ধান ক্ষেতে কাটানো কিছু মুহূর্ত
ধানের ক্ষেত আমার জীবনের এক বিশেষ অনুভূতির জায়গা। সবুজে ঘেরা সেই মাঠে যখন সকালবেলার হালকা রোদ পড়ে, তখন যেন প্রকৃতি নিজ হাতে সাজিয়ে দেয় এক অপূর্ব দৃশ্যপট। দূর থেকে দেখা যায়, বাতাসে দুলছে সোনালি ধানের শীষ যেন সাগরের ঢেউয়ের মতো একটার পর একটা তরঙ্গ ছুটে আসছে। এই দৃশ্যের মধ্যে এমন এক শান্তি আছে, যা শহরের কোলাহলে খুঁজে পাওয়া যায় না।
আমি যখন ক্ষেতে যাই, প্রথমেই চোখে পড়ে কৃষকদের পরিশ্রমের ছবি। কেউ গামছা মাথায় বেঁধে কাদা মাখা পায়ে কাজ করছে, কেউ আবার পানি সেচ দিচ্ছে বা আগাছা পরিষ্কার করছে। তাদের মুখে কষ্টের ছাপ থাকলেও চোখে এক ধরনের তৃপ্তি যেন এই ফসলই তাদের জীবনের আশীর্বাদ। আমি প্রায়ই তাদের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলি, জানি তারা কীভাবে দিন রাত পরিশ্রম করে এই ফসল ফলায়। তাদের গল্প শুনে বুঝতে পারি, এক মুঠো ভাতের পেছনে কত ঘাম, কষ্ট আর ভালোবাসা লুকিয়ে থাকে।
ধানের ক্ষেত শুধু একটি জমি নয়, এটা আমাদের জীবনের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং অর্থনীতির প্রতীক। ছোটবেলায় যখন বাবা আমাকে ক্ষেতে নিয়ে যেতেন, আমি খালি পায়ে সেই কাদামাটিতে হাঁটতাম, ধান গাছের গন্ধে ভরে উঠত মন। সেই স্মৃতি আজও মনের ভেতর টাটকা। এখন যখন বড় হয়েছি, একই মাঠে দাঁড়িয়ে দেখি কত কিছু বদলে গেছে, কিন্তু মাটির সেই গন্ধ, সেই ভালোবাসা এখনও একই রকম আছে।
ক্ষেতের পাশে বসে যখন বিকেলের হালকা বাতাস মুখে লাগে, তখন মনে হয় সময় যেন থেমে গেছে। পাখির ডাক, দূরে গরুর ঘণ্টার শব্দ আর বাতাসে দুলতে থাকা ধান গাছ সব মিলিয়ে এক অন্যরকম সুর বাজে মনে। এই শান্ত পরিবেশে আমি নিজের সঙ্গে কথা বলি, জীবনের নানা চিন্তা এসে যায়, আবার মিলিয়ে যায়।
ধান ক্ষেত শুধু ফসলের ক্ষেত নয়, এটা এক জীবন্ত শিক্ষাগার। এখানে আমি শিখেছি ধৈর্য, পরিশ্রম আর প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধা। প্রতিটি বীজ বপনের মধ্যে আছে আশা, প্রতিটি ফসল কাটার মধ্যে আছে আনন্দ। যখন দেখি সেই সোনালি ধান ঘরে তুলছে কৃষকরা, তখন মনে হয় এই মাটিই আমাদের সত্যিকারের মা, যিনি আমাদের প্রতিদিন নতুন করে বাঁচার শক্তি দেন।ধান ক্ষেতের এই সময়গুলো আমার জীবনের সবচেয়ে শান্ত এবং সত্য মুহূর্ত। এখানে এসে আমি বারবার মনে করি যে মানুষ মাটিকে ভালোবাসতে জানে, সে জীবনকেও ভালোবাসতে জানে।




