শৈশবে বিলের মধ্যে বড়শি দিয়ে মাছ ধরা - (৩য় পর্ব)

in আমার বাংলা ব্লগ25 days ago

আসসালামু-আলাইকুম/আদাব।

হ্যালো বন্ধুরা, আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা সবাই অনেক ভালো আছেন।হ্যাঁ, আমিও অনেক ভালো আছি।

শৈশব যেন ছিল এক স্বপ্নময় সময় যে সময়টায় পৃথিবীটা ছিল কেবল আনন্দ আর আবিষ্কারের। সকালবেলার শিশিরে ভেজা ঘাস, দূরে বাঁশঝাড়ের ফাঁক দিয়ে দেখা উঠতি সূর্য, আর গ্রামের বিলের নিস্তব্ধ জলরাশির দিকে ছুটে চলা ছোট্ট কয়েকটি পা, এসবই মিলে আমার শৈশবের অবিচ্ছেদ্য ছবি। সেই সময়টায় আমাদের দিনের সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ কাজ ছিল বড়শি দিয়ে মাছ ধরা।

শৈশবে বিলের মধ্যে বড়শি দিয়ে মাছ ধরা - (প্রথম পর্ব)

শৈশবে বিলের মধ্যে বড়শি দিয়ে মাছ ধরা - (২য় পর্ব)

1000113240.jpg

সোর্স

মৌসুমি বৃষ্টির দিনগুলো সবসময়ই আমাদের জন্য ছিল বিশেষ। আকাশ ঘন কালো, দূরে মেঘের গর্জন, বাতাসে কাঁচা মাটির গন্ধ এসব মিলিয়ে পুরো গ্রামটায় যেন অন্যরকম একটা রহস্যময় আবহ তৈরি হতো। ঠিক এমনই এক দিনে আমরা চারজন আমি, শিমুল, জুয়েল ও শফি নিয়মমাফিক বিকেল হওয়ার অপেক্ষা না করে, দুপুর গড়াতেই ছুটলাম বিলের দিকে বড়শি নিয়ে। বৃষ্টি থেমে থেমে পড়ছিল, কিন্তু সেই ভেজা মাটির রোমাঞ্চে আমাদের আর আটকে রাখা সম্ভব ছিল না।বিলের পথটা ছিল ভিজে আর পিচ্ছিল। ধানক্ষেতের পাশ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে আমাদের পা মাঝে মাঝে কাদায় ডুবে যেত। কেউ ভয় পেতাম না, বরং এতে মজাই লাগত। শিমুল কাদায় পিছলে পড়ে গেলে আমরা তিনজন হো হো করে হেসে উঠলাম, আর সে রাগ দেখানোর অভিনয় করে বলল, দাঁড়া, মাছ ধরার পর তোদেরকে আর বড় মাছটা দেব না! এতেই আবার নতুন হাসির রোল উঠল।

বিলে পৌঁছাতে পৌঁছাতে দেখি পরিবেশটা বদলে গেছে। বৃষ্টির কারণে জল আরও শান্ত, যেন আয়নার মতো নিস্তরঙ্গ। কচুরিপানা এক জায়গায় জটলা বেঁধেছে, আর মাঝখান দিয়ে সরু একটা পথ তৈরি হয়েছে যেন জলপথের গোপন দুনিয়ায় প্রবেশ করতে হবে এখান দিয়েই। বাতাসে শীতলতা, চারপাশে ব্যাঙের ডাক আর দূরে বজ্রপাতের আলো সব মিলিয়ে হৃদয়টা শিহরণে ভরে গেল।আমরা চারজন ভিজে ঘাসের ওপর জায়গা বেছে বড়শি ফেললাম। ভেজা দুপুরের নীরবতার মাঝে মনে হচ্ছিল প্রতিটি শব্দ যেন একটু বেশি স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে। পানির ওপর মৃদু ঢেউ, দূরে মুরগির ডাক, আর মাঝে মাঝে গাছের পাতায় বৃষ্টির টুপটাপ শব্দ সব মিলিয়ে এক স্বপ্নময় পরিবেশ।

