মর্মান্তিক ঘটনা😪

in আমার বাংলা ব্লগlast year

হ্যালো,

আমার বাংলা ব্লগ বন্ধুরা কেমন আছেন সবাই। আশা করছি ভালো আছেন। আমিও ভালো আছি আপনাদের আশীর্বাদ ও সৃষ্টিকর্তার কৃপায়।
আমি @shapladatta বাংলাদেশ থেকে। আমার বাংলা ব্লগের একজন ভেরিফাই নিয়মিত ইউজার। আমি গাইবান্ধা জেলা থেকে আপনাদের সঙ্গে যুক্ত আছি।

InShot_20241109_150614641.jpg

আমাদের জীবনে কখন কার সাথে মর্মান্তিক দূর্ঘটনা ঘটবে তা কেউ বলতে পারে না।সৃষ্টিকর্তা চাইলে ঘরে বাইরে যে কোন সময় আমাদের কে কাঙ্খিত দূর্ঘটনায় পতিত করতে পারে।কিছু কিছু দূর্ঘটনা মৃত্যর কারণ হয়ে যায় এবং কোন কোন ব্যাক্তির মৃত্যুর সাথে সাথে তার পুরা পরিবারের মৃত্যু হয়ে যায় বেঁচে থেকেও। পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যাক্তির মৃত্যু হলে সাথে পুরা পরিবারের মৃত্যু হয়।

সেইরকম একটি সত্যি বাস্তব ঘটনা আজকে আপনাদের সাথে ভাগ করে নেবো।
আমাদের গ্রামের পাশের গ্রামের একটি ছেলে নাম তার সাইফুল। ছাইফুলেরা কয় ভাই বোন তা জানি না।সাইফুল রাজমিস্ত্রী শ্রমিকের কাজ করতো। আগে গ্রামেই কাজ করতো মাঝে মাঝে ঢাকাশহর যেতো কাজ করতে তবে বর্তমান ঢাকায় কাজ করে রাজমিস্ত্রীর শ্রমিক হিসেবে।

সাইফুলকে আমি চিনি আমার বাড়িতে গত বছর চুলা বানাতে এসেছিলো।গ্রামের সব বাড়িতে গ্যাসের চুলার পাশাপাশি মাটির চুলা কিংবা সিমেন্টের বা মাটির চুলা থাকে।আমরা ও একটি সিমেন্ট দিয়ে চুলা গত বছর বানিয়ে নিয়েছিলাম আর তখন মিস্ত্রির হেলপার হিসেবে সাইফুল ছিলো।

অনেক হাস্যজ্বল পরিশ্রমী একটি ছেলে।আমাদের গ্রামের এক মূল রাজমিস্ত্রীর হেলপার হিসেবে থাকতো এবং রাজমিস্ত্রীর মাকে নিজের মায়ের মতো ভালোবাসতো ও সব কথা শুনতো।

সাইফুল বিয়ে করেছে দু বছর হবে।বউকে অনেক ভালোবাসে।ছাইফুলের বউয়ের কোল আলো করে আসে একটি ফুটফুটে পুত্র সন্তান। মুসলিমদের ধর্মীয় আচার অনুয়ায়ী বাচ্চা হওয়ার পর আকিকা করতে হয়। আকিকা করার মতো সচ্ছল পরিবার নয় সাইফুলের।দিন এনে দিন খায় ছাইফুল।দিন এনে দিন খায় কিন্তুু পরিবারে ভালোবাসার কমতি নেই।

যতোই অভাব হোক না কেন কে না চায় তার সন্তানের ধর্মের আচার না মানতে আর সেজন্য সাইফুল ঠিক করে সে ঢাকায় গিয়ে কিছু দিন থাকবে আর কিছু টাকা ইনকাম করে বাড়িতে চলে আসবে ও ছেলের আকিকা করবো।ঢাকায় গিয়ে বহুতল ভবনে রাজমিস্ত্রীর কাজ নেয় শ্রেমিক হিসেবে।

বেশ কয়েকদিন কাজ করে। সাইফুল কোমড়ে দড়ি বেঁধে সাত তলা ভবনে রাজমিস্ত্রীর কাজ করতো আর সেই কাজ করা অবস্থায় সে দড়ি ছিরে নিচে পড়ে যায় এবং মারা যায়।

