এক দেশে দুই নিয়ম: সাপ্তাহিক ছুটির বৈষম্য ও শিক্ষা খাতে অযৌক্তিকতা।।
বাংলা ভাষার কমিউনিটি
হ্যালো বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভালো এবং সুস্থ আছেন।
বাংলাদেশে বর্তমানে কর্মজীবী মানুষদের মধ্যে সাপ্তাহিক ছুটি নিয়ে এক ধরনের চরম বৈষম্য তৈরি হয়েছে। কেউ সপ্তাহে ৫ দিন কাজ করে ২ দিন ছুটি পাচ্ছেন, আবার কেউ ৬ দিন কাজ করে মাত্র ১ দিন বিশ্রাম পাচ্ছেন। এক দেশের মানুষ, এক আইন তবু ছুটির ক্ষেত্রে দুই রকম নিয়ম। এটি শুধু প্রশাসনিক নয়, বরং সামাজিক ও মানসিকভাবে একটি বড় বৈষম্য তৈরি করছে।
বর্তমানে সরকারি অফিস, ব্যাংক, বীমা, এনজিও এবং অনেক কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান সপ্তাহে ৫ দিন অফিস করে ২ দিন ছুটি দেয়। অন্যদিকে গার্মেন্টস, শিল্পকারখানা, দোকানপাট, ডেলিভারি সার্ভিস, মিডিয়া ও পরিবহন সেক্টরে কর্মীরা সপ্তাহে ৬ দিন কাজ করে ১ দিন ছুটি পান।
ফলে একদিকে কিছু মানুষ শুক্রবার ও শনিবারে দুই দিন বিশ্রাম, ভ্রমণ, পারিবারিক সময়, ধর্মীয় কার্যক্রমে যুক্ত হতে পারেন,অন্যদিকে অধিকাংশ শ্রমজীবী মানুষ একদিনের বিশ্রামেই আবার নতুন সপ্তাহের চাপে ফিরে যেতে বাধ্য হন। এটি নিঃসন্দেহে জীবনযাত্রার মান ও ন্যায্যতার ক্ষেত্রে বড় বৈষম্য।
বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও এখন দুই দিনের ছুটি শুক্র–শনিবার চালু হয়েছে। কিন্তু অনেক অভিভাবক ও শিক্ষাবিদ মনে করেন, এই সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক।
কারণ:
সপ্তাহে পাঁচ দিন পড়াশোনার সময়ই যথেষ্ট কম। শিক্ষার্থীরা পাঠ্যসূচি শেষ করতে পারে না। ক্লাসের মান ও ধারাবাহিকতা নষ্ট হয়। অন্যদিকে দুই দিনের ছুটির সমর্থকেরা বলেন,শিশুদেরও মানসিক বিশ্রাম ও খেলাধুলার সময় দরকার। উন্নত বিশ্বেও অধিকাংশ দেশে স্কুলে সপ্তাহে দুই দিন ছুটি থাকে। শিক্ষার মান বাড়াতে শুধু সময় নয়, পদ্ধতির পরিবর্তন জরুরি।
উদাহরণস্বরূপ, জাপান, কানাডা, দক্ষিণ কোরিয়া ও ইউরোপের বেশিরভাগ দেশে স্কুল সপ্তাহে পাঁচ দিন চলে। সেখানে শিক্ষার্থীরা তুলনামূলকভাবে কম সময় ক্লাস করলেও তাদের শিক্ষার মান অনেক উন্নত।
বিশ্বের অনেক দেশ ইতোমধ্যে ৪ বা ৫ দিনের কর্মসপ্তাহ চালু করেছে। ইউরোপের দেশগুলো যেমন নরওয়ে, ডেনমার্ক, আইসল্যান্ডে ৪ দিনের কর্মসপ্তাহ পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে এবং সেখানে উৎপাদনশীলতা বাড়ছে, কমছে না।
জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াও কাজ ও বিশ্রামের মধ্যে ভারসাম্য আনার নীতি গ্রহণ করেছে। এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাতেও এখন ৪.৫ দিনের কর্মসপ্তাহ চালু।