হঠাৎ শফি চিৎকার দিয়ে উঠল ঐ দেখ! দেখ! আমরা তাকিয়ে দেখি তার ভাসাটা প্রায় পুরোপুরি ডুবে গেছে। সে টান দিতেই পানির ওপর তীব্র ছটফটানি একটা বিশাল টাকি মাছ! শফির মুখে আনন্দ দেখে মনে হল সে যেন লটারি জিতে ফেলেছে। আমরা সবাই পালাক্রমে তার মাছটা ছুঁয়ে দেখলাম, তখনো মাছটা কাঁপছে, আর আমাদের চোখে বিস্ময়।এরপর আমি বড়শি ফেললাম একটু ভেতরের দিকে। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর এমন একটা দুলুনি পেলাম যে মনে হলো বড় কিছু লেগেছে। ধীরে ধীরে টান দিতে দিতে হঠাৎ একটা জোর ধাক্কা! মনে হচ্ছিল বড়শিটা হাত থেকে ছুটে যাবে। বন্ধুরা চিৎকার করছে, টান! টান! ধীরে টান! আমি প্রাণপণে বড়শিটা ধরে রাখলাম। প্রায় এক মিনিটের টানাটানির পর উপরে উঠল এক বিশাল বাহারী বেলে মাছ। জীবনে এত বড় মাছ হাতে কখনো ধরি নি মনে হচ্ছিল বুকটা আনন্দে ফেটে যাবে।

ঠিক তখনই আকাশ গর্জে উঠল। বৃষ্টি আবার শুরু হওয়ার ইশারা দিচ্ছে। কিন্তু আমাদের আনন্দ থেমে নেই। ভেজা কাপড়, কাদায় নোংরা পা, আর হাতে বড় বড় মাছএসবই যেন হয়ে উঠেছিল আমাদের দিনের সেরা ট্রফি।বৃষ্টি নামতেই আমরা দৌড়ে বাড়ির পথে ফিরলাম। কিন্তু সেদিনের বিল, সেই টাকি ও বেলে মাছ, আর সেই উত্তেজনা সবকিছুই এখনও মনে আছে কাঁচা ছবির মতো স্পষ্ট। শৈশব এমনই ছোট ছোট মুহূর্তে জমা থাকে সারাজীবনের আনন্দ।

(চলবে...)


আজ এখানেই শেষ করছি। অন্য কোন একদিন ভিন্ন ধরনের কনটেন্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

standard_Discord_Zip.gif

আমার পরিচয়

1000024149.png

আমার নাম মোঃ ফয়সাল আহমেদ। আমি ঘোরাফেরা, লেখালেখি এবং ফটোগ্রাফি করতে ভালোবাসি। ভ্রমণের মাধ্যমে নতুন জায়গা ও সংস্কৃতি আবিষ্কার করতে আমার আনন্দ লাগে। বিভিন্ন মুহূর্ত ও দৃশ্যকে ক্যামেরার লেন্সে বন্দি করা আমার শখ। লেখালেখির মাধ্যমে আমি আমার ভাবনা, অভিজ্ঞতা ও অনুভূতিগুলো শেয়ার করতে ভালোবাসি। প্রকৃতির সৌন্দর্য, মানুষের জীবনধারা এবং ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আমার লেখার মূল অনুপ্রেরণা। আমি প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ করার চেষ্টা করি এবং সেগুলোকে স্মৃতিতে ধরে রাখি। এসব অভিজ্ঞতা আমাকে নতুন করে জীবনকে দেখার অনুপ্রেরণা দেয়।

1000024154.png

1000024151.gif

Posted using SteemX

Sort:  
 25 days ago 

🎉 Congratulations!

Your post has been upvoted by the SteemX Team! 🚀

SteemX is a modern, user-friendly and powerful platform built for the Steem community.

🔗 Visit us: www.steemx.org

✅ Support our work — Vote for our witness: bountyking5

banner.jpg