"কলকাতার সংস্কৃতি ও ইতিহাসের একটি প্রতীক- 'ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল' দর্শনের অভিজ্ঞতা"

in Incredible Indiayesterday
Violet and Brown Modern Furniture Minimalist Facebook Post_20251223_212325_0000_092334.png
"Edited by Canva"

Hello,

Everyone,

আশাকরি আপনারা সকলে ভালো আছেন।আজ‌ আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে কাটানো কিছু সুন্দর মুহূর্তের কথা। আগের একটা পোস্টেই আপনাদের জানিয়েছিলাম যে, চিড়িয়াখানা থেকে বেরিয়ে আমরা সকলেই পৌঁছে গিয়েছিলাম ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সামনে।

আপনাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল সম্পর্ক অনেক তথ্য জানেন, অনেকেই ইতিমধ্যেই দর্শন করেছেন। কিন্তু আমার জন্য এটা প্রথম বার ছিল তাই একটা অন্যরকমের এক্সাইটমেন্ট ছিলো মনের ভিতরে।

IMG_20251219_142703.jpg

ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলো কলকাতার একটি বিখ্যাত শ্বেতপাথরের স্মৃতিসৌধ, যা মহারানী ভিক্টোরিয়ার স্মরণে লর্ড কার্জনের পরিকল্পনায় ১৯০৬-১৯২১ সালে নির্মিত হয়েছিলো। বর্তমানে এটি ভারত সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রকের অধীনস্থ একটি বিখ্যাত জাদুঘর, যেখানে ব্রিটিশ আমলের শিল্পকর্মের প্রদর্শনী ও ভারতের ইতিহাস সম্পর্কিত নানা জিনিস সংরক্ষিত আছে।

১৯০৬ সালে শুরু হয় এটির নির্মাণ কার্য, আর শেষ হয়েছিলো ১৯২১ সালে। বহু বছর আগে ইতিহাসে পড়েছিলাম ঠিকই, তবে তা যে সম্পূর্ণ মনে আছে এমনটা নয়। তাই অগত্যা গুগলের সাহায্য নিয়ে সাল গুলো জানতে পারলাম। এটি সম্পূর্ণ শ্বেতপাথরে তৈরি। যা সামনে থেকে দেখতে অসাধারণ। এখানে বিশালাকার যাদুঘরের পাশাপাশি রয়েছে বিশালাকার বাগানও।

IMG_20251219_135028.jpg

যেখানে সারা বছর ঘুরে বহু মানুষের আনাগোনা লক্ষ্যিত হয়। অনেকেই আছেন যারা বহুবার জাদুঘর ঘুরে দেখেছেন, তবুও সময় কাটানোর জন্য এখানকার বাগানে এসে বসেন। বিশেষকরে শীতকালে এখানে মানুষের ভিড় বেশি চোখে পড়ে।

এক কথায় বলতে গেলে, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল কেবল একটি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নয়, এটি কলকাতার সংস্কৃতি ও ইতিহাসের একটি প্রতীক বলা যায়।

6VvuHGsoU2QBt9MXeXNdDuyd4Bmd63j7zJymDTWgdcJjo1PJU7H6HMi15VNfbNF6efjvjFnGTdD1AYLMrre2rZi6fF6Mf5LJpBnoK2rApZimUajkGQ4YocwLopdQhC.png

প্রথমেই বলি টিকিটের কথা এখানে টিকিট কাটারও বিভিন্ন ভাগ আছে -

"ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে প্রবেশের টিকিটের মূল্য তালিকা"

