শৈশবের স্মৃতি- শৈশবে চোর দেখে ভয় পাওয়ার দৃশ্য
আসসালামু আলাইকুম
কেমন আছেন আমার প্রিয় ও সহযাত্রী সকল ভাই ও বোনেরা। আশা করি সবাই অনেক ভালো আছেন।আজ আবারও হাজির হয়ে গেলাম আপনাদের সবার অতি নিকটে। ফেলে আশা অনেক স্মৃতির মাঝ থেকে কিছু স্মৃতি নিয়ে। আমাদের চলার পথে জীবনে সুখ দুঃখ কতো স্মৃতি জড়িয়ে আছে।সেই শৈশব থেকে শুরু করে মৃতুর আগ পর্যন্ত স্মৃতিগুলো যেন চোখে ও মনের মনি কোঠায় ভেসে বেড়ায়। আর তার মধ্যে জীবনে এমন অনেক ঘটনা থাকে যা কখনও ভোলা যায় না। যাইহোক আজ কয়েকদিন ধরে দেশের অনেক জায়গায় প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। আর এই বৃষ্টি দেখে আমার ফেলে আসা দিনগুলোর মধ্যে বৃষ্টিকে নিয়ে অনেক স্মৃতি মনে পরে গেল। আসলে বৃষ্টিকে ঘিরে আমাদের সবার অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। আর সেই থেকে আমারও কিছু স্মৃতি আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চলে এলাম। তাহলে চলুন পড়ে আসি আজ আমার শৈশবের বৃষ্টির পানি খাওয়া ও সংরক্ষন করার কিছু অনুভূতি।

প্রতিটি মানুষের জীবনে শৈশব হলো এক অনন্য সময়, এক সত্যিকারের স্বর্ণযুগ। আমরা যত বড়ই হই না কেন, আমাদের শৈশবকে কখনও ভুলতে পারি না। জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে, প্রতিটি সুখ-দুঃখের মুহূর্তে শৈশব যেন ফিরে আসে মধুর স্মৃতির পরশ নিয়ে। কখনও মনে হয়, যদি আবার সেই দিনগুলোয় ফিরে যাওয়া যেত, যেখানে ছিল নিঃস্বার্থ হাসি, খেলাধুলা আর নির্ভেজাল আনন্দে ভরা দিনরাত্রি। কিন্তু সময়ের টানে, জীবনের বাস্তবতায় আমাদের সবাইকেই ফিরে আসতে হয় বর্তমানে। তবুও হৃদয়ের এক কোণে শৈশবের আলো, সেই নির্ভার সময়গুলোর স্মৃতি আজও জ্বলজ্বল করে। আজ আমি আমার জীবনের এমনই এক স্মৃতি ভাগ করে নিতে চাই, যেখানে ভয়, সাহস আর শিশুসুলভ কৌতূহল মিলেমিশে এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা তৈরি করেছিল।
আমাদের পরিবার তখন সরকারি কোয়ার্টারে থাকত। কোয়ার্টারের জীবন ছিল অনেকটা বড় পরিবারের মতো, যেখানে প্রতিটি বাসা আলাদা হলেও সবাই একে অপরের সঙ্গে মিশে যেতাম। সুখে দুঃখে, হাসি আনন্দে সবাই মিলেমিশে থাকত। পাশের বাসায় থাকতেন এক পরিবার, যাদের গ্রামের বাড়ি ছিল বেশ দূরে। তারা প্রতি শুক্রবার গ্রামের বাড়িতে যেতেন এবং বাসার চাবি দিয়ে যেতেন এক বিশ্বাসযোগ্য পরিচিতের কাছে। তখনকার সেই কোয়ার্টার ছিল আমাদের মতো শিশুদের জন্য এক বিশাল খেলার মাঠ। রাস্তা, উঠান, সিঁড়ি, গাছতলা—সব জায়গাই ছিল আমাদের খেলার উপযুক্ত জায়গা। বিদ্যুৎ চলে যাওয়া তখন খুব সাধারণ ব্যাপার ছিল, বিশেষ করে গ্রীষ্মের রাতে। যখনই হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যেত, আমরা সবাই বাইরে বেরিয়ে আসতাম, কেউ গল্প করত, কেউ খেলত, কেউবা আকাশের তারা গুনত। চারপাশ অন্ধকারে ঢেকে যেত, বাতাসে আসত এক অদ্ভুত প্রশান্তি, যা আজকের শহরে পাওয়া যায় না।
সেদিনও এমনই এক রাত ছিল। প্রচণ্ড গরমের পর হঠাৎ করে বিদ্যুৎ চলে গেল। ঘরের ভেতর টিকেই থাকা যাচ্ছিল না, তাই আমরা সবাই বাইরে বেরিয়ে এলাম। চারপাশে শিশুরা হাসছে, দৌড়াচ্ছে, বড়রা গল্পে মগ্ন—সব মিলিয়ে এক প্রাণবন্ত পরিবেশ। আমি তখনও ছোট, কিন্তু স্বভাব ছিল কৌতূহলী। অন্ধকারে ভয় লাগত না, বরং মনে হতো এটা যেন এক রোমাঞ্চকর অভিযান। খেলা শেষে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামছিলাম, ভাবছিলাম অন্যদের সঙ্গে গিয়ে খেলব। ঠিক তখনই চোখে পড়ল সিঁড়ির পাশে এক লম্বা মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। চারপাশে অন্ধকার, কেবল দূরের কোনো বাসা থেকে আসা ক্ষীণ আলোয় তার অবয়বটা দেখা যাচ্ছিল।
