গল্প রাইটিং:-" নীলুর অসহায় জীবন "II written by @maksudakawsarII
আসসালামু আলাইকুম
কেমন আছেন সবাই? আশা করবো সবাই ভালো আছেন সৃষ্টিকর্তার রহমতে । আমিও আছি আপনাদের দোয়ার বরকতে জীবন নিয়ে ভালোই। তবে কেন জানি আজকাল ব্যস্ততাগুলো আমায় দারুন প্যারা দিচেছ। প্যারা দিচ্ছে জীবন আর সময় দুটোই। কিন্তু আমি তো ব্যস্ততা চাই না। চাই একটু শান্তি আর প্রশান্তি। চাই একটু স্বাধীনতা। যাই হোক এসব কথা বলে শুধু শুধু সময় নষ্ট করে লাভ নেই। তাই চলে যাই আজ আপনাদের জন্য আমার লেখা সুন্দর গল্পে। যা কিনা বাস্তব জীবেন থেকে সংগ্রহ করা।
প্রতিদিনই চেষ্টা করি আমি আপনাদের মাঝে সুন্দর করে কিছু লিখে উপহার দেওয়ার জন্য। চাই চারদিকের বাস্তব কিছু ঘটনাকে গল্পে রূপ দিয়ে আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করতে। যাতে করে আমার লেখার যাদুতে আপনারা মুগ্ধ হতে পারেন। যদিও সময় করে উঠতে পারি না। যদিও নিজের ক্রেয়েটিভিটি আপনাদের মাঝে তুলে ধরার সময় হয় না। তবুও চেষ্টা করলাম আপনাদের মাঝে নতুন একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য। আশা করি প্রতিদিনের মত করে আমার আজকের জেনারেল গল্পটিও আপনাদের কাছে বেশ ভালো লাগবে।

নীলু ছেলেবেলা হতেই বেশ নিশ্চুপ স্বভাবের। একমাত্র বই পড়া ছাড়া সমস্ত পৃথিবী তার কাছে অজানা। পড়াশুনায় বেশ মেধাবী একজন ছাত্রী। আজ অবদি কোন ক্লাসে তার দ্বিতীয় হবার রেকর্ড নেই। যেহেতু সারাক্ষন পড়াশুনায় ব্যস্ত থাকতে হয় তাকে তাই তার তেমন কোন বন্ধু বা বান্ধবী নেই নীলুর। বাবা মা আর ছোট দুটি ভাই নিয়ে নীলুর সংসার জীবন। সেই উদ্দেশ্যেই নীলু পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছে। বাবা সামন্য বেতনে একজন সরকারি চাকুরীজীবি। আর সরকারি চাকুরিজীবি হওয়ায় বেশ টানা পোড়নের মধ্য দিয়ে তাকে তার সংসার জীবন চালাতে হয়। তবে নীলুর বাবার এমন উপার্জন নিয়ে সংসারের কারও কোন আক্ষেপ নেই। নেই কোন অভিযোগ। বেশ আনন্দ আর হেসেখেলে জীবন চলে যাচেছ নীলুদের। কিন্তু কি হলো? নীলু আর তার পরিবারে হঠাৎ করে চলে আসলো এক অসুভ ছায়া।
হঠাৎ একদিন ফোন আসলো নীলুর বাবা অফিসে হার্ট এ্যাটাক করেছে। আর এই হার্ট এ্যাটাক করার পরেই নীলুর বাবা চিরদিনের জন্য নীলুদের ছেড়ে চলে গেলেন। এখন নীলুদের সংসারে নীলু ছাড়া আর কেউ নেই। যা আত্মীয় স্বজন আছে তারাও ভয়ে আর খোঁজ খবর নিতে আসে না। নীলু সবেমাত্র ইউনিভার্সিটিতে অনার্স ফাইনাল ইয়ার পড়ে। এদিকে বাবা মারা যাওয়ার পর বেশ কষ্টে জীবন কাটে তাদের । নীলুর মা বেশ কষ্ট করে নীলুর বাবার অফিসে ঘুরে ঘুরে নীলুর জন্য একটি চাকুরী ঠিক করে দেয়। নীলু পরিবারের কথা চিন্তা করে চাকুরীতে যোগদান করে। কিন্তু একটি অফিসের তো আর সবাই ভালো হয় না। ভালোর মাঝে অনেক খারাপ মানুষও থাকে।
নীলুর চাকুরী জীবনের প্রথম থেকেই অফিসের বিভিন্ন কলিগ নীলুকে খারাপ খারাপ প্রস্তাব দিতে থাকে। এমনকি যে সমস্ত লোকেরা নীলুর বাবার বন্ধু ছিল। বাবা বেচেঁ থাকতে যাদের কে নীলূ চাচা বলে ডাকতো তারাও নীলু কে নিয়ে খারাপ মন্তব্য করতে এবং নীলু কে খারাপ প্রস্তাব করতে দ্বিধাবোধ করে না।কিন্তু নীলু পরিবারের কথা চিন্তা করে এসব কথা আর তার মাকে জানায় না।এভাবেই নীলূ চাকুরী করে যেতে থাকে নিজেকে রক্ষা করে। আর অফিসের সব কলিগদের সাথে ভালো ব্যবহার করতে থাকে যাতে করে তার মা আর ছোট ভাইবোনদের জন্য দুটো ভাত জোগার করতে পারে। যার কারনে নীলু অফিস করেও বাসায় এসে দুটো টিউশনিও করে।
