গ্রামের সকালের কোমলতা!
কেমন আছেন সবাই? আশা করছি সবাই ভালো ও সুস্থ্য আছেন। তো সুস্থ্য থাকাটাই সবচেয়ে গুুরুত্বপূর্ণ। তো দেখতে দেখতে শীতকাল চলে এলো। শহরে শীতের আমেজ দেখা যাচ্ছে ইতোমধ্যেই। তবে গ্রামে আরও কয়েকদিন আগেই শীতের আমেজটা শুরু হয়েছে। গ্রামে শীতকালের অনুভূতিটা অন্যরকম হয়। গ্রামে দেখবেন সকাল সকাল পরিবেশটা অনেক শান্ত থাকে। কেউ জমিতে কাজ করছে, কেউবা ধান কাটছে। কুয়াশার কারণে দূরের অনেক কিছুই দেখা যায় না। শীতের সকালে টং এর দোকানগুলোতে ভীড় জমে। গ্রামের মুরব্বিরা সেখানে বসে আড্ডা দেয় চা খেতে খেতে। আর হাজার রকমের কথা তারা শেয়ার করে। আবার আপনি দেখবেন গ্রামের কোমলমতি শিশুরা মক্তব পড়তে বেরিয়ে পরেছে। সকাল সকাল ঠান্ডার মধ্যেই মক্তব পড়তে বেরিয়ে পরে গ্রামের শিশুরা! সকালের কুয়াশার মাঝে তারা হারিয়ে যায়।
সকাল সকাল পাখিদের কিচিরমিচির ও তেমন শোনা যায় না। কারণে প্রচন্ড শীতে পাখিরাও তাদের বাসা থেকে বের হয় না। সময় যত যেতে থাকে পরিবেশ ততই সোনালী হতে থাকে সূর্যের আলোয়! আর তখন রাস্তার ধারে এসে মানুষের ভীড় জমে! সূর্যের একটু তাপ শরীরে নেয়ার জন্য! বিশেষ করে বৃদ্ধ ও শিশুরা সকালের রোদ পোহাতে চলে আসে। গ্রামের চাচীরা সকালে উঠেই বাড়ির উঠোন ঝাড়ু দিয়ে দেয়! বাড়িটা পরিষ্কার করে ফেলে। কেউবা চুলায় আগুন দিচ্ছে সকালের রান্না শুরু করে দেয়ার জন্য। এখানে শহরের জীবনের মতো এতো ব্যস্ততা নেই। গ্রামের জীবনটা অনেকটা ধীর! কোনো টাইম টেবল লাগেনা কাজের। যে কাজগুলো সকালে করার দরকার সেগুলো সকালেই করে ফেলে মানুষজন। দুপুরের জন্য কোনো কাজ ফেলে রাখে না। আবার দেখবেন বিকাল হলেই কাধে ব্যাগ নিয়ে চলে যায় বাজারে। সন্ধ্যার আগেই ব্যাগভর্তি বাজার নিয়ে ঘরে ফেরে গ্রামের মানুষ!
গ্রামের সকাল মানেই আলাদা এক নস্টালজিয়া। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই চোখে পরে ধানের ডগায় জমে থাকা শিশির। বেলা যত বাড়তে থাকে শিশিরগুলো যেন হারিয়ে যেতে থাকে। মানুষের চলাচলও শুরু হয়! শহরে শীত আসলেও খুব কাছ থেকে শিশির ভেজা ধানক্ষেত অথবা ঘাস দেখা হয় না! শহরের সকাল মানেই একটা প্রতিযোগিতার মতো। সবাই সকাল সকাল চলে যায় যার যার কর্মস্থলে। কারো দিকে তাকানোর সময় তাদের নেই! গ্রামে থাকতে সকাল সকাল মা ঘুম থেকে ডেকে তুলতো। সকালে হাটাঁচলা করা ভালো। বিশেষ করে খালি পায়ে হাটাঁ। আর সেটাই করতাম। তারপর মায়ের হাতের গরম গরম পিঠা। স্পেশালি ম্যারা পিঠা ও ভাপা পিঠা! গরম গরম পিঠা খাওয়ার স্বাদ অন্যরকম। এ ব্যাপারগুলো ছিল আসলে দারুণ অনুভূতির।
তবে এখন কিন্তু গ্রামে বেশি থাকা হয় না। জীবন ও জীবিকার তাগিদে গ্রাম থেকেও অনেকদূরে থাকতে হয়। তবে গ্রামের সেই সকালের নিস্তব্ধতা, ঘাসের উপর জমে থাকা শিশির জানিয়ে দেয় বিলাসিতার জন্য এতো কিছুর প্রয়োজন নেই! প্রকৃতির সহজ সরল রূপের মাঝে নিজেকে মেলে ধরতে পারলেই শান্তি পাওয়া যায়। গ্রামের সেই সকালের মুহুর্তগুলো আজও মনে শান্তি এনে দেয়। আসলে জীবনে সুখের জন্য এতোকিছুরও দরকার হয় না! একটা সময় পরে এসে বুঝা যায়, শান্তিই আসলে জীবনের বিলাসিতা।
ধন্যবাদ সবাইকে
আমি কে?
আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। বর্তমানে ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর উপর বিএসসি করছি ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যলয় (ডুয়েট) থেকে । পাশাপাশি লেখালেখি করে আসছি গত চার বছর ধরে। ভালো লাগার জায়গা হলো নিজের অনুভূতি শেয়ার করা, আর সেটা আমার বাংলা ব্লগের মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছে। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,কবিতা লেখা,গল্প লেখা ,রিভিউ,ডাই এবং আর্ট করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।



