কুষ্টিয়ার লালন মেলায় একদিন - ভ্রমণকাহিনী

in আমার বাংলা ব্লগlast month

আসসালামু আলাইকুম সবাইকে। আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমিও আলহামদুলিল্লাহ বেশ ভালো আছি। আজকের দিনে সবচেয়ে খুশির খবর হলো আমি "আমার বাংলা ব্লগ" কমিউনিটিতে ভেরিফাইড হয়েছি। এখন থেকে নিজের মাতৃভাষায় লেখালেখি করতে পারব ভেবেই আনন্দ লাগছে। বেশকিছু দিন ধরেই ভাবছিলাম লালনের মেলায় যাওয়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখব। কিন্তু সময় করে উঠতে পারছিলাম না। তবে আজকে বসেছি লেখার, লিখেই উঠব।


কভার ফটো (এডিটেড উইথ পিক্সেল্যাব)

প্রথমেই লালন সম্পর্কে কিছু কথা বলে নিই।
লালন শাহ ছিলেন বাংলা ভাষার বাউল সাধক—গীতিকার, দার্শনিক ও সমাজচিন্তক। তিনি মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ ভুলে মানবিকতা ও সহনশীলতার কথা বলতেন। বাউল ধারার গান ও জীবনদর্শন এখনো আমাদের সংস্কৃতির অঙ্গ। লালন মেলা মূলত তার স্মৃতিতে ও তার খ্যাতি ধরে আয়োজন করা হয়—বাউলদের গান, আধ্যাত্মিক আলোচনা ও স্থানীয় উৎসব এখানে থাকে।


লালন আখড়া

অনেক আগেই থেকেই ইচ্ছে ছিল এবার লালন মেলায় যাবো। প্রতিবার প্ল্যান করলেও আর যাওয়া হয় না। এবার সাথে আরও কিছু বন্ধুও রাজি হয়েছে যাওয়ার জন্য তাই এক প্ল্যানেই সবাই তৈরি। যেহেতু মেলাটা কুষ্টিয়াতে হয় তাই ঢাকা থেকে যাওয়া খুব একটা কঠিন না। জ্যামের জন্য একটু টাইম বেশী লাগে এই আরকি!

মেলার ভীড়




আমরা ঢাকা থেকে সকাল বেলায় রওনা দিয়েছি। অনেকে বলেছিলেন ভিড় থাকবে, তাই ভোরবেলা বের হওয়া ভালো—তাই আমরা ঠিক তেমন করেই গেলাম। প্রথমে বাসে কুষ্টিয়া যাওয়া, সেখানে নামার পর স্থানীয় সিএনজি নিয়ে মাজারের কাছে যেতে হয়। যাওয়াটা একেবারেই সিম্পল। যেহেতু লালন মেলা চলে আর অনেক মানুষ যায় তাই সিএনজি, রিকশা সবাই-ই এই মেলায় যাওয়ার জন্য বসে থাকে। রাস্তা থেকেই মেলার উৎসবমুখরতা বোঝা যায়—গান বাজনা, দোকানপট্টি, মানুষের ঢল।




মেলায় ঢুকে প্রথমটা যে অনুভব করি, সেটা ছিলো আনন্দ। বাউলদের গান শুনে মনে একটা আলাদা শীতলতা আসে—সুরে, কথায় একধরনের গভীরতা আছে। বিক্রেতাদের স্টল, স্থানীয় খাবার, ছোট ছোট হস্তশিল্প—এসব দেখেই মজাই নয় বলা যায়। সন্ধ্যার দিকে মঞ্চে বাউলদের পরিবেশনা সত্যিই মনোরম ছিল।


মেলার ভিতরে






কিন্তু অসুবিধাও ছিল। মেলা এতটা ভীড়ের, সারাক্ষণ মানুষের ধাক্কাধাক্কি, যেখানে দাঁড়াবো বা কোথায় গান শোনা যাবে - এ সব নিয়েই চিন্তা করতে হয়েছে। অনেক সময় এক জায়গায় বিশ্রাম নেয়া বা শান্তভাবে গান উপভোগ করা সম্ভব হয়নি। আমার মতো যারা গভীরভাবে গান শুনতে চান, তাদের জন্য এটি মাঝে মাঝে বিরক্তিকর হয়ে ওঠে। সারাদিন যে রকম চাপানউতোর ছিল, সেটা সামলানো কঠিন ছিল।





সবকিছু মিলিয়ে বলব লালন মেলায় যাওয়া ছিল একটা স্মরণীয় অভিজ্ঞতা। লালনের গান ও দর্শন থেকে যে ভাবনা আসে, সেটা অনুভব করা ভালো লাগে। ভিড় আর অস্বস্তিকর পরিবেশ না থাকলে এই অভিজ্ঞতা আরও শান্ত ও মনোমুগ্ধকারী হতো। ভবিষ্যতে যদি আবার যাই, সম্ভবত ভোরবেলা বা কম ভিড়ের সময়েই যাবো যাতে গান ঠিক মতো উপভোগ করা যায়।

আজ আর লিখতে ইচ্ছে করছে না। আশা করছি আমার এই ব্লগটি আপনাদের ভালো লেগেছে। আমি স্টিমিটে একেবারেই নতুন সবার সাপোর্ট এবং সিনিয়রদের পরামর্শ চাই। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।


‌‌‌আমার সম্পর্কে

আমার নাম ইফতেখার রিয়ান এবং আমার স্টিমিট ইউজার নেইম @iam.riyan. আমি বাংলাদেশের ঢাকা বিভাগের একটি ছোট্ট গ্রামে বাস করি। আমি একজন বাংলাদেশী নাগরিক। মাতৃভাষায় নিজের মনের ভাবনাগুলো প্রকাশ করতে পেরে আমি সত্যিই আনন্দিত। আমি বর্তমানে সায়েন্স ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে ব্যাচেলর করছি। পাশাপাশি, আমি একজন সোশ্যাল মিডিয়া এক্সপার্ট, এবং নতুন প্রযুক্তি ও ডিজিটাল ট্রেন্ড সম্পর্কে জানার প্রতি আমার গভীর আগ্রহ রয়েছে। ভ্রমণ করতে অনেক বেশী পছন্দ করি। সেইসাথে ছবি তোলা আমার অন্যতম প্রিয় শখ, বিশেষ করে প্রকৃতির দৃশ্য বন্দি করতে আমি আনন্দ পাই। এছাড়া, আমি নিয়মিত লেখালিখি করি; ছোট গল্প ও কবিতা লেখা আমার সবচেয়ে প্রিয়।

স্টিমিটে আমি আমার শখ, অভিজ্ঞতা ও আগ্রহের বিষয়গুলো শেয়ার করি। আশা করি, আমার এই ভালোলাগার বিষয়গুলো আপনাদেরও অনুপ্রাণিত করবে।