অচেনার উদ্দেশ্যে আরো একটি দিন।
আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন সবাই। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির সাথে থেকে আশা করি সবাই ভাল আছেন। আপনারা যারা আমার ব্লগ নিয়মিত পড়েন তারা অনেকেই জানেন আমি মাঝেমধ্যেই বন্ধুদের সাথে এমন কোথাও ঘুরতে যাই যেটি আমার কাছে সম্পূর্ণ অপরিচিত জায়গা। অনেকটা অ্যাডভেঞ্চারের মতন সময় পার করি। অচেনা রাস্তায় গিয়ে হারিয়ে যাওয়ার মধ্যে একটা অন্যরকম আনন্দ খুঁজে পাই। এটি আসলে হারিয়ে যাওয়া বলা যাবেনা। অচেনা রাস্তায় গিয়ে দিক বেদিক ঘুরে ঘুরে আবার নিজ এলাকায় ফিরে আসা।। এই পুরো সময়টা খুবই এনজয় করি। এমনি একটা সময় গতকাল পার করলাম। আজ আপনাদের সাথে আমার গতকালকের গল্পটাই শেয়ার করব। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।
দুপুরে গোসল করে খাওয়া দাওয়া শেষ করে আমি সবেমাত্র বিছানার উপর শুয়ে ফেসবুক চালাচ্ছিলাম। হঠাৎ আমার একটা ছোট ভাই মেসেঞ্জারে ভিডিও কল দিল। আমি দেখলাম ওরা সবাই আমার একটা বন্ধুর বাসায় বসে আড্ডা দিচ্ছে। ভিডিও কলে এমনটা দেখে আমি আর একটুও দেরী করলাম না। আমি রেডি হয়ে বেরিয়ে পরলাম রাস্তার দিকে। আমার একটা বন্ধু বাইক নিয়ে এসে আমাকে নিয়ে গেল। এরপর ওই বন্ধুর বাসায় যেয়ে আমরা সবাই একসাথে সামুচা খেলাম আর অনেকক্ষণ আড্ডা দিলাম। অনেকক্ষণ আড্ডা দেয়ার পর আর বাড়িতে ভাল লাগছিল না। আমরা সবাই রাস্তায় বেরিয়ে পড়লাম। রাস্তায় যেয়ে চিন্তা করলাম অনেকদিন হল অচেনা কোথাও যাওয়া হয়না। আজ দুচোখ যেদিকে যাবে সেদিকই চলে যাব। বেশি পোলাপান ছিল না আজকে আমাদের সাথে। আমরা মোট পাঁচজন ছিলাম। আর বাইক ছিল মাত্র দুইটা। সামনের বাজার থেকে তেল ভরে রওনা দিলাম।
প্রায় ১০/১২ কিলোমিটার যাওয়ার পর একটা রেলস্টেশন আমাদের সামনে পড়ল। অবশ্য এখানে আগেও কয়েকবার এসেছি। কিন্তু ওই রেল স্টেশনের পাশ দিয়ে লম্বা একটি রাস্তা চলে গেছে।
ঐ রেল লাইনের পাশ দিয়েই লম্বা রাস্তা ধরে আমরা সামনের দিকে যেতে থাকলাম। আরো প্রায় ৫/৬ কিলোমিটার সামনের দিকে চলে গেলাম। রাস্তার দু'পাশে বিশাল বিশাল মাঠ। মাঠের ধান গুলো প্রায় সব পেকে গেছে। মাঝে মাঝে কিছু জায়গায় ধান কাটা শুরু হয়ে গেছে। দৃশ্যগুলো ভালোই উপভোগ করছিলাম।
আরো কিছুদূর যাওয়ার পর দেখলাম সামনে দুটি রাস্তা। একটি হচ্ছে পাকা রাস্তা আরেকটি হচ্ছে কাঁচা রাস্তা। কাঁচা রাস্তাটি হাল্কা কাদাযুক্ত। আর সামনে একটু জঙ্গল প্রকৃতির। অ্যাডভেঞ্চার ফিল নেওয়ার জন্য ঢুকলাম ওইপাশ দিয়েই। কিন্তু সামনের জঙ্গলটা পেরিয়েই বাধলো মহা বিপত্তি। সামনে প্রচুর কাদা আর বড় বড় গর্ত। গর্তের পাশ দিয়ে গাড়ী নিয়ে যাওয়া বেশ কষ্টকর হবে। আমরা গাড়ি থেকে নামলাম। গাড়িটা সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে বেশ বেগ পোহাতে হলো আমাদের। কিছুদুর যাওয়ার পর দেখলাম ছোট্ট একটা ব্রিজ আর তারপর থেকে আরও সরু একটি রাস্তা।
