রহিমা খাতুন মেরি

in আমার বাংলা ব্লগlast year

আসসালামু আলাইকুম,
আশা করি সবাই কুশল আছেন।আলহামদুলিল্লাহ,আমিও ভালো আছি। আজ ম্যাথ এক্সাম ছিল।আল্লাহর রহমতে ভালোই দিয়ে এসেছি,তাই মনটা একটু ফুরফুরে আছে।সামনের বৃহস্পতিবার ম্যাথ সেকেন্ড পেপার হলেই অবশ্য লিখিত এক্সাম শেষ হবে।২৬ তারিখ থেকে শুরু হবে প্রাকটিক্যাল।যাইহোক সেসব কথা বাদ দিই।

baby-4100420_1280.jpg
Pixabay

আজকের গল্পটা একজন মা'কে নিয়ে,একজন যোদ্ধা কে নিয়ে।আর সেই মানুষটি আর কেউ না,আমার ছোট মামি।মা জাতি যদিও সবসময়ই একজন যোদ্ধা তবুও এই মানুষটাকে নিয়ে কিছু কথা আমার ভেতরে থেকে আপনা-আপনি সৃষ্টি হয়।
সম্পর্কটা ওতোটা গভীর ছিলনা কিছুদিন আগেও।দেখা হলে সালাম দেয়া,মাঝে মাঝে বাসায় দাওয়াতে যাওয়া-আসা এতেই সীমাবদ্ধ ছিল।পারিবারিক কিছু কারণ এবং উভয় পক্ষের সুবিধায় সম্পর্কটা অনেক গভীর হয়েছে বলা চলে।আর সেই সুবাদেই মামির সংগ্রামী জীবনটা আমি খুব কাছে থেকে দেখছি,একজন মায়ের দায়িত্ব-কর্তব্য পালনের দৃষ্টান্ত দেখছি।আর এই বিষয়টা আপনাদের সাথে শেয়ার না করে পারছিনা।কিছু কথা বলার জন্য মনটা কেমন আনচান করছে।

mother-1171569_1280.jpg
Pixabay

মামির বাবার বাড়ি পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলায়।মামা-মামির বিয়ের ইতিহাস যদিও জানিনা সেভাবে তবে বিয়ের পর মামির ঠিকানা হয় গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায়।দুই জায়গার দূরত্ব প্রায় ১১০/১২০ কিলোমিটারের মতো হবে।
মামা-মামির তিনটা মেয়ে।বড় মেয়ে অন্ত আর আমি পিঠাপিঠি,মেজো মেয়ে তোয়া এবার সেভেনে আর ছোট মেয়ে তুবা আগামী বছর স্কুলে ভর্তি হবে।

এস,এস,সি পাশ করার পর আমাদের ওখানে পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা না থাকায় বগুড়ায় এসেছি।মামা-মামিও চলে এসেছে অন্তর পড়াশুনার জন্য।আর হয়তোবা এখান থেকেই লাইফের সবচেয়ে বড় স্ট্রাগল শুরু তার।
দিনে আমাদের দুজনের টোটাল ৫ টা প্রাইভেট আর কলেজ ছিল।অন্তকে সব প্রাইভেটে আর কলেজে নিয়ে যাওয়া আর নিয়ে আসা একটা বড় কাজ ছিল মামির।ওকে রেখে আবার সেই ফাঁকে তোয়াকে স্কুলে রেখে আসতো।এগুলো আমাদের এক্সামের আগে এভাবেই চলেছে।এক্সামের ভেতর ওনাদের বাসায় আমার যাতায়াত নিয়মিত হওয়ায় খুব ভালোভাবে তার সংগ্রামটা উপলব্ধি করেছি।বর্তমানে তার দৈনিক রুটিনটা কিছুটা এমন।



