হতাশার কারন চিকিৎসা ব্যবস্থা।
মানুষের মৌলিক অধিকার পাঁচটি। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান শিক্ষা ও চিকিৎসা। এর ভিতরে তিনটির ব্যবস্থা মানুষ নিজে করতে পারলেও বাকি দুটির জন্য তাকে কোনো না কোনো প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভর করতে হয়। সেই দুটি হচ্ছে শিক্ষা ও চিকিৎসা। এই শিক্ষা ও চিকিৎসার ভেতরে শিক্ষার ব্যাপারটা মোটামুটি ভাবে মানুষ ব্যবস্থা করতে পারলেও চিকিৎসাটা সবসময় তার আয়ত্তের বাইরেই থাকে। বিশেষ করে দরিদ্র মানুষের জন্য। বিশ্বের প্রতিটি দেশেই কোনো না কোনো সমস্যা থাকে। বিশ্বের সমস্ত নাগরিকেরই কোন না কোন বিষয় নিয়ে অসন্তোষ থাকে রাষ্ট্রের ওপরে।
তবে আমার ক্ষেত্রে সবচাইতে বেশি অসন্তোষ যে ব্যাপারটা নিয়ে। রয়েছে সেটা হচ্ছে চিকিৎসা ব্যবস্থা। বাদ বাকি জিনিসগুলো নিয়ে খুব একটা না ভুগলেও চিকিৎসা ব্যবস্থার সমস্যার জন্য আমাকে এবং আমার পরিবারকে অনেক ভুগতে হয়েছে। বাংলাদেশের এই খাতে যে কি পরিমান দুর্নীতি এবং অব্যবস্থাপনা সেটা ভুক্তভোগী মাত্রই জানেন। এবং এই খাতের দুর্নীতির জন্য দিনে দিনে ডাক্তারেরাও বিভিন্ন রকম অনৈতিক কার্যক্রমে জড়িয়ে যাচ্ছেন। যখন চিকিৎসকদের মত এমন মহান লোকজন বিভিন্ন রকম অনৈতিক কার্যক্রমে জড়িয়ে যায় তখন সে দেশের মানুষের ভোগান্তির কোন শেষ থাকে না।
আর এই ভোগান্তির শিকার হয় মূলত দরিদ্র এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণীর লোকজন। কারণ ধনী শ্রেণীর জন্য পৃথিবীর সমস্ত সুখ স্বাচ্ছন্দের দোয়ার খোলা থাকে। যদিও কাগজে-কলমে দেশের অসচ্ছল মানুষের জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা প্রায় ফ্রি দেখা যায়। কিন্তু বাস্তবে ঘটনা সম্পূর্ণ বিপরীত। সরকারি হাসপাতালগুলোতে কিছু সেবা পাওয়া যায় অতি স্বল্পমূল্যে এটা সত্য। কিন্তু সেই সেবার মান এত নিম্নমানের যেটা মানুষের ধারণার বাইরে। সেই সেবার মান কতটা খারাপ এটা বোঝার বা জানার জন্য আপনাকে খুব দূরে কোথাও যেতে হবে না। আপনি আপনার বাড়ির আশেপাশে যে কোন একটি সরকারি হাসপাতালে গেলে সমস্ত চিত্র আপনার সামনে উঠে আসবে।
একজন মানুষ সাধারণত কখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়? যখন তার আর কোনো উপায় থাকে না। সম্পূর্ণ নিরুপায় হয়েই সে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়। মানুষ যখন প্রচন্ড অসহায় হয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়। তখন একশ্রেণীর নিতি নৈতিকতাহীন মানুষ তাদেরকে আরো বিপদে ফেলে দেয়। সরকারি স্বাস্থ্যসেবার প্রতি পদে পদে দুর্নীতি। আপনি হাসপাতালে রোগী দেখাতে যাবেন সেখানে ডাক্তার আপনাকে ভালোভাবে দেখবে না। সেই একই ডাক্তারের প্রাইভেট চেম্বারে আপনি বেশি টাকা ভিজিট দিয়ে দেখাতে যান। দেখবেন সেখানে সে বেশ যত্ন নিয়ে দেখছে। সরকারি হাসপাতালে রোগীদের জন্য বেশ কিছু ঔষধ ফ্রি থাকার কথা। কিন্তু সেখানে গেলে দেখতে পাবেন শুধু গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ এবং প্যারাসিটামল বাদে আর প্রায় কোন ওষুধই আপনি পাবেন না।
