গল্প রাইটিং-প্রথম ভালোবাসার শেষ চিঠি
আসসালামু আলাইকুম
কেমন আছেন সবাই? আশা করবো সবাই ভালো আছেন সৃষ্টিকর্তার রহমতে । আমিও আছি আপনাদের দোয়ার বরকতে জীবন নিয়ে ভালোই। তবে কেন জানি আজকাল ব্যস্ততাগুলো আমায় দারুন প্যারা দিচেছ। প্যারা দিচ্ছে জীবন আর সময় দুটোই। কিন্তু আমি তো ব্যস্ততা চাই না। চাই একটু শান্তি আর প্রশান্তি। চাই একটু স্বাধীনতা। যাই হোক এসব কথা বলে শুধু শুধু সময় নষ্ট করে লাভ নেই। তাই চলে যাই আজ আপনাদের জন্য আমার লেখা সুন্দর গল্পে। যা কিনা বাস্তব জীবেন থেকে সংগ্রহ করা।
প্রতিদিনই চেষ্টা করি আমি আপনাদের মাঝে সুন্দর করে কিছু লিখে উপহার দেওয়ার জন্য। চাই চারদিকের বাস্তব কিছু ঘটনাকে গল্পে রূপ দিয়ে আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করতে। যাতে করে আমার লেখার যাদুতে আপনারা মুগ্ধ হতে পারেন। যদিও সময় করে উঠতে পারি না। যদিও নিজের ক্রেয়েটিভিটি আপনাদের মাঝে তুলে ধরার সময় হয় না। তবুও চেষ্টা করলাম আপনাদের মাঝে নতুন একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য। আশা করি প্রতিদিনের মত করে আমার আজকের জেনারেল গল্পটিও আপনাদের কাছে বেশ ভালো লাগবে।

রিমা ছিল এক শান্ত স্বভাবের মেয়ে যে নিজের ভেতরের জগতে থাকতে ভালোবাসত। স্কুল কলেজের ব্যস্ত সময়ের মধ্যেও বই পড়া তার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় কাজ ছিল। প্রতিদিন বিকেলে সে শহরের পুরোনো লাইব্রেরিতে যেত এবং ঘন্টার পর ঘন্টা বইয়ের পাতায় ডুবে থাকত। বইয়ের গন্ধ আর নীরব পরিবেশ যেন তাকে অন্য এক জগতে নিয়ে যেত। সেই লাইব্রেরিতেই একদিন তার জীবনের সবচেয়ে অমলিন মুহূর্ত তৈরি হয় যেটা সে কোনোদিন ভুলতে পারবে না।
সেদিন আকাশ মেঘলা ছিল। হালকা বাতাস বইছিল চারপাশে। রিমা তখন এক নতুন উপন্যাস খুঁজছিল যা অনেকদিন ধরে পড়ার ইচ্ছে ছিল তার। কিন্তু তাকগুলো ঘেঁটে খুঁজেও সে বইটি পাচ্ছিল না। ঠিক তখনই এক অচেনা ছেলে পাশ থেকে হাত বাড়িয়ে বইটা নামিয়ে এনে তার দিকে বাড়িয়ে দিল। রিমা বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে রইল। ছেলেটি হাসিমুখে বলল তুমি এই বইটা খুঁজছিলে তাই না। রিমা একটু অবাক হয়ে হেসে বলল তুমি কীভাবে বুঝলে আমি তো কাউকে কিছু বলিনি। ছেলেটি মৃদু হেসে বলল কয়েকদিন ধরেই তোমাকে এই শেলফের কাছে দেখি বুঝে গেছি বইটা তোমার নজর কাড়বে। তার নাম আরাফাত।
সেই ছোট্ট কথোপকথন থেকেই শুরু হলো তাদের বন্ধুত্ব। প্রথমে তারা শুধু বইয়ের গল্প নিয়ে কথা বলত। রিমা জানল আরাফাতও বইয়ের ভীষণ ভক্ত এবং প্রায় প্রতিদিনই লাইব্রেরিতে আসে। কয়েকদিনের মধ্যেই দেখা করার সময়টা যেন দুজনের জন্য বিশেষ হয়ে উঠল। বইয়ের আড্ডা থেকে শুরু করে সিনেমা, গান, জীবনের ছোট ছোট গল্প—সবকিছু নিয়েই তাদের আলাপ চলতে লাগল। ধীরে ধীরে সেই বন্ধুত্বের ভেতর জন্ম নিল অন্যরকম অনুভূতি। দুজনেই বুঝতে পারল তাদের সম্পর্ক আর শুধু সাধারণ বন্ধুত্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই।