সাইফুলের মৃত্যর খবর বাড়িতে আসলে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়।এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া।দলে দলে সাইফুলের বাড়িতে যেতে থাকে সবাই বিস্তারিত জানতে ও পরিবারের সদস্যদের শান্তনা দিতে।লাশ আসবে আসবে করে ময়নাতদন্তের তিনদিন পর ঢাকা থেকে বাড়িতে আনে।

অবুঝ সাত মাসের শিশুকে বাবার লাশের পাশে নিয়ে যায় এবং মুখ খুলে দেখায়। বাচ্চাটি নাকি বাবার মুখ ছুয়ে দেখছিলো আর তখন উপস্থিত কোন মানুষ চোখের জল ধরে রাখতে পারেনি।

বউ না কি বার বার বলছিলো আমার বাবু হওয়ার ওর চেহারা খারাপ হওয়াতে সে বলতো ঢাকায় গিয়ে কিছু টাকা নিয়ে আসি মাছ মাংস ডিম খেলে শরীর ভালো হবে।

মা বলছিলো আমার ছেলে আমাকে এতোটাই ভালোবাসতো যে কখনো যদি শ্বশুড় বাড়িতে কোন দাওয়াতে যেতো এবং মিষ্টি কিনতো এক কেজি সে বাড়িতে মিষ্টি নিয়ে এসে মিষ্টির প্যাকেট খুলে দুটো মিষ্টি নিজ হাতে আমাকে খাইয়ে দিতেো এবং বলতো মা মনে কিছু করো না শ্বশুড়বাড়িতে দাওয়াত তাই এককেজি নিয়ে এসেছি পরে তোমাকে এনে খাওয়াবো।সাইফুলের মা এসব বিলাপ করে করে কান্না করতো।

ঘটনাটি শোনার পর থেকে খুব খারাপ লাগছে।সৃষ্টি কর্তা কেন এতো কম আয়ু দিয়ে পাঠায়।সাইফুলের বাচ্চা টি এতিম হয়ে গেলো।সাইফুলের বউ হয়তো সারাজিবন তার স্বামীর ভালোবাসা মনে রাখবে। এতো কম বয়স সে হয়তো শোক কাটিয়ে উঠে কোন এক সময় নতুন সংসার পাতবে। প্রথম স্বামীর ভালোবাসা মনে রেখে সংসার করতে হবে কিন্তুু বাচ্চা টা একদম এতিম হয়ে যাবে।

এতিম বাচ্চা টি বড়ো হয়ে একদিন শুনবে তার বাবার করুন মৃতু্র কাহিনি। নিজের প্রতি হয়তো ঘৃনা জন্মনেবে কারণ তার আকিকার টাকা ইনকাম করতে গিয়ে বাবা মারা গেছে।হয়তো বা সৃষ্টি কর্তার কাছে প্রশ্ন ছুড়বে কেন গরীব করে দিলা আর যদি দারিদ্র্যতাই দিলে তবে কেন বাবাকে কেড়ে নিলা আমার জীবন থেকে।সাইফুলের বাচ্চার এই প্রশ্নের উত্তর কি আছে কোথাও।

আজকের মতো এখানেই শেষ করছি আবারও দেখা হবে অন্যকোন পোস্টের মাধ্যমে সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ ও নিরাপদ থাকুন।

টাটা

পোস্টবিবরণ
পোস্ট তৈরি@shapladatta
শ্রেণীজেনারেল রাইটিং
ডিভাইসOppoA95
লোকেশনবাংলাদেশ

photo_2021-06-30_13-14-56.jpg

IMG_20230826_182241.jpg

আমি হৈমন্তী দত্ত। আমার স্টিমিট আইডিরঃshapladatta. জাতীয়তাঃ বাংলাদেশী। শখঃবাগান করাও নিরবে গান শোনা,শপিং করা। ভালো লাগে নীল দিগন্তে কিংবা জোস্না স্নাত খোলা আকাশের নিচে বসে থাকতে।কেউ কটূক্তি করলে হাসি মুখে উড়িয়ে দেই গায়ে মাখি না।পিছু লোকে কিছু বলে এই কথাটি বিশ্বাস করি ও সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি।বিপদকে ও অসুস্থতার সাথে মোকাবেলা করার সাহস রাখি সহজে ভেঙ্গে পরি না। সবাইকে নিয়ে ভালো থাকার চেষ্টা করি আর মনে প্রাণে বিশ্বাস করি পর হিংসা আপন ক্ষয়। ধন্যবাদ ।

