শান্তির খোঁজে সিলেটে | সিলেট ভ্রমণ পর্ব - ২
হ্যালো গাইস, আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন সবাই? আমিও আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো আছি। লিখবো লিখবো করেও দুইদিন দেরি হয়ে গেলো! এটা আমার সিলেট ভ্রমণের পর্ব–২। এই পর্বে লিখব আমার সিলেটের দুইটা সবচেয়ে প্রিয় জায়গা—সাদা পাথর আর রাতারগুল সোয়্যাম্প ফরেস্ট নিয়ে।

আসলে ভেবেছিলাম এই পর্বেই পুরো সিলেট ভ্রমণের অভিজ্ঞতা একসাথে লিখে শেষ করে ফেলবো!
কিন্তু সিলেটের সাদা পাথর আর রাতারগুলের সৌন্দর্য এতটাই মুগ্ধকর যে এই এক ব্লগে লিখে শেষ করা সম্ভব না। সত্যি বলতে কি, একটা ব্লগ তো দূরের কথা—আলাদা দু’টা ব্লগ লিখলেও হয়তো পুরোটা ধরা যাবে না।
তাই ভাবছি এই দুই জায়গা নিয়ে আবার আলাদা ব্লগ লিখে ফেলব।
তাও শেষ করতে পারবো নাকি জানি না…
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই আমরা রওনা দিলাম সাদা পাথরের দিকে। আগের দিনই জেনেছিলাম সেখানে যেতে হলে গাড়ি ভাড়া করতে হবে। তাই সকালে নাস্তা খেয়ে একটা নৌকা আর সিএনজি ঠিক করে রওনা দিলাম।
সিলেট শহর থেকে একটু বের হলেই রাস্তার দুই পাশে যখন পাহাড়গুলো দেখা শুরু হলো, মনে হচ্ছিল—প্রকৃতি যেন ধীরে ধীরে তার দরজা খুলে দিচ্ছে। বাতাস ছিল গরম, কিন্তু তবুও একটা আলাদা ঠান্ডা অনুভূতি হচ্ছিল। পাহাড়ের কাছে গেলে এমনই হয় বোধহয়—মনের ভেতর হালকা একটা শান্তি নেমে আসে।
সাদা পাথরে পৌঁছে প্রথম যে জিনিসটা চোখে পড়লো, সেটা হলো অসাধারণ নীল–সবুজ পানি। পানিটা এতটাই স্বচ্ছ যে নিচে থাকা পাথরগুলো পর্যন্ত পরিষ্কার দেখা যায়। এমন পানিতে নৌকা ভাসিয়ে ভেতরে ভেতরে একটা অদ্ভুত সুখ অনুভব হয়। চারদিকে সাদা পাথরের স্তূপ, মাঝখানে নৌকার ঢেউ—সব মিলিয়ে মনে হচ্ছিল আমি যেন বাংলাদেশে না, কোনো বিদেশি জায়গায় আছি।
আমরা নৌকা ভাড়া করে ধীরে ধীরে ভেতরের দিকে এগোতে লাগলাম। নৌকা যখন পানি কেটে এগোচ্ছিল, তখন পানির ওপরের সূর্যের আলো একেবারে কাঁচের মতো চিকচিক করছিল। পায়ের নিচে পাথরের শব্দ, চারপাশে নীরব পরিবেশ—অসাধারণ অনুভূতি।
পানি এতটাই স্বচ্ছ যে ভুলে গিয়ে কয়েকবার মনে হলো পানিতে লাফ দেই । কিন্তু বন্ধুরা ভয় দেখালো—“দেখিস, কিন্তু সাঁতার না জানলে বিপদ আছে!” তাই পানি ছুঁয়ে থাকা আর নৌকার প্রান্তে বসে থাকা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকলাম।
সাদা পাথর জায়গাটা শুধু সুন্দর নয়, এটা মনে গভীর একটা ছাপ ফেলে যায়। পাহাড়ের পাদদেশে দাঁড়িয়ে থাকা, সামনের স্বচ্ছ পানির ধারা, আর দূরে কুয়াশা মাখা পাহাড়—এমন দৃশ্য মনে রাখার মতোই।
সাদা পাথর থেকে ফিরে একটু বিশ্রাম নিয়ে আমরা বের হলাম রাতারগুল এর উদ্দেশ্যে। সিলেট ভ্রমণে রাতারগুল না গেলে যাত্রাই অসম্পূর্ণ থেকে যায়।
রাতারগুলে পৌঁছে প্রথমেই চোখে পড়লো ঘন সবুজের রাজ্য। পানি, গাছ আর অসাধারণ নিস্তব্ধতা—এটা এমনই এক অনুভূতি যা ভাষায় বোঝানো খুব কঠিন। নৌকায় চড়ে যখন বনের ভেতর ঢুকলাম, সত্যি মনে হচ্ছিল আমি যেন কোনো রহস্যময় গল্পের ভেতরে ঢুকে পড়েছি।

