গোয়েন্দা রহস্য গল্প : "অর্কিড যখন মৃত্যুর হাতছানি দেয়" - পর্ব ০৮

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago


copyright free image source pixabay

সপ্তম পর্বের পর


আট


কিছুক্ষন সব চুপচাপ । তারপর ইন্সপেক্টর আবার তাঁর জেরা শুরু করলেন ।

-"আচ্ছা, ম্যানেজার বাবু, আপনি বললেন না এই সপ্তাহে প্রোফেসর সেনের একটা অর্ডার আছে ?"

-"হ্যাঁ স্যার, লাখ টাকার অর্ডার । নর্থ আমেরিকার একটা অর্কিড ।"

-"আপনি বোধ হয় জানেন না যে উনি মারা গেছেন ?"

-"কি বলছেন কি স্যার !!! কি ভাবে মারা গেলেন উনি ?" ম্যানেজারের গলায় ভীষণ উদ্বেগ, চোখে মুখে অকৃত্রিম বিস্ময় ।

-"মার্ডার, এ পিওর কোল্ড ব্লাডেড মার্ডার ।"

-"খুন !!!!!" ম্যানেজারকে এইবার ভীষণ উদ্বিগ্ন মনে হলো । চোখে মুখে রীতিমতো আতঙ্ক ।

ঘটনাটা দারুণভাবে উপভোগ করলেন বড়বাবু । ম্যানেজারের ওই ভাবে আতঙ্কিত হওয়াতে মনে মনে ভীষণ পুলকিত হলেন, আহ্লাদিত বোধ করলেন । পুলিশের কথাতে সাধারণ জনগণকে ভয় পেতে দেখলে তিনি বিমলানন্দ অনুভব করেন ।

-"তাই বলছি ম্যানেজারবাবু , ঠিক ঠিক সব প্রশ্নের জবাব দিন । কিছু লুকোনোর চেষ্টা করলে সোজা জেল ।", হুঙ্কার দিয়ে উঠলেন বড়বাবু ।

-"ঠি....ঠি...ক আছে স্যার । কি ..... কিছুই লুকোবো না ।"

-"আচ্ছা, বড়বাবু থ্যাংকস । এইবার আমাকে কন্টিনিউ করতে দিন ।", কথাটি বলেই ইন্সপেক্টর আবার জেরা শুরু করলেন ।

-"প্রোফেসর সেন মাত্র ৪ দিন আগে নিজ এপার্টমেন্টে খুবই রহস্যজনকভাবে খুন হয়েছেন । এই কেস একটা স্পেশ্যাল কেস । খুবই জটিল এবং রহস্যময় খুন এটি । খুনী কোনো চিহ্নই রাখেনি । আপনাকে আমি এখন কয়েকটি প্রশ্ন করবো । খুবই ভেবে চিন্তে ঠান্ডা মাথায় জবাব দেবেন ।"

মাথা ঝাঁকিয়ে সায় দিলেন ম্যানেজারবাবু ।

-"আপনার পুরো নাম ?"

-"পরিমল সমাদ্দার ।"

-"আচ্ছা পরিমলবাবু, মি: সেন কতদিনের কাস্টমার আপনার ? ইনফ্যাক্ট আপনি ওনাকে কতদিন ধরে চেনেন ?"

-"মাস পাঁচেক । ব্রাজিল থেকে ফেরার পর । তবে আমাদের নার্সারির সাথে ওঁনার অনেকদিনের সম্পর্ক । উনি যখন শিবপুর বোটানিক্যাল গার্ডেনে কিউরেটর ছিলেন তখন থেকেই আমাদের নার্সারির সাথে ওঁনার একটা সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে । তারপর উনি ব্রাজিল চলে যান, আর আমাদের নার্সারির ম্যানেজার বদল হয়ে আমি এলাম । মাত্র মাস ছয়েক হলো উনি ব্রাজিল থেকে ফেরেন । তারপর মাস পাঁচেক ধরে প্রচুর অর্কিড কিনেছেন আমাদের কাছ থেকে । সেই সুবাদে আমার সাথেও একটা ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে ।"

-"হুম, বুঝলাম । তা কি ধরণের অর্কিড উনি কিনতেন আপনাদের কাছ থেকে ?"