তারপর সরকারি হাসপাতালগুলোতে কিছু টেস্ট অল্প টাকায় করা যায়। কিন্তু হাসপাতালগুলোতে গিয়ে দেখবেন সেই টেস্ট করার মেশিন পত্র গুলো বেশিরভাগ সময়ই নষ্ট থাকে। যার ফলে আপনাকে বাধ্য হয়ে আশেপাশের প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে টেস্ট গুলো করতে হবে। এজন্য দেশের অবস্থা সম্পন্ন মানুষ জন কখনো সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যায় না। কিন্তু যারা নিরুপায় যাদের সরকারি হাসপাতাল ছাড়া অন্য কোন জায়গায় যাওয়ার অবস্থা নেই। তাদের অবস্থাটা চিন্তা করলে গা শিউরে ওঠে।
বাংলাদেশে এমনিতেই চিকিৎসা ব্যয় অনেক বেশি। প্রাইভেট ক্লিনিক বা হসপিটাল গুলিতে তো এই খরচ রীতিমতো আকাশ ছোঁয়া। আবার যদি আপনি কোন বেনামী প্রাইভেট ক্লিনিকে যান যেখানে খরচ কিছুটা কম। সেখানে আপনার জীবন ঝুঁকিতে পড়ে যাবে। আবার আপনি যে কোন নামিদামি প্রাইভেট ক্লিনিক বা হসপিটালে যাবেন সে উপায়ও নেই। কারণ সেখানকার চিকিৎসা খরচ রীতিমতো আকাশ ছোঁয়া। অথচ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের চিকিৎসার ব্যবস্থাটা কত সুন্দর। চিকিৎসা ব্যয় ও বাংলাদেশের তুলনায় অনেক কম। এজন্যই বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ ভারতে যায় চিকিৎসা করার জন্য।
অথচ বাংলাদেশ সরকার যদি দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করত বা জনবান্ধব করে তুলতে পারতো। তাহলে এই বিপুল সংখ্যক মানুষের যে চিকিৎসা ব্যয় যেটা দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। সেটা দেশেই থাকতো। কিন্তু সরকারের উচ্চ মহলের তো সেদিকে নজর দেয়ার কোন প্রয়োজন নেই। কারণ তারা অসুস্থ হলেই এয়ার এম্বুলেন্সে করে বিশ্বের নামিদামি কোন হসপিটালে গিয়ে ভর্তি হবে জনগণের ট্যাক্সের টাকায়। সাধারণ জনগণের কথা চিন্তা করে তাদের লাভ কি?
তাছাড়া বাংলাদেশের মানুষজনের দেশি চিকিৎসকদের নিয়ে আরও একটা কমপ্লেন হচ্ছে। তাদের আচার ব্যবহার খারাপ। এটা আমি নিজেও খেয়াল করে দেখেছি। খুব অল্প সংখ্যক ডাক্তার কে আমি দেখেছি যারা রোগীর সাথে ভালোভাবে কথা বলেন। অথচ এটা ডাক্তারের একান্ত কর্তব্য রোগীর সাথে ভালো ব্যবহার করা। আমার পরিচিত একজন ডাক্তার আছে। কোন সমস্যা হলে আমি তার কাছেই যাই। সেই ডাক্তারের কাছে যাওয়ার মূল কারণ হচ্ছে তার চমৎকার ব্যবহার। কিন্তু আফসোস দেশের নামি দামি প্রায় সব ডাক্তারের ব্যবহারই খারাপ। এই কারণেই বাংলাদেশ থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষজন ইন্ডিয়ায় চলে যায় চিকিৎসা করতে।
আমাদের চিকিৎসা খাতের আরো একটি বড় সমস্যা হচ্ছে চিকিৎসার সেবার উচ্চমূল্য। বাংলাদেশে আপনাকে যে রোগের চিকিৎসা করতে পাঁচ লাখ টাকা খরচ করতে হবে। ইন্ডিয়াতে গেলে বেশিরভাগ সময় মানুষ সেই একই রোগের চিকিৎসা আরো ভালোভাবে করিয়ে আসে হয়তো দু লাখ টাকা খরচ করে। এটা হচ্ছে সবচাইতে বড় কারণ। যার কারণে বাংলাদেশের মানুষজন ইন্ডিয়াতে যায় চিকিৎসা করাতে। প্রথমত ইন্ডিয়ার চিকিৎসা ব্যবস্থা বাংলাদেশ থেকে অনেক ভালো। সেখানকার চিকিৎসকদের ব্যবহার ও খুবই ভালো। আবার সেখানকার চিকিৎসা সেবার দামও তুলনামূলক বাংলাদেশ থেকে অনেকটা কম। এই সমস্ত কারণেই দিন দিন আমাদের দেশের লোকজন বিদেশমুখী হচ্ছে চিকিৎসার জন্য। যখন বিষয়গুলো চিন্তা করি তখন খুবই হতাশ লাগে। অথচ এই অবস্থার উত্তরণের জন্য শুধু দরকার কিছুটা সদিচ্ছা। কিন্তু যাদের সদিচ্ছা হলে এই সমস্যার সমাধান হবে তারা কি আদৌ এই বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করেন?