নংদর্শনীয় স্থানটিকিটের মূল্য (জন‌ প্রতি)স্টিম মূল্য
১.শুধুমাত্র ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল এর বিশালাকার বাগান ভ্রমন(ভারতীয়দের জন্য)৩০ টাকা৫.৩০ স্টিম
২.ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল এর যাদুঘর+ বাগান পরিদর্শন (শুধুমাত্র ভারতীয়দের জন্য)৫০ টাকা৮.৮৪ স্টিম
৩.SAARC দেশগুলির নাগরিকদের জন্য (যাদুঘর+ বাগান পরিদর্শন)১০০ টাকা১৭.৬৮ স্টিম
৫.SAARC বাদে অন্যান্য দেশগুলির নাগরিকদের জন্য (যাদুঘর+বাগান পরিদর্শন)৫০০ টাকা৮৮.৩৮ স্টিম
৪.ভারতীয়দের বিভিন্ন ধরনের শ্যুটিং (প্রিওয়েডিং, ম্যারেজ অ্যানিভার্সারি, বার্থডে ইত্যাদি)৫০০ টাকা৮৮.৩৮ স্টিম

এছাড়া ক্লাস টুয়েলভ পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীরা ও ভারতীয় সেনা বাহিনীতে যুক্ত ব্যক্তিরা যদি নিজেদের ইউনিফর্ম পড়ে সেখানে আসেন, তাহলে তাদের প্রবেশ বিনামূল্যে। এমনকি শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিদেরও প্রবেশের কোনো মূল্য লাগে না।

6VvuHGsoU2QBt9MXeXNdDuyd4Bmd63j7zJymDTWgdcJjo1PJU7H6HMi15VNfbNF6efjvjFnGTdD1AYLMrre2rZi6fF6Mf5LJpBnoK2rApZimUajkGQ4YocwLopdQhC.png

IMG_20251219_134634.jpg

যাইহোক বেশ কিছুক্ষণ লাইনে দাঁড়ানোর পর আমরা টিকিট কাটতে পারলাম। টিকিট কেটে আমরা গিয়ে লাইন দিলাম ভিক্টোরিয়াতে ঢোকার লাইনে কারণ সেখানেও মোটামুটি ভিড় ছিলো। এরপর ধীরে ধীরে আমরাও ভেতরে প্রবেশ করলাম।

গেট থেকে বেশ খানিকটা হেঁটে তবেই জাদুঘরে পৌঁছাতে হয়। সব থেকে যেটা ভালো বিষয় ছিলো অন্যান্য জায়গাতে মোবাইল বা ক্যামেরা ফোন নিয়ে প্রবেশের অনুমতি থাকে না, তবে এখানে আপনারা ফোন নিয়ে যেতে পারেন।

IMG_20251219_135230.jpg

তবে যা নিয়ে প্রবেশ নিষেধ সেটি হলো জলের বোতল। অনেকেই হয়তো কোনো মাদক জাতীয় জিনিস জলের মধ্যে মিশিয়ে আনতে পারেন, হয়তো সেই কারণে জলের বোতল নেওয়া যায় না। তবে আপনার সাথে যদি একদম ছোট কোনো শিশু থাকে তাহলে তার জন্য আনা ফিডার জাতীয় বোতলগুলো ভিতরে নেওয়ার অনুমতি রয়েছে।

বেশ কিছু সিকিউরিটি ক্রস করে তারপর আমরা ভেতরে ঢুকলাম।‌ যত জাদুঘরের দিকে এগোচ্ছিলাম, ততই যেন তার সৌন্দর্য্য আরো সুন্দরভাবে সামনে দেখতে পারছিলাম।

IMG_20251219_135218.jpg

অসাধারণ ভাবে শ্বেত পাথরগুলো কেটে খুব সুন্দর করে ডিজাইন করে সাজানো জাদুঘরের বাইরেটা, যা আপনারা ছবি দেখলে খানিকটা হয়তো বুঝতে পারবেন। তবে এই সৌন্দর্য্য আসলেই ছবিতে বোঝা ততটাও সম্ভব নয়, যতটা সামনে থেকে উপভোগ করা সম্ভব।

IMG_20251219_135422.jpg

জাদুঘরে ঢোকার শুরুতেই রয়েছে মহারানী ভিক্টোরিয়ার একটি প্রতিমূর্তি, যার নামে এই জাদুঘরটি তৈরি করা রয়েছে এবং ভেতরের ঢুকে অসাধারণ কারুকার্য‌‌দেখে চোখ জুড়িয়ে গেলো। অনেকখানি উঁচু বিল্ডিং এর ভেতরটা ভীষণ সুন্দরভাবে ডিজাইন করা, যার কিছুটা আমি ছবির মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করলাম।