-"দু'ধরণেরই, জেনারেল এবং এ প্লাস ক্যাটেগরির ।"

-"মোটামুটি কত টাকার অর্কিড কিনেছেন উনি বলতে পারবেন ?"

-"হ্যাঁ স্যার, ৬৫ লাখ টাকার মতো স্যার ।"

বিস্ময়ে চক্ষু ছানাবড়া বড়বাবুর, "ওহ বাবা !!! হেব্বি মালদার লোক ছিলেন তো প্রফেসরবাবু, ৬৫ লাখ !!! বাপরে বাপ্ !"

-"পেমেন্ট করেছিলেন কিসে ? ক্যাশ ? চেক নাকি কার্ড ?"

-"কার্ড স্যার । তবে বিদেশী কার্ড । 'Banco do Brasil' । "

-"ডেবিট অর, ক্রেডিট ?"

-"ক্রেডিট কার্ড, স্যার ।"

-"আচ্ছা, বুঝলাম । ওঁনার নাগরিকত্ব তো এখনো ইন্ডিয়ান । তবে, ব্রাজিলিয়ান ক্রেডিট কার্ড উনি use করতেন কি করে ? সেটাই আশ্চর্যের !"

-"সেটা তো আমি ঠিক বলতে পারবো না স্যার ।"

-"আচ্ছা, এই বারের অর্ডারটা উনি কবে দিয়েছিলেন ?"

-"মাস খানেক আগে ।"

-"এতো আগে ?"

-"এটা স্যার আমাদের স্টকে ছিলো না । বাইরে থেকে আনিয়ে দিতে হতো ।"

-"কোথা থেকে ?"

-"ব্রাজিল থেকে স্যার ।"

-"এখনো আসেনি, না ? ?"

-"না স্যার, নেক্সট কয়েকদিনের মধ্যেই চলে আসার কথা ।"

-"ব্রাজিলে আপনাদের কি কোনো এজেন্ট আছে ? "

-"হ্যাঁ, স্যার দু'জন আছে ।"

-"আপনাকে আমি একটা হোয়াটস্যাপ নাম্বার দিচ্ছি, আপনি ওই দু'জন এজেন্টের সব ডিটেলস উইথ ফটো পাঠিয়ে দেবেন । "

-"ওকে স্যার ।"

-"এ বার, অন্য একটা ব্যাপার জিজ্ঞেস করবো । গত দিন দশেকের মধ্যে কোনো নতুন কাস্টমার এসেছিলেন কি আপনাদের কাছে ? যিনি 'এ+' ক্যাটেগরির ক্যাটালগ নিয়েছেন ? এমন যে ক'জন আছেন তাঁদের ডিটেলস আমার চাই । "

-"এক জন এসেছিলেন স্যার । দিন পাঁচেক আগে । একটা 'এ+' ক্যাটালগ নিয়ে গেছেন । সচারচর কেউ 'এ+' ক্যাটালগের খোঁজ করে না । অনেকে জানেনই না ।"

-"তা, আপনি বলছেন ইনি নতুন কাস্টমার । 'এ+' ক্যাটালগের কথা জানলেন কি করে ?"

-"সে কথা আমিও জিজ্ঞেস করেছিলাম । উনি বললেন যে, বহুদিন উনি দক্ষিণ আমেরিকায় কাটিয়েছেন । অর্কিড উনি ভালোই চেনেন । ইনফ্যাক্ট আমাদের নার্সারির নাম যে ব্রাজিলের একটি বিখ্যাত অর্কিডের নামে সেটাও উনি বললেন । সাথে বেশ কিছু রেয়ার ও ভীষণ দামি অর্কিডের ছবি দেখালেন ওঁনার আইফোনে । মিনিট দশেক ওঁনার সাথে কথা বলে বুঝলাম অর্কিড বিষয়ে ওঁনার জ্ঞান বেশ গভীর । উনি বললেন আমাদের নার্সারির বেশ সুনাম শুনে উনি এসেছেন দেখতে । ভালো লাগলে ভবিষ্যতে ব্রাজিলে উনি একটা স্টার্টআপ গড়ে তুলবেন আমাদের সাথে কোলাবোরেশনে । তবে, আপাতত প্রাথমিক বিষয়টা মালিকপক্ষকে জানাতে নিষেধ করেন উনি ।"

