শৈশবে বিলের মধ্যে বড়শি দিয়ে মাছ ধরা - (শেষ পর্ব)
শৈশব যেন ছিল এক স্বপ্নময় সময় যে সময়টায় পৃথিবীটা ছিল কেবল আনন্দ আর আবিষ্কারের। সকালবেলার শিশিরে ভেজা ঘাস, দূরে বাঁশঝাড়ের ফাঁক দিয়ে দেখা উঠতি সূর্য, আর গ্রামের বিলের নিস্তব্ধ জলরাশির দিকে ছুটে চলা ছোট্ট কয়েকটি পা, এসবই মিলে আমার শৈশবের অবিচ্ছেদ্য ছবি। সেই সময়টায় আমাদের দিনের সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ কাজ ছিল বড়শি দিয়ে মাছ ধরা।
বিলের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব ছিল খুব গভীর। প্রতিদিন সেখানে ছুটে যাওয়া, বড়শি ফেলা, হাসি-আড্ডা এসব যেন শৈশবের রুটিন হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু প্রত্যেক সুন্দর গল্পের মতোই আমাদের এই দুনিয়ারও একদিন শেষ অধ্যায় ছিল। সেই শেষ বিকেলটা আজও মনে পড়লে বুকের ভেতর এক হালকা কষ্টের ঢেউ উঠে আসে।সেদিন ছিল শীতের শুরু। বাতাসে কুয়াশার গন্ধ, সূর্য যেন একটু ম্লান, আর চারপাশে এক ধরণের শান্ত ভাব। আমরা চারজন আমি, শিমুল, জুয়েল, শফি আরেকবার হেঁটে গেলাম বিলে। কেউ বলল না যে এটা হয়তো শেষবার হতে পারে, কিন্তু আমরা সবাই জানতাম সময়গুলো বদলাচ্ছে। নতুন ক্লাস, নতুন ব্যস্ততা সব মিলিয়ে আর আগের মতো প্রতিদিন আসা সম্ভব হবে না।
বিলটা সেদিন অদ্ভুতভাবে শান্ত ছিল। কচুরিপানা জটলা বেঁধে এক কোণে জমা হয়েছে, শাপলার পাতা নীরব জলের ওপর স্থির হয়ে আছে। আমরা আগের মতো আলাদা আলাদা জায়গায় বসে পড়লাম। বড়শি ফেললাম, কিন্তু সেদিন মাছ ধরা ছিল না আমাদের আসল উদ্দেশ্য। বরং যেন প্রত্যেকেই নিজের মনে সেই পুরোনো দিনগুলো খুঁজছিল যেদিন প্রথম পুঁটি মাছ ধরেছিলাম, যেদিন বৃষ্টিভেজা বেলে মাছের জন্য টানাটানি হয়েছিল, কিংবা যেদিন হাসতে হাসতে কাদায় পড়ে গিয়েছিল কেউ।শিমুল বলল, দোস্ত, মনে আছে তোর প্রথম মাছটা?
আমি হেসে বললাম, পুঁটি মাছ… কিন্তু আনন্দটা ছিল বিশাল।
জুয়েল যোগ করল, এই বিলটা না থাকলে আমাদের শৈশবটাই অসম্পূর্ণ থাকত।
আমরা গল্প করছিলাম, আর মাঝে মাঝে বড়শি টেনে দেখছিলাম কিছু লাগে কি না। প্রায় আধা ঘণ্টা পরে জলে হালকা নড়াচড়া হলো। আমার ভাসাটা একটু দুলে উঠল। মনটা হঠাৎ চঞ্চল হয়ে গেল। ধীরে টান দিতেই উঠল ছোট্ট এক টেংরা মাছ। খুব বড় না, কিন্তু সেদিনের মতো উপযুক্ত উপহার। মনে হল বিল যেন একশেষ শুভেচ্ছা জানাল আমাদের।সেই ছোট্ট মাছটাই আমরা চারজন মিলে দেখলাম, হাত বুলালাম, তারপর আবার জলে ছেড়ে দিলাম। যেন বিদায়ের আগে বন্ধুকে আলতো করে ‘খেয়াল রেখো’ বলা।সূর্য তখন ধীরে ধীরে পশ্চিমে নামছে। আমরা দাঁড়িয়ে রইলাম জলের ধারেই। বিলের ওপর লাল আলো পড়ছে, চারপাশে কুয়াশা নেমে আসছে। মনে হচ্ছিল সময় থেমে গেছে। তারপর আমরা ব্যাগ কাঁধে তুলে বাড়ির পথে হাঁটলাম নীরবে, ধীরে, কিন্তু হৃদয়ে ভরা এক অদ্ভুত উষ্ণতা নিয়ে।
বিলটা আজও রয়ে গেছে সেখানে। হয়তো বদলে গেছে, হয়তো আগের মতো নেই। কিন্তু আমার শৈশবের বিল হাসি, দৌড়ঝাঁপ, বড়শির টান, বন্ধুত্ব আর নির্মল আনন্দ তা এখনও ঠিক আগের মতোই রয়ে গেছে আমার স্মৃতির ভেতর, সবচেয়ে উজ্জ্বল জায়গাটায়।
—সমাপ্ত—
আজ এখানেই শেষ করছি। অন্য কোন একদিন ভিন্ন ধরনের কনটেন্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।





X-Promotion
🎉 Congratulations!
Your post has been upvoted by the SteemX Team! 🚀
SteemX is a modern, user-friendly and powerful platform built for the Steem community.
🔗 Visit us: www.steemx.org
✅ Support our work — Vote for our witness: bountyking5
আপনার শৈশবকালের বরশি দিয়ে মাছ ধরার গল্পটি পড়ে ভীষণ ভালো লাগলো।আমিও ছোটবেলায় এরকম বরশি দিয়ে মাছ ধরতাম।আপনার গল্পটি পড়ে ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেলো।ধন্যবাদ ভাই পোস্টটি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।