আমি এমন কেউ না গানের রিভিউ........

গানটির কিছু তথ্য

নাম	আমি এমন কেউ না .......
শি্ল্পী	লুৎফর হাসান
কথা	লুৎফর হাসান
সুর	লুৎফর হাসান
মুক্তি	২০২১

গানটির মূল শিল্পী

গানটি নিয়ে যত কথা

আমাকে রাখবে মনে,আমি এমন কেউ না, আমাতে ভাসবে তুমি,আমি এমন ঢেউ না- সেদিন হঠাৎ কোথায় যেন শুনেছিলাম। অবশ্যই সেটা গানের সুরে। কেন জানি গানটি সেদিন বেশ মনে ধরেছিল। গানটি শুনে কোথায় যেন শুণ্যতা অনুভব করলাম। আর সেই গানটিই আজ বার বার মনে হচ্ছিলো। যদিও এদানিং গান শোনা হয় না। তবু একবার শোনার ইচে্‌ছ হলো। একবার শুনেই গানটি কেন জানি মন কেড়ে নিলো। যদিও গানটি ২০২১ সালে মুক্তি প্রাপ্ত। হয়তো এতদিন গানটি শোনা হয়নি।

গানটির মধ্যে এমন কিছু কথা আছে যে গুলো ইতিমধ্যে মানুষের মনের কথার সাথে মিশে গেছে। হয়তো বা আপনার আমার কারও সাথেও মিশে যেতে পারে। তবে গানটির ইউটিউবে ইতিমধ্যে ৯ লক্ষ ভিউজ হয়েছে। গানটির সুর আর কথা তরুন যুবক সবাইকে কেমন যেন কাছে টানে। হয়তো বা শিল্পী নিজের মনের কথা গুলো কেই তার সুর আর ছন্দে সাজিয়ে তার শ্রোতাদের মাঝে উপস্থাপন করেছে। যদি এই শিল্পী তেমন জনপ্রিয় নয় তবুও তার এই গানটি এবং গানের কথা দুটোই আমাকে বেশ মুগ্ধ করেছে।

প্রাপ্তি: YouTube

এই গানটির গীতিকার শিল্পী নিজেই। তাঁর লেখা গানগুলিতে সবসময় একধরনের সহজাত দর্শন দেখা যায়। এখানে তিনি আমাদের মনের কথার চিরন্তন সত্যকে তুলে ধরেছেন। প্রিয় মানুষের কাছে নিজের মনের কথা গুলো কে গানের মাঝে যে এমন সুন্দর করে উপস্থাপন করা যায় সেটা গানটির মধ্যে ফুটে উঠেছে। ভালোবাসার কাছে আমরা সত্যি বেশ অসহায়। আর গানটির কথা শুনলে সে বিষয়টি বেশ উপলব্দি করা যায়।

গানটিতে এমন সুরের গাঁথুনি দিয়েছেন যা লিরিক্সের আবেগের সঙ্গে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ। সুরের ওঠানামা গানের প্রতিটি মেজাজের সঙ্গে এমনভাবে খাপ খেয়ে গেছে যে শ্রোতা কখনো ভেসে যান গভীর চিন্তায়, কখনো আবার অনুভব করেন একধরনের প্রশান্তি। সঙ্গীতায়োজনও ছিল অত্যন্ত সংযমী; অযথা যন্ত্রের বাড়াবাড়ি না করে গানের মূল আবেগকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।

প্রাপ্তি: YouTube

এই গানটি প্রথম পরিবেশিত হয় ২০২১ সালে। আর গানটির নিজের মনের কথা দিয়ে তার শ্রোতাদের মনের মাঝে এমন করে জায়গা করে নিয়েছে যে গানটি আজও সমান জনপ্রিয়। ভালোবাসার মানুষ কে বড় করে নিজেকে তুচ্ছ করে গানটি সাজানো হয়েছে। যেখানে নিজেকে তুলনা করা হয়েছে অন্ধকারের সাথে। প্রিয়তমা কে বিভিন্ন সুন্দর উপমা দেওয়া হয়েছে। সবকিছু মিলে গানটির আবহকে আরও গাঢ় করে তোলে। দর্শকরা শুধু গান শোনেননি, বরং দৃশ্যের সঙ্গে মিলিয়ে তার গভীরতা অনুভব করেছেন।