ধীরে ধীরে একটা মৃদু হাসির ঝিলিক খেলে গেলো ইন্সপেক্টরের ঠোঁটে ।

-"তারপর ?"

-"তারপর উনি একটা 'এ+' ক্যাটালগ চাইলেন । "

-"আচ্ছা, কেমন দেখতে এই ভদ্রলোকের চেহারাটা ? বলুন তো ।"

-"ভালো মনে নেই স্যার । আসলে সারাদিন অসংখ্য লোকের সাথে মেলামেশা, স্পেসিফিকলি অপরিচিত কারোর ফেস লুক এক্সাক্ট মনে রাখাটা ভারী কঠিন । তবে এটুকু বেশ মনে আছে মাঝারি উচ্চতার একহারা ফর্সা চেহারা, টিপিক্যাল বাঙালি লুক । "

-"এজ ?"

-"৩০ এর বেশ নিচেই হবে, স্যার । ছোকরা । এক মুখ ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি, চোখে পোলারয়েড দামি সানগ্লাস । চুল গুলো বড় বড়, জিপসি স্টাইল । পরনে জিন্স আর টি-শার্ট । আর স্যার, ডান হাতে একটা অর্কিডের উল্কি ।"

-"কিসে এসেছিলেন ? গাড়িতে ?"

-"ট্যাক্সিতে করে, স্যার ।"

-"হুমম, খটকা !"

-"ওঁনার কোনো পার্সোনাল ডিটেলস আপনার সাথে শেয়ার করেছিলেন ? নাম, ঠিকানা, মোবাইল নাম্বার বা ইমেইল একাউন্ট ? "

-"নাহ স্যার ।"

-"ওঁনার কোনো ভিজিটিং কার্ড দিয়েছিলেন ?"

-"নো, স্যার ।"

-"ওঁনার কোনো ছবিও তো নেই আপনার কাছে ?"

-"নাঃ স্যার ।"

-"ভারী অদ্ভুত ! আপনাদের সাথে ব্রাজিলে ফ্রাঞ্চাইজি খুলতে ইচ্ছুক অথচ মেঘনাদের মত আড়ালে থাকতে চান । এটা অদ্ভুত লাগেনি আপনার কাছে ? ম্যানেজার বাবু ?"

-"হ্যাঁ স্যার, তা একটু লেগেছে ।"

-"আমার কাজ শেষ । থ্যাংক ইউ ম্যানেজার বাবু । ভবিষ্যতে যদি আপনাদের হবু ফ্রাঞ্চাইজির উদ্যোক্তা সেই মেঘনাদবাবুটি আসেন সঙ্গে সঙ্গে আমাকে কল করবেন । এই নিন আমার কার্ড । যদিও তার ফের আসার সম্ভাবনা জিরো । চলুন বড়বাবু । মেঘনাদটিকে খুঁজে বের করতে হবে ।"

ঘন কুয়াশার মধ্যে একটুখানি ক্ষীণ আলোর আভাস মিলেছে ।


[ক্রমশ]

Sort:  
 3 years ago 

গল্পটির প্রতিটি পর্বে দারুণ রহস্য।তবে আমার মনে হচ্ছে ওই কম বয়স্ক ক্যাটালগ কেনা ছোকরাটি প্রফেসর সেনের পুত্ৰ।কখনো আমার মনে হচ্ছে, ডাক্তারটি খুনি,এইবার মনে হচ্ছে সেনের পুত্রটি খুনি।সব মিলিয়ে পুরোই রহস্য আমার কাছে।ধন্যবাদ আপনাকে দাদা।

Beautiful photography!! Thanks for sharing! ❤️

 3 years ago 

This is not about photography Man. Its a mysterious story.

