শৈশবের স্মৃতি- মায়াময় শৈশবের দিনগুলো

in আমার বাংলা ব্লগ7 days ago

আসসালামু আলাইকুম

কেমন আছেন আমার প্রিয় ও সহযাত্রী সকল ভাই ও বোনেরা। আশা করি সবাই অনেক ভালো আছেন।আজ আবারও হাজির হয়ে গেলাম আপনাদের সবার অতি নিকটে। ফেলে আশা অনেক স্মৃতির মাঝ থেকে কিছু স্মৃতি নিয়ে। আমাদের চলার পথে জীবনে সুখ দুঃখ কতো স্মৃতি জড়িয়ে আছে।সেই শৈশব থেকে শুরু করে মৃতুর আগ পর্যন্ত স্মৃতিগুলো যেন চোখে ও মনের মনি কোঠায় ভেসে বেড়ায়। আর তার মধ্যে জীবনে এমন অনেক ঘটনা থাকে যা কখনও ভোলা যায় না। যাইহোক আজ কয়েকদিন ধরে দেশের অনেক জায়গায় প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। আর এই বৃষ্টি দেখে আমার ফেলে আসা দিনগুলোর মধ্যে বৃষ্টিকে নিয়ে অনেক স্মৃতি মনে পরে গেল। আসলে বৃষ্টিকে ঘিরে আমাদের সবার অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। আর সেই থেকে আমারও কিছু স্মৃতি আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চলে এলাম। তাহলে চলুন পড়ে আসি আজ আমার শৈশবের বৃষ্টির পানি খাওয়া ও সংরক্ষন করার কিছু অনুভূতি।


image.png

sourch

শৈশবের স্মৃতি কখনো ভুলে থাকা যায় না। জীবনের প্রতিটি রঙিন দিনের মতো সেই সময়গুলো ছিল আনন্দ, হাসি আর নিষ্পাপ ভালোবাসায় ভরা। ভোরের আলো ফুটতেই যেন শুরু হতো আমাদের নতুন এক অভিযাত্রা। চোখ খুলতেই মনে হতো আজ কী খেলা খেলব, কোথায় যাব, কারা আসবে খেলতে। বন্ধুরা একে একে দরজায় এসে দাঁড়াত, আর আমি তাড়াহুড়ো করে বইখাতা গুছিয়ে রাখতাম যেন পড়া শেষ করেই বেরিয়ে যেতে পারি। খেলাধুলার জন্য বড় মাঠের দরকার ছিল না—গলির কোণে, পাড়ার ফাঁকা জায়গায়, কিংবা রাস্তার ধারে ধুলাবালির ভেতরেই গড়ে উঠত আমাদের ছোট্ট খেলার রাজ্য। সারাদিন দৌড়ঝাঁপে ঘেমে ক্লান্ত হয়ে যেতাম, তবুও আনন্দের কোনো শেষ ছিল না। বিকেলের আকাশে সূর্য ডুবে গেলে মনে হতো—এই আনন্দের সময়টা যেন শেষ না হয় কখনো।

বাড়িতে ফিরলেই চোখে পড়ত বাবার গম্ভীর মুখ আর বড় ভাইয়ের পড়ার তাড়া। তবুও সেই কঠোর পরিবেশের মাঝেও লুকিয়ে ছিল এক ধরনের ভালোবাসা। পড়ার টেবিলে বসে আমরা প্রতিযোগিতা করে জোরে জোরে পড়তাম, যেন কার আওয়াজ বেশি সেটা নিয়ে একটা মজার লড়াই চলছে। ঘরজুড়ে সেই পড়ার আওয়াজে এক অদ্ভুত প্রাণচাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ত। মা রান্নাঘর থেকে শুনে খুশি হতেন, কিন্তু একটু পরেই যখন শব্দ কমে যেত তখন তাঁর ডাক ভেসে আসত—“কি রে, পড়ার আওয়াজ কই?” সেই কণ্ঠে ছিল রাগ নয়, বরং অশেষ মমতা।

পড়ার ফাঁকে মা নিজের হাতে বানানো নাস্তা নিয়ে আসতেন—গরম পরোটা, হালকা চায়ের গন্ধ কিংবা মৌসুমী ফল। নাস্তা খেতে খেতে আমরা হাসাহাসি করতাম, যেন পুরো পৃথিবীর সুখ এক টেবিলেই জমে আছে। মায়ের মুখে হাসি দেখলে মনে হতো এটাই জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময়।

তখনো গ্রামে বা শহরে বিদ্যুৎ ছিল অনিয়মিত। সন্ধ্যার পরে আলো চলে গেলে চারপাশ অন্ধকারে ঢেকে যেত, কিন্তু তাতে কোনো ভয় লাগত না। বরং হারিকেনের আলোয় বই পড়ার এক অন্যরকম আনন্দ ছিল। মায়ের হাতে সা হারিকেনটা জ্বলে উঠলে পুরো ঘরটা সোনালী আলোয় ভরে যেত। সেই আলোয় বইয়ের অক্ষরগুলো যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠত, আর মন ভরে যেত এক শান্ত প্রশান্তিতে। হারিকেনের নিচে বসে গল্প পড়তে পড়তে আমরা কখন যে নিজেরাই গল্পের চরিত্র হয়ে যেতাম, বুঝতেই পারতাম না।