তাদের দিনগুলো ছিল হাসি আর আনন্দে ভরা। কখনো বিকেলের শেষ আলোয় শহরের ব্যস্ত রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে তারা ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখত। কখনো মেঘলা দুপুরে বইয়ের দোকানের কোণে চা খেতে খেতে নিজেদের ইচ্ছে আর কষ্টের কথা ভাগ করে নিত। সন্ধ্যার নরম হাওয়ায় পাশে বসে কাটানো মুহূর্তগুলো রিমার মনে চিরদিনের জন্য গেঁথে গেল। আরাফাতের ভেতরে ছিল এক অদ্ভুত শান্তি যা রিমাকে ভরসা দিত। সে অনুভব করত আরাফাতের কাছে থাকলেই পৃথিবীটা যেন অন্যরকম সুন্দর।
কিন্তু জীবনের গল্প সবসময় একরকম থাকে না। একদিন হঠাৎ আরাফাত রিমাকে বলল তার পরিবারের ভেতরে কিছু বড় সমস্যা চলছে। সেই সমস্যার সমাধান করতে হলে তাকে কিছুদিনের জন্য দূরে থাকতে হবে। আরাফাতের কণ্ঠে ছিল গম্ভীরতা। সে বলল রিমা আমি জানি এটা তোমার কাছে কঠিন শোনাতে পারে কিন্তু আমি চাই কিছু সময় নিজের সঙ্গে লড়াই করতে। রিমা কয়েক মুহূর্ত চুপ করে রইল। চোখের দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বলল আমি তোমার কথায় বিশ্বাস করি। তুমি যা করছো নিশ্চয়ই কোনো গুরুত্বপূর্ণ কারণ আছে। শুধু এটুকু মনে রেখো তুমি যেখানেই থাকো আমার মনে তুমি সবসময় থাকবে। সময় যতই বদলাক আমি তোমাকে ভালোবাসা থেকে ফিরতে পারব না। সেই রাতে রিমা এক দীর্ঘ চিঠি লিখল। সে লিখল তুমি আমার জীবনের সবচেয়ে আপন মানুষ। তুমি যেখানেই যাও আমি তোমাকে ভালোবাসব। দূরত্ব যতই হোক তুমি আমার মনে চিরদিন থাকবে। চিঠি লিখে রিমা তার মনের গভীর অনুভূতিগুলো আরাফাতের কাছে পাঠিয়ে দিল।
এরপর আরাফাত চলে গেল। রিমা পড়াশোনা আর কাজের ব্যস্ততায় নিজেকে গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করল। কিন্তু তার হৃদয়ের গভীরের শূন্যতা কখনো ভরল না। লাইব্রেরিতে একা বসলে মনে হতো পাশের চেয়ারে আরাফাত বসে বই পড়ছে। শহরের প্রতিটি রাস্তায় প্রতিটি আকাশে আরাফাতের ছায়া ভাসত। সে নিজেকে বোঝাত যে সময় সব ঠিক করে দেবে কিন্তু প্রথম ভালোবাসার গভীরতা তাকে বারবার কাঁদাতো। দিন যায় মাস যায়। রিমা বুঝতে পারল আরাফাত শুধু তার প্রেম নয় তার আত্মবিশ্বাসের উৎস ছিল। সে রিমাকে সাহস জুগিয়েছিল জীবনের অনেক কিছুর জন্য। তার চলে যাওয়ার পরও সেই শিক্ষা রিমাকে শক্তি দিয়েছিল। তবু মনের গভীরে এক অপূর্ণতা থেকে গেল। একদিন রাতে রিমা আবার একটি চিঠি লিখল।
প্রিয় আরাফাত, তুমি চলে যাওয়ার পর দিনগুলো কেমন যেন নিঃশব্দ হয়ে গেছে। আমি জানি তোমার সিদ্ধান্ত জরুরি ছিল। তবু তোমাকে না পেলে সবকিছু অসম্পূর্ণ লাগে। আমি তোমাকে দোষ দিই না। তোমার সুখ আর শান্তিই আমার জন্য সবচেয়ে বড়। চিঠি পাঠিয়ে রিমা আবার নিজের জীবনের পথে এগোতে লাগল। পড়াশোনা শেষ করে চাকরি নিল। নতুন কাজের দায়িত্ব নিল। সময়ের সাথে সাথে কষ্ট কিছুটা কমল কিন্তু ভালোবাসার সেই স্মৃতি মুছে গেল না। প্রতিটি আনন্দের দিনে প্রতিটি সফল মুহূর্তে তার মনে আরাফাতের কথা ভেসে উঠত।