 3 years ago 

রহস্যের ভিতর রহস্য। যাক শেষ পর্যন্ত কিছুটা আশার আলো মিলছে। ইন্সপেক্টর বাবু বুঝে গেছেন ঘটনাটা কি। এখন আমরা শুধু বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়ার অপেক্ষায়।

 3 years ago 

দাদা গল্পে নতুন মোড় দিয়ে দিলেন ।। আমার সব ভাবনা উলটো হয়ে গেল

 3 years ago 

গল্পের রহস্য আরো দিন দিন জটিলের দিকে যাচ্ছে। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে খুনি প্রফেসর সেনের নিকটের কেউ। এর ফলে প্রফেসর সেনের সবকিছু সম্পর্কে সহজেই জানতে পারে। এবার হরিসাধন এর প্রতি আমার একটুখানি সন্দেহের দৃষ্টি যাচ্ছে। তবে অপেক্ষায় রইলাম আসল খুনি পর্যন্ত পৌঁছানোর। ধন্যবাদ দাদা।

 3 years ago 

গোয়েন্দা রহস্য গল্পটি ধীরে ধীরে আরো গভীরের দিকে যাচ্ছে। ইন্সপেক্টর মিত্র নার্সারির ম্যানেজার পরিমল সমাদ্দার এর কাছ থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অর্থাৎ নতুন ক্রেতার সন্ধান পেয়েছেন। আশা করি এই তথ্যটি খুনির কাছে পৌঁছাতে সহায়ক হবে। এই পর্বে খুনি শনাক্তের কিছুটা আশার আলো দেখা যাচ্ছে। অপেক্ষায় রইলাম শেষ অব্দি দেখার জন্য। ধন্যবাদ দাদা গল্পটি পর্ব আকারে এত সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করার জন্য।

 3 years ago 

দাদা আপনার গল্প দেখে চানাচুর নিয়ে বসলাম।জমে যাচ্ছে এক্কেবারে তবে সাস্পেন্স এর কারণে তর সইছে না।কবে যে রহস্যটা জানতে পারবো।তবে এইবার মনে হচ্ছে যে ইন্সপেক্টর ঠিকঠাক ই আগাচ্ছে।দারুণ হচ্ছে গল্পটা।

 3 years ago (edited)

দাদা এত দিন আমি একটু ব্যস্ত থাকার কারণে আগের পোস্ট গুলি পড়তে পারি নাই ।আজ সময় করে পড়ে নিলাম তবে একটা বিষয় ভালো লেগেছে কারণ আমার অপেক্ষা করতে হয়নি একবারে সব গুলো পড়তে পেরেছি ।আজকের পর্বে আমার কাছে যে বিষয়টি মনে হয়েছে আমরা হয়তো বা সবাই মনে করেছি ওই ব্যক্তিটি হয়তোবা খুনি কিন্তু কেন জানিনা আমার মনে হচ্ছে উনি আসলে খুনি না খুনি অন্য কেউ সেটা হয়তো বা আপনার পরবর্তী পোষ্টের মাধ্যমে আমরা জেনে যাব ।এটা এই জন্য বললাম কারণ অনেক সময় আদালতে দেখে থাকি এমন কেস যেটা কিনা আমরা সন্দেহ যাকে করি সে হয়না খুনি আসল অন্য কেউ হয়ে থাকে ।যা আমরা খালি চোখে দেখি তা হয় না যা আমরা দেখি না আসলে তাই হয়।

 3 years ago 

অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা।গল্পের নতুন মোড়, ইন্সপেক্টরের মতিগতি ভালোর দিকে।

 3 years ago 

অচেনা মেঘনাদ বাবু কি তাহলে ? মাথা কিন্তু সকাল সকাল ঘুরপাক খাচ্ছে । অপেক্ষায় রইলাম পরবর্তী পর্বের জন্য ভাই ।