গ্রাম্য মেলায় আমার ছোটবেলার স্মৃতি।
মেলা দেখার অভিজ্ঞতা টা শহরের তুলনায় গ্রামের মানুষের একটু বেশি থাকে। গ্রাম অঞ্চলের সংস্কৃতি চর্চা শহরের তুলনায় বেশিই হয়। ফসল ঘরে তুলতে পারার আনন্দের পর গ্রাম্য মেলা গুলো খেটে খাওয়া মানুষদের মনে বাড়তি একটা আনন্দ এনে দেয়। কৃষাণী বধূরা অপেক্ষা করে থাকে মেলা থেকে লাল চুড়ি আর শাড়ি কেনার জন্য। চারদিকে একটা উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে যায়।
আমাদের অঞ্চলেও সেই ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি নদীতে বেশি পানি হলেই নৌকাবাইচের মেলার আয়োজন করা হয়। আমাদের বাড়ি থেকে বেশি একটা দূরে না হওয়ায় আমি প্রতিদিনই মেলায় যেতাম। তখন সম্ভবত ক্লাস সিক্সে অথবা সেভেনে পড়তাম। তখন টাকার মান এখনের তুলনায় অনেক বেশি ছিল। বিকেল হলেই ২০-৩০ টাকা নিয়ে চলে যেতাম মেলা দেখতে । প্রতিদিন বাড়ি থেকে টাকা নেয়াটাও অবশ্যই একটু কঠিন ছিল। তারপরও নিতাম। নাছোড়বান্দা ছিলাম আমি । ৫ টাকা পেলেও সেটা নিয়েই মেলা দেখতে চলে যেতাম। বেশি একটা দূর না হওয়ায় গাড়ি ভাড়ার খরচটা বেঁচে যেত। কিন্তু সমস্যা হতো মেলায় যাওয়ার পর। যেটা দেখতাম সেটাই ভালো লাগতো। কোনটা রেখে কোনটা কিনব ভেবেই পেতাম না। আমার স্পষ্ট মনে আছে একবার ৩০০ টাকা নিয়ে মেলায় গিয়েছিলাম সেটাই ছিল আমার তখনকার সময়ের সবচেয়ে বেশি টাকা নিয়ে মেলায় যাওয়া। অনেক কিছু কিনেছিলাম তখন ৩০০ টাকায়। এখনকার চেয়ে দশগুণ বেশি জিনিস কিনতে পাওয়া যেত ঐ সময়ে।
একদিন মেলা থেকে ১৭ টাকা দিয়ে একটা মাটির ব্যাংক কিনেছিলাম টাকা জমানোর জন্য। কিন্তু মজার ব্যাপার হল ওই ব্যাংকে ১১ টাকা জমানোর পর ভেঙ্গে ফেলেছিলাম। আমার ১৭ টা টাকাই লস। এমন আরও অনেক মজার স্মৃতি আছে ছোটবেলার।
আরেকটি মজার ঘটনা আপনাদের সাথে শেয়ার করি। একদিন মেলায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পথেই আমার দুটো বন্ধুর সাথে দেখা । তারপর দুইটা বন্ধু আর আমি একসাথে মেলার দিকে যাচ্ছিলাম । মাঝপথে একটা মাঠ ছিল ।সে মাঠ বৃষ্টির পানিতে অনেকটাই ডুবে গেছে । প্রায় হাটু পর্যন্ত পানি । তো আমরা হেঁটে যাচ্ছিলাম মনের আনন্দে । কিন্তু আস্তে ধীরে হাঁটছিলাম ,কারণ পানির নিচের কিছু দেখা যাচ্ছিলোনা । কোথায় কেমন গর্ত আছে সেটাও বোঝা যাচ্ছিল না । তো আমরা হাঁটছিলাম , হঠাৎ পিছন থেকে একটা লোক দেখি দ্রুত হেঁটে আসছে । তিনি খুব খোশমেজাজে ছিলেন দেখেই বোঝা যাচ্ছিল । লুঙ্গিটা হাটুর উপর পর্যন্ত উঠিয়ে হাসতে হাসতে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছিলেন আর বলতেছিলেন এত আসতে গেলে কি হয় । উনি আমাদের সাইড দিতে বলছিলেন। আমরা একটু সাইড দিলাম উনাকে। উনি সামনে যেতে না যেতেই একটা গর্তের মধ্যে পড়ে গেলেন। উনি যদি আমাদের সামনে না যেতো ,সেই গর্তের মধ্যে আমরা সবাই পরে যেতাম। বিষয়টা দেখে আমরা খুবই মজা পাইছিলাম। পরেযাওয়ার পরেও উনার মুখের হাসির কোন কমতি নেই। বিষয়টা ভাল লাগছিল 😁।
