গাছ কেটে সুপারি চুরি।
আজ - ১৮ই, অগ্রহায়ণ |১৪২৯ , বঙ্গাব্দ | হেমন্তকাল |
আসসালামু-আলাইকুম। আদাব - নমস্কার। মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি আমার বাংলা ব্লগ এর ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ, আশা করি সবাই ভাল আছেন।
ছবি এখান হতে নেওয়া হয়েছে।
যাই হোক যে কথা বলছিলাম, আমাদের প্রত্যেকের জীবনে এমন এমন কিছু পুরনো স্মৃতি রয়েছে যেগুলো এখনো ভাবলে আমাদের হাসায় অথবা কাদায়। আজও ঠিক তেমনি একটি পুরনো স্মৃতি মনে পড়লো হঠাৎ করে। তাই ভাবলাম রোমাঞ্চকর সেই ঘটনাটি আপনাদের সাথে শেয়ার করি।
আপনারা হয়তো জানেন না। আমার বেড়ে ওঠাটা শহরে হলেও জন্মটা কিন্তু গ্রামে। তাই আমার গ্রামের বাড়ির প্রতি আলাদা টান রয়েছে। যদি কখনো কোথাও বেড়াতে যাওয়ার কথা উঠে তাহলে আমি সবসময়ই চাই গ্রামে বাড়িতে বেড়াতে যেতে। গ্রামের প্রকৃতি পরিবেশ এবং মানুষগুলোকে আমরা খুবই প্রিয়।
যাইহোক, যে ঘটনাটির কথা বলছিলাম। ঘটনাটি বেশ পুরনো। তবে এমনই একটি সিজন অর্থাৎ নভেম্বর কিংবা ডিসেম্বরের দিকে। বার্ষিক পরীক্ষা শেষ তাই সকালের মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবারের শীত টা গ্রামে নানা বাড়িতে কাটাবো। তো যে ভাবনা সে কাজ। সকলের চলে গেলাম লম্বা বেড়ানোর পরিকল্পনা নিয়ে নানার বাড়িতে। কাজিনরা আন্টিরা সবাই এসেছে তখন একসাথে নানু বাড়ি বেড়াতে। আসলে পরিবারের সকলেই কখনো একত্র হয়ে ওঠে না কোন অনুষ্ঠান কিংবা বিশেষ উপলক্ষ ছাড়া। তবে সেই বারে শীতের ছুটি কাটাতে সবাই এসেছিল গ্রামে। আর ওই সময় ঘটলো রোমাঞ্চকর এক ঘটনা।
আমাদের নানুবাড়িটা হচ্ছে একা বাড়ি। বেশ বড় প্রায় কয়েক বিঘা জমির উপরে তৈরি। এলাকায় বেশ প্রতাপ রয়েছে নানার। সকলেই নানাকে বেশ সম্মান করে তবে নানাকে এলাকাবাসীরা ভয় পেতে প্রচুর। কেননা তিনি ছিলেন একটু ভিন্ন এবং রাগি প্রকৃতির। কোন অন্যায় কিংবা অনিয়ম খুব একটা পছন্দ করেন না। আর অন্যায় কিছু দেখলেই যাকে তাকে বাঁকা ছকা দিয়ে বসতেন । যার কারনে নানাকে সকলে এতো ভয় পেতেন এবং কেউ মাথা তুলে কথা বলার সাহস পেতেন না।
যাই হোক, আমাদের নানু বাড়িটি ছিল যেমন বড় তেমনি ছিল গাছ গাছালা দিয়ে পরিপূর্ণ। প্রায় সকল ধরনের পরিচিত ফল আছে বাড়িতে। প্রায় ৩০ থেকে ৪০ টি ছিল শুধু নারকেল গাছ আর সুপারি গাছ ছিল অগণিত। এছাড়াও অন্যান্য অনেক ধরনের গাছ তো রয়েছেই।
