শীতের দুপুর মানেই কয়েতবেল মাখা। খাবেন নাকি? আসুন আসুন...(রেসিপি পোস্ট)

in আমার বাংলা ব্লগlast month (edited)

প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,


সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।


Onulipi_12_09_11_17_04.jpg



1000234046.png


1000234048.png




আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।



গতকাল রবিবারের আড্ডায় আমরা শীতকালের শৈশব নিয়ে গল্প করছিলাম। সন্ধেবেলায় শীতকাল কেমন ছিল আমাদের শৈশবের দিনগুলোতে সেগুলো বলতে গিয়ে অনেক কথা বলেছি। তবে শীতকালে সারাদিনের মধ্যে সবথেকে বেশি প্রাণবন্ত হত শীতে দুপুর। ছাদ জুড়ে মাদুর পাতা থাকতো এবং তার ওপরে সবার লেপ রোদে দেওয়া হতো। দুপুরের খাওয়া-দাওয়া শেষ করে আমরা সেই গরম লেপের মধ্যেই ঢুকে পড়তাম। সে যে এক বিরাট আনন্দের দিন।

বেশিরভাগ দিনে দুপুরে আমরা স্কুলে চলে যেতাম কেবলমাত্র শনিবার আর রবিবার শীতে দুপুরের আমাদের বিশেষত্ব ছিল এই ছাদযাপন। ছাদযাপনে লেপের তলায় শোয়া ছাড়াও উল্লেখযোগ্য ছিল ঘুড়ি উড়ানো, আর কয়েত বেলমাখা খাওয়া। শুধু যে কয়েক বেলা খেতাম সেটা বললে মিথ্যে কথা বলা হবে। এই সময় সবার বাড়ির আচার রোদে দেয়া হতো, আমরা ছোটরা মিলে সেগুলো সব ফাঁকা করে দিতাম। আর কপালে জুটতো যত রকমের দুরছাই করে গালমন্দ। হি হি হি। তবুও আমাদের থামায় কে? চুপি চুপি হোক বা দুপুরের আড়ালে চুরি আমরা ঠিকই করতাম।

চুরির মধ্যে বেশি আকর্ষণীয় ছিল অন্যের বাড়ির কয়েল বেলপাড়া তাও না বলে। সেটাকে এনে আমরা দারুন স্বাদের চার বানিয়ে নিতাম৷

কয়েকদিন আগেই বাজার থেকে কয়েদবেল এনেছিলেন। তাই ভাবলাম কয়েদ বেলমাখা তৈরি করি এবং সেটার একটা দারুন পোস্ট লিখি। তারপর নানান কাজীর ব্যস্ততায় ভুলে গেছি। গতকাল নিজের শীতের শৈশবের কথা বলতে গিয়ে কয়েদ বেলের কথা মনে পড়ল। তাই আজকে নিয়ে চলে এলাম সেই রেসিপিটি।

চলুন দেখে নিই কি কি লাগল আর কিভাবে বানালাম।

1000213522.png

IMG-20241209-WA0033.jpgIMG-20241209-WA0032.jpg

খুবই সামান্য কিছু উপকরণ লেগেছে কয়েতবেল মাখা বানানোর জন্য।

  • কয়েতবেল দুটো

  • ছোট বেগুন চার পাঁচটা

  • সরষের তেল

  • নুন

  • গুঁড়নো গোলমরিচ ও জিরা ভাজা

  • কাঁচা লংকা কুচি

  • গুড়

  • কসৌরি মেথি ( ছবি তোলা হয়নি)


চলুন দেখে নিই কিভাবে বানালাম।


1000213536.png


ধাপ-১
IMG-20241209-WA0031.jpgIMG-20241209-WA0020.jpg

প্রথমে কয়েতবেল দু'টো ফাটিয়ে নিলাম।

তারপর একটি শুকনো প্লেটে বেলের আঁতিটা বার করে নিয়ে নিলাম।

ধাপ-২
IMG-20241209-WA0030.jpgIMG-20241209-WA0021.jpgIMG-20241209-WA0028.jpg

এবার প্লেটে রাখার সমস্ত মসলা নুন গুড় সর্ষের তেল সব দিয়ে মাখিয়ে নিলাম।

এবার বেশ অনেক সময় ধরে মাখলাম।

তার পরই কসৌরি মেথি মিশিয়ে আরও বেশ কিছুক্ষণ মাখালাম।

আমার ঠাকুমা বলতেন এইসব লোভনীয় চটপটি খাবার অনেক সময় ধরে মাখতে হয়। সাথে অনেক অনেক ভালোবাসা মিশিয়ে। তবে স্বাদ হবে। আমিও সেভাবেই চেষ্টা করেছি।

