বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রয়োজনীয় পরিবর্তন এখন সময়ের দাবি।।

হ্যালো বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভালো এবং সুস্থ আছেন।

শিক্ষা একটি দেশের উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি। যে দেশ যত বেশি আধুনিক ও যুগোপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারে, সে দেশ তত দ্রুত এগিয়ে যায়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশে বর্তমান যে শিক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে তা এখনও অনেক সেকেলে, কাঠামোগতভাবে দুর্বল এবং সময়ের দাবি অনুযায়ী আপডেট নয়। ফলে আমাদের যুবসমাজ আন্তর্জাতিক মানের প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে। উন্নত দেশের সাথে তুলনা করলেই স্পষ্ট বোঝা যায় যে, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা এখন আর বিলাসিতা নয়, বরং জরুরি প্রয়োজন।

বাংলাদেশের স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে এখনো মুখস্থভিত্তিক শিক্ষা সবচেয়ে বড় সমস্যা। শিক্ষার্থীরা বইয়ের ভেতর থাকা তথ্য মুখস্থ করে পরীক্ষায় লিখে আসে, কিন্তু বাস্তবে তা ব্যবহার করার দক্ষতা তৈরি হয় না। উন্নত দেশগুলোতে- যেমন ফিনল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, জাপান বা এমনকি প্রতিবেশী ভারতের কিছু আধুনিক প্রতিষ্ঠান সমস্যা সমাধান, সৃজনশীলতা, প্রজেক্টভিত্তিক শিক্ষা এবং হাতে-কলমে শেখার উপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়। সেখানে শিক্ষার্থীকে প্রশ্ন করতে উৎসাহিত করা হয়, কিন্তু আমাদের দেশে প্রশ্ন করতে অনেক সময় নিরুৎসাহিত করা হয়। প্রশ্ন করলে হাঁসির পাত্র হতে হয় এমনকি প্রশ্ন করলে টিচাররা রাগান্বিত হয়। এই বিষয় গুলো স্টুডেন্টকে খুবই হতাশ করে।

বেশিরভাগ উন্নত দেশ তাদের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার জন্য কারিগরি শিক্ষাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়। জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া বা চীন যে দেশই দেখা হয় না কেন, সেখানে ভোকেশনাল ট্রেনিং অত্যন্ত শক্তিশালী। শিক্ষার্থীরা স্কুল থেকেই বিভিন্ন স্কিল শেখে ইঞ্জিনিয়ারিং, আইটি, অটোমেশন, ডিজাইনিং, কৃষি প্রযুক্তি, মেশিন পরিচালনা ইত্যাদি শিখে।

বাংলাদেশে এখনো কারিগরি শিক্ষা মূলধারার বাইরে। অনেক পরিবার মনে করে ভোকেশনাল পড়া মানে কম সম্মানের কিছু। অথচ ভবিষ্যতের চাকরির বাজারে সবচেয়ে বেশি চাহিদা এই স্কিলগুলোরই।

বর্তমান বিশ্ব প্রযুক্তিনির্ভর। AI, রোবোটিক্স, ডাটা সায়েন্স, কোডিং এসব শেখা এখন আর বিলাসিতা নয়, বরং মৌলিক দক্ষতা। কিন্তু আমাদের দেশের বেশিরভাগ স্কুলে এই বিষয়গুলো শেখানোর মতো শিক্ষক, ল্যাব বা কারিকুলাম নেই। যেখানে বিদেশে ১০–১২ বছর বয়স থেকেই শিক্ষার্থীরা প্রোগ্রামিং শেখে, সেখানে আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা এখনও খাতা-কলমের উপর নির্ভর করে।

শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল দক্ষ শিক্ষক। কিন্তু বাংলাদেশে শিক্ষক সংকট দীর্ঘদিনের। অনেক শিক্ষক আধুনিক পদ্ধতিতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নন। অন্য দেশগুলোতে শিক্ষক হওয়া একটি সম্মানজনক, প্রতিযোগিতামূলক এবং উচ্চ বেতনের চাকরি, কিন্তু আমাদের দেশে এই পেশার প্রতি আগ্রহ কমে যাচ্ছে কম বেতন, অতিরিক্ত চাপ এবং সুযোগের অভাবে।

আমাদের দেশে একটি পরীক্ষায় কম নম্বর পেলেই শিশু মানসিক চাপে পড়ে যায়। অভিভাবকরা মার্কসকে সবকিছুর মাপকাঠি মনে করেন। অথচ উন্নত দেশগুলোতে শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত দক্ষতা, সৃজনশীলতা, দলগত কাজ এবং সমস্যা সমাধানের ক্ষমতাকে বেশি মূল্য দেওয়া হয়।

আধুনিক চাকরির বাজারে টিকে থাকতে হলে আমাদের শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক মানের দক্ষতা থাকা প্রয়োজন। দেশকে উন্নয়নশীল থেকে উন্নত দেশে পরিণত করতে হলে মানুষের সক্ষমতা বাড়ানো ছাড়া আর কোনো পথ নেই।

প্রযুক্তি, উদ্ভাবন, কারিগরি দক্ষতা, উদ্যোক্তা মানসিকতা এসব ছাড়া আমাদের যুবসমাজ শুধু ডিগ্রি হাতে বেকার হয়ে থাকবে। সঠিক শিক্ষা পেলে সমাজ ও অর্থনীতিতে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী তৈরি হয়, যা জাতীয় উন্নয়নের ভিত্তি।

স্কুল পর্যায় থেকে প্রজেক্টভিত্তিক শিক্ষা ও স্কিল-বেসড লার্নিং শুরু করা। জরুরী। তাছাড়া কারিগরি শিক্ষা মূলধারায় নিয়ে আসা এবং সম্মান বাড়ানো প্রয়োজন।প্রযুক্তি-বান্ধব কারিকুলাম তৈরি করা প্রয়োজন।শিক্ষকদের আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ দেওয়া, পরীক্ষানির্ভরতা কমিয়ে বাস্তবভিত্তিক শেখার সুযোগ বাড়ানো। সময়ের দাবি।

বাংলাদেশ যদি সত্যিকারের উন্নত দেশ হতে চায়, তবে বর্তমান সেকেলে শিক্ষা ব্যবস্থা বদলানো ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। সময় এখন পরিবর্তনের যেখানে শিক্ষা হবে আধুনিক, সমসাময়িক, এবং দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির উপযোগী।

আমি একজন বাংলাদেশের সাধারন নাগরিক। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে আমার বসবাস। সিম্পল আমার স্বপ্ন সিম্পল আমার জীবন। স্টিমিট আমার জীবনের একটি অংশ, আমার বাংলা ব্লগ আমার পরিবার। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া বলতে আমি স্টিমিটকেই চিনি। ভ্রমন করা, ফটেগ্রাফি করা আর বই পড়া আমার স্বপ্ন। আমি বিশ্বাস করি মানুষের জীবনে উত্তান পতন আছেই। সর্বপরি কাজ করতে হবে লেগে থাকতে হবে, তাহলেই একদিন সফলতা আসবে,এটাই আমি বিশ্বাস করি। সবাইকে ধন্যবাদ।।