সেখানে একটা মুরুব্বি লোককে দেখতে পেলাম। তাকে জিজ্ঞেস করলাম সামনের এই রাস্তা দিয়ে গেলে আমরা মেন রাস্তা পেতে পারব? উনি আমাদের একটা সঠিক পথের সন্ধান দিলেন। সে পাশ দিয়ে কিছুক্ষণ যাওয়ার পর আমরা আবার একটি পাকা রাস্তা পেলাম। ওই পাকা রাস্তা ধরে আমরা আবার আগের রাস্তার দিকে ফিরে এলাম। অনেকক্ষণ ড্রাইভ করার পর আবার রেল লাইনের পাশ দিয়ে যে রাস্তাটা ছিল ওই রাস্তায় চলে আসলাম। সেখানে এসে একটি চায়ের দোকান দেখতে পেলাম। জায়গাটি অনেক সুন্দর ছিল। আশেপাশে নিরিবিলি পরিবেশে। এই দোকানটিতে তেমন কোনো লোকজন ছিল না। আমরা ওখানে যেয়ে দাঁড়ালাম।
এরপর ৫ জনের জন্য পাঁচটি চায়ের অর্ডার দিলাম। কিছুক্ষণ বসে চা চক্র শেষ করে ওখান থেকে উঠে চলে আসলাম। এরপর আমাদের টার্গেট ছিল রেলস্টেশনের পাশে বিক্রি করা মাংসের চপ খাবো। সাইডে বাইক স্টান্ট করে রেখে আমরা সেই চপের দোকানে চলে গেলাম। মাংসের চপ আমার খুবই ফেভারিট। আমরা পাঁচ জনের জন্য দশটি চপের অর্ডার দিলাম।
মাংসের চপগুলো খেতে যাস্ট অমায়িক ছিল। ভুলার মত না। এদিকে আসলে মাঝে মধ্যেই এখান থেকে এই মাংসের চপ খেতে হবে। মাংসের চপ গুলোর দাম বেশি ছিল না। প্রতি পিস এর দাম ছিল মাত্র ৫ টাকা করে। সবগুলো খাওয়া শেষ করে পাশে দেখলাম আরো একটি দোকান। ওখানে চিকেন বিক্রি করছে। চিকেন গুলোর প্রতি পিস এর দাম ৩০ টাকা করে। ওখান থেকে আমরা পাঁচ জনের জন্য পাঁচটা চিকেন কিনলাম।
চিকেন গুলো খেতে খুবই বিশ্রী লাগলো। আমাদের বাড়ির পাশে যে বাজারটা আছে ওখানে ২০ টাকা পিস চিকেন বিক্রি করে। ওগুলো একবার খেলে, দ্বিতীয়বার খাওয়ার ইচ্ছা জাগবে। আর এই চিকেন গুলোর মধ্যে কোন মসলা প্রবেশ করে নাই, তেমন ভালোভাবে ভাজি হয় নাই, কেমন একটা স্বাদ লাগতেছিল। সব মিলিয়ে দশ এ ২/৩ দেওয়া যায়। এর বেশি না। এরপর আমরা খাওয়া শেষ করে যেখানে বাইক স্টান্ট করে রেখেছিলাম ওখানে এসে একটা সেভেনআপ খেলাম। এরপর কিছু সময় রেস্ট করে বাড়ির দিকে চলে আসতে শুরু করলাম। এখন রাত হয়ে গেছে। আর রাতে বেশ ভালই শীত পড়ে এই সময়টায়। বাইকে আসতে খুবি শীত লাগতেছিল। প্রায় আধাঘণ্টা পর আমাদের বাড়ির পাশে বাজারে এসে আমরা পৌঁছালাম। বাজারে সবাই অনেকক্ষণ আড্ডা দিয়ে তারপরে বাড়ির দিকে চলে আসলাম। সব মিলিয়ে বিকেলটা অনেক সুন্দর ছিল।
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
খুবই সুন্দর ও অনন্দময় মুহূর্তকাটিয়েছেন ভাই ।নতুন যায়গা খাবার ও বন্ধুদের নিয়ে খুবই মজা করেছেন ভাই ।ধন্যবাদ ভাই ।
ভাইয়া আমার একবার এই অবস্থা হয়েছিলো।ছোট ভাই পাকনামি করে বলে আপু বাজারে গলদা চিংড়ি ভাজা বিক্রি হচ্ছে দাম মাত্র ২০ টাকা। আমি বললাম তাড়াতাড়ি নিয়ে আয়। এসে দেখি এগুলো চিংড়ির মাথা।