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | হুয়াই নোভা 2i |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @rupok |
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
VOTE @bangla.witness as witness
OR
This post was selected for Curación Manual (Manual Curation)
@tipu curate
Upvoted 👌 (Mana: 5/8) Get profit votes with @tipU :)
আসলে ভাই সরকারি হাসপাতালে সরকার অনেক টাকা খরচ করে কিন্তু এই সরকারি হাসপাতালগুলো সঠিকভাবে পরিচালনা হয় না। হাসপাতালগুলোতে টেস্ট করাতে টাকা অনেক কম লাগে কিন্তু সেই হাসপাতালে গেলে টেস্টিং মেশিন গুলো নষ্ট হয়ে থাকে, কিংবা টেস্ট করলেও সময়মতো টেস্টের রিপোর্ট পাওয়া যায় না। যার কারণে অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হয়। আর অসহায় মানুষগুলো অর্থের অভাবে সেই হসপিটালে যায়।কিন্তু চিকিৎসা পায় না যার কারণে তাদের কষ্ট পোহাতে হয়।
ভাইয়া,এই কথাটা একদম বাস্তবিক লিখেছেন সরকারি হাসপাতালে ডাক্তার গুলো যখন প্রাইভেটে বসে তাদের ব্যবহার দেখলে মনে হয় না যে তারা সরকারি হাসপাতালে ছিলেন। যারা মধ্যবিত্ত অথবা নিম্নবিত্ত সরকারি হাসপাতাল ছাড়া তাদের কোন উপায় নেই সেখানে গিয়ে নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়।সরকারি হাসপাতালে কোন সুব্যবস্থা সরকার জনগণের জন্য করেননি তাই বাধ্য হয়ে চিকিৎসা সেবা নেওয়ার জন্য বিভিন্ন ক্লিনিকে যেতে হয়।আর যারা না পারে তারা সরকারি হাসপাতালের থেকে কষ্ট করে চিকিৎসা নিতে হয়।ভাইয়া,আপনার সাথে আমি একমত পোষণ করছি ইন্ডিয়ার চিকিৎসাসেবা খুবই ভালো এবং স্বল্প খরচে চিকিৎসা করা যায়।এছাড়াও আমার এক পরিচিত আপু চিকিৎসা করানোর জন্য ইন্ডিয়া যায়। ওনি বলেন ইন্ডিয়া চিকিৎসকের কথা শুনে রোগীরা এমনিতে সুস্থ হয়েছে আর বাংলাদেশের ডাক্তারদের ব্যবহার দেখলে রোগীরা যতটা অসুস্থ তার থেকে বেশি অসুস্থ হয়ে যায় ওদের ব্যবহারে।ভাইয়া, ধন্যবাদ আমাদের দেশের চিকিৎসার বাস্তব চিত্র এই পোষ্টের মাধ্যমে আমাদের মাঝে শেয়ার জন্য।
দাদা একদম সময় উপযোগী দারুন একটি পোস্ট দিয়েছেন।আমার স্কিনের একটি সমস্যার জন্য আমাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তিন সপ্তাহ পর পর গিয়ে ঘুরে এসেছি।অথচ ডাক্তার সপ্তাহে একদিন করেই বসে।তাও তিন সপ্তাহ লাগালাগি অনুপস্থিত।শেষে বিরক্ত হয়ে একটি বেসরকারি হাসপাতালে দেখাই।তখন গিয়ে দেখি সেই ডাক্তার ওখানে রুগী দেখছেন।ধন্যবাদ সময়উপযোগী পোস্টের জন্য।
