✅ “কেমোথেরাপি কীভাবে কার্যকর হয়?”
কেমোথেরাপি কীভাবে কাজ করে? — নতুনভাবে ব্যাখ্যা
কেমোথেরাপি হলো এক ধরনের ক্যান্সার চিকিৎসা, যা রক্তের মাধ্যমে পুরো দেহে ছড়িয়ে কাজ করে। এর মূল লক্ষ্য হলো ক্যান্সার কোষের দ্রুত ও নিয়ন্ত্রণহীন বিভাজন থামিয়ে সেগুলোকে ধ্বংস করা।
ক্যান্সার কোষের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো দ্রুত বংশবৃদ্ধি করা। তাই কেমোথেরাপির ওষুধ কোষবিভাজনের বিভিন্ন ধাপে হস্তক্ষেপ করে এই বৃদ্ধি ব্যাহত করে।
কেমোথেরাপির প্রধান কাজের পদ্ধতি
কেমোথেরাপির ওষুধ বিভিন্ন ধরনের হলেও, সবগুলোর লক্ষ্য একই—কোষকে বিভাজন থেকে বিরত রেখে মৃত্যু ঘটানো। সাধারণ কাজের পদ্ধতিগুলো হলো:
১. DNA ক্ষতিগ্রস্ত করা — কোষকে বিভাজনে অক্ষম করা
কিছু ওষুধ সরাসরি ক্যান্সার কোষের DNA আক্রমণ করে। কোষ বিভাজনের চেষ্টা করলে দেখে যে DNA এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত যে তা কপি করা সম্ভব নয়। ফলে কোষ স্বয়ংক্রিয়ভাবে মৃত্যুর (apoptosis) দিকে যায়।
২. DNA তৈরি হওয়া বন্ধ করে দেওয়া
এই ধরনের ওষুধ “ভুল উপাদান” হিসেবে DNA–র মাঝে ঢুকে পড়ে। বিভাজনের আগে DNA কপি করতে হয়, কিন্তু নকল উপাদান ঢুকে গেলে DNA সংশ্লেষণ মাঝপথে থেমে যায়। ফলে কোষ পরবর্তী ধাপে যেতে পারে না।
৩. মাইটোসিস বা কোষবিভাজন ব্যাহত করা
আরেক ধরনের ওষুধ কোষবিভাজনের সময় প্রয়োজনীয় স্পিন্ডল ফাইবারকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। স্পিন্ডল ফাইবারই ক্রোমোজোম টেনে আলাদা করে। এটি ভেঙে গেলে কোষ আর বিভাজন সম্পন্ন করতে পারে না এবং শেষ পর্যন্ত মারা যায়।
কেন কেমোথেরাপিতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়?
এটি বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেমোথেরাপি “কোষ ধ্বংসকারী” ওষুধ হলেও, তা সবসময় ক্যান্সার কোষ ও সুস্থ কোষকে আলাদা করতে পারে না।
আমাদের দেহে এমন কিছু সুস্থ কোষ আছে যেগুলোও দ্রুত বিভাজন করে; এ কারণেই এগুলোও কেমোথেরাপির আঘাত পায়:
চুলের ফলিকল → চুল পড়ে যায়
বোন ম্যারো (রক্তকোষ তৈরি করে) →
লোহিত রক্তকণিকা কমে গেলে: ক্লান্তি, অ্যানিমিয়া
শ্বেত রক্তকণিকা কমে গেলে: সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে
প্লেটলেট কমে গেলে: রক্তপাত বা সহজে দাগ পড়া
মুখ, পাকস্থলী, অন্ত্রের কোষ → মুখে ঘা, বমি, বমিভাব, ডায়রিয়া
প্রজনন কোষ → সন্তান ধারণে সমস্যা হতে পারে
বর্তমান চিকিৎসায় অনেক সহায়ক ওষুধ রয়েছে, যা বমি, সংক্রমণ বা অন্যান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমাতে অত্যন্ত কার্যকর।
কেমোথেরাপির বিভিন্ন উদ্দেশ্য
কেমোথেরাপি সবসময় ক্যান্সার পুরোপুরি সারানোর জন্য ব্যবহার করা হয় না। লক্ষ্য নির্ভর করে ক্যান্সারের ধরন ও অবস্থার ওপর:
নিরাময়মূলক (Curative): সব ক্যান্সার কোষ সরিয়ে রোগ সম্পূর্ণ নিরাময় করা।
নিয়ন্ত্রণমূলক (Control): পুরোপুরি সারানো সম্ভব না হলে টিউমার ছোট করা বা বাড়তে না দেওয়া।
উপশমমূলক (Palliative): টিউমারের চাপ, ব্যথা বা অস্বস্তি কমানো।
অ্যাডজুভ্যান্ট (সার্জারির পর): বাকি লুকায়িত ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করে পুনরাবৃত্তির ঝুঁকি কমানো।
নিও-অ্যাডজুভ্যান্ট (সার্জারির আগে): বড় টিউমার ছোট করে শল্যচিকিৎসা সহজ করা।
কেমোথেরাপি কীভাবে দেওয়া হয়
সাধারণত কেমোথেরাপি দেওয়া হয়—
শিরায় ইনজেকশন (IV) — সবচেয়ে প্রচলিত
মুখে খাওয়ার ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল
কম প্রচলিত: পেশিতে ইনজেকশন, ত্বকের নিচে ইনজেকশন বা দেহের নির্দিষ্ট স্থানে ওষুধ প্রবেশ করানো
কেমোথেরাপির ভবিষ্যৎ: আরও নির্ভুল চিকিৎসার দিকে
যদিও কেমোথেরাপি এখনও অনেক ক্যান্সারের প্রধান চিকিৎসা, তা খুব “নির্দিষ্ট লক্ষ্যভিত্তিক” নয়। আধুনিক চিকিৎসা এখন আরও সূক্ষ্ম ও বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতির দিকে অগ্রসর হচ্ছে—
টার্গেটেড থেরাপি: ক্যান্সার কোষের নির্দিষ্ট জিন বা প্রোটিনকে লক্ষ্য করে কাজ করে, ফলে নির্ভুলতা বেশি ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম।
ইমিউনোথেরাপি: শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে ক্যান্সার কোষ শনাক্ত ও ধ্বংস করতে সাহায্য করে।
সংক্ষেপে
কেমোথেরাপি মূলত দ্রুত বিভাজনশীল কোষগুলোকে লক্ষ্য করে এবং সেগুলোকে ধ্বংস করে। এজন্য এটি ক্যান্সার চিকিৎসার একটি কার্যকর পদ্ধতি, তবে সুস্থ কোষও আঘাত পাওয়ায় বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে এখন আরও সুনির্দিষ্ট ও কম ক্ষতিকর চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যাপকভাবে উন্নত হচ্ছে।