A5tMjLhTTnj4UJ3Q17DFR9PmiB5HnomwsPZ1BrfGqKbjddgXFQSs49C4STfzSVsuC3FFbePnB7C4GwVRpxUB36KEVxnuiA7vu67jQLLSEq12SJV1etMVkHVQBGVm1AfT2S916muAvY3e7MD1QYJxHDFjsxQDqXN3pTeN2wYBz7e62LRaU5P1fzAajXC55fSNAVZp1Z3Jsjpc4.gif



IMG_20241108_234125.jpg

IMG_20241108_234114.png

Sort:  
 last year 

আসলে এমন মর্মান্তিক ঘটনাগুলো খুবই দুঃখজনক। প্রত্যেক স্বামী রাস্তায় নিজের স্ত্রীর মুখে হাসি ফুটানোর জন্য কঠোর পরিশ্রম করার। যে যেভাবে সুবিধা মনে করে সেভাবেই চেষ্টা করতে থাকে। সাইফুল তার স্ত্রীর সন্তানের ভালোর জন্যই এই কাজে গিয়েছিলেন কিন্তু সেখানে তার মৃত্যু। কখন কার মৃত্যু কিভাবে হয় কেউ জানে না তবুও মৃত্যুর ভয় মাথায় রাখতে হবে।

 last year 

ঠিক বলেছেন ভাইয়া।ধন্যবাদ মন্তব্য করার জন্য।

 last year 

বড্ড মর্মান্তিক৷ উফফ জীবন যে কি সহজেই ফুরিয়ে যায়৷ সাইফুলের পরিবারের জন্য খুব মনখারাপ করছে৷ সাইফুলও মৃত্যুর মুহুর্তে বাড়ির লোকের কথা ভেবেছিল হয়ত। নেওয়া যায় না৷ খুব কষ্টদায়ক৷

 last year 

সত্যি খুব কষ্টদায়ক।

 last year 

ঘটনাটি পড়ে খুবই খারাপ লাগলো। আসলে বিপদ কাকে কোথায় নিয়ে যায় সেটা একমাত্র সৃষ্টি কর্তা জানেন। যার মৃত্যু যেখানে লেখা থাকে তাকে সেখানে যেতে হবে। দিনে এনে দিনে খাই সাইফুল। বাচ্চার আকিকা দেওয়ার জন্য অবশেষে সেই শহরে পাড়ি দিলেন। সেই পাড়ি দেওয়া থেকে তার আর ফেরা হলো না গ্রামে। অবশেষে তার লাশ আসলো বাড়িতে। ছোট বাচ্চাটা কি করে বড় হবে বাবা ছাড়া সেটাই হচ্ছে কষ্টের বিষয়।

 last year 

ঠিক বলেছেন আপু বাচ্চাটি কি করে বাবার আদর ছারা বড়ো হবে।ধন্যবাদ পোস্ট টি ভাগ করে নেয়ার জন্য।

 last year 

বাচ্চার ভালোর জন্য শহরে গেল আর সেই শহরই জীবন কেড়ে নিল। আসলে যারা এরকম ঝুলন্ত অবস্থায় রাজমিস্ত্রির কাজ করে তাদের দেখে খুবই ভয় লাগে আমার। এরকম দুর্ঘটনা যেকোন সময় ঘটতে পারে। সাইফুল এরকম দুর্ঘটনার স্বীকার হয়ে মুহূর্তের মধ্যে তার পরিবারের সব এলোমেলো হয়ে গেল। এগুলো আসলেই মানা যায় না।

 last year 

ঠিক বলেছেন ভাইয়া বাচ্চার ভালোর জন্য শহরে গিয়ে লাশ হয়ে বাড়িতে ফিরলো।