, স্থায়ী সমাধান নয়।
বাংলাদেশে বড় বড় প্রকল্পে বারবার নিরাপত্তা অবহেলার কারণে সাধারণ মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে, অথচ দায়সারা ক্ষতিপূরণ দিয়ে বিষয়টি শেষ করে দেওয়া হয়। এই সংস্কৃতি বদলানো দরকার।
আবুল কালামের দুই সন্তান এখন পিতৃহীন। তাদের ভবিষ্যৎ যেন অন্ধকারে ঢেকে না যায়। এ জন্য সরকারের উচিত দীর্ঘমেয়াদি সহায়তা প্রদান করা। অন্তত তাদের শিক্ষা ও চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়া প্রয়োজন। তাছাড়া, প্রকল্পের নিরাপত্তা জোরদার করা, নিয়মিত পরিদর্শন করা, এবং ত্রুটিপূর্ণ যন্ত্রাংশ দ্রুত পরিবর্তনের ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। মানুষ যেন মেট্রোরেলকে ভয় নয়, আস্থা নিয়ে দেখে এটাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
ঢাকার মেট্রোরেল প্রকল্প বাংলাদেশের আধুনিক নগরায়ণের প্রতীক। কিন্তু এই প্রতীকের নিচে যদি মানুষের রক্ত ঝরে, তবে সেই উন্নয়ন অর্থহীন। আবুল কালাম নামের একজন সাধারণ মানুষের মৃত্যু আমাদের চোখ খুলে দেয়। উন্নয়ন তখনই সুন্দর, যখন তা নিরাপদ। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এখনই উচিত দায়িত্বশীল পদক্ষেপ নেওয়া, যাতে আর কোনো বিয়ারিং প্যাড কারও জীবনের স্বপ্ন চূর্ণ না করে।
সবাইকে ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ।।
আমি একজন বাংলাদেশের সাধারন নাগরিক। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে আমার বসবাস। সিম্পল আমার স্বপ্ন সিম্পল আমার জীবন। স্টিমিট আমার জীবনের একটি অংশ, আমার বাংলা ব্লগ আমার পরিবার। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া বলতে আমি স্টিমিটকেই চিনি। ভ্রমন করা, ফটেগ্রাফি করা আর বই পড়া আমার স্বপ্ন। আমি বিশ্বাস করি মানুষের জীবনে উত্তান পতন আছেই। সর্বপরি কাজ করতে হবে লেগে থাকতে হবে, তাহলেই একদিন সফলতা আসবে,এটাই আমি বিশ্বাস করি। সবাইকে ধন্যবাদ।।
Bangla Witness কে সাপোর্ট করতে এখানে ক্লিক করুন
এখানে ক্লিক করো ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP 500 SP 1000 SP 2000 SP 5000 SP
Click Here For Join Heroism Discord Server


















কার জীবনে কখন কি ঘটবে আমরা কেউ জানি না। এরকম বিপদ যেন কারো জীবনে না আসে। ফার্মগেটের মর্মান্তিক দুর্ঘটনার দায় কেউ নিতে পারবে না।