জেনারেল রাইটিং-চলে গেলেন আর একজন আপন মানুষ
আসসালামু আলাইকুম
কেমন আছেন সবাই? আশা করবো সবাই ভালো আছেন। সৃষ্টিকর্তার রহমতে আমিও আছি ভালোই। তবে ব্যস্ত এ নগরে কতটুকু সময় ভালো থাকতে পারবো সেটা বলা মুশকিল। শত ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে কাটাতে হয় যান্ত্রিক জীবন। মাঝে মাঝে মনে হয় সব কিছুকে বন্ধ করে দিয়ে দূরে কোথাও সবুজ গাছের ছায়ায় নিজেকে একটু স্বস্থির ছায়া দিতে। কিন্তু ঐ যে বাস্তবতা, সেটা তো বড়ই নিষ্ঠুর আর নির্মম। কোন কিছুতেই ছাড় দিতে চায় না। সে যাই হোক বাবা । চলুন মূল পোস্টে ফিরে যাওয়া যাক।
প্রতিদিনই চেষ্টা করি আপনাদের মাঝে সুন্দর করে কিছু লিখে উপহার দেওয়ার জন্য। চাই চারদিকের মানুষগুলোর মধ্যে লুকিয়ে থাকা কষ্টগুলো কে আমার লেখার যাদুতে আপনাদের মাঝে তুলে ধরতে। জানিনা কতটুকু আপনাদের মাঝে নিজের মনের কথা গুলো কে শেয়ার করতে পারি। আজ চেষ্টা করলাম আপনাদের মাঝে নতুন একটি জেনারেল রাইটিং শেয়ার করার জন্য। আশা করি প্রতিদিনের মত করে আমার আজকের জেনারেল রাইটিংটিও আপনাদের কাছে বেশ ভালো লাগবে।

আপনারা যারা আমার পোস্ট গুলো সব সময় পড়ে থাকেন তারা অবশ্যই জানেন যে, আমার ভাসুর বেশ কিছুদিন যাবৎ অসুস্থ্য। আরি সে কারনেই বেশ ব্যস্ততার মধ্যে ছিলাম। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২.৪৫মিনিট। রাতের সব কাজ শেষ করে শুয়ে পড়েছি। চোখটা হঠাৎ যখন লেগে আসলো তখন একটি ফোন আসলো মোবাইলে। এত রাতে ফোন দেখে বুঝতে আর বাকী রইল না যে কোন দুঃসংবাদ। যে ভাবনা সেই কাজ, আমার ভাসুরের ছেলে কান্না ভরা কন্ঠে জানিয়ে দিলো যে উনি আর পৃথিবীতে নেই। কিছুটা সময়ের জন্য থম খেয়ে গেলাম। কি করবো কিছুই বুঝতে পারলাম না। চিন্তায় পড়ে গেলাম এত রাতে কি করবো।
এক সময়ে ভাবনার গন্ডি পেরিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা দিলাম আমরা দুজনে। রাত তখন ১.০০। এত রাতে তো আর গাড়ী পাবো না। তাই আমার ভাইযের ছেলেকে ফোন দিয়ে ২০ মিনিটের জন্য পৌঁছে গেলাম ইউনাইটেড হাসপাতাল ওর গাড়ীতে। হাসপাতালে ঢুকতেই দেখলাম ভাসুরের স্ত্রী থম ধরে বসে আসে। চোখে মুখে কোন কান্না নেই। আমি একটু চিন্তা করলাম যে ভাবীর কি হলো। উনি আমাকে দেখেই বললো যে আমি কাদঁবো না, আমার কোন কান্না নেই।আমি তো হতবাক। বুঝতে পারলাম উনি পাথর হয়ে গেছে। এবার হাসপাতালের আনুষ্ঠিনকতা শেষ করে বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত ৩.৩০ মিনিট। বাকী রাতটুকু কেবল ভাবীকে সঙ্গ দিয়ে কাটালাম।
