ব্যবসায় লোকসান করার কিছু কারণ

in আমার বাংলা ব্লগ4 days ago

আসসালামু আলাইকুম। প্রিয় আমার বাংলা ব্লগবাসি, কেমন আছেন আপনারা? আশা করি সকলে ভালো আছেন। আজ আপনাদের সাথে একটি ক্রিয়েটিভ রাইটিং নিয়ে হাজির হয়েছি। যার মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে, আমাদের দেশে ব্যবসায়ীদের পতনের কারণ।


money-5964118_1280.jpg

Photo Source

আমি ব্যক্তিগত ভাবে পাঁচ বছর যাবৎ ব্যবসার সাথে জড়িত। এই ক্ষুদ্র সময়ের মধ্যে অনেক ব্যবসায়ীর উত্থান পতন দেখেছি। উত্থানের কথা অন্য কোন দিন বলব। আজ পতনের কথা বলি।

আমাদের দেশের ব্যবসায়ীদের পতনের সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে তারা ব্যবসা বিষয়টি সম্পর্কে ততটা ধারণা রাখেনা। এমন হয়েছে, তারা তিন চার বছর পর্যন্ত ব্যবসা করেছে। কিন্তু তারপরও ব্যবসার মূল থিম সম্পর্কে তাদের কোন ধারণা হয়নি। ক্রমাগত লোকসান করে একসময় তারা ব্যবসা গুটিয়ে ফেলে। আমি কয়েকটি মূল বিষয় নিয়ে একটু বিস্তারিত আলাপ করছি, যা কোনরকম ভাবেই ব্যবসাসুলভ আচরণের মধ্যে গণ্য হয় না।

সিকিউরিটি মানি

সিকিউরিটি মানি হচ্ছে আমাদের দেশে ব্যবসায় লোকশান করার অন্যতম একটি বড় কারণ। আমাদের দেশের অনেক ব্যবসায়ী বিশাল অংকের সিকিউরিটি মানি জমা রেখে তারপর ব্যবসায় নামে। ইউরোপের যেকোন দেশে তিন মাসের ভাড়া সিকিউরিটি মানি হিসেবে নেওয়া হয়। ক্ষেত্র বিশেষ সেটা ছয় মাস পর্যন্ত হতে পারে, এবং যদি খুবই রিস্কি কোন ব্যবসা হয়, সেক্ষেত্রে নয় মাস সর্বোচ্চ সিকিউরিটি মানি রাখা হয়। তবে তার পরিমাণ খুবই সামান্য।

আমেরিকায় সেই সংখ্যাটা আরো কম। আমেরিকায় এক থেকে দুই মাস পর্যন্ত সিকিউরিটি মানি নেওয়া হয়। সবচেয়ে রিস্কি ব্যবসার ক্ষেত্রেও সিকিউরিটি মানি রাখা হয় মাত্র তিন মাস। অনেক ক্ষেত্রে সরাসরি অর্থ না নিয়ে ব্যাংক গ্যারান্টি নেওয়া হয়।

কিন্তু আমাদের দেশে প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ উল্টো। এখানে মানুষ এত পরিমাণে সিকিউরিটি মানি দিয়ে থাকে যা অকল্পনীয়। কখনো কখনো সেটা হয় ১০০ গুণ পর্যন্ত হয়। অর্থাৎ, আপনি দশ বছর ধরেও যদি ভাড়া না দেন, তবুও আপনার সিকিউরিটি মানি শেষ হবে না। কি অবাস্তব ও অব্যবসায়ী সুলভ একটি অর্থনীতি। আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা এভাবেই ব্যবসা করতে রাজি। কারণ তারা ব্যবসায়িক বেসিক থেকে পিছিয়ে আছে। আমি কেন আমার ক্যাপিটাল অযথা ফেলে রাখবো? তাও আবার অন্যের কাছে? এটা কখনোই ব্যবসায়িক আচরণ নয়। ঠিক এই জায়গাতেই আমাদের দেশের বেশির ভাগ ব্যবসায়ী লোকশান গুনে। অর্থাৎ ব্যবসা শুরুর আগেই বড় রকমের ক্ষতি।

ক্রেতার বিষয়ে অমনোযোগী

দোকানের পজিশন, প্রোডাক্টের ভ্যারাইটি, এসব সম্পর্কে কমবেশি সবাই বুঝে। আমি সেদিকে নজর দেব না। আমাদের দেশের বেশিরভাগ ব্যবসায়ি ক্রেতা-বান্ধব হয়না। যার কারণে তারা কাস্টমার ধরে রাখতে পারে না। আপনি যখন সার্ভিস প্রোভাইড দিবেন, সার্ভিস গ্রহীতাদের সম্পর্কে আপনার কেয়ারফুল থাকতে হবে। কারণ তারাই মূল চালিকাশক্তি। আপনি যদি কাস্টমারের কথা চিন্তা না করেন, কাস্টমারের সুযোগ সুবিধার বিষয় না ভাবেন, তাহলে আপনি কখনো ব্যবসায় সফলতা লাভ করতে পারবেন না। যেসব কাস্টমার আপনার দোকানে আসবে, মনে রাখবেন তারা অন্য কোন উপায় না পেয়ে এসেছে। যখন ন্যূনতম কোন উপায়ও তারা খুঁজে পাবে, তারা দ্রুতই আপনাকে ত্যাগ করবে। যার কারণে ব্যবসায়ীদের প্রধান কাজ হচ্ছে ক্রেতা-বান্ধব হওয়া। কাস্টমারের সুযোগ সুবিধার দিকে খেয়াল রাখা।

বাকী

আমাদের দেশে ব্যবসার সবচেয়ে বড় শত্রু হচ্ছে বাকি। ক্যাশ যদি ফ্লো না থাকে, তাহলে সেখানে নদীর মতোই সবকিছু আটকে থাকে, থমকে যায়। এক সময় চর জমে। বহু ব্যবসায়ী বাকির কারণে নিজের ব্যবসা বিশাল রকমের আর্থিক ক্ষতি মেনে নিয়ে ছেড়ে দিয়েছে। এবিষয়ে আমাদের সবারই কাজ করার প্রয়োজন আছে।

প্রিয় আমার বাংলা ব্লগবাসি, আজ ছিল এ পর্যন্তই। আমাদের উচিৎ, ক্রেতা হিসেবে বিক্রেতা বান্ধব হওয়া, এবং বিক্রেতা হিসেবে ক্রেতা বান্ধব হওয়া। তবেই একজন ক্রেতা এবং বিক্রেতার মধ্যে সুসম্পর্ক বিদ্যমান থাকবে এবং আমরা সবাই সর্বোচ্চ সুবিধা জনক অবস্থায় লেনদেন করতে পারব।

1111.png

newsss.png