লুৎফর হাসানের কণ্ঠের কথা আলাদা করে বলতেই হয়। তাঁর গায়কি কখনো অতিরঞ্জিত নয়, আবার নিস্তেজও নয়; বরং যেন বাস্তব জীবনের কথা বলছেন। এমন স্বাভাবিকতার মধ্যেও ছিল এক অনন্য মাধুর্য। প্রতিটি শব্দ উচ্চারণের স্বচ্ছতা, শ্বাসের সঠিক ব্যবহার, এবং গানের আবেগ অনুযায়ী কণ্ঠের ওঠানামা।সবকিছু মিলিয়ে গানটি হয়ে উঠেছে এক অনবদ্য শ্রুতিমধুর অভিজ্ঞতা। তাঁর কণ্ঠ যেন গানটির দর্শনকে সরাসরি শ্রোতার হৃদয়ে পৌঁছে দেয়।

প্রাপ্তি: YouTube

গানটি মুক্তির পরপরই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তখনকার দিনে রেডিও, গ্রামোফোন রেকর্ড এবং সিনেমা হল ছিল মানুষের প্রধান বিনোদনের মাধ্যম। যেখানেই এই গান বাজত, মানুষ থেমে যেত, মনোযোগ দিয়ে শুনত। পাড়ার চায়ের দোকান থেকে শুরু করে ঘরোয়া আসর—সবখানেই এটি বারবার শোনা যেত। মানুষের মনে গানটি এতটাই জায়গা করে নিয়েছিল যে অনেকে জীবনের সঙ্গে মিল খুঁজে নিতেন এর প্রতিটি লাইনে।

আজ, কয়েক দশক পেরিয়ে যাওয়ার পরও গানটি সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। ইউটিউব, স্পটিফাই কিংবা বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে এখনও গানটি শোনা ও শেয়ার করা হয়। অনেকেই মন খারাপের দিনে বা আত্মমগ্ন মুহূর্তে গানটি শোনেন। এর দর্শন ও আবেগের গভীরতা প্রজন্মের সীমানা অতিক্রম করেছে। পুরনো প্রজন্মের কাছে এটি নস্টালজিয়া, নতুন প্রজন্মের কাছে এটি এক জীবনের পাঠ।

প্রাপ্তি: YouTube

গানটির দীর্ঘস্থায়ী আবেদন এর মূল বার্তায় লুকিয়ে আছে। এটি শেখায়—সুখ কেনা যায় না, এবং ভাগ্যের লিখন বদলানো যায় না। কিন্তু আন্তরিক ভালোবাসা, আত্মিক সম্পর্ক এবং মনের শান্তি প্রকৃত সুখ এনে দিতে পারে। মানুষের জীবনদর্শন যতই বদলাক না কেন, এই সত্য চিরকাল একই থাকবে।

সব মিলিয়ে “সবাই তো সুখী হতে চায়” বাংলা গানের ইতিহাসে এক কালজয়ী সৃষ্টি। জহর মজুমদারের গভীর লিরিক্স, প্রভাস দে-র সুরের মায়া, আর মান্না দে-র হৃদয়স্পর্শী কণ্ঠ মিলিয়ে গানটি হয়ে উঠেছে এমন এক শিল্পকর্ম যা সময়ের গণ্ডি পেরিয়ে চিরকাল বেঁচে থাকবে। সুখের খোঁজ মানুষের চিরন্তন যাত্রা, আর সেই যাত্রার সঙ্গে এই গানটি যেন এক বিশ্বস্ত সঙ্গী হয়ে আছে। যতদিন মানুষ সুখের অর্থ খুঁজবে, ততদিন এই গানও তাদের মনে প্রতিধ্বনিত হবে।

গানটির ভিডিও লিংক