ফজরের নামাজ পরে হয়তোবা রান্না বা ঘরের কাজে জড়িয়ে পরেন।৯ টার ভেতর ঘর পরিষ্কার থেকে রান্না সব কম্পিলিট করে ফেলেন।আমি মেস থেকে ৯ টায় ওখানে গিয়ে সকালের খাবার খাই।আমায় তখন নিজে বসে থেকে খাবার পরিবেশন করেন।খাওয়ানো শেষ হলে ছোট মেয়েটাকে ব্রাশ করানো,ওকে আবার খাওয়ানো।ঘড়িতে যখন ৮:৪৫ তখন তিনি রেডি হন আমাদের দুজনের সাথে এক্সাম হলে যাবেন জন্য।৯ টা বাজলে তোয়া আর তুবাকে বাসায় তালা দিয়ে রেখে মামি আর আমরা যাই এক্সাম হলের দিকে আর মামা যায় স্কুলে।আমাদের রেখে বাসায় আসতে আসতে বেজে যায় ১০ টার মতো।উনি এসে আবার দুপুরের খাবার রান্না করেন।ঘন্টা দেড়েক পর ঘড়িতে যখন ১১:৩০ তখন তিনি মেজো মেয়েটাকে রেডি করে নিয়ে যায় স্কুলে।সাথে ছোট মেয়েটাকেও সাথে নিতে হয়।তোয়াকে স্কুলে রেখে তুবাকে নিয়ে সোজা চলে যান আমাদের হলে।১ টায় এক্সাম শেষ হলে আমাদের নিয়ে বাসায় আসে আর আসার পর জাস্ট চেঞ্জ যোহরের নামাজ পরেই আমায় খাওয়ানো নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।আমায় খাইয়িয়ে আবার আমার রাতের খাবারের জন্য বাটি সাজিয়ে দেন।
তারপর অন্ত আর তোয়াকে খাওয়ানোর পাশাপাশি নিজেও একটু খাওয়া দাওয়া করেন।এরপর আমি বাসা থেকে মেসে চলে আসি।আর তারপর ৪ টায় আবার তোয়াকে আনতে যান স্কুলে।স্কুল থেকে আনার পর আবার ওর খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করতে হয়।মামা আসার পর সবার জন্য বিকেলের নাস্তা রেডি করেন।
সন্ধ্যায় তিন মেয়ের পড়াশুনার দিকে নজড় দেন একদম কড়াভাবে।এভাবেই দিনগুলো কাটতে দেখছি তার।

mother-and-daughter-3281388_1280.jpg
Pixabay
হয়তোবা ভাববেন এগুলো তো মা হিসেবে অবশ্য করণীয়।হ্যাঁ, তা অবশ্যই।তবে এনার কিছু অনন্য গুণের জন্যই এনাকে আমার ভালো লাগে।মানুষটা বুদ্ধিমতী,যুগের সাথে সমানভাবে তাল মেলানো একজন মানুষ।যান্ত্রিক শহরের একজন যন্ত্র তিনি।প্রয়োজনে গরম আবার নরম।ওয়াইফ হিসেবে যেমন হওয়া উচিৎ হয়তোবা মামার কাছে তিনি তেমনই আর মা হিসেবে যেমন হওয়া উচিৎ হয়তোবা মেয়েদের কাছে তিনি তেমনই।আর মায়ের বিষয়টা অনেকটা আমিও বুঝি।
মেয়েদের মানুষের মতো মানুষ করে তোলা ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্য নেই মামা-মামি কারোরই।আল্লাহর কাছে এটুকুই চাওয়ার তিনি যেন মানুষ দুইটার মুখের দিকে তাকিয়ে হলেও তাদের কষ্টের দাম দেন।
ভালো থাকুক পৃথিবীর সকল মা,ভালো থাকুক রহিমা খাতুন।

ধন্যবাদ সবাইকে।সুস্থতা কামনা করে বিদায় নিচ্ছি,

আল্লাহ হাফেজ।

©@farhantanvir
Photos: Taken from Pixabay
Date.19/09/23

Posted using SteemPro Mobile

Sort:  
 last year 

ম্যাথ এক্সাম ভালো হয়েছে এটা শুনে ভালো লাগলো। আশা করছি পরবর্তীটাও অনেক ভালো হবে। আপনি আজকে আপনার নিজের মামীকে নিয়ে অনেক সুন্দর করে একটা পোস্ট লিখেছেন, যা পড়ে আমার তো অনেক বেশি ভালো লেগেছে। পৃথিবীর সকল মা যেন ভালো থাকে এটা সব সময় সৃষ্টি কর্তার কাছে দোয়া করি।