বান্ধবীর গায়ে হলুদের কিছু মুহূর্ত
নমস্কার বন্ধুরা । সকলে কেমন আছেন? আজকে চলে এসেছি আপনাদের সাথে একটি নতুন গল্প শেয়ার করার জন্য। আশা করছি আপনাদের সকলের ভালো লাগবে।।
বেশ কয়েকদিন আগে আপনাদের সাথে আমার এক বান্ধবীর আইবুড়ো ভাত, মেহেন্দি ও বিয়ের গল্প শেয়ার করেছিলাম। তবে বাঙালি বিয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ রিচুয়াল গায়ে হলুদ। সেই গায়ে হলুদের গল্প তো আপনাদের সাথে এখনো শেয়ার করা হয়নি। তাই ভাবলাম আজ আপনাদের সাথে গায়ে হলুদের কিছু মুহূর্ত শেয়ার করা যাক।

বাঙালি বিয়েতে, বিয়ের দিন দুপুরে গায়ে হলুদের একটা নিয়ম থাকে। বরের বাড়িতে বরকে গায়ে হলুদ লাগানোর পর সেখান থেকেই বাটিতে করে মেয়ের বাড়িতে হলুদ পাঠানো হয়। সেই হলুদই মেয়েকে মাখাতে হয়। এই অনুষ্ঠানটা দেখতে আমার বেশ ভালো লাগে। যেহেতু আমার আগের দিন থেকেই নিমন্ত্রণ ছিল, তাই গায়ে হলুদেরও আমাকে যেতে বলেছিল। তবে আমাকে সকাল সকাল যেতে বললেও আমি কিন্তু সকাল সকাল যেতে পারিনি। যেহেতু স্টুডেন্টদের পরীক্ষা চলছিল তাই আমি পড়ানো গুলো কামাই করতে পারিনি। সেই কারণেই সকালে পড়াতে চলে গিয়েছিলাম। পরপর দুটো স্টুডেন্টকে পড়ানোর পর, বাড়ি এসেছিলাম। তারপর কিছু কাজকর্ম সেরে রেডি হবো বলে ঠিক করেছিলাম। কিন্তু তখন মনে হল, বৌদি তো আমার জন্যই ওর বাবার বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠানে গেল না। তাই নিশ্চয়ই মন খারাপ করছে হয়তো। সেই জন্য বৌদিকে বলেছিলাম রেডি হয়ে নিতে আমরা সবাই মিলে বান্ধবীর বাড়ি যাবো। প্রথমে বৌদি একটু ইতস্তত বোধ করছিল, তবে পরে যখন নিশ্চিত হল যে বৌদিকেও যেতে বলেছে তখন রেডি হয়ে গিয়েছিল।

দুজনের একসাথে রেডি হতে বেশ খানিকটা সময় লেগেছিল। তারপর রেডি হয়ে বৌদি, আমি আর ভাইপো একটা টোটো ধরে বান্ধবীর বাড়ি পৌঁছেছিলাম। যদিও আমি ভেবেছিলাম আমাদের এতটা লেট হয়েছে যে সব হয়তো হয়ে গিয়েছে। তবে সেখানে গিয়ে দেখলাম তখনো পর্যন্ত সকালের বিদ্ধির কাজকর্ম হয়নি। আসলে ওদের একটা ভুল হয়েছিল। সেটা হল একই পুরোহিত মশাই বরের বাড়ি এবং মেয়ের বাড়ি কাজ করছিল। যার ফলে ছেলের বাড়ি বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান সেরে মেয়ের বাড়িতে আসতে পুরোহিত মশায়ের অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল। যাইহোক, আমরা যাওয়ার পর পুরোহিত মশাই এলো। তারপর বিভিন্ন রকমের নিয়ম কানুন মেনে বিভিন্ন কাজ হচ্ছিল।

বাঙ্গালীদের মধ্যে একেকজনের একেক রকম নিয়ম থাকে। তাই ওদের বাড়ির নিয়ম গুলো বসে বসে দেখছিলাম। ঠাকুর মশাই আমাকে ১৪ টা করে অশ্বত্থ পাতা, বট পাতা, কুল পাতা ইত্যাদি ছাড়িয়ে দিতে বলছিল। আমি যেহেতু বসেছিলাম তাই ছাড়িয়ে দিয়েছিলাম। তারপর কিছুক্ষণ বাদে বান্ধবীকে আনা হলো। সে এসে কয়েকজনের সাহায্য নিয়ে দেওয়ালে গোবর দিয়ে ঘুটে দেওয়ার মতো করে দিতে হয়, সেটা করছিল। তবে আমি জানতাম না যে সেটা নাভি পর্যন্ত মাপ করে তারপরে সেই উচ্চতায় দেওয়া হয়। সেটাও দেখলাম। এই নিয়ম গুলো দেখতে বেশ ভালো লাগছিল।

এরপর শুরু হল হলুদ কোটার অনুষ্ঠান। পাঁচজন সদবা মহিলা মিলে বিভিন্ন রকম নিয়মকানুন মেনে হলুদ বাটা শুরু করেছিল। যারা হলুদ বার ছিল তাদের সকলের মুখে পান ছিল। এগুলোর কারণ আমার ঠিক জানা নেই। তবে বহু কাল ধরে এই নিয়মেই বিয়ে হয়ে আসছে। বাঙালি বিয়ের এই বিষয়গুলো আমার বেশ ভালো লাগে। আমরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সেখানে দেখছিলাম। তারপরে আমার ভাইপো খাবার খাওয়ার জন্য বায়না করছিল। তাই ওকে নিয়ে আমরা খেতে চলে গিয়েছিলাম। তারপর অনেকটা বিকেল হয়ে গিয়েছিল, আমার আবার পড়ানোও ছিল। তাই যখন সবাই জল সইতে যাচ্ছিল তখন আমরা ওদের সাথে বেরিয়েছিলাম এবং মাঝপথে আমরা আমাদের বাড়ির দিকে চলে গিয়েছিলাম। অবশ্যই সকলকে বলেই গিয়েছিলাম।

আজ তাহলে এখানেই শেষ করছি। আগামীকাল আবার অন্য কোনো লেখা নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হব। সকলে ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
