বয়স ৪০ হলে চাই স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
৪০ বছর বয়সের পর বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই, আপনার দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এনে আপনার স্বাস্থ্যের প্রতি আরও বেশি যত্নবান হওয়া অপরিহার্য। সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য বেশ কিছু নির্দেশিকা মেনে চলা উচিত।
৪০ বছর বয়সে, বছরে অন্তত একবার আপনার শারীরিক সুস্থতা মূল্যায়নের জন্য একজন চিকিৎসকের সাথে নিয়মিত চেক-আপ করা অপরিহার্য।
লিঙ্গ নির্বিশেষে প্রতিটি ব্যক্তির তাদের উচ্চতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি আদর্শ ওজন অর্জন এবং বজায় রাখার জন্য প্রচেষ্টা করা উচিত। প্রতিদিন ৩০ থেকে ৬০ মিনিট শারীরিক ব্যায়াম করলে হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি পায় এবং রক্ত সঞ্চালন উন্নত হয়।
পর্যায়ক্রমে আপনার রক্তচাপ পর্যবেক্ষণ করুন। যদি আপনি রক্তে শর্করা বা উচ্চ রক্তচাপ সম্পর্কিত সমস্যা অনুভব করেন, তাহলে আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর নির্দেশ অনুসারে ওষুধ খাওয়া শুরু করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ উভয়কেই প্রায়শই নীরব ঘাতক হিসাবে উল্লেখ করা হয়।
আপনার খাদ্যাভ্যাস সংশোধন করুন।
তৈলাক্ত ও চর্বিযুক্ত খাবার, জাঙ্ক ফুড, গরুর মাংস, কলিজা, মস্তিষ্ক, নিহারি, কেক, পেস্ট্রি, কোমল পানীয় এবং অতিরিক্ত লবণ এড়িয়ে চলুন। প্রতিদিন ডিম খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
আপনার খাবারে তাজা এবং প্রাণবন্ত শাকসবজি, ফল, লাল আটা, লাল ভাত এবং বার্লির আটা অন্তর্ভুক্ত করাকে অগ্রাধিকার দিন। কম চিনিযুক্ত ফল বেছে নিন। প্রতিদিন একটি করে টক ফল খাওয়ার অভ্যাস করুন।
আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় সালাদ এবং দই অন্তর্ভুক্ত করুন। নাস্তার সময় বাদাম এবং শুকনো ফল সহজেই পাওয়া যায়।
লবণ এবং লবণাক্ত খাবার গ্রহণ কমিয়ে দিন। আপনি নারকেল জল, স্ট্রবেরি, ড্রাগন ফল, ক্র্যানবেরি, টমেটোর রস, অথবা পুদিনা পাতা দিয়ে তৈরি স্মুদি উপভোগ করতে পারেন।
প্রতিদিন এক কাপ থেকে এক গ্লাস কম চর্বিযুক্ত দুধ পান করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। ঐতিহ্যবাহী দুধ চা এর পরিবর্তে, বিকল্প হিসেবে গ্রিন টি, পুদিনা চা, তুলসী চা, অথবা লেবু চা বিবেচনা করুন।
- চিনির বিকল্প বা কৃত্রিম মিষ্টি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন এবং প্রয়োজনে চিনিমুক্ত খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এই অভ্যাসটি তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করবে। শরীরের হাইড্রেশনের মাত্রা বজায় রাখার জন্য পর্যাপ্ত পানি পান করুন। উপরন্তু, রক্তপ্রবাহে ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য ফলের রস পান করা যেতে পারে।
৪০ বছর বয়সের পর হাড়ের ঘনত্ব কমতে শুরু করে; তাই, আপনার খাদ্যতালিকায় ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার অন্তর্ভুক্ত করা অপরিহার্য। তাছাড়া, প্রতিদিন ১০ থেকে ৩০ মিনিট সূর্যের আলোতে কাটানোর পরামর্শ দেওয়া হয়, বিশেষ করে সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টার মধ্যে।
আপনার খাবারে উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার অন্তর্ভুক্ত করুন। চিয়া বীজের জল বা ইসবগুল ভেজানো জল পান করলে রক্তের উচ্চ কোলেস্টেরল প্রতিরোধ করা এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা সম্ভব।
মানসিক উদ্বেগ এবং চাপের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা গুরুত্বপূর্ণ। রাত পর্যন্ত জেগে থাকার অভ্যাস এড়িয়ে চলুন, কারণ ৪০ বছর বয়সে সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য সাত থেকে আট ঘন্টা নিরবচ্ছিন্ন ঘুম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এখন, আসুন আমরা ৪০ বছরের বেশি বয়সী পুরুষদের খাদ্যতালিকায় কোন খাবারগুলি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত তা পরীক্ষা করে দেখি।
১. বাদাম
বাদামে প্রচুর পরিমাণে স্বাস্থ্যকর চর্বি, প্রোটিন, ভিটামিন এবং খনিজ থাকে। বিশেষ করে, আখরোট মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী এবং এতে থাকা আয়রন এবং ম্যাগনেসিয়াম পেশী এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।
২. ব্রোকলি
ব্রোকলি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর যা কোষের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। এটি ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম এবং ফাইবারের একটি ভালো উৎস, যা শক্তিশালী হাড় বজায় রাখতে অবদান রাখে।
৩. চর্বিযুক্ত মাছ
সামুদ্রিক মাছ যেমন স্যামন, সার্ডিন এবং টুনা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করে।
৪. ডিম
ডিম প্রোটিনের একটি চমৎকার উৎস হিসেবে কাজ করে এবং এতে সমস্ত প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে। ৪০ বছর বয়সের পরে পুরুষদের পেশী শক্তি বজায় রাখার জন্য এগুলি আদর্শ।
৫. পাতাযুক্ত সবুজ শাক
পাতাযুক্ত শাকসবজি, বিশেষ করে পালং শাক, সরিষার শাক এবং কলার্ড শাকসবজি ভিটামিন কে, ভিটামিন এ এবং ফোলেট সমৃদ্ধ, যা হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে এবং হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা সমর্থন করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
৬. ওটস
ওটসে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে, যা হজমের জন্য উপকারী। এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে এবং শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। দিনের শুরুতে এক বাটি ওটস খেলে সারা দিন ধরে শক্তি জোগায়।
৭. ফুলকপি
ফুলকপি অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং ক্যান্সার প্রতিরোধে ভূমিকা পালন করে। এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা শরীরের ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়াকে সহজতর করে।
৮. দই
প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ দই হজমশক্তি বৃদ্ধি করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে। এতে থাকা ক্যালসিয়াম হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
৯. বেল মরিচ
বেল মরিচে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে, যা ত্বক এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উভয়ের জন্যই উপকারী। এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে এবং শরীরের বিপাক বৃদ্ধি করে।
১০. গ্রিন টি
গ্রিন টিতে পাওয়া অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি শরীর থেকে ক্ষতিকারক বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে এবং দীর্ঘায়ুতে অবদান রাখে। এটি বিপাক বৃদ্ধি করে এবং ওজন হ্রাসে সহায়তা করে।
যদিও ৪০ বছর বয়সের পরে শরীরে পরিবর্তন আসে, একটি সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত ব্যায়াম পুরুষদের দীর্ঘ এবং সুস্থ জীবনযাপনে সহায়তা করতে পারে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে খাদ্যতালিকায় উল্লিখিত খাবারগুলি অন্তর্ভুক্ত করলে শক্তি এবং স্বাস্থ্য বজায় রাখা অনেক সহজ হবে।