ধাপ-৩
IMG-20241209-WA0027.jpgIMG-20241209-WA0022.jpg
IMG-20241209-WA0026.jpgIMG-20241209-WA0025.jpg

এবার খানিকটা আমি এমনি মাখাটাই রেখেছি এবং খানিকটা নিয়ে বেগুনের মধ্যে ভরব বলে বেগুনগুলোর ওপর দেখে একটু জায়গা রেখে কেটে নিয়েছি। একটি ছুরি দিয়ে বেগুনের ভেতরের আঁতিগুলো বের করে ফেলে দিলাম। এবার এই যে ফাঁকা জায়গাটি তৈরি হয়েছে সেখানে বেলমাখা ভরে দিলাম।

বেল দিয়ে ভরে দেবার পর যে অংশটা মাথার দিকে কেটে বাদ দিয়েছিলাম সেটাই আবার ফিরিয়ে নিয়ে এসে মাথার দিকে রাখলাম।

এবং যাতে খুলে পড়ে না যায় তাই সেলাইও করে দিলাম।

ধাপ-৪
IMG-20241209-WA0023.jpgIMG-20241209-WA0024.jpg

এবার বাকি বেলটাও বেলেরই একটা খোলা আছে তাতে ভরে নিলাম।

এখন রোদ খাওয়ানোর সময়। মানে এইগুলো সবই নিয়ে গিয়ে বেশ কিছু ঘন্টা রোদে দিয়ে রেখেছিলাম। বেগুনটা প্রায় দুই দিন টানা রোদে দিয়েছি। তারপর বেগুনের ওপরের ছালটা বাদামী হয়ে গেছে। তবে এমনি কয়েতবেল মাখাটা নিমেষেই শেষ হয়ে গেল৷ তাই আর পরের ছবিগুলো তোলাই হয়নি।

1000225073.png


InShot_20241209_231105430.jpg

IMG-20241209-WA0023.jpg

InShot_20241209_231056020.jpg

আচ্ছা, আবার আগামীকাল আসব নতুন কোন পোস্ট নিয়ে। ততক্ষণ আপনারা ভীষণ ভালো থাকুন আনন্দে থাকুন। আজ এ পর্যন্তই...

টাটা

1000205476.png


1000216462.png

পোস্টের ধরণরেসিপি পোস্ট
ছবিওয়ালানীলম সামন্ত
মাধ্যমআইফোন ১৪
লোকেশনপুণে,মহারাষ্ট্র
ব্যবহৃত অ্যাপক্যানভা, অনুলিপি, ইনশট


1000216466.jpg


১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে


1000192865.png


~লেখক পরিচিতি~

1000162998.jpg

আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।

🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾


1000205458.png

4HFqJv9qRjVeVQzX3gvDHytNF793bg88B7fESPieLQ8dxHdhnjvkioa1f2JtZ2LoPTfbBVm5pqTCPohrig3jik5kx6vwVD1Bd7LsrN7Jsp7QsYJhZKr7tXMngo11dMzHKvCp9Z7CbEykuQt1oBVYh3SxQgtQwV7CMEE.jpeg

7YHZyBadGPMHF2XKgfZXx3oMrJwWNvgxqAsBdVAuTc61TPYubb3EKwXArUs8px2rcXjNb6iVQVgemgChuhshQrW1xnNaF2Re8fLzUufkQu...g7xPY7zb8EFFCbjNKRYpfLq65zmCzMhW3G12FLMkP8m5hDHu12yaYqU3RmvWzXicMYhonxjsm7v7vkZd5VN6s4jutwDrMUc215gwLFjQ7G1rvQbY6ocmSGcr5.webp

1000205505.png

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 last month 
1000329711.jpg1000329710.jpg1000329709.jpg1000329708.jpg1000329707.jpg
 last month 