পানির ওপর ভাসমান গাছগুলো মাথার ওপরে ছাতা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, মাঝে মাঝে পাতার ফাঁক দিয়ে সূর্যের আলো নিচে পড়ছে—এক অসাধারণ দৃশ্য! পানির রং ছিল গভীর সবুজ, আর চারপাশে একদম পাখির ডাক ছাড়া কোনো শব্দ নেই।
নৌকার মাঝি বলছিলেন—বর্ষাকালে নাকি রাতারগুল আরও সুন্দর হয়ে ওঠে। তখন নাকি পুরো বনটাই ডুবে যায় পানির নিচে। পানির গভীরতা বাড়লে নৌকায় করে আরও ভেতরে থাকা ছোট ছোট চ্যানেলে যাওয়া যায়। শুনে মনে মনে ভাবলাম—"বর্ষাকালেও কি একবার আসবো?"
রাতারগুলের সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে এখানকার পরিবেশের নীরবতা। কোনো গাড়ির শব্দ নেই, নেই মানুষের ভিড়। শুধু পানি, গাছ, আর হালকা ঠান্ডা বাতাস। নৌকায় বসে থাকতে থাকতে মনে হচ্ছিল—এটাই আমার সবচেয়ে শান্ত মুহূর্ত।

কখনো কখনো নৌকা থামিয়ে আমরা চারপাশ তাকিয়ে দেখছিলাম। মনে হচ্ছিল সময় থেমে গেছে। এমন প্রকৃতি হয়তো শুধু চোখেই নয়, হৃদয়েও জমে থাকে।
যদিও ভেবেছিলাম এই দ্বিতীয় পর্বেই সিলেট ভ্রমণ শেষ করে ফেলবো,
কিন্তু সাদা পাথর আর রাতারগুলের সৌন্দর্য এতটাই গভীর যে—
একটু লিখতেই মনে হলো, না… এগুলো আলাদা ব্লগ deserve করে!
তাই ভাবছি,
- একটা ব্লগ হবে পুরো সাদা পাথর নিয়ে,
- আরেকটা পুরো রাতারগুল নিয়ে।
তাও লিখে শেষ করতে পারবো নাকি সন্দেহ আছে, কারণ এই দুই জায়গার সৌন্দর্য শব্দে বর্ণনা করা কঠিন।
আপনারা পাশে থাকলে লিখে শেষ করার চেষ্টা করবই।
এই ছিলো সিলেট ভ্রমণের পর্ব–২।
পরবর্তী ব্লগগুলোতে আরও বিস্তারিত লিখবো।
থাকুন সঙ্গে! 😊💚
আমার সম্পর্কে
স্টিমিটে আমি আমার শখ, অভিজ্ঞতা ও আগ্রহের বিষয়গুলো শেয়ার করি। আশা করি, আমার এই ভালোলাগার বিষয়গুলো আপনাদেরও অনুপ্রাণিত করবে।














Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
🎉 Congratulations!
Your post has been upvoted by the SteemX Team! 🚀
SteemX is a modern, user-friendly and powerful platform built for the Steem community.
🔗 Visit us: www.steemx.org
✅ Support our work — Vote for our witness: bountyking5