দিলাম দুইটা রাগে। আম্মু বলে এতো বড় ছেলেকে মারছ কেনো। আমি বলি আম্মু ৪০ টাকা দিয়ে দুইটা মাথা আনছে। 😂
এগুলা আসলে দেখতে মজা লাগে।
খেতে না।
বিষয়টা বেশ মজার ছিল 😂
আসলে কিছু তুচ্ছ তুচ্ছ জায়গায় এত ভালো কিছু খাবার প্রোভাইড করে যা আসলেই অকল্পনীয়। আমি ঢাকা থাকতে এরকম চিকেন অনেক খেয়েছি। ভালো ভালো জায়গা থেকে। কিন্তু আমাদের বাসার পাশের বাজারে যে চিকেন গুলো বিক্রি করে তার স্বাদ ওগুলোর চেয়ে অনেকগুণ ভালো ।
একদম ঠিক বলছেন ভাইয়া।
অচেনার মধ্যে হারিয়ে যাওয়ার মজাটাই আলাদা। আমিও চেষ্টা করি আপনার মত করে মাঝেমধ্যে বাইক নিয়ে অচেনা জায়গায় ঘুরে বেড়াতে। আপনার আজকের অ্যাডভান্সারটি অনেক সুন্দর ছিল।
আপনার রেটিং দেখে বোঝা যাচ্ছে, কতটা জঘন্য হয়েছিল চিকেন গুলো। আসলে আমি হলে তো তখনই উনার মুখের উপর বলে দিতাম। এগুলো আপনার বিক্রি করার কোন রাইটস নেই। ভালো ভাবে রান্না করলে বিক্রি করবেন আর না করতে পারলে বিক্রি করবেন না।
সর্বশেষে বলব আপনার জন্য রইল প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।।
এগুলো বলে লাভ নেই আসলে,, ওখানে পার্মানেন্ট ক্রেতা খুব কমই আসে। কারণ যেখানে ভালো কিছু প্রোভাইড করে সেখানে পার্মানেন্ট কিছু কাস্টমার প্রতিনিয়তই টেস্ট করতে যায়। কিন্তু এখানে চলতি পথে হয়তো আসবে কেউ খেতে, কিন্তু দ্বিতীয়বার আর আসবে না। এদের বিজনেসটা অতটাও ভালো হয়না।
ভ্রমণ করতে আমার খুবই ভালো লাগে। ভ্রমণ মানুষকে অনেক কিছু শিক্ষা দেয়। নতুন নতুন জায়গা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা যায়। আপনি অচেনা কোন জায়গার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন, সেটি আরও আনন্দের কারণ সে জায়গা সম্পর্কে আমাদের আগে কোন জানা থাকে না। আমরাও হঠাৎ করেই সুন্দর কোন জায়গায় আসলে,সেই জায়গার সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়ে যায়। আপনার জন্য শুভকামনা।
অচেনা অপরিচিত জায়গায় ঘুরে বেড়ানোর মধ্যে অন্যরকম একটা আনন্দ কাজ করে। ব্যস্ততার মধ্যে মাঝে মাঝেেই এমন সময় কাটানো সকলেরই উচিত।
ভাইয়া, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া, বন্ধুদের সাথে অজানা উদ্দেশ্যে ঘুরে বেড়ানোর আনন্দ টাই একদম আলাদা।আপনি খুব আনন্দ করেছেন গতকাল বন্ধুদের সাথে। তবে আপনার একটি লেখা পড়ে খারাপ লেগেছে চিকেন গুলো খেয়ে আপনার মোটেও ভালো লাগেনি। তবে ভাইয়া একেক রাঁধুনীর রান্না স্বাদ
একেক রকম তবে চিকেন কাঁচা থাকায় এবং মসলা না ঢুকার কারণেই খেতে খুব খারাপ লেগেছে।
ভাইয়া,আপনার এই লেখাটি আমার খুব ভালো লেগেছে।
"অচেনা রাস্তায় গিয়ে হারিয়ে যাওয়ার মধ্যে একটা অন্যরকম আনন্দ খুঁজে পাই"
ধন্যবাদ ভাইয়া।