অর্থাৎ, উন্নত দেশগুলো যেখানে কর্মীর বিশ্রাম ও জীবনের মান উন্নয়নে জোর দিচ্ছে, বাংলাদেশে এখনো অনেক সেক্টরে শ্রমিকরা একদিনের বেশি ছুটির কথা ভাবতেই পারেন না।
এই দুই নিয়ম শুধু কাজের সময় নয়, মানুষের জীবনের মানেও প্রভাব ফেলে। দুই দিনের ছুটি পাওয়া মানুষ পরিবারে সময় দিতে পারে, শখ পূরণ করতে পারে, মানসিকভাবে সতেজ থাকে। একদিনের ছুটিতে থাকা শ্রমিক বা কর্মীরা সেই সময়টুকুতেই কেবল ঘুম ও বিশ্রামে কাটিয়ে দেন। নতুন সপ্তাহে ফেরার আগে তাদের পুনর্জীবনের কোনো সুযোগই থাকে না।
ফলাফল হিসেবে দেখা যায়, শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা কমে যায়, মানসিক চাপ বাড়ে, দুর্ঘটনা ও অসুস্থতার হার বৃদ্ধি পায়।
এখন করনীয় কি..?
একক ন্যূনতম ছুটির নীতি: সব সেক্টরের জন্য সপ্তাহে অন্তত দুই দিনের বিশ্রাম নিশ্চিত করতে হবে।
শিক্ষা খাতে সমন্বয়: দুই দিনের ছুটি থাকলেও পাঠ্যসূচি ও ক্লাসঘণ্টা পুনর্বিন্যাস করে শিক্ষার মান ঠিক রাখতে হবে।
শ্রম আইন কঠোর করা: যেখানে ৬ দিন কাজ বাধ্যতামূলক, সেখানে বাড়তি আর্থিক প্রণোদনা ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম দিতে হবে।
পাইলট প্রোগ্রাম: উন্নত দেশের মতো ৪ বা ৫ দিনের কর্মসপ্তাহ পরীক্ষা চালিয়ে বাস্তব ফলাফল মূল্যায়ন করা যেতে পারে।
এক দেশের মানুষদের জন্য কাজের সময় ও ছুটির নিয়ম আলাদা হওয়া সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে অযৌক্তিক। বিশেষ করে শিক্ষা ক্ষেত্রে দুই দিনের ছুটি নিয়ে পুনর্বিবেচনা জরুরি, কারণ এখানে সময় নয় পাঠদানের মানই আসল বিষয়।
বাংলাদেশে যদি কর্মজীবী, শিক্ষার্থী ও শ্রমজীবী সবাইকে সমান বিশ্রামের অধিকার দেওয়া যায়,
তাহলে দেশ আরও উৎপাদনশীল, সুস্থ ও ভারসাম্যপূর্ণ সমাজে পরিণত হবে।
সবাইকে ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ।।
আমি একজন বাংলাদেশের সাধারন নাগরিক। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে আমার বসবাস। সিম্পল আমার স্বপ্ন সিম্পল আমার জীবন। স্টিমিট আমার জীবনের একটি অংশ, আমার বাংলা ব্লগ আমার পরিবার। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া বলতে আমি স্টিমিটকেই চিনি। ভ্রমন করা, ফটেগ্রাফি করা আর বই পড়া আমার স্বপ্ন। আমি বিশ্বাস করি মানুষের জীবনে উত্তান পতন আছেই। সর্বপরি কাজ করতে হবে লেগে থাকতে হবে, তাহলেই একদিন সফলতা আসবে,এটাই আমি বিশ্বাস করি। সবাইকে ধন্যবাদ।।
Bangla Witness কে সাপোর্ট করতে এখানে ক্লিক করুন
এখানে ক্লিক করো ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP 500 SP 1000 SP 2000 SP 5000 SP
Click Here For Join Heroism Discord Server

















