সেই রাতের আটকে পড়ার মুহূর্ত।।
বাংলা ভাষার কমিউনিটি
হ্যালো বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই অনেক ভালো এবং সুস্থ আছেন
আমাদের বর্তমান বাসাটি একটি পাঁচতলা বিল্ডিং, আর আমরা থাকি চারতলায়। প্রতিদিনের মতো দিনের শেষে অফিস থেকে বাসায় ফিরে একটু বিশ্রাম নিয়ে তারপর আমার মেয়ে নুসাইবাকে নিয়ে ময়লা ফেলতে নিচে নামি। সারাদিন বাসায় একা থাকে বলে বাইরে একটু হাঁটাহাঁটি করা নুসাইবার জন্য খুব আনন্দের হয়। আমাদের সেই ছোট্ট সময়টুকুই যেন বাবা-মেয়ের একটি বিশেষ মুহূর্ত।
গত পরশুদিনও ঠিক একইভাবে রাত প্রায় দশটার কিছু আগে নুসাইবাকে নিয়ে নিচে নামলাম। ময়লা ফেললাম, তারপর ব্রেড কিনলাম, আর হাঁটাহাঁটি করছিলাম। সাধারণত আমাদের বাসার মেইন গেইট রাত ১১টার দিকে তালা দেওয়া হয়। কিন্তু সেদিন কে বা কারা সাড়ে ১০টার আগেই গেইট তালা দিয়ে রেখেছে। বিষয়টি আমি তখনো জানতাম না।
আমরা প্রায় আধঘণ্টা হাঁটার পর গেইটের কাছে এসে দেখি গেইটে তালা। আমার সঙ্গে চাবি ছিল না, মোবাইলও না। কারণ প্রতিদিন এই কাজগুলো করার জন্য এগুলো নেওয়ার প্রয়োজন হয় না বলেই সঙ্গে রাখি না। প্রথমে খুব একটা চিন্তা হয়নি, ভেবেছি ৫-১০ মিনিটের মধ্যেই কেউ না কেউ বাইরে যাবে বা ভেতরে আসবে। কারণ স্বাভাবিক দিনে এমনটাই হয়।
কিন্তু সেদিন যেন পুরো পরিবেশই অস্বাভাবিক। আমরা প্রায় ৩০ মিনিট গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে রইলাম কেউ বের হলো না, কেউ প্রবেশ করল না। বিষয়টি ক্রমেই অস্বস্তিকর হয়ে উঠছিল। নুসাইবা তখন বাড়ির ভেতরে ঢুকতে চাচ্ছে, তার মা কে ডাকছে, মাঝে মাঝে কান্না করে দিচ্ছে। মাত্র এক বছর দশ মাস বয়স, তবুও সে বুঝে গেছে আমরা সমস্যায় পড়েছি।
আমি নিচ থেকে কাউকে ডাকতে পারছিলাম না। পরিস্থিতি এমন যে চারতলায় আমাদের ফ্ল্যাট পর্যন্ত ডাক পৌঁছানোর কোনো উপায় নেই। বাধ্য হয়ে পাশের বাসার চারতলায় উঠে নুসাইবার আম্মুকে ডাকতে লাগলাম। কিন্তু দুই বিল্ডিংয়ের মাঝের বিশ ফুট রাস্তা আর যানবাহনের শব্দে আমার ডাক তার কানে পৌঁছায়নি। নুসাইবা তখনও কান্না করছে, আমিও হতবুদ্ধি হয়ে পড়েছি। সময় তখন প্রায় সাড়ে এগারোটার উপরে।
পুনরায় গেইটের কাছে গিয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়ালাম তবুও কেউ এল না। যেন পুরো পৃথিবী ফাঁকা হয়ে গেছে। আবার পাশের বাসার ছাদে উঠে গেলাম। এবার ডাক দিলাম আরও জোরে। কিন্তু কোনো সাড়া নেই। তখন বাধ্য হয়ে ওই ছাদের কংক্রিটের ঢিল দিয়ে আমাদের ফ্ল্যাটের জানালার দিকে ছুড়ে মারলাম। অবশেষে একসময় নুসাইবার আম্মু জানালা খুলে তাকালেন আমাকে দেখে বুঝতে পারলেন কিছু একটা সমস্যা হয়েছে।
জানালায় মা কে দেখেই নুসাইবা হাউমাউ করে কান্না শুরু করল। সেই কান্না ছিল ভয়, ক্লান্তি আর মায়ের প্রতি টানের মিশ্র অনুভূতি। আমি নুসাইবার আম্মুকে বললাম চাবি নিয়ে দ্রুত নিচে আসতে। এরপর আমি সিঁড়ি বেয়ে আবার নিচে নামলাম, আর নুসাইবা কান্না করতে করতে আমার হাত শক্ত করে ধরে আছে।
অবশেষে রাত ১১:৪৫ মিনিটে আমরা বাসায় প্রবেশ করতে পারলাম। নুসাইবা তার আম্মুর কোলে উঠেই যেন আবার নিরাপদ জগতে ফিরে গেল। তার মুখে সেই স্বস্তি, চোখে শান্তি দেখে মনে হলো ও যেন দ্বিতীয় জীবন ফিরে পেল। আর আমি সেদিন প্রথমবার গভীরভাবে অনুভব করলাম মা-মেয়ের সম্পর্ক কতটা গভীর, কতটা টানাপোড়েনে ভরা, আর কতটা অটুট।
সবাইকে ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ।।
আমি একজন বাংলাদেশের সাধারন নাগরিক। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে আমার বসবাস। সিম্পল আমার স্বপ্ন সিম্পল আমার জীবন। স্টিমিট আমার জীবনের একটি অংশ, আমার বাংলা ব্লগ আমার পরিবার। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া বলতে আমি স্টিমিটকেই চিনি। ভ্রমন করা, ফটেগ্রাফি করা আর বই পড়া আমার স্বপ্ন। আমি বিশ্বাস করি মানুষের জীবনে উত্তান পতন আছেই। সর্বপরি কাজ করতে হবে লেগে থাকতে হবে, তাহলেই একদিন সফলতা আসবে,এটাই আমি বিশ্বাস করি। সবাইকে ধন্যবাদ।।
Bangla Witness কে সাপোর্ট করতে এখানে ক্লিক করুন
এখানে ক্লিক করো ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP 500 SP 1000 SP 2000 SP 5000 SP
Click Here For Join Heroism Discord Server

