বাস্তব ভিত্তিক কিছু কথা লিখেছেন ভাইয়া ৷ আসলেই দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে আমার কিছু বলার নেই ৷ দেশটা দালাল দিয়ে ভরে গেছে ৷ চিকিৎসা ক্ষেত্রেও যথেষ্ট দালাল রয়েছে ৷ অর্থবান মানুষ গুলো সমস্যায় না পড়লেও দরিদ্র আর মধ্যবিত্ত মানুষ গুলো প্রতিনিয়ত চিকিৎসার সমস্যা পড়ছে ৷ অন্যান্য ক্ষেত্র থেকে দেশের সরকারের চিকিৎসার দিকে একটু দৃষ্টি দেওয়া দরকার ৷ প্রতিনিয়ত সাধারণ মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই এই চিকিৎসার জন্য ৷
ভাইয়া আপনি এমন একটি টপিক নিয়ে পোস্ট করেছেন যে, আমার মনে হয় আমি লিখতে গেলে কমেন্টে আপনার পোস্ট থেকে বেশি লেখা হয়ে যাবে। আপনার পোস্টটি পড়ে আমার খুব ভাল লেগেছে। আপনি খুব বাস্তবধর্মী কিছু কথা লিখেছেন। আমাদের দেশের চিকিৎসার অবস্থা খুব বাজে বললেই চলে। আমি নিজেও ভুক্তভোগী হয়েছি কয়েকবার। একবার ত ভুক্তভোগী হয়ে ইন্ডিয়ায় চলে গিয়েছিলাম চিকিৎসা করাতে এবং আমি দেখেছি তুলনামূলক আমি অনেকটাই লাভবান হয়েছি। আর সরকারি হাসপাতাল তাদের কথা আর বলেই লাভ নেই, যতটুকু বলব ততটুকুই খারাপ ভাবে বলা হবে। ধন্যবাদ ভাইয়া এত তথ্যবহুল একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।
বাংলাদেশ বাজেটে চিকিৎসা ক্ষেএে ব্যয় কিন্তু অনেক ভাই। কিন্তু তার বাস্তবায়ন নেই। আমলা মন্ত্রীরা সেজন্য কিছু হলেই সিঙ্গাপুর আমেরিকা ছুটে যায়। কিন্তু বিপদ হয়েছে আমার আপনার মতো জনগণের। প্রথমত পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই আর যেটুকু বা আছে তাতেও সীমাহীন দূর্নিতী। বেশ চমৎকার লিখেছেন ভাই।।
ভাইয়া খুব গুরুত্ব পূর্ণ একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। যার সারা গায়ে জখম তার মলম দিবেন কোন জাগায়। যে দেশ দুর্নীতিতে সবার সেরা সে দেশে এসব কথা বললে কে শুনবে ভাইয়া। আমাদের ভাগ্য খারাপ যে আমরা বাংলাদেশে জন্ম নিয়েছি। চিকিৎসা ক্ষেত্রে সবাই আপনার মত ভুক্তভোগি। মানুষ তো আর এমনি এমনি ভারত যায় না। মনের দুঃখে ভারত যায়। ধন্যবাদ।
বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন ভাই আপনি। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। সত্যিই বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে হলে নিজেকে মেডিকেলে অথবা আশেপাশে কোন চিকিৎসা কেন্দ্রে যেতে হবে। আমি আমার বাবাকে নিয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একবার গিয়েছিলাম। ডিজিট পরিমাণে দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনা ভাই তা নিজে অনুধাবন করতে পেরেছি। শুধু খাতা কলমে সবকিছু। ডাক্তার আর নার্সে সহ ওয়ার্ড বয় দের খুবই অসহযোগ্য মূলক আচরণ। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।