এক বছর পরের এক দুপুরে রিমা শহরের এক ছোট ক্যাফেতে বসে ছিল। জানালার বাইরে বৃষ্টি টুপটাপ করে পড়ছিল। এক কাপ কফি নিয়ে সে জানালার দিকে তাকিয়ে ছিল। ঠিক তখন কেউ তার সামনে এসে দাঁড়াল। চেনা কণ্ঠে ডাক শোনা গেল রিমা। রিমা তাকিয়ে অবাক হয়ে গেল। সে আরাফাত। আগের মতোই শান্ত মুখ শুধু চোখে কিছুটা ক্লান্তির ছাপ। আরাফাত ধীরে ধীরে বলল আমি অনেক ভেবেছি। আমাদের মাঝে যে দূরত্ব ছিল সেটি দরকার ছিল হয়তো। কিন্তু তোমাকে আমি কখনো ভুলে থাকতে পারিনি। তুমি আমাকে শিখিয়েছ ভালোবাসা মানে শুধু কাছাকাছি থাকা নয় বরং একে অপরকে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে মনে করা।
রিমার চোখ ভিজে গেল। কাঁপা গলায় সে বলল তুমি আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময়ের সঙ্গী। আমাদের পথ হয়তো আলাদা কিন্তু তুমি আমার প্রথম ভালোবাসা এটা কখনো বদলাবে না। তারা কিছুক্ষণ চুপ করে একে অপরের দিকে তাকিয়ে রইল। বাইরে বৃষ্টির শব্দ ভেতরে অজস্র স্মৃতি। বিদায়ের আগে আরাফাত নরম কণ্ঠে বলল তুমি যেন সবসময় সুখে থাকো। যেখানে থাকি তোমার জন্য আমার প্রার্থনা থাকবে।
রিমা সেদিন বুঝল প্রথম ভালোবাসা কখনো শেষ হয় না। হয়তো সম্পর্ক বদলায় মানুষ দূরে যায় কিন্তু সেই অনুভূতির সৌন্দর্য মনের গভীরে থেকে যায়। জীবনের নতুন পথে হাঁটলেও প্রথম ভালোবাসার স্মৃতি হয়ে থাকে সবচেয়ে মধুর এক অধ্যায় যা সময়ের স্রোতেও মুছে যায় না। প্রথম ভালোবাসা যেন এক নিঃশব্দ সঙ্গী যে দূর থেকেও হৃদয়ের কোণে চিরদিন বেঁচে থাকে। রিমা জানত তার জীবন এগিয়ে যাবে নতুন স্বপ্ন আর নতুন পথের দিকে কিন্তু হৃদয়ের গভীরে সেই প্রথম ভালোবাসার নাম চিরকাল লেখা থাকবে অমলিন আলোয়।
জানিনা আপনাদের কাছে কেমন লাগলো আমার আজকের গল্পটি ? আপনাদের মতামত জানার অপেক্ষায় রইলাম।
আমার পরিচিতি
আমি মাকসুদা আক্তার। স্টিমিট প্লাটফর্মে আমি @maksudakawsar হিসাবে পরিচিত। ঢাকা হতে আমি আমার বাংলা ব্লগের সাথে যুক্ত আছি। আমি একজন গৃহিনী এবং চাকরিজীবী। তারপরও আমি ভালোবাসি আমার মাতৃভাষা বাংলায় নিজের মনের কথা গুলো আমার বাংলা ব্লগের প্লাটফর্মে শেয়ার করতে। আমি ভালোবাসি গান শুনতে এবং গাইতে। আমি অবসর সময়ে ভ্রমন করতে এবং সেই সাথে সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি নিজের ক্যামেরায় বন্দী করতে ও ভালোবাসি। মাঝে মাঝে নিজের মনের আবেগ দিয়ে দু চার লাইন কবিতা লিখতে কিন্তু আমার বেশ ভালোই লাগে। সর্বোপরি আমি ভালোবাসি আমার প্রাণপ্রিয় মাকে।
.gif)
VOTE @bangla.witness as witness
OR
SET @rme as your proxy