যাইহোক সেইবারে কেন জানি পুরো এলাকার কারো গাছেই সুপারির খুব একটা ভালো ফলন হয়নি। তবে নানার গাছে প্রতিবারের মতো ওই বারে ও প্রচুর সুপারি ধরেছিল। গাছের সুপারির ভালো ফলন না হওয়ায় সুপারির চাহিদা ও ছিল ব্যাপক। এবং বাজারও সুপারির দাম ছিল প্রচুর। তবে নানার সুপারি গুলো রাখা যাচ্ছিল না মোটেও। সুপারি গুলো পাকার আগে চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে গাছ থেকে। আর কোনভাবেই সুপারি চুরির এ বিষয়টি আটকানো যাচ্ছিলনা। আর কারা বা কে এসব কাজগুলো করছে সেটা ও বোঝা যাচ্ছিল না। তখন যেহেতু বাসায় ঘরবতী মেহমান তাই এই সকল বিষয়গুলো নিয়ে খুব একটা তদারকি করতে পারছিল না।
তাই নানা ঠিক করলো গাছগুলোতে কাঁচ ভাঙা দিয়ে রাখার যাতে কেউ গাছে উঠতে না পারে। পরবর্তী নানা আমাদেরকে নিয়ে যেসব গাছগুলোতে ফল ধরেছে সেরকম কয়েকটি গাছে ভাঙা কাঁচগুলো গেঁথে দিয়ে এসেছে যাতে গাছে উঠে ফল না পারতে পারে। এই কাজটি করার পর কয়েক দিন বেশ শান্তিতেই ছিল। কেউ আর গাছের ফলগুলো পাড়তে পারছিল না।
তো একদিন সকালেই ঘুম থেকে উঠে দেখি চিৎকার চেঁচামেচি। বেশ গন্ডগোল চলছে বাড়ির ভিতর। বিষয়টি প্রথম দেখে বুঝতে না পারলেও পরে দিয়ে বুঝতে পেরেছি এই গন্ডগোলের কারণ। যারা প্রতিবার সুপারিশগুলো চুরি করে নিয়ে যেত তারা এই বার সুপারির গাছের কাঁচের টুকরো লাগিয়ে দেওয়ার কারণে গাছে উঠতে না পারায় গাছের গোড়া থেকেই গাছটি কেটে সুপারি গুলো নিয়ে গিয়েছে। গাছটি কেটে তারা পুকুরে ফেলে দিয়েছে আর সুপারি গুলো নিয়ে গিয়েছে। আমি এই ঘটনাটি দেখে বেশ মজা পেয়েছিলাম। আর চোরের এই বুদ্ধি দেখেও বেশ অবাক হয়েছি। তবে দুঃখ হচ্ছিল গাছগুলোর জন্য কেননা সুপারি গুলো চুরি হয়ে গেলও গাছটি অন্তত থাকলে সারা বছর সুপারি পাওয়া যেত। আর সব থেকে বড় ব্যাপার হচ্ছে ঐ গাছগুলোতে সব থেকে বেশি এবং ভালো সুপারি ধরতো।
সুপারি চুরির এই অভিনব কায়দাটি আমার কাছে বেশ মজার ছিল। আর তখন ওই সময় এই সুপারি চুরির ঘটনাটি চারিদিকে বেশ কয়েকটি গ্রামেও পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল। আজ এত বছর পরে ও ঘটনাটি নিয়ে এখন আলোচনা করি। আমাদের সাথে ঘটে যাওয়া এই সুপারি চুরি ঘটনাটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা বলা চলে ।
এই তো, এই ছিল গাছ কেটে সুপারি চুরি করার মজার এক ঘটনা। যদিও ঘটনাটি খুব সুন্দর ভাবে বর্ণনা করতে পারিনি আপনাদের সামনে। তবে রোমাঞ্চকর ছিল এ ঘটনাটি। তো সকলে ভালো থাকবে সুস্থ থাকবেন আল্লাহাফেজ।
সকলকে ধন্যবাদ অনুচ্ছেদ টি পড়ার জন্য।
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
VOTE @bangla.witness as witness
OR
চোরের বুদ্ধি আছে বলতেই হবে 😄
কাঁচ ভাঙ্গা দেয়ার জন্য গাছে উঠতে না পারার রাগে গাছ কেটে সুপারি পেরে নিয়ে গেছে। তবে আপনার নানা যদি ধরতে পারতেন উচিত শিক্ষা দিয়ে ছাড়তেন। যাক গাছগুলোর জন্য খারাপ লাগলো, ফল চুরি হলে সামনে আরো পাওয়া যেতো কিন্তু ও তো পুরো গাছটি কেটে ফেলে দিয়েছে। ধন্যবাদ ভাই মজার স্মৃতি আমাদের সাথে ভাগ করে নেয়ার জন্য।
