ক্রিয়েটিভ রাইটিং(গল্প) || অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে পারে (প্রথম পর্ব)

in আমার বাংলা ব্লগ25 days ago (edited)

আসসালামু আলাইকুম,

আমার বাংলা ব্লগের সকল বন্ধুরা ,আপনারা সবাই কেমন আছেন ? আশা করি সবাই খুব ভালো আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় আল্লাহর রহমতে খুব ভালো আছি।



প্রতিদিনের মতো আজকেও আমি আপনাদের সামনে আরো একটি নতুন পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি। আজকে আমি আপনাদের সাথে একটি বাস্তব গল্প শেয়ার করবো। ঘটনাটি হচ্ছে ২০২০ সালের ঘটনা। দক্ষিণ কোরিয়াতে আমি গিয়ংগিদো প্রদেশের আনসান শহরে থাকতাম। আনসান শহর থেকে রাজধানী সিউলের দূরত্ব ছিলো ঘন্টা খানেকের মতো। তো আমি যেখানে ছিলাম, তার আশেপাশের ফ্ল্যাটে আমার পরিচিত বেশ কয়েকজন ভাই ব্রাদার ছিলো। আমরা ১০/১২ জন প্রতি সপ্তাহের শনি ও রবিবার একসাথে খাওয়া দাওয়া করতাম, বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যেতাম, ক্রিকেট এবং ব্যাডমিন্টন খেলতাম বাসার পাশে থাকা পার্কে। এর মধ্যে বেশিরভাগ ছিলো আমাদের নারায়ণগঞ্জের ভাই ব্রাদার। আর ৩/৪ জন ছিলো বরিশালের এবং একজন ছিলো টাঙ্গাইলের। টাঙ্গাইলের যে ছেলেটি ছিলো, সেই ছেলেটির নাম হচ্ছে ইমরান। ইমরান বয়সে আমার চেয়ে ৪/৫ বছরের বড় ছিলো


lonely-7689797_1280.jpg

Source


ইমরানের পরিবারে মা বাবা ছাড়াও তার স্ত্রী এবং ৩ বছর বয়সী একটা ছেলে সন্তান ছিলো। মূলত আজকের এই পোস্টটি ইমরানকে কেন্দ্র করেই লেখা। ইমরানের হঠাৎ মৃত্যুতে তার পরিবারে শোকের ছায়া নেমে গিয়েছিল। তাছাড়া আমরা সবাই ভীষণ কষ্ট পেয়েছিলাম। ইমরানের মৃত্যুটা খুবই ভয়াবহ ছিলো। যাইহোক মূল কথায় ফেরা যাক। ইমরান আমার মতো একাই থাকতো একটি ফ্ল্যাট নিয়ে। কিন্তু ইমরানের পরিচিত দুইজন ছেলের চাকরি ছিলো না বলে মাসেক খানেক ইমরানের ফ্ল্যাটে ছিলো। ছেলে দুটি ২০২০ সালের ঈদুল আজহার দুই দিন আগে ইমরানের ফ্ল্যাট থেকে চলে যায় চাকরি খুঁজে পেয়েছিল বলে। আর যাওয়ার আগের দিন সন্ধ্যার পর আমাদের বাসার সামনের একটি পিজ্জা শপে, ছেলে দুটি চলে যাবে বলে ইমরান ট্রিট দিয়েছিল। সেদিন আমি এবং আমার এক ফ্রেন্ড সেই পিজ্জা শপে পিজ্জা খেতে গিয়েছিলাম বলে, তাদের সাথে দেখা হয়েছিল এবং সবাই একসাথে বসে পিজ্জা খেয়েছিলাম।