তার হাতে ছিল একটি বড় ডেকসেট। আমার চোখ সঙ্গে সঙ্গে সেটার দিকে আটকে গেল, কারণ আমি সেটি চিনে ফেলেছিলাম। এটা তো আমাদের পাশের বাসার ভাইয়াদের। তারা প্রতি শুক্রবার গ্রামের বাড়ি চলে যায়, আর তাদের ঘরে সবসময় এই ডেকসেটটি দেখা যেত। মুহূর্তেই বুঝে গেলাম কিছু একটা ঠিক নেই। হৃদপিণ্ড তখন দ্রুত বেগে ধুকপুক করতে শুরু করল। শিশুমনের ভেতরে ভয় আর সাহস একসঙ্গে মিশে এক অদ্ভুত শক্তি তৈরি করল। আমি নিজের অজান্তেই চিৎকার করে উঠলাম চোর চোর। আমার চিৎকার শুনে আশপাশের মানুষ দৌড়ে এল, আর তার আগেই সেই মানুষটি ডেকসেটটা মাটিতে ফেলে দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে গেল।
আমি তখনও বুঝে উঠতে পারিনি কী ঘটল। ভেতরে ভয়, বিস্ময় আর উত্তেজনা একসঙ্গে কাজ করছিল। কিছুক্ষণ পর সবাই মিলে পাশের বাসায় গেল দরজা জানালা পরীক্ষা করতে। দেখা গেল জানালা ভেঙে ভেতরে ঢুকেছিল সে। ভাগ্য ভালো আমি দেখে ফেলেছিলাম, না হলে হয়তো বড় ক্ষতি হয়ে যেত। সবাই আমার সাহসের প্রশংসা করল। কেউ বলল এই বয়সে এমন সাহস খুব কম দেখা যায়, কেউ আবার মজা করে বলল বড় হয়ে নিশ্চয়ই পুলিশ হবে। আমি তখন গর্বে বুক ফুলিয়ে হাঁটছিলাম, যদিও ভিতরে ভিতরে ভয় এখনও কাটেনি।
কিছুক্ষণের মধ্যেই বিদ্যুৎ ফিরে এলো। আলো জ্বলে উঠল, চারপাশের অন্ধকার মিলিয়ে গেল, আর সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। পাশের বাসার ভাইয়েরা পরের দিন ফিরে এসে আমাকে ধন্যবাদ জানাল। তারা বলল তুমি না থাকলে হয়তো আমাদের ডেকসেটটা চিরতরে হারিয়ে যেত। আমি তাদের কথা শুনে খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলাম। তখন বুঝিনি, কিন্তু এখন মনে হয় সেটাই ছিল আমার জীবনের প্রথম বড় সাহসী কাজ।
এখন এত বছর পর সেই রাতটার কথা ভাবলে মনে হয় জীবনের ছোট ছোট ঘটনাগুলোই আমাদের বড় শিক্ষা দেয়। তখন হয়তো বুঝিনি, কিন্তু এখন জানি সাহস মানে ভয় না পাওয়া নয়, বরং ভয় পেলেও সঠিক কাজটা করা। বিদ্যুৎহীন সেই কোয়ার্টার, অন্ধকার সিঁড়ি আর চোরের হাতে ধরা ডেকসেটের দৃশ্য আজও চোখে ভাসে। শৈশবের সেই রাত আমাকে শিখিয়েছে সতর্কতা, সাহস আর প্রতিবেশীর প্রতি দায়িত্ববোধের মূল্য। জীবনের প্রতিটি ধাপে সেই শেখাটা আজও আমার সঙ্গে আছে, মনে করিয়ে দেয় যে ছোট্ট হৃদয়েও বড় সাহস লুকিয়ে থাকে।
কেমন লাগলো আপনাদের কাছে আমার আজকের শেয়ার করা ভ্রমণ পোস্ট। আশা করবো আপনাদের কাছে বেশ ভালো লাগবে। আপনাদের মতামতের অপেক্ষায় রইলাম।
আমার পরিচিতি
আমি মাহফুজা আক্তার নীলা । আমার ইউজার নাম @mahfuzanila। আমি একজন বাংলাদেশী ইউজার। আমি স্টিমিট প্লাটফর্মে যোগদান করি ২০২২ সালের মার্চ মাসে। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে যোগদান করে আমি অরেনেক বিষয় শিখেছি। আগামীতে আরও ভালো কিছু শেখার ইচ্ছে আছে। আমি পছন্দ করি ভ্রমন করতে, ছবি আঁকতে, বিভিন্ন ধরনের মজার মাজার গল্পের বই পড়তে, ফটোগ্রাফি করতে, ডাই প্রজেক্ট বানাতে ও আর্ট করতে। এছাড়াও আমি বেশী পছন্দ করি মজার রেসিপি করতে। মন খারাপ থাকলে গান শুনি। তবে সব কিছুর পাশাপাশি আমি ঘুমাতে কিন্তু একটু বেশীই পছন্দ করি।



সরকারি কোয়াটার গুলো একটু খোলামেলা হয়। শৈশবে চোর দেখে ভয় পাওয়ার দৃশ্য বর্ণনার মাধ্যমে দারুন ভাবে তুলে ধরেছেন আপু।