আসলেই চোরের অনেক বুদ্ধি 😉😉।চোরদের জন্য যদি নোবেল দেওয়ার সিস্টেম থাকতো,তাহলে আমি নিশ্চিত বাংলাদেশের চোরেরাই পেতো😉।যাই হোক গাছগুলো কেটে তারপর সুপারী নিয়ে গিয়েছে এটা শুনে বেশ খারাপ লাগলো।আসলে গ্রামে সবার সাথে কাটানো দিনগুলো অনেক মজার হয়।আমরা আগে পরীক্ষা শেষ হলে সবাই মিলে গ্রামে বেড়াতে যেতাম,এখন আর সেই দিনগুলো পাওয়া যায় না।সবাই সবার কাজে ব্যস্ত। ভালো লাগলো।ধন্যবাদ
চোর তো নয় যেন ম্যাকগাইভার। এত বুদ্ধি নিয়ে চোর ব্যাটা যে ঘুমিয়েছে কিভাবে তাই চিন্তা করছি। সুপারি গাছে কাচভাঙ্গা দেয়ার কারণে অভিনব কায়দায় সুপারি চুরি, আজ প্রথম আপনার পোস্টে জানতে পারলাম। এরকম মজার ঘটনা আগে কখনো শুনিনি। তবে হ্যাঁ গাছগুলোর জন্য ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। একে তো পরিবেশ থেকে গাছগুলো হারিয়ে গেছে, সেই সাথে আপনার নানা সুপারি গাছের সুপারি থেকেও বঞ্চিত হয়েছে। ভাইয়া, গাছ কেটে সুপারি চুরি নিয়ে রোমাঞ্চকর একটি ঘটনা অবলম্বনে পোস্ট শেয়ার করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
হাহাহাহাহা। আপনার গল্পটি আমার বেশ ভালো লেগেছে। একেই বলে চোরের উপর বাটপারি।কাচ দিলে কি আর চুরি বন্ধ করা যায়? চোরদের কাছে কত অভিনব কায়দা রয়েছে। সেটাই তারা প্রমাণ করে দিয়ে গেল।
হাহা ভাইয়া বেশ মজার ঘটনা সুপারি চুরির।চোরদের বুদ্ধি আছে মানছি তবে সাংঘাতিক ছিল কিন্তু।কাঁচ দেওয়া তাই বলে গাছটি কেটে ফেলতে হবে।গাছ গুলো থাকলে তো সুপারি পাওয়া যেত।আপনার নানা যেহেতু রাগী ছিলেন তাই চোরদের হয়তো পূর্বের রাগ ছিল।যে সুপারি নিতেই হবে তাদের।মজার আবার আশ্চর্যের ঘটনা ।ধন্যবাদ ভাইয়া আপনার চোরদের এই চুরির অভিনব কায়দার কথা শেয়ার করার জন্য।
যদিও ঘটনাটা পড়ে আমার মোটেই আনন্দ হলো না।তবে চোরের বুদ্ধি সত্যি প্রসংশা করার মতো। কত ভেবে চিন্তে কাঁচ লাগানো গাছ কেও চুরি করেছে ভাবা যায়! আমআর মতে এইরকম চোরকে রাষ্ট্রের জাতীয় পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করা উচিত। হিহিহিহি।যাই হোক একটা মানুষ যখন কোন ফলন ধরায় তার গাছে তার পেছনে তার অনেকটা খাটনি থাকে। সেই খাটনিকে উপেক্ষা করে কিছু লোক শুধু ফলটা ভোগ করতে চায়। সমাজে এই মানুষগুলোর জন্যই মানুষের উপর মানুষের বিশ্বাস উঠে যাচ্ছে।
দারুন বুদ্ধি আছে তো চোরের! কাঁচের জন্য গাছে উঠতে না পেরে গাছ কেটে সুপারি নিয়ে যাওয়া। 😂 গাছগুলোর জন্য খুব খারাপ লাগলো। গাছ থাকলে ফল ত পাওয়া যেত। মজার এই,স্মৃতি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।