অনেক সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ । আপনাদের ভালো লাগাতে পেরে আমিও খুশি।
আপনি যে একজন ভ্রমণপ্রিয় মানুষ তা আপনার লেখা পড়লেই বোঝা যায়। তবে মাঝে মাঝে অচেনা পথে হারিয়ে যেতে ভালো লাগে। অচেনা পথে হারিয়ে যাওয়ার মধ্যে এক অন্যরকম ভাললাগা রয়েছে। নতুন পথের সন্ধানে আমরা প্রতিনিয়ত অজানা পথে এগিয়ে যাচ্ছি। আপনি আপনার বন্ধুদের সাথে অনেক ভালো কিছু সময় কাটিয়েছেন এটা জেনে অনেক ভালো লাগলো। যদিওবা কিছুটা সময় রাস্তার মধ্যে বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন। কারণ রাস্তায় অনেক কাদা এবং গর্ত ছিল।।এভাবেই আপনি আপনার অচেনা পথে হারিয়ে যাওয়ার মুহূর্তগুলো আমাদের সাথে শেয়ার করবেন এই কামনাই করি সব সময়। আপনার জন্য শুভকামনা রইলো।
আপনি ঠিক বলেছেন। অচেনার মধ্যে সবসময়ই একটা অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করে।
বাহ অসাধারণ ভাই। অচেনা পথে অনেক সুন্দর একটি মুহুর্ত কাটিয়েছেন দেখেই বোঝা যাচ্ছে। খাবার গুলো খুবই লোভনীয় ছিলো কিন্তু চিকেন এর যে এ রকম বেহাল দশা এটা শুনে খুবই কষ্ট লাগলো।
ভ্রমন প্রিয় মানুষদের আমার অনেক ভালো লাগে, বিশেষ করে ফটোগ্রাফি দারুন ছিলো। রেললাইন,বাইক রাইডিং, জাংকফুড সব মিলিয়ে অসাধারণ সময় কাটিয়েছেন বোঝায় যাচ্ছে। শুভ কামনা রইলো দাদা।
ভ্রমনপ্রিয় মানুষদের অজানা কোথাও যাওয়ার প্রতি আকর্ষণটা বেশি থাকে।যেমনটি আপনার দাদা।কাঁচা রাস্তায় কাদা হলে বাইক নিয়ে চলতে খুবই সমস্যা।তাছাড়া আপনারা অজানা জায়গায় দারুণ সময় কাটিয়েছেন বিভিন্ন ভোজনের মাধ্যমে।এটি দারুণ বিষয়।টিকে থাকুক এভাবেই চিরদিন আপনাদের বন্ধুত্বের অটুট সম্পর্ক।ধন্যবাদ দাদা সুন্দর মুহূর্ত আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
আমার জন্য এত সুন্দর একটি উইশ করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
ভাইয়াও অনেক সাজিয়ে-গুছিয়ে অনেক সুন্দর করে একটা পোষ্ট লিখেছেন। আপনি যখন বন্ধুদের ফোন পেয়ে বন্ধুদেরকে নিয়ে বের হলেন অজানার উদ্দেশ্যে অ্যাডভেঞ্চারের মত। কিন্তু কোথাও অচেনা পথে যদি গাড়ি আটকে যায় বা রাস্তা ভুলে যায় তখন একটু ভয় ভয় লাগে যদি একা থাকে। আর সাথে অনেক বন্ধুবান্ধব থাকলে তখন ওটা উপভোগের একটা মাধ্যম হয়ে যায় আপনারা অনেক মজা করেছেন চা খেয়েছেন কিন্তু মুরগিটা আপনার কাছে খারাপ লেগে ছিল। তবে আমার জানামতে বাইরের খোলা পরিবেশের কোন কিছু না খাওয়াই ভালো। বিশেষ করে এই ভাজাপোড়া ই জাতীয় খাবার গুলো। এগুলোর মধ্যে আবার মরা মুরগি ও পাওয়া যায় হাহাহা। আপনি অনেক সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে লিখেছেন। আপনার উপস্থাপনা অনেক সুন্দর ছিল পড়ে ভাল লাগল। আপনার জন্য শুভেচ্ছা রইল ভাইয়া।