ছোটবেলায় মেলায় যাওয়ার স্মৃতিগুলো মনে করতে গেলে অনেক কিছুই মনে পড়ে যায়। দিন গুলো অসাধারন ছিল। মেলায় গেলে আমি সবসময়ই গরম গরম জিলাপি খেতাম। জিলাপি খেতে আমার খুবই ভালো লাগতো ,আর এখনও লাগে । খাবারের মধ্যে মেলায় যেয়ে এই খাবারটাই খেতাম। তাছাড়া অন্য কোন খাবার তেমন একটা খেতে ইচ্ছে করতো না। আমার কাছে মেলার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ছিল বিভিন্ন দোকানপাট ( খেলনার দোকান, মেয়েদের সাজগোজ এর দোকান, বাঁশির দোকান, বেলুনের দোকান ইত্যাদি ) আর বিনোদনের ব্যবস্থা গুলো (বাইস্কোপ ,সার্কাস, নাগরদোলা ইত্যাদি)। যদিও নৌকা বাইচ ছিল মেলার প্রধান আকর্ষণ। সবাই যেত নৌকাবাইচ দেখার জন্য ,আর আমি মেলায় ঘুরে ঘুরে দেখে বেড়াতাম।
আমাদের এলাকায় নৌকা বাইচ মেলার ঐতিহ্য এখনও আছে । কিন্তু করোনা সিচুয়েশন এর জন্য গত দুই বছর নৌকা বাইচের মেলা হয় নাই । তবে আগামী বছর সবকিছু ঠিক থাকলে হওয়ার সম্ভাবনা আছে। যাইহোক ,আমার পুরনো দিনের স্মৃতিগুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করতে পেরে ভালো লাগলো । আপনাদের গুলোও জানার অপেক্ষায় রইলাম ।আবার দেখা হবে আগামীকাল ইনশাআল্লাহ্। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। ধন্যবাদ ।
হুম, অন্যের পড়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখে খুব মজা নিয়েছেন, এটা কিন্তু মোটেও ঠিক হয় নাই, অন্তত একটু সমবেদনা জানানো উচিত ছিলো, কারন উনি না হলে আপনারই ডুবে যেতেন।
মেলা মানেই তখন ছিলো, খেলনা কেনা, খই খাওয়া, নগরদৌলায় চড়া, আর চড়কিতো তখন প্রথম আকর্ষন ছিলো সবার।
ভাই, ঐ সময় ছিলাম অনেক ছোট। তারপর আবার উনি নিজেও মজা পাইছিল…… 😁
তাইলে ছোট হতেই আপনি এই রকম ছিলেন, একটুও বদলান নাই, হি হি হি হি হি
🤔🤦♂️
খুবই মজার একটি ব্যাপার শেয়ার করবেন। নস্টালজিক হয়ে গিয়েছিলাম একদম। ছোটবেলায় দাদুর হাত ধরে যখন মেলায় যেতাম, দোকান পারলাতে পছন্দ হতো তাই কিনার জন্য বায়না ধরতাম। কিনে না দিলে মাটিতে গড়াগড়ি খেয়ে কাঁদতাম।
গড়াগড়ির মুহূর্তটা দেখতে পারলে কাজ হতো 😁
প্রতিটি মানুষের ছোটবেলার সুন্দর মজার ঘটনা থাকে। আপনার পোস্টে শৈশবের অনেক ছোটখাটো ব্যাপার তুলে ধরছেন মেলার। আমি মেলায় গিয়ে শুধুমাত্র একবার নাগরদোলায় চরে ছিলাম অনেকবার বায়না করে।
আমাদের জেলায় এই খেলায় খুব একটা দেখায় যায়, মেলা কিংবা অন্যান্য সময়ে।
আমিও এমনটা করেছি অনেকদিন। বাবার বকুনি শুনতে হতো কেনার পর পরই আমাকে।
শৈশব জড়ানো সেই স্মৃতিগুলো মনে পড়ে গেলো ভাই। ধন্যবাদ আপনাকে আমি সত্যি আনন্দিত পোস্ট টি পড়ে।
শৈশবের দিনগুলোর কথা মনে করিয়ে দিতে পেরে আমিও খুশি। 🥰
আপনার জন্য ভালোবাসা ভাই ❤️
ভাই আপনার পোস্ট পড়ে ছোটবেলার স্মৃতিগুলো মনে পড়ে গেল। প্রত্যেকের এই জীবনে মেলায় কোনো না কোনো কাহিনী থাকে । আর সেই স্মৃতিগুলো ভোলার মত নয় । আগে মেলাগুলো জাঁকজমক হতো ।
তবে ভাই গর্তে পড়ে যাওয়া ঘটনাটা আমায় অনেক সুন্দর লেগেছে আর অনেক মজা পেলাম।
ধন্যবাদ ভাই । আপনার প্রতি শুভকামনা রইল।
মেলায় আগের মতো এখন আর মজাও হয়না।
ঠিক বলেছেন ভাই মেলায় আগের মত আর মজা হয় না।
ছোটবেলায় মেলায় ঘোরা অনেক মজার ছিল। বড় হয়ে তেমন মজা লাগে না।