বাসায় ফেরার সময় ইমরানকে দাওয়াত দিয়েছিলাম। কারণ আমরা সবাই ঈদুল আজহার দিন রাতের বেলা একসাথে খাওয়া দাওয়া করবো। আসলে কোরিয়াতে ঈদের দিন ছুটি থাকে না। আমাদের সাপ্তাহিক ছুটি ছিলো শনি ও রবিবার। যদি সাপ্তাহিক ছুটির দিন ঈদ হতো,তাহলে আমরা ভীষণ খুশি হতাম। তাছাড়া লাঞ্চ পর্যন্ত ছুটি নিয়ে ঈদের নামাজ পড়তাম এবং লাঞ্চের পর অফিসে চলে যেতাম। যাইহোক ঈদের দিন রাতের বেলা ইমরান সহ আমরা প্রায় ১২/১৩ জন একসাথে ডিনার করলাম। বরিশালের সোহাগ ভাই এবং আমাদের নারায়ণগঞ্জের বাবু ভাই সবচেয়ে ভালো রান্না করতো। তো তারা ২ জন সেদিন অনেক কিছু রান্না করেছিল। আমরা রাত ৯টার দিকে ডিনার করেছিলাম সেদিন। তারপর আমরা সবাই আড্ডা দিতে লাগলাম। এদিকে ইমরান খাটের মধ্যে শুয়ে সাথে সাথে ঘুমিয়ে পরেছিল। তো আমরা সবাই ভাবলাম অফিসে কাজের চাপে হয়তো বেশি টায়ার্ড, তো সেজন্যই সাথে সাথে ঘুমিয়ে পরেছে।


মূলত ইমরান তখন নতুন একটি অফিসে জয়েন করেছিল এবং সেখানে কাজের চাপ ছিলো অনেক। সে মূলত বাড়তি বেতনের আশায় আগের চাকরিটা পরিবর্তন করেছিল। সে কিছুদিন আগে ভিসার ক্যাটাগরি পরিবর্তন করেছিল কোরিয়াতে তার পরিবার নিয়ে আসার জন্য। আর সেজন্যই ইমিগ্রেশনের নিয়ম অনুযায়ী বাড়তি বেতন না পেলে, পরবর্তীতে ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি করতে ঝামেলা হয়ে যাবে। মূলত এসব নিয়ে ইমরান বাড়তি টেনশনের মধ্যে ছিলো। তাই শরীরের উপর চাপ পরছে জেনেও,অফিসে অনেক রাত পর্যন্ত কাজ করতো বাড়তি ইনকামের জন্য। কথায় আছে কোনো কিছুই অতিরিক্ত ভালো নয়। আর দুশ্চিন্তা খুবই খারাপ জিনিস। মোটকথা অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা মানুষকে মৃত্যুের দিকে ঠেলে দিতে পারে। যাইহোক এরপর কি হলো,সেটা জানতে হলে আপনাদেরকে পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। (চলবে)



2FFvzA2zeqoVJ2SVhDmmumdPfnVEcahMce9nMwwksSDdRvZA8GzS2DQRCenaYmQc8PKmKoqUpUeK1EYkXvpDQ1G4vq9r2thnL24nVMe9HEoTA18P3XxZmEBqKV5Qa.png

পোস্টের বিবরণ

ক্যাটাগরিগল্প(ক্রিয়েটিভ রাইটিং)
পোস্ট তৈরি@mohinahmed
ডিভাইসSamsung Galaxy Note 20 Ultra 5g
তারিখ৮.৫.২০২৪
লোকেশননারায়ণগঞ্জ,ঢাকা,বাংলাদেশ

বন্ধুরা আজকে এই পর্যন্তই। আপনাদের কাছে পোস্টটি কেমন লাগলো, তা কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। আবারো ইনশাআল্লাহ দেখা হবে অন্য কোনো পোস্টে। সেই পর্যন্ত ভালো থাকবেন,সুস্থ থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।

পোস্টটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

9vWp6aU4y8kwSZ9Gw15LFL3aMdhmgmBBFMpDJregpdP328CzpX9QvbjSPXbrW8KqUMMwTrRCn3xcSQ6EA6R67TcD5gLnqAWu8W41xe41azymkyM19LEXr548bkstuK4YE8RXJKQJWbxQ1hVAD.gif

