হাজতবাস 😁 // ১০% পেআউট লাজুক খ্যাঁক-কে

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)



নমস্কার,

হাজতবাসটাই বাকি ছিলো, সেটাও হয়ে গেলো। ঠিক "বাস" বলা যায়না, কারন আমি রাত্রিযাপন করিনি তবে ওই মিনিট পাঁচেকের জন্য আটকে থাকাটাও হাজতবাসের থেকে কম কিসে! পুলিশের হেফাজতে আটক থাকার অভিজ্ঞতা। দিনের পুরোটাই স্বাভাবিক ছিলো। অন্যদিনের মতো আজকেও কাজকর্ম শেষ করে বেরিয়েছিলাম কিছু জিনিসপত্র কেনার জন্য, সাথে আশীষকে নিয়েছিলাম। দুজনে বাজারে গিয়ে কাঙ্খিত জিনিসটা খুঁজে না পেয়ে মুখ বেজার করে ফিরে আসছি। ফেরার পথে রাস্তার মোড়ে দেখি লিট্টি চোখার দোকান। দুজনেই বেশ খুশি, অনেক দিন বাদে লিট্টি চোখা খাওয়ার যায় কিনা একে অপরের দিকে তাকাচ্ছি আর চিন্তা করছি।


লিট্টি চোখা বিক্রেতা (আমার গ্রেফতার স্পট) | w3w

গত এপ্রিলে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর থেকেই বাইরে বিশেষ করে রাস্তাঘাটে আর খাওয়াই হয় না। রাস্তায় লিট্টি চোখা দেখে মনে হলো দুজনে একটা করে তো ট্রাই করা যেতেই পারে। আগে লিট্টি চোখা কি বস্তু তা নিয়ে দুকথা বলে নিই। বিহারের এই সুপার ফুড আটা, ভিন্ন ধরনের মশলা আর ছাতু দিয়ে তৈরী। আর ঝাল করে মাখা আলু সেদ্ধ বা বেগুন সেদ্ধকে চোখা বলে, সাথে থেকে পুদিনার চাটনি। আটার গুলতির মধ্যে পুর হিসেবে ছাতু-মশলার মিশ্রণ ঢুকিয়ে সেটাকে গ্রিলে পুড়িয়ে যে বস্তুটি মেলে সেটাই লিট্টি। শুধু মুখে ভালো লাগে না তাই পুদিনার চাটনি আর আলু চোখা দিয়ে সার্ভ করা হয়। আমি আর আশীষ একটু স্বাদ বদলের জন্য লিট্টি মুখে দিলাম।


লিট্টি চোখা | w3w

ওই লিট্টি চোখা খাওয়ার পরের ঘটনা। খাওয়ার পর মুখে মাস্ক ছিলনা। স্বাভাবিকই। খাবার সময়ে কেউ যে মুখে মাস্ক পরে সেটা আমার জানা নেই তবে আমি পড়ি তো না। খাওয়ার শেষ করার পরের মুহূর্তেই একজন আমার হাত ধরে বলল

-চলুন!

আমিও হকচকিয়ে বললাম কোথায় যাবো বলুন। উনি আমাকে টেনে করে নিয়ে গিয়ে একটা পুলিশের গাড়ির সামনে দাঁড় করিয়ে ঢুকতে বললেন। বুঝলাম, হয়তো মাস্কের জন্য। ডিউটি রত পুলিশকে অনেক বোঝানোর পরেও আমাকে সেই পুলিশের গাড়িতে বসতে বলা হলো। আমি বসলাম। অবশ্য তার আগে আমাকে অনেক চিৎকার-চেঁচামেচি শুনতে হলো। আমি অ্যাডভোকেট সেটা বলার পরেই যেন আগুনে আরো কয়েক ফোঁটা ঘি পড়লো। শেষে আমাকে আর আরো কিছু মাস্কহীনকে গাড়িতে চাপিয়ে, গাড়ি চললো থানার উদ্দেশ্যে।


থানার উদ্দেশ্যে | w3w

থানার সামনে নামলাম, থানার ভেতরে গেলাম। বাকিরা ফাইন ভরতে ব্যস্ত থাকলেও আমি ফাইনটা দিতে কিছুতেই রাজি ছিলাম না। কারন আমাকে কতক্ষন মাস্ক ছাড়া দেখেছে, সেটা আমার একবার জানা দরকার। তাছাড়া নিয়ম এতোটা কড়াকড়ি হলো তারপর মিনিট পাঁচেক ওয়েটিং রুমে বসা।


জেলের ঘানি টানার আগে 😁

কিছুক্ষনের অপেক্ষা তার পরেই আমাকে অফিসার ইন চার্জের ঘরে যেতে বলা হলো। সৌভাগ্যক্রমে সেই মাত্রই আশীষ আর চন্দন থানায় এসেছে, তারপরে পুলিশ ইন চার্জ আমাদের সাথে কথা বললেন। তারপরে আমাকে বিনা ফাইন করেই ছেড়ে দেওয়া হলো। আমিও জীবনের প্রথম জেল যাত্রা থেকে মুক্তি পেলাম। তবে ছাড়া পাওয়ার আগে বেশ কিছুক্ষন সার্কাসটিক কথা শুনিয়ে তবেই পুলিস হেফাজত থেকে ছাড়া পেলাম।

