আমাদের ছোট্ট একটি বাজার
শুভ বিকাল কেমন আছেন আপনারা সবাই। অবশ্যই আপনারা অনেক ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন। আজকে আমি আপনাদের মাঝে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কিছু চিত্র তুলে ধরব আশা করি আপনাদের ভাল লাগবে।
আপনাদের ভেতরে, অনেকেই হয়তো ভাবেন প্রবাস জীবন মানেই চাকচিক্য, সাজানো-গোছানো শহর আর রঙিন আলো। কিন্তু আমাদের এই প্রবাসীদের জীবনের একটা বড় অংশ কাটে লোকালয় থেকে অনেক দূরে। কখনো গহীন অরণ্যে, কখনো বা পাহাড়ের পাদদেশে ইট-পাথরের ধূসর প্রজেক্টে। আজ আমি আপনাদের আমার সেই প্রবাস জীবনেরই এক টুকরো বাস্তব চিত্র দেখাব, যা সচরাচর ক্যামেরার লেন্সে ধরা পড়ে না।

বর্তমানে আমি যে প্রজেক্টে কাজ করছি, তার আশেপাশে তাকালে শুধু পাহাড় আর নির্মাণাধীন দালান ছাড়া কিছুই চোখে পড়ে না। এখানে চাইলেই হুট করে বাজারে যাওয়া যায় না, চাইলেই হাতের নাগালে পাওয়া যায় না প্রিয় কোনো খাবার। কিন্তু জীবন তো আর থেমে থাকে না। আমাদের এই রুক্ষ জীবনে সজীবতার ছোঁয়া নিয়ে আসে একটি পিকআপ ভ্যান।
ঠিক দুই দিন পর পর, অনেক দূর থেকে এই গাড়িটি আমাদের সাইটে আসে। বিশ্বাস করুন, এই গাড়িটি যখন হর্ন বাজিয়ে প্রজেক্টে ঢোকে, তখন আমাদের সবার মনে হয় যেন ঈদের চাঁদ উঠেছে! এই ছোট পিকআপ ভ্যানটিই আমাদের কাছে সুপারমার্কেট, এটাই আমাদের কাঁচাবাজার।
ছবিগুলোতে আপনারা দেখতে পাচ্ছেন, গাড়ির পেছনে থরে থরে সাজানো লাউ, শিম, কাঁচামরিচ, রসুন, আলু, এমনকি আঙ্গুরও। প্লাস্টিকের ক্রেট আর কর্কশিটের বক্সে করে নিয়ে আসা হয় মাছ আর মাংস। সারাদিনের হাড়ভাঙ্গা খাটুনির পর যখন আমরা এই গাড়িটিকে ঘিরে ধরি, তখন সব ক্লান্তি ভুলে যাই। শুরু হয় আমাদের কেনাকাটা।

হাতে নিয়ে দেখি তাজা সবজিগুলো, দরদাম করি, তারপর মেপে নিই প্রয়োজনীয় সদাই। ভিনদেশে এই নির্জন এলাকায় নিজেদের পছন্দমতো বাজার করতে পারাটাই আমাদের কাছে অনেক বড় বিলাসিতা। হিসাবের খাতা খুলে টাকা মেটানোর সময় মনে হয়, এই তো—এভাবেই আমরা বেঁচে আছি, এভাবেই আমরা ভালো থাকার চেষ্টা করছি।

আমাদের এই বাজার হয়তো খুব ছোট, কিন্তু এর তৃপ্তি অনেক গভীর। কারণ, এই বাজারটুকু আছে বলেই আমরা প্রবাসের এই নির্জনবাসে নিজেদের রান্না করে দু’মুঠো খেতে পারি। ইট-পাথরের এই প্রজেক্টে এই ভ্রাম্যমাণ বাজারটাই আমাদের অক্সিজেনের মতো।
সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন, যেন পরিবারের জন্য করা এই পরিশ্রম সার্থক হয়।