আমার পরিচয়

IMG-20240212-WA0036.jpg

🥀🌹আমি মহিন আহমেদ। আমি ঢাকা বিভাগের নারায়ণগঞ্জ জেলায় বসবাস করি এবং আমি বিবাহিত। আমি এইচএসসি/ইন্টারমিডিয়েট পাশ করার পর, অনার্সে অধ্যয়নরত অবস্থায় দক্ষিণ কোরিয়াতে চলে গিয়েছিলাম। তারপর অনার্স কমপ্লিট করার সুযোগ হয়নি। আমি দক্ষিণ কোরিয়াতে দীর্ঘদিন ছিলাম এবং বর্তমানে বাংলাদেশে রেন্ট-এ- কার ব্যবসায় নিয়োজিত আছি। আমি ভ্রমণ করতে এবং গান গাইতে খুব পছন্দ করি। তাছাড়া ফটোগ্রাফি এবং আর্ট করতেও ভীষণ পছন্দ করি। আমি স্টিমিটকে খুব ভালোবাসি এবং লাইফটাইম স্টিমিটে কাজ করতে চাই। সর্বোপরি আমি সবসময় আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে আন্তরিকতার সহিত কাজ করতে ইচ্ছুক।🥀🌹

5ZJ4Z52ZRyQfNkCWFfXsATSsPtfkBwT3a5k8RVinr67352Jpu6E5J43D5L7yhn5d5CrcpnTvTLcF5db3ftZK7V9GzsAkLjb3PriF27x53soS8yKq9EnT1Gez2W6L2XUZu7jXnMduxdzGd4QzpYoozSDTPz3jUEkZ8x9rPrFry12vk2pkpsukTxq2kgJhF2zDYwrV.png

cyxkEVqiiLy2ofdgrJNxeZC3WCHPBwR7MjUDzY4kBNr81RRg3nBstm6z4qmufGsvFT24rqXwtpQD564XVCvACqesd3KULjLw7vQPhCNBNpraDPBk9z8jqn3ncuykugzMhQ2.png

6nSeSEzKEwjJN68tMqgZXvpyk1cf2ihqXgmWESDgXSh21PxWHDWW9CETD5B5Jw9Q6ERAnD25KhyHKAX53jBLJKQRtPJf1WFG3aJd6PXbp2rpTXdWPxnRnq65CqtM8PawHiD5knScnfCbWvcVRuFVv1rtwzsXe59AixEGDGYZT2EWzPMzrWjWrbujcJd79Q1Sjs2X.gif

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 25 days ago 

ভাইয়া এর আগে আপনার লেখা কোন গল্প পড়েছি কিনা জানা নেই। তবে এই প্রথমবার এমন একটি গল্প পড়ে খুব ভালো লাগলো। সত্যি অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা ও অতিরিক্ত কাজের চাপ মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। তার প্রমাণ আপনার সেই বন্ধু ইমরান। সে বেশি বেতনের জন্য হয়তো তার কাজের চাপ বাড়িয়ে দিয়েছে কিন্তু সে এটা বুঝতে পারেনি তার জন্য নিজের উপর দিয়ে কতটা প্রেসার যেতে পারে। এতে করে নিজেকে সুস্থ রাখা খুবই কঠিন। তার জন্য কোথায় বলে, অল্প খাওয়া ভালো বেশি খেলে গলায় আটকায়। ইমরানের ক্ষেত্রেও ঠিক তাই হয়েছে। এরপর কি হলো জানার জন্য পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

 25 days ago 

আসলে ইমরান আমার বন্ধু ছিলো না,তবে আমাদের সবার সাথে ইমরানের খুব ভালো সম্পর্ক ছিলো। যাইহোক গল্পটা পড়ে এতো চমৎকার মন্তব্য করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।