সকাল ৮.৩০ মিনিটে তাদের কে বাড়ীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে দিয়ে চলে গেলাম নিজের কিছু কাজ করার জন্য। নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে যেতে হলো আমাকে। কারন আমি গত একমাস আগেই ইন্ডিয়ার ভিসার জন্য এপ্লাই করেছিলাম। কিন্তু আমার কপাল বলতে হয় একই দিনে দুটো পড়ে গেল। কি আর করার দুটো জায়গায় আমাকে এটেন্ড করতে হলো। কেমন করে যে সেদিন এ্যাম্বাসীতে ম্যানেজ করে ৪ ঘন্টার কাজ ১ ঘন্টায় করেছিলাম। তারপার কাজ শেরে রওনা হয়ে গেলাম ভাসুরের জানাযার উদ্দেশ্যে। কপাল আমার রাস্তার মাঝেই গাড়ী নষ্ট। গাড়ী ছেড়ে আবারও অন্য গাড়ী। তখন বাজে বেলা ১২.৩০ মিনিট। জানাযা পাবো কিনা সন্দেহ। কিছুদূর যেতেই সামনেই জ্যাম। তখন আর কি করলাম নিজে বসে থেকে আপনাদের ভাইয়াকে হেটে পাঠিয়ে দিলাম। অবশেষে উনি জানাযায় অংশ গ্রহন করতে পেরেছিল।
এদিকে সেদিন থেকেই ভাবীর পাশে থেকে সময় কাটাতে হলো। ভাবীর হাজারও বাচ্চা মানুষের মতো কথা শুনে যেন বার বার বুকের মাঝে চিপ দিচ্ছিলো। সত্যি বলতে আপন মানুষ কে হারালে মানুষ হয়তো এমন বাচ্চার মতই হয়ে যায়। উনার মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছিলো না। বাড়ী ভরা হাজারও মানুষের মধ্যে ভাবী যখন আমাকে খুঁজে বের করে তার কাছে থাকতে বলে তখন যেন মায়ায় ভরে যায় ভাবীর প্রতি আমার। পর পর দুদিন ছিলাম ভাবীর পাশে। বেশ কষ্ট হচ্ছে ভাবীর জন্য আমার । কিন্তু কিছুই করার নেই। জীবিকার তাগিদে চলে আসতে হলো ঢাকায়।
কথা হলো আপন মানুষগুলো এমন করেই চলে যাচ্ছে একে একে আমাদের কে ছেড়ে। আর তাদের কথা ভেবেই প্রিয় মানুষগুলো এক বুক কষ্ট বুকে নিয়ে ঘুরে বেড়াচেছ। কখনও হয়ে যাচেছ বাচ্চার মত। কখনও পাগল প্রায়, আর কখনও বা নির্বাক। কোন এক সময় হয়তো আমরা ভুলে যাবো তাদের কে। হয়তো তাদের স্মৃতি মাঝে মাঝে আমাদের কে হাতছানি দিবে ক্ষনিকের জন্য। তবু মনে থাকবে আপন কেউ ছিল আমাদের জীবনে। ভালো থাকুক হারিয়ে যাওয়া আমাদের সকল প্রিয় ও আপন মানুষ গুলো ওপারে, মহাল আল্লাহর খাস মেহমান হয়ে। এমন দোয়াই সবাই করি।
আমার পরিচিতি
আমি মাকসুদা আক্তার। স্টিমিট প্লাটফর্মে আমি @maksudakawsar হিসাবে পরিচিত। ঢাকা হতে আমি আমার বাংলা ব্লগের সাথে যুক্ত আছি। আমি একজন গৃহিনী এবং চাকরিজীবী। তারপরও আমি ভালোবাসি আমার মাতৃভাষা বাংলায় নিজের মনের কথা গুলো আমার বাংলা ব্লগের প্লাটফর্মে শেয়ার করতে। আমি ভালোবাসি গান শুনতে এবং গাইতে। আমি অবসর সময়ে ভ্রমন করতে এবং সেই সাথে সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি নিজের ক্যামেরায় বন্দী করতে ও ভালোবাসি। মাঝে মাঝে নিজের মনের আবেগ দিয়ে দু চার লাইন কবিতা লিখতে কিন্তু আমার বেশ ভালোই লাগে। সর্বোপরি আমি ভালোবাসি আমার প্রাণপ্রিয় মাকে।
.gif)
VOTE @bangla.witness as witness
OR
SET @rme as your proxy



