বান্ধবীর মেহেন্দি অনুষ্ঠান
নমস্কার বন্ধুরা। আশা করছি সকলেই ভালো আছেন। গতকালের গল্পের রেশ ধরেই চলে এসেছি আজকে সেই গল্পের পরবর্তী পর্ব নিয়ে। আশা করছি আপনাদের সকলের ভালো লাগবে।
গতকালের পোস্টে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করেছিলাম আমার এক ছোটোবেলার বান্ধবীর আইবুড়ো ভাত খাওয়ানোর গল্প। সেই গল্পে একটা কথা বলতে ভুলে গিয়েছিলাম যে, ওর কিন্তু শরীর টা খুব ভালো ছিল না। আইবুড়ো ভাতের আগের দিন থেকেই গা টা গরম ছিল, সেই সাথে প্রচন্ড ঠান্ডা লেগে শ্বাস কষ্ট হচ্ছিল। তবে গাল ভর্তি হাসি ছিল, তাই ছবি দেখে বোঝা যাচ্ছিল না। এই ঘটনা টা মেনশন করলাম কারণ পরবর্তী কালে এই শরীর খারাপ এর জন্য অনেক সমস্যা হয়েছিল। সেটা পরবর্তী পোস্টে আপনাদের জানাবো।
যাইহোক, আইবুড়ো ভাতের প্রোগ্রাম শেষ করে, খাওয়া দাওয়া সেরে আমি চলে গিয়েছিলাম পড়াতে। পড়ানো শেষ করে ফেরার পথে আবার ওদের বাড়ি যেতে হয়েছিল কারণ ও বলেছিল ফেরার পথে যেন ওর সাথে দেখা করে যাই। গিয়ে দেখলাম, মেহেন্দি আর্টিস্ট মেহেন্দি পড়াতে বসে পড়েছে। বাবলিও আইবুড়ো ভাতের শাড়ি চেঞ্জ করে একটা লাল রঙের লেহেঙ্গা পরে নিয়েছে।

তবে শ্বাস কষ্টের জন্য ও খুব হাঁপাচ্ছিল। আর মেহেন্দি পরাতে তো অনেকটাই সময় লাগে। প্রায় ৩-৪ ঘন্টা সময় লেগেছিল, দুই হাতে মেহেন্দি পরাতে। অতক্ষন এক জায়গায় ঠাঁই বসে থাকাও খুব কষ্টের। তাই ওর খুব কষ্ট হচ্ছিল। সেইসাথে সকাল থেকে নানারকমের আচার অনুষ্ঠান চলছিল, যার ফলে রেস্ট নেওয়ারও সময় পায়নি। বারবার মেহেন্দি আর্টিস্ট কে জিজ্ঞাসা করছিল, "আরও অনেকক্ষণ সময় লাগবে গো? আমি একটু শুতে চাই।" তবে শুয়ে শুয়ে তো মেহেন্দি পরা যাই না। তাই অগত্যা বসেই থাকতে হয়েছিল।
আমরা সবাই ওখানে বসে ওর সাথে গল্প করছিলাম। নইলে ও খুব বোর হত। ওখানে ওর মামার দুটো মেয়েও ছিল। বড়োটা যেমন শান্ত, ছোটটা তেমন দুরন্ত। বড় মেয়েটা খুবই মিশুকে। ও এসে আমার সাথে ফটো তুলেছিল। আরো অনেক গল্প করছিল। আর ছোটোটাকে তো কোনো মতেই এক জায়গায় বসানো যাচ্ছিল না।
কিন্তু সব কিছুর মাঝেও আমার মনটা খুব খারাপ ছিল। কারণ যেহেতু ছোটবেলা থেকে ওদের চিনি তাই ছোটবেলার কথাগুলো মনে পড়ছিল। সেই দিনগুলোতে ওদের বাড়িতে কোন অনুষ্ঠান হলে ওর কাকা,কাকিমা, তাদের মেয়ে, তিন তিনটে পিসি, তাদের মেয়েরা সকলে বাড়ি মাতিয়ে রাখত। কিন্তু এইবার গিয়ে দেখলাম বিয়ের আগের দিনও তার পিসিরা এখনো এসে পৌঁছায়নি। আসলে সব দিদিদের বিয়ে হয়ে গেছে, সবাই সবার সংসার নিয়ে ব্যস্ত। তাই হয়তো বিয়ের আগের দিনও এসে পৌঁছাতে পারেনি। অন্যদিকে ওর কাকিমারা একই ছাদের তলায় থাকলেও, কিছু বিষয় নিয়ে সমস্যার জন্য, ঝামেলা করে ওদের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিল। কারন আমার জানা নেই। তবে বিয়ের আগে ওর কাকিমাদের ওরা নাকি অনেক বার করে রিকুয়েস্ট করেছে যাতে সব ঝামেলা মিটিয়ে বিয়েতে আনন্দ করে। তবে ওরা সেই সব অনুরোধ তোয়াক্কা না করে বিয়ের আগের দিন কোথাও ঘুরতে চলে গিয়েছিল। এই বিষয়টা আমার খুব খারাপ লেগেছে। শুধু আমার নয়, যারা যারা সেই দিন ওই বাড়িতে আমন্ত্রিত ছিল, সকলেই এই বিষয়টা নিয়ে বলছিল। আমি খুব মন থেকে বিশ্বাস করি যে, কোন মানুষের সাথে আমার যতই ঝামেলা থাক কিংবা রাগ থাক, সে যদি তার কোন অসময়ে কিংবা বিপদের দিনে বা আনন্দ অনুষ্ঠানে আমাকে ডাকে এবং তার সেই ডাকের মধ্যে বিনম্র ব্যাপার থাকে তাহলে আমি অবশ্যই সমস্ত ঝামেলা মিটিয়ে আবার যাব। যদিও ওদের বাড়ির ক্ষেত্রে সেটা হয়নি। এই নিয়ে সকলেরই মনটা একটু খারাপ ছিল।
এইভাবেই দেখতে দেখতে বেশ অনেকটা সময় কেটে গেল। রাত আটটার দিকে মেহেদী পড়ানো কমপ্লিট হল। তারপর আমি বাড়ি চলে এসেছিলাম। এইভাবেই দিনটা কাটলো। আজ তাহলে এখানেই শেষ করছি। আগামীকাল আবার অন্য কোনো লেখা নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হব। সকলে ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।