আসলে উকিলদের সাথে পুলিশের সম্পর্কটা অনেকটা সাপে-নেউলের মতো। রেষারেষির। পুলিশ আর ওকালতি একই কর্মের এ পিঠ আর ওপিঠ, একসাথে জড়িত থাকা মানুষ গুলো একে অপরকে পছন্দ না করার কারণটা আমি আজও বুঝতে পারলাম না। সেসব থাক। সবশেষে আমি বেশ খুশি কারন অ্যাডভোকেট হওয়ার লাভ অবশেষে পেলাম।



Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Sort:  
 2 years ago 

আপনি যে খাবারটি দেখান তা খুবই সুস্বাদু।

 2 years ago 

সুস্বাদু খাবার খেতেই ফেঁসে গেলাম 😆

দাদা জেলে থাকার অভিজ্ঞতা এখনো হয়নি তবে জেলে যাওয়ার ইচ্ছে আছে একবার পরিবেশটা কেমন দেখার জন্য😂। দাদা এবার খাওয়ার সময় মাক্স পড়বেন না হলে পুলিশ ধরে নিয়ে যাবে।

 2 years ago 

একবার ঘুরে আসুন দারুন পরিবেশ। হাঃ হাঃ! সেটাই পড়তে হবে দেখছি 😆

হুম দাদা

 2 years ago 

দাদা অনেক সুন্দর একটা পোষ্ট আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন। আপনার পোষ্টটি পড়ে আমার হাজত সম্পর্কে একটু অভিজ্ঞতা পাইলাম। আপনার ফটোগ্রাপি গুলো অনেক সুন্দর হয়েছে। ধন্যবাদ ভাইয়া

 2 years ago 

দাদা অনেক সুন্দর একটা পোষ্ট আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন। আপনার পোষ্টটি পড়ে আমার হাজত সম্পর্কে একটু অভিজ্ঞতা পাইলাম। আপনার ফটোগ্রাপি গুলো অনেক সুন্দর হয়েছে। ধন্যবাদ ভাইয়া

 2 years ago 

নিজে না গেলে কি আর অভিজ্ঞতা হলো। সশরীরে ঘুরে আসুন আর ভালো লাগবে 😆।

 2 years ago 

হ্যাঁ দাদা ঠিক বলছেন।

 2 years ago (edited)

হাজতে কাটানো কিছু মুহূর্ত খুবই ভালো ছিল ।তবে জেলে যাওয়ার ঘটনাটি আমার কাছে অনেক খারাপ লেগেছে।তাহলে কি মাক্স পড়ে আমরা খাবার খাব বিষয়টা কি রকম,আসলে অন্যায় ভাবে ধরে নেওয়া ঠিক হয় নাই। আমি জেলে কখনো যাই নাই, তবে আমার বড় ভাই জেলে গিয়েছিল, তার কাছে জেলের ঘটনা আমি শুনেছি।

 2 years ago 

বিষয়টা সেরকমই। এবার থেকে মাস্ক পড়ে খাওয়ার অভ্যেস করতে হবে। খিক খিক।

দাদাকে কারনে নাকি বিনা কারনে জেলে নিয়ে গিয়েছিল?

 2 years ago 

ভালো একটা অভিজ্ঞতা হলো আপনার দাদা। হাজতবাস যেভাবেই হোক করেছেন তো😂। কোনোভাবেই আমার এখনো থানার গন্ডিপেরনো হয়নি। তাও আপনার অনুভূতি টা বুঝলাম।

লিট্টি চোখা নামটা প্রথম শুনলাম। এবং খাবার টা সম্পর্কে আপনার পোস্টে পড়ে বেশ দারুণ লাগল। এবং সর্বসমেত পোস্ট টা বেশ ভালো লাগল পড়ে।
মাস্কের জন্য হাজতবাস ভাবা যায়।

 2 years ago 

গণ্ডি না পেরোনোই ভালো ভাই। ডান্ডা দিয়ে ঠান্ডা করে দেবে 😆।

লিট্টি চোখা নিয়ে একদিন আলাদা রিভিউ পোস্ট করবো। দারুন লাগে আমার।

সত্যিই মাস্কের জন্য হাজত থেকে ঘুরে এলাম। 😆

 2 years ago 

লেখার শিরোনাম দেখে ভয়ই পেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম কি ব্যাপার দাদা কি এমন অপরাধ করল যে হাজতবাস করতে হল। আপনার পুরো লেখাটি পড়ার পরই দুশ্চিন্তা মুক্ত হলাম। বিস্তারিত পড়ার পর মনে হল এটাতো পুলিশের খুব বেশি বাড়াবাড়ি। যাইহোক লিট্টি চোখার কল্যাণে নতুন অভিজ্ঞতা হলো হি হি হি।