ইসস আপু এত লোভনীয় একটা রেসিপি শেয়ার করলেন। আমার তো এটা দেখেই খেতে ইচ্ছা করছে। ‌ কদবেল মাখা আমার অনেক পছন্দের। দেখেই খেতে ইচ্ছা করছে। তবে বেগুনের সাথে এভাবে কখনো তৈরি করে খাওয়া হয়নি। ভিন্ন ধরনের একটা রেসিপি শিখলাম। ধন্যবাদ আপনাকে।

 last month 

এখানে বড় পাতলা চামড়ার বেগুন পাওয়া যায় না আপু, ওই লম্বা বেগুনে ভরে তেল মাখিয়ে রোদে পোড়ালে বেগুন সমেতই খাওয়া যায়। তা দারুণ সুস্বাদু হয়৷

 last month 

কদবেল মাখা দেখেই তো খেতে ইচ্ছা করছে আপু। আর এত লোভনীয় একটি রেসিপি তৈরি করেছেন দেখে তো মন চাচ্ছে আপনার বাসায় চলে যেতে। খুবই চমৎকার হয়েছে আপনার রেসিপি। আর দেখতে খুবই লোভনীয় লাগছে আপু।

 last month 

চলে আসুন আপু, অবশ্যই খাওয়াবো। সত্যই যদি আমরা পাশাপাশি থাকতাম কত কি দেওয়া নেওয়া করতে পারতাম তাই না?

 last month 

আমরা কদবেল মাখায় এত মশলা দেই না। শুকনা মরিচ গুড়া,লবন ,বিট লবন আর চিনি দিয়েই কদবেল মাখা বানিয়ে নেই। অবশ্য আমাদের দেশে কাসৌরি মেথির ব্যবহার খুব কম। আর এভাবে বেগুনে দিয়ে কখনই কদবেল খাওয়া হয়নি। তবে বেশ লোভনীয় লাগছে আপনার রেসিপিটি। একদিন বানাবো দেখি।

 last month 

কসৌরি মেথিতে গন্ধটা এত সুন্দর আসে, ফলে যে কোন রান্নাতে সামান্য একটু দিলে বা করে দিলে খেতে ভালই লাগে। বেগুনে ভরে কদবেল বা তেতুল আমাদের ওদিকে খুবই জনপ্রিয় আমরা ছোটবেলায় খুব খেতাম।

 last month 

বেলমাখা তো আমার কাছে অনেক ভালো লাগে। আপনার বেল মাথা দেখে মনে পড়ে গেল আগের দিন মা আসার সময় আমার জন্য বেল নিয়ে এসেছিলো সেটা এখনো খাওয়া হয়নি। কালকে দেখতে হবে বেলটা এখনো ভালো আছে কিনা।

যাইহোক আপনার বেল মাখা রেসিপিটি কিন্তু দারুন। বেগুনের মধ্যে এভাবে বেল মাখা খাওয়া যায় জানতাম না। আমার তো খেতে ইচ্ছে করছে আপনি দিবেন নাকি? এতক্ষণে তো শেষ হয়ে গিয়েছে।

 last month 

এতক্ষণে কি বোন, এত গত সপ্তাহেই শেষ হয়ে গেছে 😆😆।

আপনি এলে আমি নতুন করে বানাবো আপনার জন্য আরও সুস্বাদু করে বানাবো। দৌড়ে দৌড়ে চলে আসুন তো একবার।

 last month 

বাহ কয়েতবেল মাখা রেসিপি টা বেশ লোভনীয় ছিল। কয়েতবেল বিভিন্ন উপকরন দিয়ে মাখিয়ে খেতে অসাধারণ লাগে। আপনি বেগুন দিয়ে ভিন্নভাবেই রেসিপিটা শেয়ার করেছেন। ধন্যবাদ।

 last month 

আমার বানানো রেসিপিটা কখনও ফলো করবেন। ভালোই লাগবে আশাকরি৷ ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।

 29 days ago 

শীতের দিনে দুপুরবেলায় এমন মজার রেসিপি হলে তো আর কোন কথাই নেই। রেসিপি দেখে অনেক লোভ লেগে গেলো। কদবেল মাখা খেতে আমি অনেক পছন্দ করি। কতবেল বিভিন্ন উপকরন দিয়ে মাখিয়ে খেতে নিশ্চয়ই অনেক সুস্বাদু লাগে।যদিও এভাবে কখনো খাওয়া হয়নি। সময় করে একদিন এই রেসিপিটা তৈরি করে খেয়ে দেখব।