সমাজের অদৃশ্য রোগ দুর্বলকে চাপে রাখা আর পরিশ্রমীর অবমূল্যায়ন।।
বাংলা ভাষার কমিউনিটি
হ্যালো বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই অনেক ভালো এবং সুস্থ আছেন
আমাদের সমাজে একটি অদ্ভুত সংস্কৃতি রয়েছে, যে মানুষটি একটু নরম, ভদ্র বা দুর্বল প্রকৃতির, তার উপরই সবাই প্রভাব বিস্তার করতে চায়। অফিস, ব্যবসা, সামাজিক অনুষ্ঠান সব ক্ষেত্রেই যেন একই চিত্র। যে চুপচাপ, সহজ-সরল, বিরোধে যেতে চায় না, তাকেই কাজে, কথায় বা চাপে রাখা খুব সহজ মনে হয় অনেকের কাছে। আর এই চর্চা এতটাই স্বাভাবিক হয়ে গেছে যে মানুষ তা আর অন্যায় হিসেবে দেখেও না।
প্রাইভেট অফিসগুলোতে এই প্রবণতা সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে। যারা কাজ পারে, দায়িত্ব নিতে পারে তাদের উপরই অধিকাংশ দায়িত্ব এসে পড়ে। আর যারা কাজ না-পারে বা কাজ এড়িয়ে যেতে চায়, তাদের কাছে স্যার বা কর্মকর্তারা তেমন কিছু বলেন না।
আমার অফিসেই এমন দুইজন স্টাফ আছে যারা যে কোনো কাজ দিলেই আগে বলে আমি পারি না। আশ্চর্যের বিষয় হলো, তাদের না পারা শুনে উপরস্থ কর্মকর্তা কখনোই জোর করেন না। বরং যিনি কাজ পারেন, তাকেই ডেকে বলেন তুমি করে দাও। এমনকি বাসা থেকে ডেকে নিয়েও কাজ করিয়েছে।
যে কাজ পারে বারবার একই মানুষের কাঁধে এসে কাজ পড়ে। এমনকি নির্ধারিত অফিস সময় শেষে কাজ পড়ে থাকলে তাকেই ধরে রাখতে চান। কারণ তিনি জানেন, এই মানুষটি না বলতে পারবে না। অন্যদিকে, যে ফাঁকিবাজ সে হাসিমুখে ঠিকই সময়মতো অফিস থেকে বের হয়ে চলে যায়। আবার বড় বড় কথাও বলে, গলাবাজি করে। এই মানুষ গুলোকে দেখলেই মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।
সবচেয়ে কষ্টের বিষয় হলো, যারা ভালো কাজ করে, সঠিক সময়ে কাজ সম্পন্ন করে, অফিসের জন্য অতিরিক্ত পরিশ্রম করে তাদের প্রাপ্য সম্মান বা মূল্যায়ন অনেক সময়ই তারা পায় না। অথচ বছর শেষে বা বেতন বাড়ানোর সময় দেখা যায়, পরিশ্রমী ও ফাঁকিবাজ দু’জনই একই হারে বেতন বৃদ্ধি পায়।
যে মানুষটি সারাদিন মাথা ঘামিয়ে অফিসকে এগিয়ে নিয়ে যায়, সে তখন মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। মাঝে মাঝে মনে হয় আমি এত পরিশ্রম করি কিসের জন্য? যার কাজ নেই, দক্ষতা নেই, পরিশ্রম নেই সেও তো আমার মতোই ইনক্রিমেন্ট পেয়ে যাচ্ছে।
এই অবিচারই কাজ করার আগ্রহ ধীরে ধীরে কমিয়ে দেয়। মানুষ মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয় বেশি কাজ দেখিয়ে কাজ করে লাভ নেই, বরং চুপচাপ নিজের মতো থাকাই ভালো। কারন বেশি কাজের মূল্যায়ন পাওয়া যায় না। কাজ না করে চামচামি যারা করে তারাই ভালো। কোন পেরেশানি নাই। বিন্দাস অফিসে আসো, চামচামি করো আর সময় মত চলে যাও।
আমাদের দেশের বড় সমস্যা হলো এখানে কাজের মূল্যায়নের চেয়ে চাটুকারিতা, মুখ দেখে বিচার, আর স্বজনপ্রীতি বেশি গুরুত্ব পায়। যে মানুষ সত্যিকারের কাজ জানে, যে সৎ, যে দায়িত্ববান তাকে দিয়ে আরও বেশি কাজ করানো হয়, কিন্তু তার যোগ্য সম্মান বা স্বীকৃতি দেওয়া হয় না।
ফাঁকিবাজরা বরং আরও শক্ত অবস্থান তৈরি করে ফেলে, কারণ তারা না বলতে জানে, নিজের সুবিধা দেখতে জানে। আর পরিশ্রমী লোকেরা ধীরে ধীরে ক্লান্ত, হতাশ ও নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ে।
এই অবিচার কেবল ব্যক্তিগত ক্ষতি করে না দেশেরও ক্ষতি করে। যাদের অভিজ্ঞতা আছে, দক্ষতা আছে, কাজের মনোভাব আছে তারা যখন বারবার অবহেলা পায়, তখন কর্মস্থল পালটানো বা দেশের বাইরে যাওয়াই তাদের কাছে সহজ সমাধান মনে হয়।
ফলে দেশ হারায় তার সর্বোত্তম মেধাশক্তিকে। আর দেশে থেকে যায় ফাঁকিবাজ, দায়িত্বহীন, অযোগ্য লোকেরা। যার পরিণতি দুর্নীতি, বিশৃঙ্খলা, চাঁদাবাজি আর গলাবাজি।
যে কাজ করে, যে দায়িত্ব নেয়, যে নিজের ঘাম ঝরায়তার মূল্যায়ন হওয়া উচিত সর্বাধিক। এই মূল্যায়নই তাকে উৎসাহিত করবে আরও ভালো করতে, আরও বড় হতে।
সবাইকে ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ।।
আমি একজন বাংলাদেশের সাধারন নাগরিক। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে আমার বসবাস। সিম্পল আমার স্বপ্ন সিম্পল আমার জীবন। স্টিমিট আমার জীবনের একটি অংশ, আমার বাংলা ব্লগ আমার পরিবার। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া বলতে আমি স্টিমিটকেই চিনি। ভ্রমন করা, ফটেগ্রাফি করা আর বই পড়া আমার স্বপ্ন। আমি বিশ্বাস করি মানুষের জীবনে উত্তান পতন আছেই। সর্বপরি কাজ করতে হবে লেগে থাকতে হবে, তাহলেই একদিন সফলতা আসবে,এটাই আমি বিশ্বাস করি। সবাইকে ধন্যবাদ।।
Bangla Witness কে সাপোর্ট করতে এখানে ক্লিক করুন
এখানে ক্লিক করো ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP 500 SP 1000 SP 2000 SP 5000 SP
Click Here For Join Heroism Discord Server

