 2 years ago 

আমার ভুল ছিলোনা সেটা বলবো না, তবে খাওয়ার সময় কেউই মাস্ক পরে না। করোনা নিয়ে ব্যবসা আরো কতদিন চলবে ঈশ্বর জানে। নতুন অভিজ্ঞতাই বটে 😆

 2 years ago 

দাদা আপনি কি একজন এডভোকেট সেটা তো জানতাম না। আর আপনার সারাদিন স্বাভাবিক যাওয়া এবং হঠাৎ করেই কেউ হাত ধরা চমকানোর এই কথা। কিন্তু মাক্স এর জন্য আপনাকে অনেক কথা শুনতে হলো থানা পর্যন্ত যেতে হল। আসলে এটা খুব টেনশন এবং কি অস্বাভাবিক একটা সময়। কিন্তু তারপরও নিরুপায় তাদেরকে কিছু বলা যায় না সহ্য করে নিতে হয়। অবশেষে আপনার কথোপকথনের পড়ে আপনি যে ছাড় পেলেন সেটাই সৌভাগ্যের বিষয় শুকরিয়া করছি। তবে বাংলাদেশে হলে বিপদ ছিল, বাংলাদেশের পুলিশের ধারার শেষ নেই। আর ওদের সাথে কথা বলল্লেও ধোস না বলল ধোস, পুলিশ থেকে যতটুকু এড়িয়ে চলা যায় ততো ভালো। তবে আপনি যে পুলিশের গাড়িতে সেলফি নিয়েছিলেন তার জন্য তো কিছু বললেন না। যাইহোক আপনারা অল্প সময়ে হাজত বাস অনেক কষ্টদায়ক খুবই খারাপ লেগেছে এটা অবশ্য আশা করেনি। আমাদের সাথে অনেক সুন্দর করে উপস্থাপন করেছেন এবং গুছিয়ে লিখেছেন। আপনার জন্য ভালোবাসা অবিরাম।

 2 years ago 

টেনশন ছিলো তবে আমি ফাইন দিতাম না। ফাইন নিলে ওদের খবর ছিলো। পুলিশকে ভয় কিসের? নিয়ম না ভাঙলেই সমস্যা নেই।

হাজত বাস হয়নি তবে থানায় বসে থাকা হাজতবাসের থেকে কম কি 😆

 2 years ago 

আমি অ্যাডভোকেট সেটা বলার পরেই যেন আগুনে আরো কয়েক ফোঁটা ঘি পড়লো।

হাহাহাহাহ,ভাই বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা তবে আমি হাসতে হাসতে শেষ।আপনার এই লাইনটি পড়ে আমার পেট ব্যথা হয়ে গেলো হাসতে হাসতে।তবে আপনিও কম না!থানার উদ্দেশ্যে যেতেও ছবি তুললেন!
পারেন ও বটে।

 2 years ago 

প্ৰথম বার থানার গাড়িতে ফ্রি রাইড পেলে ছবি তো মাস্ট, তাইনা। খিক খিক। 😁

 2 years ago 

আহা কি মজার অভিজ্ঞতা, কতটা ভাগ্যবান আপনি দাদা, খুব দ্রুততার সাথে অল্প সময়ের জন্য হলেও আপনি দারুণ একটা অভিজ্ঞতা নেয়ার সুযোগ পেয়েছেন, তাও আবার ক্ষনিকের জন্য হাজতবাস, হা হা হা হা, হাসি আর আটকে রাখতে পারলাম না।

তবে হ্যা, এটা সত্য এখনতো পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক, তবুও এই দৃশ্যটা অপ্রত্যাশিত ছিলো সত্যি! কিন্তু আসলে কি আমাদের-আপনাদের দেশে এই একটাই সমস্যা, যখন প্রয়োজন তখন আইনের বাস্তবায়ন হয় না কিন্তু অন্য সময়ে ঠিক ফায়দাটা লুটে নেয়। ধন্যবাদ অভিজ্ঞতাটি সুন্দরভাবে ফুটিয়ে উপস্থাপন করার জন্য, তবে হ্যা, এই লিট্টি চোখা খাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করে রাখলাম কিন্তু, হি হি হি।

 2 years ago 

ভাগ্যবানই বটে 😆। দ্রুত ব্যাপার গুলো ঘটে গেলো। বোঝার আগেই পুলিশের গাড়িতে আবার বোঝার আগেই থানা থেকে বেরোলাম।

একদমই সঠিক কথা। আমাদের দুই দেশে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা আর সক্রিয়তা দুটোই অতিরিক্ত আর অসময়ে।

লিটটি খেতে গিয়ে কেলেঙ্কারি 😂

Coin Marketplace

STEEM 0.25
TRX 0.11
JST 0.032
BTC 63519.79
ETH 3073.58
USDT 1.00
SBD 3.82