ভাই মেলার কথা মনে হলেই মন অটোমেটিক শৈশবে চলে যায়। আহ কি সুন্দর দিন ছিলো। বিশেষ করে গ্রাম এবং মফস্বল শহরের প্রতিটি মানুষের জীবনে মেলার বেশ কিছু স্মৃতি জমা থাকে। আপনার মেলায় যাওয়ার কথা শুনে আমারও মেলার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। আমাদের শহরে খুব জাঁকজমকপূর্ণ একটি মেলা হতো। সেটা হচ্ছে পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের স্মরণে প্রতি বছর ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত একটি মেলা অনুষ্ঠিত হতো। যদিও গত কয়েক বছর যাবৎ রাজনৈতিক রেষারেষির কারণে মেলাটি বন্ধ আছে। আপনার পোষ্টটি খুব সুন্দর হয়েছে। ধন্যবাদ আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
পার্সোনাল ভাবে শীতের সময় হওয়া মেলাগুলো আমার সবচেয়ে বেশি পছন্দ হয়।
গ্রাম্য মেলার আপনার ছোটবেলার সুন্দর স্মৃতিগুলো আমাদের মাঝে সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। ছোট বেলার মেলার স্মৃতিগুলো কখনোই ভুলার মত নয়। আপনার মেলার স্মৃতিগুলো পড়ে আমারও সেই ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল। আমিও আমার গ্রামের দুর্গা পূজার মেলা সময় আমার মাটির ব্যাংকে জমানো ৭০ টাকা দিয়ে একটি খেলনা বন্দুক, বাঁশি ও ছোট একটি ঢোল কিনেছিলাম। শুধু তাই নয় এলাকার সকল বন্ধুরা মিলে অনেক মজা করেছিলাম এবং বিভিন্ন খাবারের জিনিস কিনে খেয়েছিলাম। আপনার ছোটবেলার স্মৃতিগুলো আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ। আপনার জন্য শুভকামনা রইলো।
🌹🌹🌹
বাহ্,, সুন্দর
😂অনেক হাসলাম ভাই ব্যাপারটা কল্পনা করে।কিন্তু উলটো ও হতে পারতো ব্যাপারটা। তখন কি হইতো তাই ভেবে আরো বেশি হাসি আসতেছে। আমি লাস্ট মেলায় গেছি মনে হয় ক্লাশ ওয়ানে! নাকি আরো আগে ঠিক মনে নাই। যদিও শহরের মেলায় নৌকা বাইচ কোনোকালেই দেখিনি তবে মেলা ব্যাপারটাই আলাদা ছিলো একদম। ইশশশ মিস করতেছি ভাইয়া এখন!!
চনামনার ঠেং বলতাম কতগুলো খাবারকে, ওইগুলা বেশি কিনতাম আমি।আপনাদের ওইদিকে কি বলে তা ঠিক জানিনা।
আমার মজার ঘটনা বললে বলবো, ভয়ের কারণে হাজার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও নাগর দোলায় চড়ি নাই,ওইটার আফসোস এখনো হয়।
নাগরদোলা তে চড়ার মজাই আলাদা। মিস করলেন, 😊
হ্যা আসলেই মিস করলাম মনে হয় ভাইয়া।এখন উঠলে তো নাগরদোলা আমার উপরই পরবে।🥺😢
hahahaaa😂
আসলেই ভাইয়া, শহরের থেকে গ্রাম বাংলায় প্রচুর মেলা হতো। কিন্তু এখন সেসব মেলা বিলুপ্তির পথে। এখন অবশ্য জেলা শহরে সারা বছর বিভিন্ন ধরনের মেলা লেগেই থাকে।
আসলেই এমন ব্যক্তি সব এলাকাতেই থাকে, যারা সব সময় হাস্যরসাত্মক ভঙ্গিতেই ঘুরে বেড়ায়
শহরের মেলার চেয়ে গ্রাম এর মেলাতে মজা বেসি।
খুবই সুন্দর লাগলো ভাই আপনার লেখাটি।বিশেষ করে ঐ লোকের ঘটনাটি পড়ে বেশ মজা লাগলো। ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।আপনার জন্য শুভ কামনা
😊😊
ছোট বেলার স্মৃতি মনে হচ্ছে প্রায় সকলেরই একই হয়।আমিও আপনার মতই ছোট সময় 20 টাকা নিয়ে মেলায় যেতাম। মেলায় গিয়ে আমার পছন্দ মতো খেলনা কিনে আনতাম।সময়টা কতই না সুন্দর সুন্দর ছিল।ছিলনা কোন ব্যস্ততা ছিলনা কোন টেনশন।এক গাদা খেলনা হলেই চলে যেত দিনের পর দিন।
ঠিকই বলেছেন ভাই আমি যখন ছোট ছিলাম 1 টাকায় সিঙ্গারা পাওয়া যেত যেটা এখন 5 টাকা।
একেই বলে পাঁচ টাকার ঘোড়ার জন্য দশ টাকার খাবারের ব্যাবস্থা করা।
অনেক সুন্দর হয়েছে ভাই। সম্পূর্ণ পোস্ট শৈশবের স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়।
১ টাকার সিঙ্গারা আমাদের বাজারে পাওয়া যেত।