হে বন্ধু,বিদায়
আমাদের জীবন হল স্মৃতির সমষ্টি। জীবনটা একটা বিশাল ছবির গ্যালারি।যেখানে প্রতিমুহূর্তে যুক্ত হচ্ছে অসংখ্য ছবি আর ছবির গল্প। অধিক গুরুত্বপূর্ণ গল্পের চাপে মাঝে মাঝে কম গুরুত্বপূর্ণ কিছু ছবি আর গল্প হারিয়ে যায়।
জীবনে কত মানুষ আসে কত মানুষ যায়। সবার স্মৃতি সব সময় কি থাকে? আবার কিছু মানুষের স্মৃতি সারাজীবন আপনাকে আফসোসের সাগরে নিমগ্ন করে রাখবে। এই ছোট্টজীবনে বেশ কয়েকবার বন্ধুবিয়োগের মত দু:সহ বেদনা সহ্য করতে হয়েছে।
প্রসাদ ছেলেটা আমার প্রাইমারি লেভেল এর বন্ধু। একই প্রাইমারির দুই শাখার স্টুডেন্ট ছিলাম। তবে স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়ার সূত্রে পরিচয় হয়। পরে অবশ্য জানতে পারি ও আমার দূর সম্পর্কের আত্মীয়।
প্রসাদ ছিল অত্যন্ত সহজ সরল কিন্তু স্পষ্টবাদী। ওর কিছু খারাপ লাগলে বা পছন্দ না হলে সে সেটা সরাসরি আপনার মুখের উপর বলে দিবে। এজন্য ওর সাথে কম মানুষই মিশত।কিন্তু আমার সাথে দারুন ভাব হয়ে যায়।
কারন আমি একে ছিলাম পিছলা,তারউপর আত্মিয় মানুষ। ও সম্পর্কে আমার ভাই হলেও ওরে ডাকতাম মামা বলে। ওর দাদূর নাম "কালু শিকদার" বলে জনান্তিকে ওকে সবাই কালু বলেও খেপাইতাম।কিন্তু ও চালাক ছিল রাগ হত না খুব একটা।তাই আমরাও খুব একটা সুবিধা করতে পারতাম না।
যাই হোক, এভাবে হাইস্কুল জীবন পার হল। আমরা কলেজে ভর্তি হলাম।কিন্তু জীবন সংগ্রাম এর তাগিদে তাকে জীবীকার সন্ধানে নামতে হল। এখান থেকেই তার পতনের শুরু। আস্তে আস্তে খারাপ সঙ্গে মেশা শুরু করল,সেখানে থেকে নেশা। আর একসময় নেশাটাই প্রধান পেশা হিসেবে নিয়ে ফেলে। এর ফল হয় মারাত্মক।
তার লিভার ভয়ানক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে পড়ে, তবে বাড়ির লোকজন আর ডাক্তার এর চেষ্টায় ধিরে ধিরে সুস্থ হয়ে ওঠে।আবার কাজ কর্ম শুরু করে। এভাবে চলে তিনমাস। এর মাঝে আমাদের এলাকায় শুরু হয় বাণিজ্য মেলা। ও একদিন মেলায় এসে ফোন দিয়ে বলে,"মামা মেলায় আয়,অনেকদিন দেখা হয়না তোর সাথে"।
মেলায় গিয়ে দেখি প্রসাদ আর প্রণব এসেছে। ঘন্টাখানেক তিনজন মেলায় ঘোরাফেরা করলাম। ওকে কত রাগানোর চেষ্টা করলাম, কিন্তু রাগল না।উলটা আমাকেই রাগাতে লাগল। আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম মামা এখন মামির ব্যবস্থা করো।ও বলল, "হ্যা মামা পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠলেই বিয়ে,বাড়ি থেকে পাত্রী দেখতেছ"।
এরপর আমরা সবাই মিলে একসাথে ফুচকা খাইলাম।তারপর ওকে নেশা যাতে আর না করে সেই পরামর্শ দিয়ে বাড়ি চলে আসলাম। পরের দিন ঘুমা ভাঙ্গে প্রণব এর ফোনে।প্রসাদ নাকি প্রচন্ড অসুস্থ ওকে মেডিকেল এ নিয়ে যাওয়া হয়েছে। শুনে অনেক খারাপ লাগল। প্রার্থনা করতে লাগলাম ঈশ্বরের কাছে।
কিন্তু হায়! যার সময় শেষ হয়ে এসেছে তাকে কি প্রার্থনার দ্বারা আটকে রাখা যায়? আমাদের সবাইকে চোখের জলে ভাসিয়ে দুপুরের কিছু আগে প্রসাদ ইহলোকের মায়া ত্যাগ করে চলে যায়। আপনারা ভাবছেন এতদিন পর লিখছি কেন?গতকাল ছিল প্রসাদের জন্মদিন।সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে দেখেই মন টা কেমন যেন হয়ে গেল।তাই একটু স্মৃতিচারণ করলাম।সবাই আমার বন্ধুর জন্য দোয়া করবেন।
আমি বৃত্ত মোহন্ত (শ্যামসুন্দর)। বর্তমানে ছাত্র। নতুন কিছু শিখতে, নতুন মানুষের সাথে মিশতে আমার খুব ভাল লাগে। তেমনি বই পড়া আর ঘুরে বেড়ানো আমার পছন্দের কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম। মুক্তমনে সব কিছু গ্রহণ করার চেষ্টা করি আর মনে প্রাণে বিশ্বাস করি,"বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর, সবার আমি ছাত্র"।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Twitter link
খুব মর্মান্তিক ঘটনাটি।আসলে কিছু কিছু মৃত্যু একদমই মেনে নেয়া যায় না।নেশা সর্বনাশ সব কুরকুরে খেয়ে ফেলেছে আর নেশা থেকে দূরে আসতে অনেকটা সময় লেগেছে তাই আজ সে সকলের মায়ামমতা ত্যাগ করে পরলোকে চলে গেলো অকালে।স্বর্গবাসী হোক সেই প্রর্থনা করছি।
ঈশ্বর আপনার প্রার্থনা মঞ্জুর করুক মামি। আসলেই খুব মর্মান্তিক ঘটনা।