IMG_20251219_135447.jpg

মানুষের ভিড়ের কারণে সত্যি কথা বলতে ছবি তোলা একটু কষ্টকর হলেও, আমি চেষ্টা করেছি সবগুলো ছবি মোটামুটি ভাবে তুলে আনার জন্য। ভেতরে লাইট দিয়ে খুব সুন্দর ভাবে সাজানো আছে, যার ফলে ভেতরের পরিবেশটা যেন আরো সুন্দরভাবে ধরা পরেছে আমাদের চোখে।

IMG_20251219_135757.jpg

জাদুঘরে আরও বিভিন্ন জিনিস সংরক্ষিত আছে, যা ছুঁয়ে দেখার অনুমতি না থাকলেও ফটোগ্রাফির মাধ্যমে যতটা সম্ভব ততটা তুলে আনার আমি চেষ্টা করেছি। দিল্লির দরবারে "ভারত সাম্রাজ্যশ্বেরী উপাধি পাওয়ার পর মহারানী ভিক্টোরিয়া কিছু কথা বলেছিলেন যা ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল এর ভেতরের দেয়ালে শ্বেত পাথরের উপরে খোদিত রয়েছে।

IMG_20251219_135815.jpg

ঠিক তার পাশেই রয়েছে মা কালীর একটি মূর্তিও। মূর্তিটির সাথে সাথে কিছু কথাও সেখানে লেখা ছিলো। তবে লেখাগুলো খুব ছোট থাকার কারণে ততটা ভালো ভাবে বুঝতে পারিনি। তবে ছবিটা তুলে এনেছি আপনাদের সকলের‌ সাথে শেয়ার করার জন্য।

IMG_20251219_135835.jpg

পাশেই রাখা ছিলো সুন্দর কাঠের চেয়ার। দীর্ঘক্ষন হাঁটার ফলে এবং লাইনে দাঁড়ানোর জন্য, রীতিমতো পা ব্যথা করছিলো। তাই আমি এবং রিমির মেয়ে কিছুক্ষণ সময়ের জন্য সেখানে বসে পড়লাম। সেই সুযোগে রিমি আমাদের ছবিও তুলল।

IMG_20251219_140050.jpg

IMG_20251219_135950.jpg

IMG_20251219_135718.jpg

তারপর পুরনো আমলের ব্যবহৃত চেয়ার, তরোয়াল, বর্ষা, তীর- ধনুক এই সমস্ত কিছু খুব সুন্দর ভাবে সংরক্ষিত ছিলো। তার কিছু কিছু ছবিও তুললাম।

IMG_20251219_140320.jpg

এরপর হঠাৎ করে একটা গেটের দিকে চোখ পরলো। যদিও সেখানে প্রবেশ নিষেধ লেখা ছিলো, তবে লোহা দিয়ে যে অসাধারণ ডিজাইন গেটের উপরে তৈরি করা ছিলো, আমার উদ্দেশ্য ছিলো মূলত তার ছবিটি তোলা।

এরপর সিঁড়ি দিয়ে আমরা দোতালায় গেলাম সেখানে আরও অসাধারণ কিছু জিনিস সংরক্ষিত ছিলো, যেগুলো সম্পর্কে আমি আপনাদের সাথে পরবর্তী পোস্টে আলোচনা করবো।

কারণ একটা পোস্টে জাদুঘরের সমস্ত কিছু শেয়ার করলে পোস্টটা অনেকটাই বড় হয়ে যাবে, তাই আজকের পর্ব এখানেই শেষ করছি। আগামী পর্বে আপনাদের সাথে বাকি সবটা শেয়ার করবো। সকলে ভালো থাকবেন। সুস্থ থাকবেন। শুভরাত্রি।