শীতের সকালে ঘন কুয়াশায় ঢাকা পরিবেশ ছিল এক অদ্ভুত জাদুময় অনুভূতি। মোটা কম্বলের নিচে বসে মা’র কাছ থেকে গল্প শোনা আর জানালার পাশে বসে পাখির ডাক শোনা—সবকিছুই ছিল এক স্বপ্নের মতো। তখন মনে হতো সময়টা যেন থেমে যাক। বিকেলের দিকে আমরা কখনো নদীর ধারে যেতাম, কখনো ঘাসের মাঠে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে মেঘ গুনতাম। বৃষ্টির দিনে ভিজে যাওয়া, কাদায় পা ডুবিয়ে খেলা, গাছের ডালে দোল খাওয়া—এসবই ছিল আমাদের রোজকার আনন্দের অংশ।

বৃষ্টির গন্ধ আজও সেই শৈশবের কথা মনে করিয়ে দেয়। ভিজে মাটির গন্ধে, ছেলেবেলার সেই হাসি মিশে আছে। আমরা সবাই মিলে জলকেলি করতাম, ঘাসে গড়িয়ে হাসির রোল তুলতাম। তখন কোনো চিন্তা ছিল না, কোনো ভয় ছিল না। মনে হতো পৃথিবীতে এর চেয়ে বড় সুখ কিছুই নেই।

সেই সময়টা শুধু আনন্দের ছিল না, ছিল শেখারও। বাবার কণ্ঠে গল্প শুনে আমরা জীবনের প্রথম পাঠ শিখেছিলাম—সততা, পরিশ্রম, আর ভালোবাসা। মায়ের স্নেহে শিখেছিলাম মমতা আর ধৈর্য। ভাইবোনের খুনসুটি, বন্ধুর সঙ্গে ঝগড়া, আবার মুহূর্তের মধ্যেই মিলেমিশে যাওয়া—এসবই গড়ে তুলেছিল আমাদের মানবিক বোধ।

এখন সময় অনেক বদলে গেছে। শহরের ব্যস্ততা, প্রযুক্তির ঝলকানি, আর যান্ত্রিক জীবনের দৌড়ে হারিয়ে গেছে সেই সরল আনন্দগুলো। আজ অনেক কিছু অর্জন করেছি, কিন্তু শৈশবের সেই নিখাদ সুখ আর নির্ভেজাল ভালোবাসা আর পাওয়া যায় না। মাঝে মাঝে সন্ধ্যায় জানালা দিয়ে বাইরে তাকালে মনে হয়—যদি একবারের জন্যও সেই দিনগুলো ফিরে আসত!

শৈশবের স্মৃতি এক অনন্ত সম্পদ, যা কখনো ম্লান হয় না। যত বয়সই বাড়ুক, যত ব্যস্ততাই আসুক, সেই স্মৃতিগুলো হৃদয়ের গভীরে অটুট থেকে যায়। মায়ের ডাক, হারিকেনের আলো, ধুলাবালিতে খেলা, আর বন্ধুদের হাসির সেই মধুর মুহূর্তগুলো আজও মনকে ভরে দেয় অজানা আনন্দে। জীবনের সব সাফল্যের মাঝেও এই স্মৃতিগুলোই আমাদের মনে করিয়ে দেয়—সরলতাই জীবনের সবচেয়ে সুন্দর রূপ।

আর এই ছিল আমার আজকের পোস্ট। আজ তাহলে শেষ করলাম পরবর্তীতে আবারও নতুন ব্লগ নিয়ে আপনাদের মাঝে হারির হবো।সবাই ভালো থাকবেন।

পরিচিতি

আমি মাহফুজা আক্তার নীলা । আমার ইউজার নাম @mahfuzanila। আমি একজন বাংলাদেশী ইউজার। আমি স্টিমিট প্লাটফর্মে যোগদান করি ২০২২ সালের মার্চ মাসে। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে যোগদান করে আমি অনেক বিষয় শিখেছি। আগামীতে আরও ভালো কিছু শেখার ইচ্ছে আছে। আমি পছন্দ করি ভ্রমন করতে, ছবি আঁকতে, বিভিন্ন ধরনের মজার মাজার গল্পের বই পড়তে, ফটোগ্রাফি করতে, ডাই প্রজেক্ট বানাতে ও আর্ট করতে। এছাড়াও আমি বেশী পছন্দ করি মজার রেসিপি করতে। মন খারাপ থাকলে গান শুননি। তবে সব কিছুর পাশাপাশি আমি ঘুমাতে কিন্তু একটু বেশীই পছন্দ করি।

❤️ধন্যবাদ সকলকে❤️