 25 days ago 

শুরু থেকে আপনার গল্পটা পড়তে ভীষণ ভালোই লাগছিল। বিশেষ করে আপনাদের কোরীয়াতে কাটানো সময় গুলো সম্পর্কে জেনেছিলাম। আবার ঈদের দিনের মুহূর্তের কথাগুলো ভীষণ ভালো লাগলো। তবে আপনাদের ঈদের দিনেও ছুটি ছিল না শুনে খারাপ লাগলো। আপনাদের সময় গুলো তো দেখছি ভীষণ ভালোই কাটছিল। কিন্তু শেষের দিকে ইমরানের কথাগুলো পড়ে খুবই খারাপ লাগলো। আসলেই ঠিক বলেছেন, আমিও মনে করি কোন কিছুতেই বাড়তি চাপ নেওয়াটা উচিত নয়। আর এটা অনেক সময় জীবনের জন্য ঝুঁকি হতে পারে। তবে শেষ পর্যন্ত কি হলো এটা জানার আগ্রহ রয়েছে।

 25 days ago 

হ্যাঁ আপু কোরিয়াতে ঈদের দিন আলাদা কোনো ছুটি থাকে না। এমনিতে সপ্তাহে ২ দিন বন্ধ ছিলো আমাদের। যাইহোক গল্পটা পড়ে এভাবে সাপোর্ট করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।

 25 days ago 

অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা সত্যি মানুষের জন্য খুবই খারাপ। আপনারা সবাই দেখছি কোরিয়াতে বেশ ভালই সময় কাটালেন। বিশেষ করে ঈদের মুহূর্তগুলো দেখছি খুব সুন্দরই কাটিয়েছেন। তবে বেশিরভাগ প্রবাসীদের মুখে শুনি তাদের ঈদের দিনেও ছুটি থাকে না। এখন দেখছি আপনাদেরও ছিল না। তবে ইমরানের কথা শুনে খুবই খারাপ লাগলো। আমি মনে করি অতিরিক্ত কোন কিছুই ঠিক নয়। তাই লোকটারও একটু চিন্তা ভাবনা করে কাজ করা উচিত ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত ইমরানের কি পরিণতি হয়েছিল এটা শোনার আগ্রহ রয়েছে।

 25 days ago 

আসলে বেশিরভাগ কোরিয়ানরা কোনো ধর্মে বিশ্বাসী না। তবে কিছু কিছু কোরিয়ানরা খ্রিস্টান এবং বৌদ্ধ ধর্ম বিশ্বাস করে। তবে আমাদের ঈদের দিন বন্ধ না থাকলেও, সাপ্তাহিক বন্ধ ছিলো শনি ও রবিবার। ইমরানের পরবর্তীতে কি হয়েছিল, সেটা পরবর্তী পর্বে জানতে পারবেন ভাই। যাইহোক গল্পটা পড়ে এতো সুন্দর মন্তব্য করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।

 25 days ago 

আসলে আপনি পোস্টের মধ্যেও ইমরান ভাইকে হাইলাইট করেছেন এই গল্পটা উনাকে নিয়ে তৈরি। উনার ভয়াবহ মৃত্যুর কথা শুনে আমি সত্যি অনেক কষ্ট পেয়েছি 😔। দোয়া করি , মহান আল্লাহ তাআলা যেন তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করে। এ কথাটা ঠিক বলেছেন যে অতিরিক্ত চিন্তা মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয় তবে আমি এই গল্পটা পুরো শোনার জন্য খুবই আগ্রহী। দ্বিতীয় পার্টের অপেক্ষায় রইলাম।

 25 days ago 

আমরাও বেশ শোকাহত হয়েছিলাম ভাই। দ্বিতীয় পর্ব খুব শীঘ্রই আপনাদের সাথে শেয়ার করবো ইনশাআল্লাহ। যাইহোক এই গল্পটি পড়ে গুছিয়ে মন্তব্য করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

Coin Marketplace

STEEM 0.27
TRX 0.11
JST 0.031
BTC 68118.27
ETH 3793.84
USDT 1.00
SBD 3.46