আমার ছেলেবেলা - " ফেলে আসা ডিসেম্বর "
হ্যালো বন্ধুরা,
মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি আমার প্রিয়"আমার বাংলা ব্লগ"এর ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগন,কেমন আছেন সবাই?আশা করি সবাই ভালো আছেন।আমিও আলহামদুলিল্লাহ্ আল্লাহ্র অশেষ রহমতে ভালো আছি।
বন্ধুরা,আমি @shimulakter"আমার বাংলা ব্লগ" এর একজন নিয়মিত ও অ্যাক্টিভ ইউজার।বাংলায় ব্লগিং করতে পেরে আমার অনেক বেশী ভালো লাগা কাজ করে মনের মাঝে।তাইতো আপনাদের মাঝে প্রতিনিয়ত মনের নানান অনুভূতি গুলো নিয়ে নানা রকমের পোস্ট শেয়ার করে থাকি।আজ ও আবার হাজির হয়ে গেলাম নতুন একটি পোস্ট নিযে।আশাকরি সবাই সঙ্গেই থাকবেন।
ফেলে আসা ডিসেম্বরঃ
ডিসেম্বর মাস এলেই ছেলেবেলার স্মৃতিতে হারিয়ে যায় মন।ডিসেম্বর মাসে অল্প অল্প করে শীত পরতে শুরু করে।স্কুলে স্কুলে এ সময় ফাইনাল এক্সাম শেষ হয়ে যায়।আর ঠিক তখন অলস সময়টাতে বসে ছেলেবেলার কথা ভেবে মনটা ভীষণ চঞ্চল হয়ে উঠে।বার বার ফিরে যেতে ইচ্ছে করে সেই ছেলেবেলার স্মৃতিতে ডিসেম্বরে।আমাদের সেই ছেলেবেলার ডিসেম্বর যেনো আনন্দ উল্লাসে ভরপুর ছিল।ফাইনাল পরীক্ষা কখন শেষ হবে সেই অপেক্ষায় অস্থির থাকতাম।কারন ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হলেই নানা বাড়ি আর দাদু বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার আনন্দে সবাই আনন্দিত হয়ে উঠতাম।শহরে তেমন শীত অনুভুত হয় না।কিন্তু গ্রামের বাড়িতে গেলে অনেকটা ই শীত অনুভব হতো।ঈদ আনন্দের মতো তাই সব ভাই-বোন মিলে নতুন নতুন সোয়েটার,জ্যাকেট কেনার ধুম পরে যেতো সেই সময়টাতে।
পরিবারের সবাই মিলে একসাথে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার আনন্দ এখনো স্মৃতিতে অম্লান হয়ে আছে।এখন মা হয়েছি কিন্তু ফাইনাল এক্সামের পর গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার আনন্দ এখনো মনের কোনে সুখ অনুভূতি ছড়িয়ে দেয়।এখনকার বাচ্চাদের মধ্যে এমন অনুভূতি লক্ষ্য করা যায় না।আমরা যতটা পরিবার পরিজন ও ভাই-বোন মিলে একসাথে আনন্দ করেছি।
ডিসেম্বর মাসের বাকি কটা দিন আমরা গ্রামের বাড়িতে ই খুব ইনজয় করেছি।কারন জানুয়ারি মাসে নতুন ক্লাস,নতুন বই,আবার সেই পড়াশোনার ব্যস্ততাকে সঙ্গী করতে হবে।তাই এর আগের সময় গুলো আমরা খুব আনন্দ উদ্দীপনা নিয়ে কাটাতাম।শীতের রাতে দাদু,মা আর ভাই-বোন মিলে রাত জেগে নানা ধরনের পিঠা তৈরি করা।এই অনুভূতি কতোই আনন্দের। শীতের ভোরে দাদুর ডাকে ঘুম ভাঙা আর পিঠা খাওয়ার সেই যে আনন্দ এখন তা শুধু স্মৃতি।সকালবেলা দাদু মাটির চুলা জ্বালিয়ে রান্না বসিয়ে দিতেন।আমরা সবাই মিলে চুলার পাশে বসেই শীতের পিঠা খেতাম।কতোই না সুন্দর ছিল সেই দিন গুলো।তখন মাটির চুলায় দাদু যা কিছুই রান্না করতো সব রান্না করা খাবারই অনেক বেশী মজার হতো।