আর এভাবেই যাচ্ছিলো নীলুর সময়। এদিকে নীলুর বিয়ের বয়সও পার হয়ে যাচ্ছে। মা বার বার বিয়ের কথা বললেও নীলু রাজি হয় না। নীলু মনে করে বিয়ের পর যদি নীলূর স্বামী তার ছোট ছোট ভাইদের কে না দেখে। যাই হোক মানুষের মন বলে কথা। কেমন করে যেন নীলু অফিসের এক বড় কলিগের প্রেমে পড়ে গেল। নীলু জানতো সেই কলিগ বিবাহিত। কিন্তু নিজের অজান্তেই নীলু সেই কলিগের প্রেমে পড়ে গেল। এক সময় নীলু তাকে বিয়েও করে নিল। বিয়ের পর হতেই নীলু তার ময়ের বাসায় থাকে। আর নীলুর স্বামী তার সাথেই থাকে।
এদিকেদিন যতেই যাচ্ছে ততই যেন নীলুর স্বামীর মুখোশ খুলে যাচ্ছে। দিনের পর দিন নীলুর স্বামী তার উপর অত্যাতার শুরু করে দিলো। যাতে করে নীলু তার অসহায় মা আর ছোট ভাইদের কে বাসা হতে বের করে দেয়। নীলু বেশ কষ্ট করে তার স্বামীর এমন যন্ত্রণা সহ্য করে নেয়। কিন্তু এসব কথা কোন ভাবেই তার মা আর ছোট ভাইদের কে বুঝতে দেয় না। নীলু চায় তার ভাই দুটো মানুষের মতো মানুষ হয়ে উঠুক। তাই নিজের কষ্ট গুলো নিজের মনের ভিতরে কবর দিয়ে দিন পার করে নিলো। এমন করেই কেটে যাচিছলো নীলুর জীবন। স্বামীর সাথে আজ ভালো তো কাল খারাপ সময় কাটে নীলূর
এক সময়ে নীলুর ঘর উজ্জ্বল করে আসে একটি ফুট ফুটে মেয়ে। এদিকে নীলু কিন্তু দিনের পর দিন বেশ অসুস্থ হয়ে যাচেছ। একদিকে স্বামীর অত্যাচার আর অন্যদিকে শরীরে বাসা বেধেঁছে হাজারও রোগ ব্যাধি। এক সময় নীলু এতটাই অসুস্থ্ হয়ে পড়ে যে তাকে আর বাচাঁনো যায়নি। সন্তান আর মা ভাইদের মায়া কাটিয়ে নীলুকে চলে যেতে হয় পরপারে। এদিকে নীলুর দেনা পাওনার জন্য নীলুর স্বামী তার অফিসে যেয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু যেহেতু নীলুর একটি অসহায় কন্যা সন্তান আর অসহায় পরিবার রয়েছে তাই অফিস সিদ্বান্ত দেয় নীলূর যাবতীয় পাওনা দি তার কন্যা এবং অসহায় পরিবার কে দিবে। আর এমন কথা শুনে তো নীলুর স্বামী বেশ রাগ করে। বেশ চেষ্টা করে টাকা পয়ঁসা খরচ করে নীলুর সব টাকা পয়সা হাতিয়ে নিতে। কিন্তু অবশেষে নীলূর মেয়ে তার মায়ের সকল পাওনার অধিকারী হয়।
কেমন লাগলো আমার আজকের গল্পটি। আশা করি আপনাদের সবার কাছেই আমার গল্পটি বেশ ভালো লেগেছে। ভালো থাকবেন।
আমার পরিচিতি
আমি মাকসুদা আক্তার। স্টিমিট প্লাটফর্মে আমি @maksudakawsar হিসাবে পরিচিত। ঢাকা হতে আমি আমার বাংলা ব্লগের সাথে যুক্ত আছি। আমি একজন গৃহিনী এবং চাকরিজীবী। তারপরও আমি ভালোবাসি আমার মাতৃভাষা বাংলায় নিজের মনের কথা গুলো আমার বাংলা ব্লগের প্লাটফর্মে শেয়ার করতে। আমি ভালোবাসি গান শুনতে এবং গাইতে। আমি অবসর সময়ে ভ্রমন করতে এবং সেই সাথে সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি নিজের ক্যামেরায় বন্দী করতে ও ভালোবাসি। মাঝে মাঝে নিজের মনের আবেগ দিয়ে দু চার লাইন কবিতা লিখতে কিন্তু আমার বেশ ভালোই লাগে। সর্বোপরি আমি ভালোবাসি আমার প্রাণপ্রিয় মাকে।
.gif)
VOTE @bangla.witness as witness
OR
SET @rme as your proxy