শীতের সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখতাম মাটির কলস ভর্তি করা খেজুরের রস।দাদু ই সব ম্যানেজ করতো আমাদের জন্য। আর আমাদের সবাইকে ডাকতে থাকতো সবাই উঠে খেজুরের রস খেয়ে নাও।আজ দাদু ও বেঁচে নেই বাড়িতে ও আর যাওয়া হয় না।বাবা বেঁচে থাকতে ও নিজ থেকে আমাদের কে বাড়িতে দুই তিন বছর পর হলেও নিয়ে যেতেন।আজ বাবা ও বেঁচে নেই,বাড়িতে যাওয়ার সেই আনন্দ উদ্দীপনাও নেই।বাড়িতে ঘর পরে আছে,মানুষ নেই।এসব ভাবলে কষ্টে বুকটা ফেটে যায়।খুব কাছের মানুষ গুলো এক এক করে হারিয়ে যাচ্ছে।আর যে ডিসেম্বর মাস আগে খুব আনন্দের ছিল,এখন তা নীল কষ্ট হয়ে মনের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে।
শীতের ছুটি কাটিয়ে যখন ঢাকায় ফিরে আসতাম তখন মনটা ভীষণ খারাপ থাকতো বেশ কিছুদিন।যদিও দাদু তখন আমাদের সাথে ঢাকায় চলে আসতো।আমরা ভাই-বোন মিলে যে আনন্দ করতাম সেই কথা ভেবেই কষ্ট লাগতো খারাপ লাগতো।নতুন বছর নতুন ভাবে শুরু করলে ও আমরা সবাই অপেক্ষা করে থাকতাম আবার ফাইনাল পরীক্ষা শেষ করে সবাই মিলে ডিসেম্বর মাসের শীতকালের ছুটিতে ভীষণ উপভোগ করবো।সেই সব আজ শুধু স্মৃতি।স্মৃতি যতটা দেয় আনন্দ,ততটাই দেয় কষ্ট।কতো ডিসেম্বর মাস আসে যায়,কিন্তু আমার মনের মাঝে থাকা ডিসেম্বর মাস একই রকম ভাবে আমাকে কষ্ট দিয়ে যায়,আবার সুখ স্মৃতি গুলো ভাবলে মনে আনন্দ দিয়ে যায়।ছেলেবেলার সেই ডিসেম্বর মাস আমার কাছে ভালো লাগা ও কষ্ট লাগা দুটোই জায়গা করে নিয়েছে।
ফেলে আসা ডিসেম্বর মাস নিয়ে ছেলেবেলার কিছু সুখ অনুভূতি আজ শেয়ার করে নিলাম।আশাকরি আমার আজকের স্মৃতি রোমন্থন আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে।ভালো লাগলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাতে পারেন আপনার ছেলেবেলার ডিসেম্বর মাসটি কেমন কেটেছিল??
পোস্ট বিবরন
| শ্রেণী | আমার ছেলেবেলা |
|---|---|
| ক্যামেরা | Galaxy A16 |
| পোস্ট তৈরি | @shimulakter |
| লোকেশন | ঢাকা,বাংলাদেশ |
ধন্যবাদ সবাইকে
আমার পরিচয়
আমি শিমুল আক্তার।আমি একজন বাংলাদেশী।আমি বাংলাদেশ ঢাকা থেকে আপনাদের সাথে যুক্ত আছি।আমি এম এস সি (জিওগ্রাফি)কমপ্লিট করি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।আমি বিবাহিতা।আমি একজন গৃহিণী।আমি একজন স্বাধীনচেতা মানুষ।ভালোবাসি বই পড়তে,নানা রকমের রান্না করতে,আর সবাইকে নতুন নতুন রান্না করে খাওয়াতে ভীষণ ভালোবাসি।ফটোগ্রাফি করতে আমি ভীষণ পছন্দ করি।বাংলায় লিখতে আর বলতে পারার মধ্যে অনেক বেশী আনন্দ খুঁজে পাই।নিজের মধ্যে থাকা সৃজনশীলতাকে সব সময় প্রকাশ করতে পছন্দ করি।এই বাংলার মাটিতে জন্মগ্রহণ করেছি বলে নিজেকে অনেক ধন্য মনে করি।



